মা-কে নিয়ে অনেকদিন আগে লেখা...
------------------------------------------
এ ঘরের দেয়াল রঙ বদলায়,
শুধু তার দিনলিপিটা একঘেঁয়ে রয়ে যায়।
রান্না ঘর থেকে সদর দরজা পর্যন্ত,
আমার মায়ের পৃথিবী।
অনেকটা ফ্রেমে বাঁধানো,
যেন যত্নে আঁকা কোন শিল্পীর ছবি।
এই ফ্রেমের বাইরে মাত্র ক’বার,
হাসপাতালের বিছানায় শোয়া
এক টুকরো পাকানো দড়ির মতো।
এ সংসার
প্রতিদিন সাজে নানান ব্যস্ততায়,
মায়ের মুখখানা জীর্ণতায় ঢেকে যায়।
স্কলারশিপের টাকা থেকে একবার
সস্তা একটা শাড়ি এনে দিয়েছিলাম,
আলমারির তাকে এখনো যত্নে রাখা,
সাদা ন্যাপথলিন মুক্তোর মতো বুকে লুকিয়ে থাকে।
সারাটা দিন রান্না ঘরে কাটে।
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম,
আটপৌরে শাড়ির আঁচলে মা মুখ মুছে,
খাবার সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকে।
ভরপেট খাবারের পর ভাতঘুম,
রান্না ঘরে ক্লান্ত বিকেল জেগে থাকে নির্ঘুম
গোধূলির অপেক্ষায়।
ধুপকাঠির গন্ধে বিকেলের মৃত্যু শেষে
গোধূলি আসে,
ঠাকুর ঘরে ঘন্টা বাজে-
প্রতিদিন প্রার্থণার সময় ঘুমিয়ে থাকিস।
আমি বিরক্ত হই-
কি হয় এতো প্রার্থণা করে?
সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালতে জ্বালতে মা বলে-
যা হয় সবই ভালোর জন্যে...।
তাই বুঝি সারা বছর অসুস্থ থাকো?
মা উত্তর দেয় না,
হাতের সন্ধ্যা প্রদীপ
নিশ্চুপ আলো ছড়িয়ে যায়
এক টুকরো দীর্ঘশ্বাসের মতোন।
প্রার্থণা শেষে
ম্লান গোধূলি চায়ের কাপে বাষ্পীভূত হয়,
আসবাবপত্রের গায়ে ধূসরতা মাখে।
মা,এবার একটু বিশ্রাম নাও।
দেখিস না,সব কিছুর উপর কেমন ধুলো জমেছে?
চা গাছের প্রাণহীন শিকড়ের উপর বেলজিয়াম গ্লাস
মায়ের মুখখানা স্পষ্ট করে আঁকে একসময়।
রান্না ঘরের খুঁটখাট শব্দে
অপেক্ষায় থাকে ডাইনিং টেবিল।
আর রাত দশটার গরম সংবাদ
রান্নাঘরে আলোর প্রহর আরেকটু দীর্ঘায়িত করে।
এ শহর এখন
রাক্ষসের মতো গ্রাস করে আমার অবসর।
সেই চেনা শহরে,
মরচে পড়া লোহার গেটে একটু কর্কশ শব্দের অপেক্ষায়
মা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে, মধ্যরাত পর্যন্ত।
আর আমি ঘুমের অপেক্ষায় থাকি,
মা কল্পনায় হাত বুলিয়ে যায়।
আমি ঘুমিয়ে গেলেও
মা ঘুমায় না,জেগে থাকে
আর স্বপ্নে আমার বিষন্নতা ঢাকে।
......... ০৫.০৬.০৭