আগের কাহিনীর পর...
আমার জন্য রাস্তা বাকি ছিল আর দুইটা। একটা হইল আম্রিকাতেই কাউরে মিউচ্যুয়াল কানেকশন দিয়া খুইজা বিয়া করা অথবা বাংলাদেশে যাইয়া কারো গার্লফ্রেন্ডরে বিয়া করা। এইখানে তো কয়েকজনরে বইলা রাকছিলাম যে সুন্দরি থাকলে জানাইয়েন। সবাই খালি কয় এইখানে নাই, দেশে আমার অমুক আত্মীয়ের বেটি আছে। খুব ভালো! আলাপ করমু নাকি? আমি শুইনাই অফ যাইতাম। বাংলাদেশে যদি যাওয়া লাগে, তাইলে আমার ফ্যামিলিরে মাথা ঘামাইতে দিতে হবে না? তাছাড়া নোয়াখাইল্ল্যা/বরিশাইল্যা সুন্দরি বিয়া করলে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন কইবে জামাইর আয়োডিনের অভাব। দক্ষিণবঙ্গের একটা মেজর পপুলেশন রিলিজিয়াসলি বিশ্বাস করে যে দিনাজপুর/রংপুরের লোক আয়োডিনের অভাবে ভোগা মঙ্গাপীড়িত লোকজন।
এক সদ্য উইকেট পড়া ফ্রেন্ডের সাথে আলাপ করার সময় হ্যায় কইল, এইখানে ফায়দা করতে পারবা না। দেখবা ফ্যামিলি সাথে কথা কইয়া দেখবা সব সেটেল কিন্তু মাইয়া তুমারে একদিন ডাইকা কইবে আমার বয়ফ্রেন্ড আছে আমনে চাইলে পরিচয় করাইয়া দিমু। আম্নে মানে মানে কাইটা না পরলে বাড়িতে কমু আমনেরে আমার পছন্দ হয় নাই। হ্যার নাকি এরাম কাহিনী কয়েকটা হইছে। ফ্রেন্ডে কয় ভাই বিশ্বাস করবেননা, বাপে মসজিদের ইমাম আর মাইয়া আমারে এইগুলা শুনায়! মান-ইজ্জত লইয়া টানাটানি অবস্তা।
আর একটা ফ্যাক্টর ছিল এইখানে। ওইটা হইল লোকে যে মাইয়া দিবে কারে দেইখা দিবে? আমার তো এইখানে তেমন কেউ নাই। আমার গার্জিয়ান তো আমি নিজেই। আমারে তো কেউ মনে হয় গোনার মধ্যেই ধরবে না। পাত্র আবার গার্জিয়ান হয় ক্যাবা কইরা? সবাই তো চায় মাইয়া নাইস কারো হাতে বিয়া দিয়া একটু নিশ্চিন্তে থাকতে। আমারে যেহেতু অনেকেই ওইভাবে অনেকে চিনে না, মাইয়া দিবার মত কনফিডেন্স পাবে কই? আমি যদি শেষে লুচ্চা-লাফাঙ্গা বাইর হইয়া যাই?
যাইহোক এক নাইস ভদ্রমঘিলা আছেন এইখানে। কাজের খাতিরে উনার সাথে পরিচয়। বেশ ভালো সম্পর্ক উনার সাথে। উনারে বলছিলাম ব্যাপারটা। উনি একদিন আমারে কইলেন উনার পরিচিত’র পরিচিত নাকি এক সুন্দরি আছে। খুব নাকি ভালো মানুষ! এইখানে স্কলারশিপ লইয়া আসছিল, একজনরে বিয়া করছিল, বাট ডিভোর্স হইয়া গ্যাছে। আমি মনে মনে চিন্তা কইরা দেখলাম “এইডা কিছু হইল”। উনি আর কাউরে পাইল না? এরে বিয়া করলে তো আমার দ্যাশে যাওয়া বন্দ হইয়া যাবে। চিন্তা কইরা দেখলাম, দেখি না কি হয়। না বলার সুযোগটা তো চইলা যাইতেছে না। পরিস্থিতি বেগতিক দেখলে যেকোনো সময় না বইলা, আমি ভাইগা যাইতে পারমু। তাছাড়া এই ভদ্রমহিলার জাজমেন্টের উপর অনেক ভরসা ছিল। উনি যখন বলতেছেন…।
উনারে কইলাম ঠিক আছে আমারে উনার নাম্বার দিয়েন, আমি নিজেই কল দিমুনে! যাইহোক, একদিন সন্ধ্যাবেলা টেক্সট দিয়া নিজের পরিচয় দিলাম। আননোন নাম্বারে ফুনে কথা বলার আগে আমি নরমালি টেক্সট দিয়া বইলা দেই যে আমি অমুক, আমনেরে কল দিমু। উত্তর দেইখা মনে হইল মাথার ঘিলু বেশ হাই কোয়ালিটির। আমারে কইল ফেইসবুকে এড হইতে চায়। আমি অনিচ্ছাসত্ত্বেও কইলাম ওকে। ফেইবুকে এড দেওয়া দ্যাই হইল। এড দিয়াই মনে হইল ব্যাপারটা কেঁচে গেল। দেখলাম সুন্দরির আইডি সেকেন্ডারি (ফেইক) আইডি। পুরা মরুভূমি। না আছে ছবি, না আছে পোস্ট, না আছে কোন ইনফো। আর এই সুন্দরি আমারে একটু পর কয় আপনেরে দেইখা তো বাচ্চা বাচ্চা লাগে। আমনের বয়স কত?
ঠিকাছে বয়স জানাটা নেসেসারি একটা ব্যাপার। বাট “বাচ্চা বাচ্চা লাগে। আমনের বয়স কত।” প্রথমেই এই টাইপের ব্যাপারগুলা তো অফেন্সিভ টাইপ প্রশ্ন। দাঁতে দাঁত চাইপা কইলাম এত। সুন্দরি কয় (মেসেজে), কোথাও একটা গোলমাল হইছে। উই সুড নট বি টকিং এট অল! আম্নে জানেন আমার বয়স কত? আমি তো শুইনা কিছু বুঝতেছিলাম না। কুন্দিক দিয়া যে কি হইতেছিল সবি মাথার উপ্রে দিয়া যাইতেছিল।
আমি তখন কইলাম কইলাম কত? সুন্দরি কয় আমি আমনের থেইকা ১৫ বছরে বড়! আমি তো শুইনা হাস্মু- না কান্মু না অজ্ঞ্যান হইয়া যামু, না লুকাচুরি খেল্মু কিছুই বুঝতেছিলাম না। আবার মনে হইতেছিল, সুন্দরি মনে হয় বেরি ফানি, মজা লইতেছে!!!
কিন্তু কয়েকটা টেক্সটের পর বুইঝা গেলাম যে সি ওয়াজ সিরিয়াস। ব্যাপারটা ক্যামন হইয়া গেল? সামওয়ান স্ক্রুড আপ রিয়াল ব্যাড। আর এই ভদ্রমহিলা যে একটুও ডিউ-ডিলিজেন্স না কইরাই ক্যামনে আমার কাছে সুন্দরিরে রেফার করল। তাও কইছিল অনেক ভালো! অনেকে কইতে পারে ক্যারে, বয়স বেশি হইছে তো কি সমস্যা? ১৫ বছর বেশি বয়সের সুন্দরি বিয়া করা তো সুন্নত তাই না? আমার উত্তর, ভাই তরা কর। অবশ্য গেটস/বাফেট/বেজোসের বেটি হইলে হয়ত সিরিয়াসলি চিন্তা করতাম ব্যাপারটা নিয়া।
আমি সুন্দরিরে চাপাচাপি করলাম আর ইনফরমেশন এর জন্য। কিন্তু সুন্দরি ততক্ষণে টের পাইছে যে আমরা সময় নষ্ট করতেছি। সে কথা কইবে না। স্মার্ট সুন্দরি!!! যাইহোক এর পর আর সুন্দরির সাথে কথা কওয়া হয় নাই। আমি অবশ্য মনে করছিলাম একটু ঘাটাঘাটি কইরা দেখা উচিত যে আসলে সমস্যাটা কোথায় ছিল। কিন্তু দেখলাম ব্যাপারটা আসলেই সময় নষ্ট হবে। ব্যাপারটারে ওইজন্য তাড়াতাড়ি কইরা বালিচাপা দিয়া দিছিলাম। যদিও ঘটনাটা মনে হইলে নিজেরই বত্রিশ পাটি দাঁত বাইর হইয়া পড়ে।
ব্যাড রেফারেন্স কিন্তু যে রেফারেন্স দিবে তার জন্য খারাপ। এইজন্য আমি রেয়ারলি কাউরে রেফার করি, যদি করি তাইলে সেইটা জেনুইন রেফারাল। রেপুটেশনের সমস্যা হয়। ভদ্রমহিলারে পরে জানাইছিলাম যে এই ব্যাপার! উনি বলছিলেন যে উনি জানতেন না।
(চলতে থাকপে...।)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:৩১