'৯০ এর ছাত্র-গণ আন্দোলনের পর, কবিতা ও লিটল ম্যাগের ভুত আমায় ছেড়ে যাওয়ার পর শুরু করি পেশাদার সাংবাদিকতা। আমার কাজের একটি বড়ো অংশ জুড়ে থাকে পাহাড়। ভেবেছিলাম, আরো বুড়িয়ে গেলে, পঞ্চাশে পা দিলে পাহাড়ের ওপর একটি মোটাসোটা বই লিখবো। সেখানে থাকবে তথ্য-সাংবাদিকতার বাইরে অনেক নেপথ্য-কথন।
তো সাংবাদিকতার বাইরে, নিউজ-স্টোরি লেখা ছাড়াও মাঝে মাঝে পাহাড়ি বন্ধুদের অনুরোধে পার্বত্য চট্টগ্রাম, তথা আদিবাসীদের ওপর কিছু সংবাদ নেপথ্য কথা লিখতে হতো। মাঝে টরেন্টা প্রবাসী সাংবাদিক বন্ধু সেরীন ফেরদৌসের অনুরোধে প্রবাসী বাঙালিদের ট্যাবুলয়েড়ের জন্যও কিছু লেখা-লেখি করতে হয়েছে। পরে তাদের অনলাইন সাপ্তাহিক নতুনদেশ ডটকম-এর জন্য লিখতে হয়। আমার লেখালেখির দৌড় ছিলো ওই পর্যন্ত। ...
২০০৪-এর আগস্টে দৈনিক যুগান্তর ছেড়ে যোগ দেই দেশের প্রথম অনলাইন দৈনিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ। বছর দুয়েক পরে সেখানে যোগ দেন অমি রহমান পিয়াল। কথায় কথায় অরপি, পিয়াল ভাইয়ের সঙ্গে চমৎকার বন্ধুত্ব জমে ওঠে। লেট-নাইট ডিউটির সময় কাজ শেষে রাত জেগে লিটল ম্যাগ ও সেরীনের ট্যাবুলয়েডের জন্য কম্পিউটার ঠুকে ঠুকে লেখা তৈরি করতাম। ...
একদিন পিয়াল ভাই আমার কিছু লেখা পড়ে আমাকে একটি ব্লগ সাইটে দেখান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তার কিছু লেখা। সেটি ছিলো সামহোরিনব্লগ ডটনেট। আমাকে উৎসাহিত করেন ব্লগিং-এ। সামুতে খুঁজে পাই বেশ কিছু শক্তিশালী লেখক। ব্লগ পড়তে পড়তে এক সময় নিজেও সেখানে লিখতে শুরু করি। সামুর সংস্কার-পর্ব শেষে এর কারিগরি দিক বুঝতে কোনো অসুবিধা হলেই পিয়াল ভাইকে ফোন করে বসতাম। উনি অসীম ধৈর্য ধরে আমাকে একে একে সব বুঝিয়ে দেন, আমি আস্তে আস্তে ব্লগাসক্ত হয়ে পড়ি। ...নিবন্ধন করে লিখতে শুরু করি আরো দু-একটা বাংলা ব্লগে...এমন কি ফেসবুকেও। ...
ব্লগেরই কিছু লেখা দেখে সাবেক তাঁরকা-সাংবাদিক, 'পাঠসূত্র'র প্রকাশক বন্ধু রাজিব নূর ধরে বসেন পাহাড়ের ওপর তাকে একটি বই করে দেওয়ার। আমি কিছুতেই রাজী হচ্ছিলাম না, 'আরে বই লেখার মতো বয়স আগে হোক তো!' ...রাজিবের এক কথা, 'নাহ্, আপনি এখনই বই করুন। পঞ্চাশ বছর বয়সে না হয় এই বইটিই আবার রি-রাইট করবেন।'
অনেকটা নিম রাজী হয়ে আমি তাকে দেই ১০টি লেখা। রাজিব আরো তিনটি লেখা যোগ করে গত বইমেলায় বের করে ছোট্ট একটি পেপার ব্যাক 'রিপোর্টারের ডায়েরি: পাহাড়ের পথে পথে'। বইটি নিয়ে আমার পাহাড়ি বন্ধু মহল খুবই আগ্রহ প্রকাশ করে।...প্রবাসী বন্ধুদের অনেকেই বইটি পেতে চান সেরীন তো বটেই। ...
আমারব্লগ ডটকম কর্তৃপক্ষকে ছো্ট্ট একটি ইমেইল দিতেই তারা তড়িৎ দ্রুততায় ফিরতি জবাব দিয়ে এটি ই-বুক প্রকাশে রাজী হয়। প্রকাশক বন্ধু রাজিব নূরের অনুমোতি ক্রমে প্রচ্ছদ ও পুরো বইয়ের পাণ্ডলিপি আমু কর্তৃপক্ষকে মেইল করে দিতেই এটি ই-বুক হিসেবে প্রকাশ হয়ে যায়। স্কীকার করি, নিজের কীর্তি দেখে নিজেই খানিকটা লজ্জিত হই। ...
তো আবারো লেখালেখি চলে-- নিউজ-স্টোরি ও ব্লগিং। ব্লগবাড়িতে নিরস লেখালেখির বাইরে দম ফাটানো কিছু হাসির লেখা পড়ে আমিও লিখতে শুরু করি গণমাধ্যমের কষ্টকর পেশা-জীবনের কিছু মজার লেখা। 'প্রেস জোকস' নামের ওই ধারাবাহিক লেখায় সাড়াও পাই বেশ। এরই মধ্যে সাংবাদিক ও ব্লগার শওকত হোসেন মাসুম ভাই ধরে বসেন, 'বিপ্লব, আপনি এটি বই করেন, পাবলিক খুব খাবে।' আমি পিছলে যাওয়ার চেষ্টা করি, 'বলেন কি স্যার? পাবলিককে এই সব অখাদ্য খাইয়ে আইসিডিডিআরবি'র ওপর চাপ সৃষ্টি করে লাভ কি? তাছাড়া প্রেস ক্লাব-রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গেলে সাংবাদিকদের ধোলাই খাব না কি!'...
একদিন ফোন করে বসেন, সহব্লগার ও 'শুদ্ধস্বর'এর আহমেদুর রশিদ, টুটুল ভাই। 'বিপ্লব, অনেক ব্লগিং হয়েছে। আপনি প্রেস জোকস বন্ধ করুন। আমি এটি বই করতে চাই।'...
আমার তখন ভিমড়ি খাওয়ার দশা! আবারো ফোনাফুনি চলে, যে শোনেন সে-ই হইহই করে ওঠেন, 'আরে প্রেস জোকস? হু...হু...ওটা দারুন চলবে।'
টুটুল ভাইয়ের উপর্যুপরি (সরি, এরচেয়ে যুৎসই শব্দ খুঁজে পেলাম না) হুমকি-ধামকিতে শেষে 'প্রেস জোকস' পর্বটি আপাত বন্ধ রাখি। আরো অসংখ্য জোকস সংগ্রহ করে একটু একটু করে লিখে তাকে মেইল করতে থাকি। তবে বই বলে কথা। তাই অনেক জোকসের হাস্যরসটুকু ঠিক রেখে নাম-ধাম ও স্থান-কাল-পাত্র বদলে দিতে হয়।...
'প্রেস জোকস' নামের বইটি বেরুচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে একুশে বই মেলায়। এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন সহকর্মী সুমন। বইটিতে থাকছে তার আঁকা মজার মজার কার্টুন-ইলাস্ট্রেশনও। প্রাথমিকভাবে এর দাম ধরা হয়েছে একশ টাকা।
তো ব্লগাইটিস আমাকে লেখক বানিয়ে ছাড়বে নাকী, অ্যাঁ?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:২৪