জ্যোৎস্নাকালের অপেক্ষায় তৌকীর
আমি কখনোই শুধুমাত্র টিভি নাটকের রোমান্টিক নায়ক হিসাবে থাকতে চাইনি। এ কাজে তৃপ্ত হইনি । আমি চেয়েছি আরো কঠিন কিছু করতে। আমার লক্ষ একটু কঠিন দিকেই এগিয়েছে। বললেন তৌকীর আহমেদ। এটা কোনো রূপকথার গল্প নয়। মানসম্পন্ন বেশ কিছু কাজ দিয়ে তৌকীর আহমেদ তার জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন।
অভিনেতা ও পরিচালক দুমাধ্যমেই সফলতাকে মুঠোবন্দি করে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন সাফল্যের দারুচিনি দ্বীপে। তবে তার এ সফলতা একদিনে আসেনি। এর পেছনে রয়েছে অনেক কাঠখড় পোড়ানোর গল্প। মঞ্চ ও টিভি নাটকে দীর্ঘবছর নিজের অভিনয় দক্ষতা ও পরিচালকের সফল ভূমিকা প্রদর্শনের মাধ্যমেই তিনি আজকের খ্যাতিমান অভিনেতা পরিচালক তৌকীর আহমেদ।
তার কাজ নিয়ে একটু ভিন্নরকম ভাবনার কথা এভাবেই বললেন তৌকীর আহমেদ, আমি কখনোই শুধুমাত্র টিভি নাটকের রোমান্টিক নায়ক হিসাবে থাকতে চাইনি। এ কাজে তৃপ্ত হইনি । আমি চেয়েছি আরো কঠিন কিছু করতে। আর সেরকম একটি জায়গা থেকে মঞ্চ পরিকল্পনা, মঞ্চ নাটক নির্দেশনা, মঞ্চ নাটক রচনা-এই কাজগুলো আমি করে আসছিলাম। সব মিলিয়ে আমার লক্ষ একটু কঠিন দিকেই এগিয়েছে।
এখন যেমন চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি, আমি জানি এটা খুব কঠিন কাজ। এর চেয়ে টিভি নাটকে অভিনয় করলে অনেক টাকা, সুনাম পাওয়া যায়। অনেক কষ্ট করে একটি ছবি বানানোর পর সেটা যেহেতু বেশিরভাগ দর্শককে তৃপ্ত করেনা, সুতরাং এ কাজ দিয়ে বেশিরভাগ দর্শকের কাছে পৌঁছানো খুব কঠিন।
জয়যাত্রা, রূপকথার গল্প, ছবির নাম হয়তো অনেকেই জানেন না। আবার দারুচিনি দ্বীপ নিয়ে যখন এক্সপেরিমেন্ট করলাম, ছবিটি একটু সহজ করে বানালাম, তখন দেখেছি সেটা একদল দর্শককে মুগ্ধ করল। রেকর্ড পরিমাণ ভিসিডি, ডিভিডি বিক্রি হলো। এখন আমার মনে হয় দারুচিনি দ্বীপ যদি টিভিতে প্রিমিয়ার না হয়ে শুধু সিনেমা হলে রিলিজ হতো তাহলে তা আরো দর্শক টানতে পারতো।
আঁতুর ঘরে ফেরা
পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে আবার নিজের অভিনয়ের আঁতুর ঘরে ফিরছেন তৌকীর আহমেদ। প্রতিসরণ নাটকটি আবার মঞ্চে আনছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তৌকীর আহমেদ জানালেন, এটা যখন প্রথম মঞ্চে এনেছিলাম, তার পর পরই আমি জয়যাত্রা ছবির কাজে হাত দিই। জয়যাত্রা নির্মাণ করতে আমার ১০ মাস সময় লাগে।
তারপর আরো জটিলতা তৈরি হয়, আর্থিক সংকটে পড়ি। এটাকে বলা যায় জয়যাত্রার আর্থিক অসফলতা। তবে ছবিটি এক শ্রেণীর দর্শকে মুগ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। এরপর কয়েক বছর মঞ্চে কাজ করা হয়নি। এই মুহূর্তে দলের (নাট্যকেন্দ্র) একটা প্রযোজনার প্রয়োজন ছিল। দলের সিদ্ধান্তেই আবার প্রতিসরণ মঞ্চে আনছি। মূলত নিজেকে ঋদ্ধ করতেই আমার এ মঞ্চে ফেরা।
আর মঞ্চ আমার অনুশীলনের জায়গা। সৃষ্টির জায়গা। এখান থেকেই আমি তৈরি হয়েছি। সেই দায়বদ্ধতা যেমন আছে তেমনি সেখান থেকে এখনো শেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সুতরাং নিজের প্রয়োজনেই মঞ্চে ফিরেছি। কোন কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নয়।
তৌকীরের কড়া আলাপ
তৌকীর আহমেদ, মোরশেদুল ইসলাম, আবু সাইয়ীদ যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, তখন সেটাকে অনেকেই বিকল্পধারার চলচ্চিত্র বলে থাকেন। এখন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেয়ার যে প্রস্তুতি চলছে সেখানেও শ্রেষ্ঠ বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের ক্যাটাগরি রয়েছে বলে জানা গেছে। আচ্ছা, চলচ্চিত্রে কী বিকল্পধারা বলে কিছু আছে? কিছুটা ধীর এবং দৃঢ়লয়ে তৌকীর আহমেদ বলেন, চলচ্চিত্রে বিকল্প বা সকল্পধারা বলে কিছু নাই।
যদি মান বিচার করতে হয়, তবে চলচ্চিত্র দেখেই তা করতে হবে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্ষেত্রে বিকল্পধারার চলচ্চিত্র ধরে বিবেচনা করা হলে তা ভুল হবে। চলচ্চিত্র ভিন্ন অবজেকটিভ থেকে তৈরি হতে পারে। কারো লক্ষ থাকবে বাণিজ্য, কেউ চ্যানেলের সুনামের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারেন, কেউ নিজেকে প্রকাশের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এক্ষেত্রে বিভাজনে যাওয়া উচিত নয়।
বিভাজন হতে পারে কে কোন লক্ষে চলচ্চিত্র নির্মাণ করল তা নিয়ে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলো কিন্তু বাণিজ্যিক ধারা থেকে বের হয়ে আসেনা। সেটা মানবিকতা, মানুষের মূল্যবোধ, জীবন, সংগ্রাম, মানুষের বিশ্বাসের জায়গা থেকে উঠে আসে। সারাবিশ্বের ভাল ছবি বলতে সেগুলোকেই বোঝায়।
বাণিজ্যিক ছবিও ভাল হতে পারে। যিনি বাণিজ্যের কথা চিন্তা না করে ভাল ছবি বানানোর চেষ্টা করেন, তাকে কেউ বিকল্পধারায় ফেলে দিবেন সেটা হতে পারেনা। কারণ তিনিও চলচ্চিত্র বানানোরই চেষ্টা করেছেন। হয়তো দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ধরণের চলচ্চিত্র দেখার জন্য অনেক দর্শক তৈরি হয়নি এ দেশে। হয়তো মানুষের রুচি, শিক্ষা, বোধ সেই জায়গায় এখনো যায়নি। সেখানে কিন্তু দর্শকদেরও দুর্বলতা আছে। তাদেরও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। তবে আমি আশাবাদী এ ধরণের চলচ্চিত্রের দর্শকের সংখ্যাও বাড়বে। আমি আছি সেই জ্যোৎস্নাকালের অপেক্ষায়।
শঙ্খবাস-এর পর জ্যোৎস্নাকাল
বিপাশা হায়াতের রচনায় তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় শঙ্খবাস ধারাবাহিকটি ইতোপূর্বে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। আবার বিপাশা হায়াত রচিত জ্যোৎস্নাকাল নামের একটি ধারাবাহিক নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হচ্ছেন তৌকীর আহমেদ। নতুন এ ধারাবাহিকটি নিয়ে তার অনুভূতি জানাতে গিয়ে তৌকীর আহমেদ বলেন, এর মধ্যে এ ধারাবাহিকের ২৬ পর্বের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আগামী ২৯ জুলাই থেকে এটি এটিএন বাংলায় প্রচার হবে। দর্শকদের যদি সিরিয়ালটি ভাল লাগে তাহলে এর পর্ব সংখ্যা বাড়বে। আমি যত্ন সহকারে সিরিয়ালটি নির্মাণের চেষ্টা করেছি। বিপাশার রচিত শঙ্খবাস ধারাবাহিকটির মতো এটিও দর্শকদের ভাল লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। নাট্যকার হিসেবে বিপাশার মূল্যায়ন করতে গিয়ে তৌকীর আহমেদ আরো বলেন, বিপাশা নিশ্চয়ই ভাল লেখে।
আর যদি সে ভাল না লিখতো তাহলে আমি ওর স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করতাম না। ও ভাল লিখেছে বলেই আমি ওর স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করতে উৎসাহী হয়েছি। ও যখন নাটক রচনা করে তখন বাসায় তা নিয়ে আমাদের মাঝে আলোচনা হয়। কখনো কখনো মতপার্থক্যও দেখা দেয়।
আলোচনার এক পর্যায়ে তার সমাধানও মেলে।
বিপাশার স্ক্রিপ্টই আমার জন্য সুবিধাজনক। ভাল স্ক্রিপ্টের অভাব তো রয়েছেই। আর এমতাবস্থায় আমার বাসায়ই ভাল একজন নাট্যকার রয়েছে- এটাতো আমার জন্য বাড়তি পাওয়া। বিপাশার লেখা নাটকের চরিত্র নির্মাণ, গল্পের গভীরতা, গল্পের মোচড় খুব সুন্দর।
আলোচিত ব্লগ
পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?
মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন
দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?
দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখস্তান.....
শেখস্তান.....
বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেকালের বিয়ের খাওয়া
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন