আগের ব্লগ দেখার জন্য ক্লীক করুন
সময় কি সত্যিই আপেক্ষিক? (প্রথম পর্ব)
পূ্র্বের পর
এতটুকু আলোচনা করার পর আমরা স্পষ্টই ধারণা করতে পারি, কোনও বস্তুর স্থিতি, গতি সবটাই নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষ অর্থাৎ আপেক্ষিক। তাহলে স্থিতি ,গতির বর্ণনায় একমত হয়া যায়, এমন নির্দেশতন্ত্র পাই কোথা থেকে? এর তেমনটি যদি নাই পাওয়া যায় তবে গতিসূত্রই বা প্রয়োগ হবে কিই করে?
উপায় বার হল একটি, নির্দেশতন্ত্রের সংজ্ঞাকেই বদলে দেয়া হল। যে নির্দেশতন্ত্রে নিউটনের গতিসূত্র সত্য, সেই নির্দেশতন্ত্রকেই স্থির বা জড়ত্ত্বীয় নির্দেশতন্ত্র বলে আখ্যা দেয়া হল। আর কোনও স্থির নির্দেশতন্ত্রের সাপেক্ষে সমবেগে ধাবমান নির্দেশতন্ত্রও অভিহিত হল জড়ত্ত্বীয় নির্দেশতন্ত্ররূপে। অর্থাৎ ব্যাপারটি দাঁড়ালো এইরূপ – কোনও ঘটনা গতিসিটর দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হলে সেই ঘটনাটি যে নির্দেশতন্ত্রের সাপেক্ষে ব্যাখ্যা করা হচেছ, সিটিকে ধরে নয়টি হবে স্থির বা ধ্রুবক। বিজ্ঞানী নিউটন তাই ঘোষনা করেছেন – বলবিদ্যার সূত্রগুলি সব জড় কাঠামোর দর্শকের কাছে তখনই অভিন্ন, যখন সেই সব কাঠামোগুলি ইকে অন্বয়ের সাপেক্ষে সমগতিতে ধাবমান হয়।
কিন্তু কোনও সমাধান এই সমস্যার জন্যয় হয়েও হলনা। প্রশ্ন এসেই গেল এক নির্দেশতন্ত্র থেকে আরেক নির্দেশতন্ত্রে যাওয়া যাবে কীভাবে?
এখন একটি পরীক্ষার সাহায্যে এতি বোঝানো যেতে পারি। তাই এর জন্য আসা যাক ট্রেনের গল্পে।
C ও D দুটি ট্রেন বাইরের দর্শকের সাপেক্ষে পরস্পরের বিপরীতে সমান্তরালে X কিমি/ঘন্টা এবং Y কিমি/ঘন্টা বেগে ধাবমান। এই বেগ তো বাইরের ভূপৃষ্ঠ নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষে। কিন্তু C ও D ট্রেনের যাত্রী ট্রেনের নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষে একই বেগ কী দেখবে? মোটেই না। C ও D এর মধ্যে থাকা যাত্রী একে অপরকে যে গতিবেগে দেখবেটা হল (X+Y) কিমি/ঘন্টা। যদি C ও D ট্রেন একই দিকে যেত তাহলে এই বেগ হত (X-Y) কিমি/ঘন্টা যা হল ট্রেন D এর সাপেক্ষে C এর বেগ। আবার C এর সাপেক্ষে D এর বেগ হত (Y-X) কিমি/ঘন্টা।
এভাবেই গড়ে উঠল গ্যালিলীয়ো রূপান্তর নীতি যার সাহায্যে এক নির্দেশতন্ত্র থেকে চলে যাওয়া সম্ভব হল অপর নির্দেশতন্ত্রে।
সমস্যার বন্ধুরতা কিন্তু সেই থেকেই গেল। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল আবিষ্কার করলেন তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গতত্ত্ব। পরীক্ষায় প্রমাণিত হল তার তত্ত্ব। কিন্তু গ্যালিলীয়ো রূপান্তর নীতির প্রয়োগে বিভিন্ন জড় কাঠামোয় সমীকরণগুলো আর রইল না এক। এর কিছুকাল পড়েই বিজ্ঞানী হার্ৎস আবিষ্কার করলেন তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের বেগ আলোর বেগের সমান অর্থাৎ শূন্য মাধ্যমে ৩X১০^৮ মিটার/সেকেন্ড। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে এই বেগ কর সাপেক্ষে?
যাবতীয় সমস্যার সমাধান রইল দুটি সম্ভাবনায় ----------
(ক) ম্যাক্সওয়েলের তরঙ্গতত্ত্ব কোনও একটি বিশেষ কাঠামোর সাপেক্ষেই ঠিক, যা কাঠামোর তরঙ্গের বেগ ৩X১০^৮ মিটার/সেকেন্ড গড়ে উঠল ইথার ধারণা।
(খ) ম্যাক্সওয়েলের তরঙ্গতত্ত্ব ভুল। এর সংশোধন প্রয়োজন।
(গ) নিউটনের গতিসূত্র ও গ্যালিলীয়ো রূপান্তর নীতির সংশোধন দরকার।
শুরু হল ইথার সন্ধান। কিন্তু মাইকেলস মোরলির পরীক্ষায় ধ্বংস হল ইথারের।
ইতিমধ্যে ১৮৯৩ স্মলে আইরিশ বিজ্ঞানী জর্জ ফিটজেরাল্ড বললেন, সমস্ত বস্তুর দৈর্ঘ্যই তার গতির অভিমুখে সংকুচিত হয় এবং সংকোচনের পরিমাণ বেগের সমানুপাতিক। ফিটজেরাল্ডের পথ অনুসরণ করেই ডাচ বিজ্ঞানী হেনড়িক লরেন্স বললেন ফিটজেরাল্ড সংকোচনে বৃদ্ধি পায় বস্তুর ভর। তৈরি হল লরেন্স-ফিটজেরাল্ড রূপান্তর সমীকরণ।
কিন্তু সমস্যার সমাধান কোথায়? সমাধানে এগিয়ে এলেন বিংশ শতকের প্রণাময় বিজ্ঞানী Albart Einstein। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত ‘‘Special Theory of Relativity’’’। ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের অভিন্নতা ( পদার্থবিদদের ভাষায় Covrient ) প্রকাশের স্বার্থে চরম সময়ের ধারণা সম্পর্কে তিনি তুললেন প্রশ্ন। নিজ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে বললেন দুটি স্বীকার্যের কথা—
(ক) পদার্থবিদ্যার সকল নিয়ম সকল জড় কাঠামোতে অভিন্ন, বিশেষ কাঠামো বলে কিছুই নেই।
(খ) পদার্থ শূন্যস্থানে আলোর বেগ নির্দেশতন্ত্র নিরপেক্ষ তথা ধ্রুবক।
এই দুটি স্বীকার্যই প্রতিষ্ঠা করল তড়িৎচুম্বকীয় বলবিদ্যা। লরেন্জ রূপান্তরের সময় পরিণত নির্দেশতন্ত্র সাপেক্ষ, তথা আপেক্ষিক।
(চলবে)