আমার ভোট আমি দেব
ঘরে বসে মোবাইলে দেবো- শ্লোগানে মূখর হোক তবে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
প্রযুক্তিতে হোক অবিশ্বাসের নাশ: সামাধান-ভোট এপস: “দ্বাদশ নির্বাচন” বা “ইলেকশন বিডি২০২৪
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোলে শুধু দেশ নয় আন্তর্জাতিক বিশ্বও বেশ সরব। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইইউ সহ সকলের ঘনঘন সফর, নানা রকম পরামর্শ প্রদান অব্যহত রয়েছে। সক্রিয় হুমকি মার্কিন ভিসা নীতিও কার্যকর হয়েছে গত শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর থেকে।
এদিকে সরকার-বিরোধীদল পক্ষে বিপক্ষে যার যার প্রযোজ্য যুক্তিতে সকলেই সরব। মন্তব্য পাল্টা মন্তব্য আর হুমকি ধামকিতে বেশ সরগরম রাজনীতির মাঠ।
বিদেশীদের চাপেই হোক বা সরকারের নির্বাচন কৌশলে হোক বিএনপি প্রায় একযুগ পর প্রকাশ্যে মাঠে সরব। গুমাতংক, পুলিশী হরয়ানীর ভয় মুক্ত হযেই মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে সংঘাত শংকা তত বাড়ছে। বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র্রমেদিনী চেতনায় দু’দলই অনড় থাকলে আখেরে মাঠে মারা যাবে আমজনতা।
আমজনতার অংশ হিসেবে অধম আমজনতার জানমাল রক্ষার্থেই নির্বাচন নিয়ে মধ্যম পন্থায় একটা বিকল্প ভাবনা/প্রস্তাব রাখতে চাই।
তার আগে এক নজরে দেখে নিই নির্বাচন নিয়ে কি কি সমস্যা রয়েছে-
নির্বাচনের সমস্যা সমূহ:
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা’ প্রকাশ করেছে ইসি। তাতে ওই তিনটি বিষয়ের বাইরেও ইসি যেসব প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে রয়েছে
1. অর্থ ও পেশিশক্তির নিয়ন্ত্রণ;
2. নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা;
3. সব দলের নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ করানো;
4. প্রার্থীদের নির্বিঘ্ন প্রচার;
5. জাল ভোট
6. ভোটকেন্দ্র দখল বা ব্যালট ছিনতাই রোধ;
7. প্রার্থী বা এজেন্ট বা ভোটারদের অবাধে ভোটকেন্দ্রে আসা;
8. ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি;
9. নির্বাচন–সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান;
10. পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োগ;
11. পর্যাপ্তসংখ্যক নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োগ এবং
12. নিরপেক্ষ দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষকের ব্যবস্থা রাখা।
এসব প্রতিবন্ধকতা উত্তরণে ১৯টি উপায়ের কথাও বলেছে ইসি।
তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসি কীভাবে আস্থার সংকট কাটাবে, ইভিএমে আস্থা আনবে, পুলিশ–প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে, নির্বাচনের সময় হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ করবে, এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে—কর্মপরিকল্পনায় এসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, বড় প্রতিবন্ধকতাগুলো উত্তরণে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের দিকেই তাদের তাকিয়ে থাকতে হবে।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ইসি প্রকাশ করেছে তাদের পাঁচ লক্ষ্য
ইসি বলেছে, আগামী বছরের ডিসেম্বরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। কর্মপরিকল্পনায় নির্বাচনের পাঁচটি লক্ষ্যের কথা বলেছে ইসি। সেগুলো হলো অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাখ্যায় কমিশন বলেছে, ‘ইচ্ছুক সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ।’
‘স্বচ্ছ’–এর ব্যাখ্যায় ইসি বলেছে, তাদের সব কার্যক্রম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে, পর্যাপ্তসংখ্যক দেশি–বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ এবং সংবাদকর্মীদের অবাধে সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ দেওয়া হবে। আর গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাখ্যায় তারা বলেছে, নির্বাচনের ফলাফল সব ভোটার ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাজে গ্রহণযোগ্য প্রতীয়মান হওয়া।
কর্মপরিকল্পনার প্রথমেই ইসি বলেছে ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা সৃষ্টি’ করা। তবে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে বিশেষ কোনো উদ্যোগের কথা বলেনি তারা। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অনাস্থা কেটে যাবে বলে মনে করে ইসি।
ইভিএম নিয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্য
জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছে ইসি। এখন তারা বলছে, যন্ত্রটির প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। কোন প্রক্রিয়ায় ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা নিয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্য এসেছে ইসির কাছ থেকে।
এর আগে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, ইসি নিজস্ব বিবেচনায় ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত মুখ্য বিবেচনায় ছিল না।
নিজেদের কর্মপরিকল্পনায় ইসি দাবি করেছে, গত জুলাইয়ে অংশ নেওয়া সংলাপে ২৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৭টি দল ইভিএমের পক্ষে বলেছে, ১২টি দল বিপক্ষে। বেশির ভাগ দলের মত ইভিএমের পক্ষে থাকায় এটি ব্যবহার না করা যুক্তিসংগত হবে না বলে মনে করে কমিশন।
তাই কমিশন উভয় পক্ষের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যুক্তিসংগত মনে করে। যদিও সংলাপের শেষ দিন সিইসি নিজে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বলেছিলেন, ‘অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না।’
কর্মপরিকল্পনায় ইসি বলেছে, ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরের আসনগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক মতানৈক্যের কথা তুলে ধরে যন্ত্রটির পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরা হয় কর্মপরিকল্পনায়। তাতে বলা হয়, বায়োমেট্রিক (যে বৈশিষ্ট্যের জন্য কাউকে শনাক্ত করা হয় সেই পদ্ধতি) যাচাই করে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি থাকায় জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। ইভিএমে একজন ভোটার একাধিকবার ভোট দিতে পারে না।
ইভিএমে কারচুপি হয়—অভিযোগটি শুধু মনস্তাত্ত্বিক ধারণা থেকে করা হয় বলে দাবি ইসির। তারা বলেছে, এ বিষয়ে ইসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় প্রমাণ করার জন্য বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ অভিযোগটি প্রমাণ করতে পারেনি।
ইসি বলছে, ব্যালটে ভোট হলে কেন্দ্র দখল করে কারচুপি হয়। তাহলে যে ১৫০ আসনে ব্যালটে ভোট হবে সেগুলো নিয়ে শঙ্কা থেকে যায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, যে আসনগুলোতে ইভিএমে হবে সেগুলো নিরাপদ করা হলো। বাকি আসনে ফোর্স (আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্য) বেশি খাটানো যাবে। ইসির হাতে তিন–চার বছর সময় থাকলে ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট করা হতো। ৩০০ আসনে ব্যালটে ভোট হলে ‘রিস্ক’ (ঝুঁকি) অবশ্যই বেশি। এমনও হতে পারে, সে ক্ষেত্রে একাধিক দিনে ভোট করা হবে।
পুলিশ–প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ
নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধক বলে মনে করছে ইসি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেখা গেছে, পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি ইসি। ওই সব নির্বাচনের আগেও ইসি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছিল। ইসি এবার কীভাবে পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, কারও বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে অনীহা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোটের সময় ইসি পুলিশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, নাকি আগের মতো আরেকটি নির্বাচন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ‘সরকার, পুলিশ আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সেটাই বলা হয়েছে। আমরা এ কথাও বলেছি, আমরা যদি দেখি আমাদের দায়িত্ব আমরা সঠিকভাবে পালন করতে পারছি না, যে মুহূর্তে থেকে, সে মুহূর্তে আমরা দায়িত্ব পালন করব না।’
নির্বাচনের আগে হয়রানিমূলক মামলা করা হবে না, ইসি এই নিশ্চয়তা দিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, যে পরিস্থিতি ইসি সৃষ্টি করতে চায়, সবার সহযোগিতা পেলে, সে রকম পরিবেশ হলে হয়রানিমূলক মামলা হবে না।
সমুদয় সমস্যা সমাধানে সাত করণীয় স্থির করেছে ইসি-
ইসির কর্মপরিকল্পনায় আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আরও সাতটি করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো
1. সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ,
2. নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ,
3. বিধিবিধান অনুযায়ী ভোটকেন্দ্র স্থাপন,
4. নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত দলের নিরীক্ষা,
5. সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা বৃদ্ধি,
6. নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহার এবং
7. পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন ও নবায়ন কার্যক্রম।
এই কাজগুলো কখন, কীভাবে করা হবে, তার একটি রূপরেখা কর্মপরিকল্পনায়ও দেওয়া হয়েছে।
ইসির কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোতে িএক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসি কীভাবে আস্থার সংকট কাটাবে, তার জন্য একটি রোডম্যাপ (পথনকশা) দরকার। তারা জনমত উপেক্ষা করে বলছে, ইভিএমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তাদের উচিত এখনই ইভিএম পরিহার করা। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তার ওপর নির্ভর করে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা কেমন হবে। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এখন থেকেই বিরোধী দলের ওপর যেভাবে দমন–পীড়ন হচ্ছে, তাতে তারা নির্বাচনেই যেতে পারবে না। মৌলিক সমস্যা সমাধান না করে ইসি যে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, তা একটি ব্যর্থ নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে দেশকে।
গ্লোবালাইজেশনের কারণে এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিশ্ব রাজীনিতির খেলা। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব স্বার্থ এবং দেশজ দৃষ্টিভঙ্গিতে তারাও একটা মেজর পার্ট হয়ে দাড়িয়েছে।১৫ বছরের টানা শাসনের অন্ধকার অংশ হিসেবে যে বাস্তবতা গুলো রয়েছে, যা দেশীয় নানা কালা কানুন এবং ভয়াতংকের সংস্কৃতির কারণে মানুষ নিরবে বাধ্যতামূলক হজম করে যাচ্ছে নিরবে রয়েছে সেই বাস্তবতা। ফলে বিদেশী হস্তক্ষেপে তারা অন্তরিক ভাবে খুশি না হলেও অস্তিত্বের প্রয়োজনে বা হার্ডকোর বাস্তবতায় নিরবে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকটা দাগ থেকে যদি ভাল কিছু হয়- তবে দাগই ভাল; চেতনায়।
তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু
বাংলাদেশরে রাজনীতি এবং রাজনীতিকদের মন্দচর্চার ইতিহাস জন্মলগ্নথেকেই। পারষ্পারিক অবিশ্বাসের সলিড রুপরেখা হলো তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল, অবরোধ করেছে। তখন খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েই দাবি মেনে নিয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৪টি নির্বাচন হয়েছিল, তাতে কোনো প্রকার প্রশ্ন ওঠেনি। যদিও সূক্ষ কারচুপি, স্থুল কারচুপির নানা অভিযোগ নিরন্তর ছিলোই। আমি না জিতলেই সকল দোষ পদ্ধতির চেতনায়।
পরে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করেছে। এরপর থেকে ১৪ ও ১৮ সালে সার্বিক মানে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু কোনো নির্বাচন বা ভোট হয়নি। বহুল আরোচিত মধ্যরাতের নির্বাচন তো পুরো ব্যবস্থাটাকেই প্রশ্নের মূখে ফেলে দিয়েছে।এরপরে দেশের ইতিহাসে কী হয়েছে দেশের মানুষ তা জানে।
আন্তর্জাতিক চাহিদা ও বাস্তবতা:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের সফরে সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সুশীল সমাজের সাথে আলোচনায় বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার অভিন্ন চাওয়া পরিষ্কার।
তবে নির্বাচন কিভাবে কোন উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে তার কোনো পথনির্দেশনা এখনো কারো সামনে নেই। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দল এই লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংলাপের ওপর প্রাধ্যন্য দিলেও সরকারি দল দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করার কথা আগের মতোই জোর দিয়ে বলে আসছে।
অন্য দিকে বিএনপি তার সমমনাদলগুলো বলছে, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই লক্ষ্যে বিদেশী কূটনীতিকদের সফরকালীন বিএনপি ও সমমনারা সরকারের পতন ও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবির আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।
দুই পক্ষের এই অনড় অবস্থানের মধ্যেই সঙ্কটের সমাধান কোন পথে হতে- এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ঘোষিত এই ভিসানীতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশী নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু-সহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল গত ১১ জুলাই থেকে তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফর করে ১৪ জুলাই ভোরে দেশ ত্যাগ করেছেন।
উজরা জেয়া জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, আমি যে বার্তার ওপর জোর দিতে চাই তা হলো-সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও ন্যায্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার জন্য সব পক্ষকে আহ্বান জানানো। উজরা জেয়া আরো বলেন, আসুন আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দেই।
অতি সম্প্রতি ইইউ তাদের পর্যবেক্ষক দলের প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা পর্যবেক্ষক দল পাঠাবেনা বলে ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে।
বিকল্প ভাবনা বা প্রস্তাবনা
এহেন অচলাবস্থায় – সকল শংকাকে দূর করতে প্রযুক্তির ব্যবহারে সমাধান হিসেবে আমার এই প্রস্তাবনা। ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতেই হোক সমস্যার সমাধান। প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে যে নিশ্চয়তা গুলো থাকবে-
• জনগণের ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা
• তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা
• ভোট চুরি, জালিয়াতির শংকা না থাকা
• ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত ডিজিটালাইজেশনের ব্যবহারিক চর্চা
• আন্তর্জাতিক/জাতিসংঘের সহযোগিতা থাকবে ফলে নির্বাচনের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা।
অনলাইন ভোটিংয়ে হোক অচলাবস্থার অবসান।
আমার ভোট আমি দেব
ঘরে বসে মোবাইলে দেবো- শ্লোগানে মূখর হোক তবে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
ধারনার সপক্ষে কিছু অনুতথ্য:
বাংলাদেশে প্রায় ১৬ কোটি সীম ব্যবহারকারী রয়েছে। যা বংলাদেশের জনসংখ্যার কাছাকাছি। আর প্রায় প্রতিটি ফোনে ২ টি করে সীম রয়েছে । বাংলাদেশে আনঅফিশিয়াল ফোনের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি এর কাছাকাছি । সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) তাদের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী গ্রামীণফোনের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার, রবির ৪ কোটি ৯০ লাখ ৪ হাজার, ৩ কোটি ৫২ লাখ ৩৯ হাজার এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টেলিটকের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৪৮ লাখ ৬৮ হাজার।
ফলে মোবাইল ব্যবহারের সহজলভ্যতা প্রশ্নাতীত। যা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক বৈকি।
মোট ভোটার কত?
জাতীয় ভোটার দিবসে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার ২ মার্চ ২০২৩ এ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্তৃক প্রকাশিত ভোটার তালিকায় বর্তমানে দেশের মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন।
আমাদের প্রস্তাবনা:
অনলাইনে/এপসের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের জন্য ইসির এনআইডি সার্ভারের সাথে সংযুক্ত একটি নিজস্ব সার্ভার বেইজড ওয়েবসাইট ও এ্যাপস নির্মান হতে পারে সেই সহজ সমাধান। “দ্বাদশ নির্বাচন” বা “ইলেকশন বিডি২০২৪” বা প্রযোজ্য গ্রহণযোগ্য যে কোন নাম হতে পারে।
ভোট গ্রহণের এই পদ্ধতিতে-
• প্রি-রেজিষ্ট্রেশন পদ্ধতি সহ তিন/পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
• ইসির ৫ লক্ষ্য- অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে।
• এই পদ্ধতি প্রয়োগে সফল হলে ভোট কেন্দ্র দখল, বুথ দখল, সহ সকল প্রকার পেশিশক্তির অপ-ব্যবহার থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
• মানুষ নিরাপদে নিজ ঘরে বসে ভোট প্রদান করতে পারবে।
• ভোট প্রদানের হার বেড়ে যাবে।
• তিন/পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় এটাতে জালিয়াতি বা ভোট চুরি সম্ভব হবে না।
• প্রচলিত ভোটের চেয়ে ব্যায় সাশ্রয়ী হবে।
একেবারেই আইটি নিরক্ষর, হত-দরিদ্র, বা বিষয়টি বুঝতে অক্ষমদের জন্য সীমিত আকারে কেন্দ্রে বুথের বদলে আইটি বেইজড ভোট প্রদান ডেস্ক রাখা যেতে পারে।
সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার জন্য অনলাইন সাইট, সার্ভার এবং এ্যপস কন্ট্রোল রুমের নিয়ন্ত্রনে ইসি, ইউএন, ইইউ প্রতিনিধি, প্রত্যেক দলের পক্ষ থেকে দলীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি, সুশীল প্রতিনিধি, সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রক প্যানেল গঠন করা যেতে পারে। প্যানেলের অধীনে প্রচলিত নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্পেশালাইজড আইটি টিম এর সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন।
টেকনিক্যাল কারণেই বিস্তারিত পদ্ধতি উহ্য রইলো। আগ্রহী সরকার, ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান বা স্টেক হোল্ডারদের সাথে প্রকল্প প্রস্তাবনার বিস্তারিত আলোচনা হতেই পারে।
তবে এই পদ্ধতিতে নিশ্চিতভাবেই নিরাপত্তা, জালিয়াতি প্রতিরোধ সহ একটা সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব বলেই মনে করি। বিশেষত চলমান অচলবস্থার কারণেই এই বিকল্প প্রস্তাবনা বা ভাবনা।
কেননা সুস্থ স্বাভাবিক, গণতান্ত্রিক দেশেতো খুব সাধারণ ভাবেই সুস্থ এবং সুষ্ঠু ভাবেই ভোট হয় দেশে প্রচলিত পদ্ধতিতেই। কিন্তু আমরা বোধকরি নো ওয়ে অভ রিটার্নের এক অস্বাভাবিকতার চূড়াতেই বসে আছি।যেখান থেকে পতন ঘটলে তা দেশ, জাতি, জনগণ কারো জন্যই সূখকর কিছু হবে না।
আর তার সমাধানেই এই ইউটোপিয়ান ভাবনা। আপনাদের সকলের সমালোচনায়, সমৃদ্ধ মতামতে ঋদ্ধ হোক ভাবনা।
তথ্যসূত্র: নির্বাচন কমিশন, উইকিপিডিয়া, প্রথম আলো, বিটিআরসি, অনলাইন
ছবি কৃতজ্ঞতা: https://www.soteria-int.com/
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৩৮