ইউজেস অব রিসাইকেলড ওয়াটার ইন ডমেস্টিক ফ্লাশ ইউজেস
ভূমিকা:
পানির অপর নাম জীবন। পানি থাকলেই জীবন থাকবে। পানি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায়না। পরিবেশের প্রধান চারটি উপাদানের মধ্য অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে পানি। পানির অধিকার মানে জীবনের অধিকার ।
পৃথিবীর মোট আয়তনের চার ভাগের তিন ভাগ পানি এবং এক ভাগ স্থল। পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশই জলাভূমি হলে ও পানযোগ্য পানির পরিমাণ নিতান্তই অল্প। পৃথিবীর মোট জলভাগের শতকরা ৯৭ ভাগ কঠিন বরফ, দুই ভাগ পানঅযোগ্য সামুদ্রিক লোনাপানি এবং অবশিষ্ট এক ভাগ মিষ্টিপানি। কিন্তু এর বেশিরভাগই ময়লা আবর্জনা জীবাণু দ্বারা পরিপূর্ণ ও পানের অযোগ্য।
তাই পানযোগ্য পানির সংকট ছিল সবসময়। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ পানযোগ্য পানির জন্য নদীনালা, পুকুর, কুয়া বা অন্যান্য নিম্নস্থল যেখানে বৃষ্টির পানি জমা থাকত সে ধরনের উৎসের ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রাচীন সবকটি সভ্যতাই গড়ে উঠেছিল সুপেয় পানির উৎসের অনুকূলে। টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকায় মেসোপটেপিয়া সভ্যতা, হোয়াংহো নদীর তীরে চৈনিক সভ্যতা, সিন্ধু নদীর তীরে মহেঞ্জোদারো সভ্যতা, ইরাবতী নদীর তীরে হরপ্পা সভ্যতা, নীলনদের তীরে মিসরীয় সভ্যতা ইত্যাদি গড়ে উঠেছিল সুপেয় পানির পর্যাপ্ত জোগানের কারণেই।
যদিও পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় ৭০ ভাগ জুড়েই রয়েছে পানি। কিন্তু সব পানি ব্যবহার উপযোগী নয়। পৃথিবীর মোট জলভাগের প্রায় ৯৭.৩ ভাগ হচ্ছে লোনাপানি আর বাকি ২.৭ ভাগ হচ্ছে স্বাদু পানি। বিশ্বে স্বাদু পানির প্রায় ৬৯ ভাগ রয়েছে ভূগর্ভে আর প্রায় ৩০ ভাগ মেরু অঞ্চলে বরফের স্তুপ হিসেবে জমা আছে এবং মাত্র ১ ভাগ আছে নদী ও অন্যান্য উৎসে। পৃথিবীর মোট আয়তনের তিন ভাগের দুই ভাগ পানি হলেও পানযোগ্য পানির পরিমাণ নিতান্তই অপ্রতুল।
ছবি-১
তাই সুপেয় পানি প্রাপ্তির সুযোগ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘ পানি অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হলেও এখনো এ অধিকার থেকে বঞ্চিত ৭৬ কোটিরও বেশি মানুষ। তাই সুপেয় পানির অধিকার রক্ষা করা আজ জরুরি।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের ১৭ টি লক্ষ্যের মধ্যে ৬ নম্বরটি সুপেয় পানি। ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ নাগরিকের জন্য যা নিশ্চিত করতে হবে৷
পানি বাস্তবতাঃ
বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ মানুষের আওতার মধ্যে পানির কোনো-না-কোনো উৎস রয়েছে৷ কিন্তু এর সবটাই পানযোগ্য নয়৷
নিরাপদ বা সুপেয় পানি পাচ্ছে শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং বাংলাদেশ সরকারের জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগামের সর্বশেষ হিসেবে তা শতকরা ৮৭ ভাগ বলা হচ্ছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ফর রুর্যাল পুওর (ডরপ)-এর রিসার্চ, প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান৷ তিনি স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল-এর দক্ষিণ এশিয়ার স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য৷
এই হিসাব আমলে নিলেও এখনবো ১৩ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে না৷ তবে পানির দূষন হিসেব করলে ৪৪ ভাগ মানুষ নিরাপদ ও সুপেয় পানির আওতার বাইরে আছেন৷
২০১৫ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্টে বিশুদ্ধ পানি সংকটকে বৈশ্বিক হুমকির তালিকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শরণার্থী সংকট ও সাইবার আক্রমনের উপরে স্থান দেয়া হচ্ছে। কানাডার ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক গ্রাহাম কোগলি বলেন, ‘‘ইন্দো-গাঙ্গেয় সমতলে, অর্থাৎ, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রায় ৬০ কোটি মানুষর বাস এবং তারা খুবই অনিয়ন্ত্রিত ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ হারে মাটির নিচের পানি তুলে ফেলছে৷”অনেক গবেষণা অনুযায়ী এই বেসিনের ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রায় অর্ধেক ব্যবহারের অযোগ্য৷ কারণ, এতে লবণাক্ততা ও আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি৷ তাই এগুলো পান করা বা কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য অনুপযোগী৷
বিশ্বের ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রায় ৫০ ভাগ পান করা ও ৪০ ভাগ কৃষিতে ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর বাংলাদশে কৃষি কাজে ব্যবহৃত মোট পানির ৭৮ ভাগ পানি হচ্ছে ভূগর্ভস্ত। যে হারে পানি উত্তোলিত হয় সেই হারে প্রাকৃতিকভাবে সেই পরিমাণ পানি মাটির নিচে সেসব ভূগর্ভস্থ অ্যাকুইফায়ারে যুক্ত হয় না। ইউনিসেফের গবেষণা অনুযায়ী, বছর জুড়ে বিশ্বের অন্তত ৭৬ কোটি মানুষ প্রচণ্ড পানি সংকটে ভোগে যার মধ্যে তিন জনের এক জনই ভারতে৷
ইউনিসেফ বলছে, নদীমাতৃক দেশ বলে খ্যাত বাংলাদেশে জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ সুপেয় পানির জন্য হাহাকার করছে। শুধু তা-ই নয়, আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকিতে আছে প্রায় ৩ কোটি মানুষ। সুপেয় পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম।
ভূ-গর্ভস্তর থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে পানি ক্রমেই নিচে নেমে যাওয়ায় সারাদেশে ভূগর্ভস্তরের লবণ পানি সংমিশ্রণের আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠছে। ভূগর্ভ দিয়েই দক্ষিণের লবণ পানি ধীরগতিতে দেশের মূল ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। বাপা’র এক গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা শহরের পানির স্তর এখন সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে ১৭০ ফুট নিচে নেমে গেছে।
ছবি-২
রাজশাহীতেও পানির স্তর ১৮ থেকে ২৯ ফুট নিচে চলে গেছে। ফলে সাগরের লোনা পানি দক্ষিণাঞ্চল পার হয়ে এখন ঢাকা মহানগরীসহ দেশের মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের দিকে আসছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে মিঠা পানিভিত্তিক ইকোলজি পরিবর্তিত হয়ে লবণ পানি হয়ে যেতে পারে। ফলে বর্তমানের গাছপালা বিলীন হয়ে যাবে ও চিরচেনা শস্য বিন্যাস হারিয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।
আমাদের ভাবনাঃ
উপরের তথ্য উপাত্ত এবং বাস্তবতায় আমরা দেখতে পাচ্ছি সুপেয় পানি প্রাপ্তি, ভবিষ্যতের পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় দুর্লভ বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অবশ্য এখনই সুপেয় পানির সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে৷
এইবার ইউরোপের খরা এবং নদীর শুকিয়ে যাওয়া আমাদের ইংগিত দিচ্ছে কঠিন ভবিষ্যতের। অথচ আমরা একেবারেই উদাসীন এই বিষয়ে। আমাদের প্রাত্যাহিক জীবন যাপনে জলের ব্যবহারে আমরা স্রেফ উদাসীনতায় যে কত সুপেয় জলের যে অপচয় করি তার ইয়ত্তা নেই।
শুধু ফ্লাশ ওয়াটার নিয়েই দেখুন চিত্রটা কেমন?
প্রতিবার টয়লেট ফ্লাশ করতে গেলে নূন্যতম তিন গ্যালন পানি খরচ হয়। তবে আধুনিক টয়েলেটে এই খরচের পরিমাণ এক গ্যালন। বিশ্বের প্রত্যেক মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৩০ গ্যালন পানি অপচয় করে, যেখানে বিশ্বে বর্তমানে ৩৬০ কোটি মানুষ পানি সংকটে রয়েছে।
এই চরম বাস্তবতায় আমরা ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য পৃথিবীতে সুপেয় পানির সুরক্ষায়, নিজেদের ভবিষ্যতে সুপেয় জলের কষ্ট থেকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়েছি - আমাদের পরিকল্পনার মাধ্যমে:
ইউজেস অব রিসাইকেলড ওয়াটার ইন ডমেস্টিক ফ্লাশ ইউজেস (Uses of recycled water in Domestic Flash use) এর মাধ্যমে পানির অপচয় রোধ করে, রিসাইকল ইউজ করে সুপেয় পানির রক্ষা তথা বিশ্ব ও প্রকৃতি সুরক্ষার সবুজ আন্দোলনে সক্রিয় থাকার আবেদন নিয়ে।
প্রথমেই চলুন দেখে নিই পানির অপচয়ের পরিমান কত? (কমবেশি):
একটি পরিবারে যদি পাঁচজন মানুষ থাকে এবং তিন বেলায় চারবার করেও ফ্লাশ করে, তবে পানির ব্যবহারের পরিমান
প্রতিদিন/প্রতি ফ্লাটে (গড়ে)
জনপ্রতি ফ্লাশ ছোট ২ বার বড় ২ বার+-১ = ৫ বার
মোট ৫ বার প্রতি বারে ব্যবহার ১০ লিটার
৫*৫*১০ লিটার= ২৫০ লিটার /(এক ইউনিট)
৫*৫*১০*২= ৫০০ লিটার /ফ্লোর (২ ইউনিট)
৫ তলা হিসেবে পুরো বাড়ীর ১ দিনে গড় ব্যবহার
৫০০ লিটার * ৫ ফ্লোর = ২৫০০ লিটার /দিন
মাসে ব্যবহার (গড়ে)
২৫০০ লিটার/দিন* ৩০ দিন = ৭৫,০০০ লিটার/৭৫ইউনিট
বাৎসরিক ব্যবহার (গড়ে)
৭৫,০০০ লিটার * ১২ মাস = ৯০০,০০০ লিটার/৯০০ ইউনিট
ব্যবহৃত ফ্রেশ ওয়াটারের আর্থিক মূল্যায়নঃ
আবাসিকে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা করা হয়েছে। আর বাণিজ্যিক সংযোগে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা করা হয়েছে।
ওয়াসারা পানির রেট অনুপাতে বাৎসরিক হিসেবে তার আর্থিক মূল্য প্রায়
(৭৫*১৫.১৮) (১-৭-২০২১ ওয়াসার মূল্য চার্ট অনুযায়ী)
= ১১৩৮.৫০ টাকা প্রায়
বছরে যার আর্থিক মূল্য মান = ১৩৬৬২/=
আপাতত খুবই কম মনে হলেও সারা শহরে তার পরিমান দেখে নিশ্চয়ই চমকে উঠবেন।
শুধু ঢাকা শহরের ক্ষেত্রে
ছবি-৩
চিত্রে শুধু ঢাকা শহরের (আঁধা পাকা- পাকা) ফ্লাট এবং আবাসিক ভবন/ফ্লাট সংখ্যা ২৫ লাখ ধরলে শুধু ফ্লাশে ব্যায়িত পানির আর্থিক পরিমাণ দাড়ায়, (বাৎসরিক হিসেব)
অপচয়িত পানির পরিমান
৭৫*১২ = ৯০০ ইউনিট/৯০০০ লিটার
সামগ্রীক অপচয় =
৯০০০ লিটার * ২৫ লাখ
=২২৫০ কোটি লিটার পানযোগ্য জল।
যার আর্থিক মূল্য
২২৫০ কোটি লিটার বা ২কোটি ২৫ লাখ ইউনিট * ১৫.১৮ টাকা
৩৪,১৫,৫০,০০০ টাকা।
এই কোটি কোটি টাকার সুপেয় জলের অপচয় রোধ করা সম্ভব হলে, সাশ্রয় হওয়া সেই পান যোগ্য জল বা সুপেয় পানি দিয়ে কোটি কোটি মানুষের নূন্যতম সুপেয় জলের মৌলিক অধিকার পুরণ করা সম্ভব। ইউজেস অব রিসাইকেলড ওয়াটার ইন ডমেস্টিক ফ্লাশ' পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে যা রোধ করা সম্ভব।
সারাদিনের ব্যবহৃত জলের (গোসল, কাপড় কাঁচা, হাতমূখ ধোয়া, ওয়াসিং মেশিন সহ অন্যান্য)র জলকে 'রিসাইকলেড সিস্টেমে' ফ্লাশ ওয়াটার হিসেবে ব্যবহার করলে আমরা ঐ বিপুল অংকের অপচয়িত সুপেয় জল রক্ষা করতে সক্ষম হবো। যা আরো কোটি কোটি মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যবহার করা যাবে।
সেই বিপুল অংকের/অর্থের পানি রক্ষা করেত ফ্লাশে রিসাইকেলড ওয়াটার ইউজের সিস্টেম সেটাপ করা সম্ভব স্বল্প খরচে। আমাদের পুরাতন ফ্লাট/বাড়ীর অবকাঠামোতে সামান্য পরিবর্তন এনে বা নতুন নির্মিত/নির্মানাধীন ফ্লাটে/বাড়ীতে নতুন নিয়ম আইন করে বাস্তবায়নের মাধ্যেম এই পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যেম এই বিশাল অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে।
** এটা একটা ধারনা পত্র। আপনাদের সুচিন্তিত মতামত একে সমৃদ্ধ করতে পারে। এবং যোগ্য জনের সুদষ্টিতে এটি বাস্তবায়নের পথও খুলে যেতে পারে। কোন অসংগতি বা ভুল চোখে পড়লে মন্তব্যে জানিয়ে কৃতার্থ করার অনুরোধ রইলো।
ছবি কৃতজ্ঞতা:
ছবি-১ -গুগল
ছবি-২ - সারাবাংলা.নেট
ছবি-৩ - বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩০