তখন সদ্য তারুন্য ছুঁয়েছে।
উড়ু উড়ু মন। যা খুশি তাই করাতেই আনন্দ। যেখানে খুশি সেখানে যাওয়াতেই এডভেঞ্চার অনুভব। তাই টুইশানির ভাবী যখন বল্লেন উনারা দু সপ্তাহের জন্য গ্রামে যাবেন- আমিও যেন সাথে যাই....! মানা করার কোন কারণই ছিল না। সো পরদিন ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ রাতে লঞ্চের কেবিনে।
নতুন এলাকা। নতুন মানুষ। দারুন কাটলো দুটো দিন। তৃতীয় দিন ভোরে চমকে উঠলাম! স্বপ্ন দেখছি নাতো। এই পরী কই থেইক্যা আসলো! আবার আমার পায়ে সুড়সুড়ি দেয়! শীত ঘুমের ঘোর কাটতে সময় লাগলো বেশ। অত:পর পিট পিট করে ঘাপটি মেরে থাকা!
এবং আসামী রেড হ্যান্ড কট!
বেচারী লজ্জ্বায় ভুত! আমিতো ছাড়ছিনা। আমার ছাত্রী এসে পরে বাঁচাল। ওদের কাজিন। কালই ফিরেছে নানুবাড়ী থেকে। আমার কথা নাকি এত এত শুনেছে তাই দেখতে এসেছে। আমার মুগ্ধতার দৃষ্টি মনে হয় বেশ কড়াই ছিল। ছুটেই পালাল হাসতে হাসতে।
বেড়াতে আসা যেন অন্যমাত্রা পেয়ে গেল। আহা আজ সূর্যটা কি দারুন! শীতের কুয়াশা মোড়া ভোর যেন কোন স্বর্গীয় দৃশ্য। গাছ থেকে নামানো কাঁচা খেজুর রস যেন অমৃত! রান্না ঘরে বসেই বানানো পিঠে পুলি সাবার করছিলাম। আবার এলো অপ্সরা।
ভাবী ডেকে এনে পাশে বসালো। এত লজ্জ্বা পাচ্ছিস কেন। আয় বোস। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম!
আহা এমন চুল আর চোখ আর মূখ দেখেই বুঝি জীবন বাবু লিখেছিলেন অমর কাব্য
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
মুগ্ধতায় ভেসে গেলে দিন রাত। সময় যেন পালাচ্ছে উসাইন বোল্টের দ্রুততায়।
একদিন রাতে সবাই মেহেদী লাগাবে হাতে। আমার আঁকা আকির সুনামে মেয়ে মহলে বেশ কদরী ছিলাম তখন। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হলো মেহেদী আঁকা। দু’জন শেষ হতেই যে হাত পাতলো - দেখে হার্টবিট মিস করলাম কয়েকটা।
ইতস্তত: ভাব দেখে ভাবী সম্মতি দিলেন- পরে হাতটা ধরলাম। শুরু হলো আঁকা...
উষ্ণতা, পূর্নতা, স্বপ্ন, সূখ এক মিশ্র তারুন্যানুভবে মাতাল
হঠাৎ তার বড় ভাই ঢুকলেন ঘরে। কেমন কেমন করে তাকালেন। একটু সরে নড়ে বসলেও কাজ চলতে থাকলো। গম্ভীর মূখ করে ঢুকে গেলেন বসার ঘরে। তারপর হঠাৎ করে ধপাস শব্দ! সবাই চমকে উঠে দাড়ালাম।
গিয়ে দেখি বিছানায় চিৎ হয়ে পড়ে আছেন। এক পা বিছানায় এক পা মাটিতে। বেহুশ হাল যেন। খালাম্মা খালুর দৌড়াদৌড়ি দেখে বিস্মিত হলাম। অপ্সরাকেই জিজ্ঞেস করলাম। কি হয়েছে? রাগ করেছে তোমাকে মেহেদী দিচ্ছি দেখে।
মাথা ঝাকিয়ে বললো -না। উনার উপর পরী এসেছে।
ধুর! বলে হেসেই উড়িয়ে দিলাম। এসব বাকোয়াস। জ্বিন, পরী, ভূত কিছু নেই।
ঠোটে আঙুল দিলো। না না জোরে এসব বইলেন না। আমি অবজ্ঞার হাসি হেসে দেখতে থাকলাম্
তাড়াতাড়ি জায়নামাজ নিয়ে এলো। আতর সুগন্ধি নিয়ে এলো। খালা নিজে অজু করে এলো তারপর তাতে নিজে ধরে ছেলেকে শুইয়ে দিয়ে আতর মেখে দিল। এরপরই শুরু হলো অদ্ভুত গোঙানী। ঘুরে ঘুরে দম নেবার মতো করে। যেন একবার উপরে উঠছে আবার নীচে নামছে এমন লয়। এরপরই হঠা; চীৎকার বাত্তি নিভায়া দে! সবাই একপাশে জড়সর হয়ে বসা। আমিও ভীরের মাঝে বসলাম। তামাশা দেখবো। কিন্তু বাত্তি নিভালে কেমনে কি?
তার দ্বিতীয় আদেশ দ্রুতই পালন করা হলো। এরপর নারী কন্ঠের উর্দু গজল শুরু হলো। সত্যি কন্ঠটা দারুন সুরেলা। আর বেশ নির্ভুল গাইছিল। অথচ ছেলেটা কিন্তু ফাইভ পাস। গ্রামে থাকে লেখাপড়া করেনি বললেই চলে। হিন্দিও বোঝেই না, বলবে কি! বেশ কিছুক্ষন গাওয়ার পর হঠাৎ সব চুপ! অন্ধকারে চোখ বড় বড় করে কিছু অনুভব করার দেখার চেষ্টা করছি।
হঠাৎ ধপাস শব্দ। যেন একতলা সমান উঁচু থেকে কোন বস্তা কেউ ফেললো।
ধুম ধাম! এর পরই তাঁর মায়ের চিৎকার - দোহাই আল্লা রাসুলের। দোহাই পীর আউলিয়ার আপনি আমার ছেলেরে ছাইড়া দেন।
আবার সেই গোঙাণী -সাথে মেয়েলী সুরে -না! তোর ছেলেরে নিয়ে যাব। তুই দাবী ছাড়!
বলা শেষ হতেই আবার ধুপ ধাপ। সাথে মায়ের কান্না। না। আমি দাবী ছাড়মু না। দোহাই দিতেই লাগলেন। আবার দারুন গজল চলতে লাগলো। তারপর হারিকেনটা উস্কে দিতেই হঠাৎ ছোটাছুটি। কেউ গ্লাসে নিয়ে আসছে, কেউ বোতল। ধরে ধরে ফু দিচ্ছে।
তাবিজ দিচ্ছে। কিন্তু কোন বিনিময় নিচ্ছে না।
এরপর স্পষ্ট দেখলাম হঠাৎ শুন্যে উঠে গেল আর তারপরেই ধপাস। বাত্তি নিভা। চিৎকার।
বেশ কয়েকবার আছাড় দেবার পর আবার গোঙানী। আমার মনে তাকে পরীক্ষা করার দারুন কৌতুহল। হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাইটার খবর জানার জন্য প্রশ্ন করতে বল্লাম।
প্রশ্ন শুনে অনেকক্ষন চুপ থেকে আবার গোঙানী। তারপর বললো - নাই নাই...সীমার মাঝে নাই।
আরো কিছু জানতে চাইতে গেলে বাকীরা থামিয়ে দিল। তারপর সব স্বাভাবিক। বাতি জ্বেলে সবাই খেতে গেল। ঐ ভাইটা শুধু একরুমে একা চলে গেল।
পরদিন সকালে সব স্বাভাবিক। শুধু তার চেহারা দেখে চমকে গেলাম্ চোখে গভীর করে আঁকা সুরমা। কেমন যেন নূরানী একটা জেল্লা ঠিকরে বেরুচ্ছে। গায়ে ভুরভুরে আতর্ মাথায় টুপি । খালা বললেন যখনই আছর করে সাতদিন এই হালে থাকবে। নামাজ কাজা করবে না। সব সময় পবিত্র থাকবে। পরীটা নাকি তাকে নিয়ে যেতে চায়। খূব ভাল পরী কোন ক্ষতি নাকি করে না। উল্টো পরহেজগার বানিয়ে দেয়।
অপ্সসার বাকী কাহিনী তোলাই থাক। অলৌকিক এ অংশ টুকু আজো রহস্য হয়েই রইল।
যে পরিমাণ জোরে জোরে আছাড় দিয়েছে, এর একটা আছার খেলে কোন সুস্থ লোক সাতদিন বিছানা থেকে উঠতে পারবে না। আর নরমালী যে লোক একটা হিন্দি কথাও বোঝে না- সে কি করে অবলীলায় গজল গাইল?
আজো বুঝে আসলো না!
# কা_ভা ভাইয়ের ঘোষনা মতে আজ রাত বারোটায় অলৌকিক ঘটনা নিয়ে লেখা দেবার শেষ সময়। তই ঝটপট শেষ ট্রেনটায় উঠে পড়লাম আবারো

ছবি কৃতজ্ঞতা: গুগুল
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৭