অনন্তকালের মধুময় ডাক।
হৃদয় জুড়িয়ে আসা, প্রশান্তির আঁচল মা। মা নিয়ে কত কাব্য কত সাহিত্য, তবুও যেন শেষ হবার নয়।
মা শব্দটি খুব ছোট। ছোট হলে কি হবে ‘মা’ যে বড় মমতাময়ী। মায়ের মৃত্যু হলে বাবা বিয়ে করে। কিন্তু বাবার মৃত্যু হলে মা তার সন্তান আগলে ধরে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেয়। মায়ের মমতা ও গুন কীর্তন নিয়ে হাজারও গান রয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখ গান যোগ্য হলো- হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মাগো’। খুরশীদ আলমের ‘মাগো মা ওগো মা, আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা’। ফকির আলমগীরের ‘মায়ের একধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম’। ফেরদৌস ওয়াহিদের ‘এমন একটা মা দে না’। মা বন্দনায় আমরাই সেরা।
" মা দারুণ উদ্বেগ নিয়ে বসে আছেন সন্তানের রোগশয্যার পাশে।" এমন চিত্র প্রতিদিনের না হলেও প্রতিটি পরিবারেই পরিচিত দৃশ্য। মাঝে মাঝে এমন উদ্বেগাকুল পরিস্থিতি প্রায়-সকল পরিবারেই দেখা যায়। রোগের যন্ত্রণায় সন্তান যখন ছটফট করে, পিতা-মাতার ভেতরেও তখন ছটফটানি কম থাকে না। সন্তান দূরে কোথাও থাকলে, বিদেশে বিদেশের স্কুলে-কলেজে-কর্মক্ষেত্রে, তখন যেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার তীব্রতা আরও বাড়ে। মানুষের মধ্যে এ বাৎসল্য, আপত্য স্নেহ অতিপ্রাকৃতিক বায়োলোজিক্যাল বিষয়। ইংরেজিতে বলা যায় ইনস্টিংকটিভ। প্রকৃতিই শরীরবৃত্তীয়ভাবে এমনটি মানুষের রক্তে-স্বভাবে-প্রবণতায় ভরে দিয়েছে। বংশের ধারাবাহিকতা, ঐতিহ্যের চেরাগ, নিজের উত্তরাধিকার রক্ষার জন্যই মানুষ এই স্নেহ ও বাৎসল্য অনুসরণ করে।
শুধু মানুষের মাঝেই নয় জীব জগতেও সন্তান বাৎসল্য দেখা যায়। এতকাল ধারণা ছিল পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব শুধু মানুষ, বড়জোর স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে তা শুধু স্তন্যপায়ী নয়, অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যেও বিদ্যমান। আর ভালো দায়িত্ববোধ থাকার প্রমাণ এতদিন দেখা গেছে বানর, হনুমান, গরিলা, শিম্পাঞ্জি, বাঘ, সিংহ, হাতি ইত্যাদি স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যেই। তবে সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞানীরা ভিন্নতর কিছুর সন্ধান পেয়েছেন। তারা এক ধরনের ছোট আকৃতির পোকার মধ্যে সন্তানের প্রতি দায়িত্ববোধ ও যত্নশীলতার রীতিমতো চমকপ্রদ উদাহরণ খুঁজে পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ধরনের পোকারা তাদের সন্তানদের জন্মের আগে থেকেই তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে রাখে এবং এই খাবারকে সতেজ রাখার জন্য তারা সেটির ওপর এক ধরনের এ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রয়োগ করে।
কিন্তু গত ক'দিনের আলোচিত রামপুরার ঘটনাটি বেশ বিচলিত করল। যদিও আগেও মোহাম্মদপুরের নৃশংসতা একসময় সবাইকে পীড়িত করেছিল। আবার সময়ের আবর্তে সকলেই ভুলেও গেছে।
এই বিষয়টা নিয়ে লিখব মনস্থির করে গুগল করতেই মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল!
শুধু রেফারেন্স লিংক ৮ পাতা হয়ে গেল! সবই হয় মাতা নয় পিতা নয় উভয় কর্তৃক সন্তান হত্যা সম্পর্কিত। কখনো সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতা, কখনো পরকীয়া, কখনো সম্পত্তি, কখনো অভাব, কখনো বিরোধের জের, কখনো স্রেফ বিরক্তি!!!!!!!!!!!!!!!
কেবলই তথ্য সূত্র হিসাবে কিছু যোগ করছি..
স্ত্রীর ওপর রাগ করে সন্তান হত্যা!
প্রেমিকাকে পেতে সন্তান হত্যা!
পাঁচ সন্তান হত্যা: পুলিশের সন্দেহের তীর বাবার দিকে -
মা নামের ডাইনি!
শ্বাসরোধে শিশু সন্তান হত্যা ॥ মা আটক স্বামীর পরকিয়ার দায়ে মেয়েকে গলাটিপে হত্যা করলো মা!
পটিয়ায় অভাবের তাড়নায় ৪ বছরের পুত্র সন্তান হত্যাপটিয়ায় অভাবের তাড়নায় ৪ বছরের পুত্র সন্তান হত্যা
পরকীয়ার জেরেই নিজ হাতে দুই শিশু সন্তানকে হত্যা করলো মা
৫ বছরের সন্তানকে হত্যা করলেন মা! গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অতিরিক্ত কান্নাকাটি করায় পাঁচ মাসের শিশুকে গলা কেটে হত্যা করেছে পাষণ্ড মা।
গোপালগঞ্জের পরকীয়ার কারনে নিজের ২ সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা গোপালগঞ্জের ভোজেরগাতী গ্রামে রাতের আঁধারে দুই ভাই রায়হান সরদার (১০) ও রইজ সরদারকে (৪) শ্বাসরোধে হত্যার পেছনে মায়ের পরকীয়া প্রেম দায়ী বলে জানা গেছে।
অনেক শিশুর ছবি আছে। সংগত কারণেই দিলাম না। নিজেই কেমন বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়ে গেছি। কি নিষ্পাপ মু্খগুলো। নিরবে যেন বলছে- আমাদের কি অপরাধ? কেন আমরা লাশ???
সবশেষে আলোচিত ঘটনা যা অনেকেই জানেন-
রামপুরা বনশ্রী এলাকায় চাঞ্চল্যকর দুই শিশু ভাই-বোন হত্যা ঘটনায় হত্যাকারী মা মাহফুজা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে সন্তানদের হত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাবের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
নুসরাত আমান অরনী ভিকারুন্নেসানুন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে এবং ছোট ভাই আলভি আমান হলি ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের নার্সারীতে পড়তো।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় মা বেগম মাহফুজা গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মেয়ে অরনীর গৃহ শিক্ষিকা চলে যাবার পর অরনী তার বাবা-মায়ের বেড রুমে বিকাল পাঁচটার সময় ঘুমাতে যায়। তখন বাসায় বৃদ্ধা দাদী, দুই ভাই-বোন ও মা মাহফুজা উপস্থিত ছিলেন। একই সময়ে আলভি আমান বেড রুমের বিছানাতেই ঘুমাচ্ছিল। মা মাহফুজাও ছেলের সাথে একই বিছানায় শুয়ে ছিল। অরনী মায়ের সাথে ঘুমানোর জন্য বিছানায় শোয়ার কিছু সময় পর মা মাহফুজা তার মেয়ে অরনীকে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে একপর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে উভয়েই বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে যায়। কিছু সময় পর মেয়ের শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে তিনি তার ছোট ছেলে আলভিকে খাটের উপর ঘুমন্ত অবস্থায় একইভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন।" ।।
নি:শ্বাস আটকে আসতে চায়! কেন এই হত্যা কান্ড? কেন এত পৈশাচিকতা? কেন এত নির্দয়তা?
যে সন্তান পরম নির্ভয়ে মায়ের পাশে শুয়ে ঘুমায়- তাকেই কেন মায়ের হাতেই নিহত হতে হয়?
মা ডাককে কলংকিত করছে এই রমনী/নারী এরা কেন এমন করছে?
মনোবিজ্ঞানীরা ভাল ব্যাখ্যা করতে পারবেন। সমাজবিজ্ঞানীরা হয়তো অনেক তত্ত্ব উপস্থাপন করতে পারবেন। আলোচনা হবে টকশো হবে। কিন্তু এর মূল কি চিহ্ণিত হবে?
এই সবুজ শ্যামল বাংলায় নারীতো মমতাময়ী রুপেই চিত্রিত। মা ডাকের উপরেতো মমতার আর কোন ডাক নেই। সেই মা জাতের আজ কেন এই রুপান্তর?
-স্রেফ উদগ্র যৌন কামনায়?
-অর্থ লোভে?
- স্বার্থপরতায়?
আমাদের মৌলিক স্নেহ প্রবণ চেতনাটা বিলুপ্ত হল কিভাবে?
>> সবকিছূতে প্রতিযোগীতা প্রমোট করছে কারা?
>> জিপিএ ৫ চাই! ফ্লাট চাই! গাড়ী চাই! ষ্ট্যাটাস চাই! ব্যাংক ব্যালেন্স চাই! এক অন্তহীন চাওয়ার সমুদ্র...
>> সেই প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়া, ছিটকে পড়াদের হীনমন্যতার পরিণতিই কি এইসব?
>> জীবন যাপনের সাধারন, স্বাভাবিক সন্তুষ্টির স্থান থেকে আরও চাই আরও চাই চেতনার বিকাশ কি কিছুটা হলেও দায়ী নয়?
আমাদের সমাজ বিজ্ঞানীরা কি ভাবছেন? সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় কি চোখ মেলে দেখে বুঝতে পারছে- এই অধোগতি কত গভীর ক্ষত হয়ে উঠেছে সমাজের জন্য? তথ্য, সংস্কৃতি, অন্যান্য প্রযোজ্য মন্ত্রনালয় সমূহ!! সুশীল সমাজ!! নীতি নির্ধারণী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান সমূহ!!!
আমাদের প্রিন্ট আর অনলাইন মিডিয়ার দায়িত্ব কি কেবলই খবর প্রচার করেই শেষ?
টিভি মিডিয়া গুলো কি অনুভব করছে দেশের এই অভ্যন্তরীন ক্ষয়ের রক্তক্ষরন! নাকি পুলিশ কর্মকর্তার মতো তাদের নিজেদের ঘরে হানা দেবার আগে হুশ হবে না। শুধু টিআরপি আর বানিজ্য নিয়েই ভাবনায় বুদ হয়ে থাকেব????
আমাদের সামাজিক জীবনের এথিকসটা আমাদেরই ঠিক করতে হবে। আমাদের স্বপ্ন, আমাদের সন্তুষ্টির আমাদের দায় সবকিছূর একটা সীমার সামাজিকীকরণ করতে হবে। উদগ্র কামনা, লোভ, প্রতিযোগিতায় না ঠেলে সুস্ঠু সামাজিক বিকাশের রুপরেখা কাগজে পত্রে নয়- জীবেনর বোধে গেথে দিতে হবে। নাটক, সিনেমা, সিরিয়াল যা জীবনকে প্রভাবিত করে তার মাধ্যমেই সুস্থ সুন্দর সমাজের মেসেজটুকু পৌছে দিতে হবে জনে জনে।
তবেই বোধকরি আর এইরকম খবর খুঁজতে যাদুঘরে যাওয়া লাগবে। এখনকার গা সয়ে যাওয়া স্রেফ একটা খবর হয়ে থাকবে না। আতকে উঠবে অস্তিত্ব। মুছে যাবে মা নামের উপর লেপ্টে যাওয়া কলংকের দাগ। মা চিরকালের শুভ্র, মমতাময়ী, জীবন দায়িনী চিরকালীন মা রুপেই বিরাজ করবে।
মায়ের কাছে সন্তান নিশ্চিন্তে ঘূমাতে যাবে। আঁচলের ঘ্রানে ঘুমিয়ে পড়বে নির্ভরতায়।
@ এক নিরুদ্দেশ পথিক ভাইর মন্তব্য থেকে
----দেখুন, সমাজ খুব কঠিন একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। এ ব্যাপারে কিছু গুছিয়ে লিখাও খুব দুঃসাধ্য!
১। সর্বস্তরে রাজনৈতিক বিভক্তি মানুষের চিন্তা এবং কর্ম নিয়ন্ত্রণ করছে।
২। সামাজিক বন্ধন শিথিল, খুব বেশি অপরাধ প্রবণ সমাজে নাগরিক নিরাপত্তা আতংকের হয়ে উঠেছে। একে অন্যকে কথায়, কাজে, শক্তিতে, যুক্তিতে, বুদ্ধিতে, সম্পদে টেক্কা দেয়ার এবং ঘায়েল করার এক দুর্দমনীয় প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান।
৩। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হচ্ছে, বর্ধিত পারিবারিক ঐতিয্য লোপ পাচ্ছে। পারিবারিক মূল্যবোধ গড়ছে না।
৪। পশ্চাত্যের ইন্সটিতুশনাল সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার যা কিছু ভালো তা নিয়ে না ভেবে একচেটিয়া শুধু মিডিয়া, ফ্যাশন আর ট্রেন্ডি বিষয় গুলোকে সমাজ নির্বিচারে মেনে নিচ্ছে।পাশাপাশি ২টি জেনারেশনের চিন্তার ব্যবধানের ব্যাপকতা সমাজকে অস্থির করে তুলছে।
৫। রিলিজয়াস রিচূয়াল নির্ভর কিন্তু রিলিজিয়াস এথিকস এবং ভ্যালূ এর কথা বলা হচ্ছেই কম, পালন তো নেই ই।
৬। জীবনের লক্ষ্য কি সেটা মানুষ জানে না, কিন্তু উপলক্ষ গুলো লৌকিকতায় এবং শো-বিজনেস হিসেবে আবির্ভুত হচ্ছে। অর্থাৎ জীবন পথের পথিক তার গন্তব্য হারিয়ে শুধু গন্তব্যে যাবার চাকচিক্যময় লোকদেখানো ট্রান্সপোর্ট নিয়ে ভাবছে।
৭। নাগরিক জীবনের প্রতিপদে কষ্ট, সংগ্রাম, ভয়। লক্ষ্যে (নৈতিক কিংবা অনৈতিক) যা যেতে পারার মনোকষ্ট! কিংবা অন্যের সাথে তাল মিলাতে না পারার হতাশা।
৮। ব্যক্তির নিজের সকল অপ্রাপ্তির দায় সন্তানের উপর আছড়ে পড়া।
৯। চরম প্রতিযোগিতা পুর্ন চাকরি, ব্যবসা এবং শিক্ষার পরিবেশ ব্যক্তি নাগরিককে শুধুই হতাশ করছে প্রতিদিন।
১০। ব্যবসা প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশন নির্ভর বলে, ব্যবসায় সততার নিশানাও উঠে যাওয়া।
সব মিলিয়ে এক চরম ক্রান্তিকালে সমাজ ব্যবস্থা বিবর্তিত হচ্ছে, এতে করে কিছু মানুষের ব্যক্তি মানস এক ভয়ংকর রূপান্তর প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে। এরই ফল স্বরূপ এই রকম কিছু হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটছে।
প্রতিকার কিসে? আমার মনে হয় মুক্তিতে-
ক। আধ্যাত্মিক মুক্তি ( মানুষ ভুলে গেছে, তাঁর স্রষ্টার সন্তুষ্টিই তাঁর পরম সাফল্য!)
খ। রাষ্ট্র কর্তিক নাগরিকের জন্য অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার মুক্তি পথ দেখানো, যাতে মানুষ নিরাপদ জীবনের আশা পায়।
আমার মনে হয়, এই সময়ে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ব্যক্তি নাগরিকের খুব কাছাকাছি আসা দরকার। আক্রান্ত মানুষের খোঁজ নিয়ে তাঁদের কাউন্সিলিং করা দরকার, পরম মমতার সাথে। ব্যক্তির জীবনে সুখ না থাকলে সমাজ এবং রাষ্ট্রের খোলস তো শুধুই মেকি!সমাজের ক্রান্তিকাল
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৫৬