এক সাগর রক্তের বিনিমিয়
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলবনা
যুগের নিষ্ঠুর বন্ধন হতে
মুক্তির এ বারতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলবনা, ভুলবনা, ভুলবনা।
আবার এসেছে ১৬ই ডিসেম্বর। এসেছে খুশির দিন। বিজয়ের দিন। মুক্তির দিন।
প্রতিদিনই ওঠে সূর্য
প্রতিদিনই আসে ভোর
এমন কি দেখেছে কেউ আর
যেমন দেখেছে ৭১'র ১৬ই ডিসেম্বর।
১৭৫৭ থেকে ১৯৭১। নবাব সিরাজ থেকে বঙ্গবন্ধু। ২৩জুনের কালরাত থেকে ২৫ মার্চের কালরাত।
বিশাল ইতিহাস। সংগ্রামের, যুদ্ধের, বিজয়ের। যেমন রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত। বেদনা বিধূর! তেমনি আত্মমর্যাদার! অস্তিত্বের! গৌরবের!
দিন আসে দিন চলে যায়! আনুষ্ঠানিকতায়, পালা-পার্বনে, উৎসবে-স্মরণে পালিত হয় দিবস। থেকে যায় স্মৃতি। শুধু আচারে নয়- চেতনায় যদি ধারন করতে পারি সেই প্রকৃত মৌলিক আবেদনকে- তবেই তা আমাদের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, ভবিষ্যত পথ চলার দিশারী হয়ে আমাদের চালিত করে।
আমাদের সংগ্রাম সবসময়ই ছিল অন্যায়, অবিচার, অনাচার, শোষন, জুলুম আর স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে। তা সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ মোড়কে হোক বা ইসলামের দোহাই দেয়া পাকি মোড়কে হোক। অথবা বর্তমানের ( রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সকল স্বত:সিদ্ধ, সংগা ইতিহাস আর মৌলিকত্বকে ভাঙ্গা, অনির্বাচিত, জনমত উপেক্ষার স্বৈরাচারী ) সীমিত গণতন্ত্রের নামের মোড়কে হোক। সে লড়াইয়ে যারাই অংশ নেয় নিয়েছে বরণ করেছে, করতে হয়েছে মৃত্যু, গুম, খুন, ক্রশফায়ার, জেল জুলুম, হুলিয়া, দেশত্যাগ সহ মানবিয় যত বিপত্তি তৈরী করা সম্ভব সে সবের মোকাবেলা করেই।
দলান্ধতা আর বিভাজনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে ইতিহাসের কষ্টি পাথরে সত্যকে খুঁজতে গেলে এমনই মেলে। এর বাইরে আর অন্য কোন সত্য নেই। সত্য আর মিথ্যা। প্রভেদটা যখন এই মাত্রায় এসে পথ খোঁজে তখন দুটোই সঠিক কখনো হতে পার না। যে কোন একটাকেই বেছে নিতে হবে। বেছে নিতে হয়।
বিশ্বাসের সেই মাত্রা যত তীব্র হবে ততই মুক্তি, স্বাধীনতা অর্থবহ হবে।
ভাবলেও বুকটা অহংকারে স্ফীত হয়, দেহ-মন শিহরিত হয়.....- কি দুর্দম, অসীম সাহসী আর দেশপ্রেমে ভরপুর সেই চেতনা বিশ্ব দেখেছে ৭১-এ। নিশ্চিত বন্দুকের নলের মূখেও চিৎকার করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে গাইত দেশ-প্রেমের গান- "জয় বাংলা!"
রক্তের হোলিতে ভিজে যেত মা, মাটি আর দেশপ্রেমিকের মন। চোখে জলের বদলে জ্বলত বহ্ণি শিখা। মরতে মরতে মৃত্যুর ভয় ভুলে গেছিল সবাই। বরং মৃত্যুকেই যেন খুঁজতো! খুঁজতে খুঁজতেই পেয়ে গেল স্বাধীনতা।
পলাশীল আম্রকানণে ডুবে যাওয়া সেই সূর্য যেন মেঘের লুকোচুরি পেরিয়ে বৈদনাথতলার (মেহেরপুর) আম্রকানণে আবার উদিত হল শত বছরের জ্বালা, যন্ত্রনা, পরাধীনতা, অত্যাচার, লাখো শহীদের জীবন, লাখো মা-বোনের ইজ্জ্বত, আব্রু আর ত্যাগের বিনিময়ে। এসেছে স্বপ্নের বিজয়! উড়ছে লাল সবুেজর পতাকা পতপত ........
পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে
রক্তলাল রক্তলারল রক্তলাল
জোয়ার এসেছে সমুদ্রে
রক্তলাল রক্তলাল রক্তলাল।
.....
শোন একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের ধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রনি
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ...
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ.....
---
প্রথ বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ
জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ।।
আমার আঙিনায় ছড়ানো ছিটানো
সোনা সোনা ধূলি কণা
মাটির মমতায় ঘাস ফসলে
সবুজের আল্পনা
আমার তাতেই রয়েছে স্বপ্নের বীজ বোনা!!!
প্রজন্মের পর প্রজন্ম পার হয়েছে। হচ্ছে। আমরা মুক্তির চেতনা থেকে ঘুরে কর্পোরোট গোলামি চেতনায় বুদ হয়ে যাচ্ছি। সুশিলতা আর শান্তিপ্রিয়তার নামে আমরা নপুংষক হয়ে যাচ্ছিনাতো?
আজ ৪৪ বছর পরে পেছনে ফিরে দেশের খতিয়ানের দিকে তাকিয়ে বড়ই বেদনা বিধূর চিত্তে বলতে হয়-
আমরা কি সত্যিই পেয়েছি আমাদের কাংখিত স্বাধীনতা?
মৌলিক অধিকার গুলোর নিশ্চয়তা?
ভোট, ভাত, আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা?
৭১এ পদ্মায় যে জল প্রবাহ ছিল তাকি ধরে রাখতে পেরেছি?
সীমান্তে ফেলানীদের লাশ না হবার নিশ্চয়তা?
যে অর্থনৈতিক মুক্তির দাবিতে বঙ্গবন্ধুর লড়াই ছিল- তা কি অর্জিত হয়েছে?
পরিসংখ্যানের মারপ্যাচে নয়- মোটা দাগে-
মোটা ভাত মোটা কাপড়ের যে চিন্তুামুক্ত নিশ্চিত নাগরিক/দেশজ জীবন তাকি নিশ্চিত করতে পেরেছি?
ভিন্নমত দমনের নামে জুলুমের ব্রিটিশ/পাকি/স্বৈরাচারী ভুতকে তাড়াতে পেরেছি!
দারিদ্রতা দূর করতে পেরেছি?
নাকি পাকি ২২ পারিবারের শোষনের বিরুদ্ধে লড়াই করে- মুক্তির পর ২২০০ বা ২২০০০ দেশীয় পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে গেছি!
দূর্নীতি, ঘুষ, সুবিধাবাদীতা, শোষন, নিপীড়ন, লুটপাটের দেশীয় ভার্সনে বৃত্তবদ্ধ হয়ে পড়েছি। যখন এই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাল থাকেনা। গাছ তলায় বসে ক্লাশ হয়! পুষ্টিহীনতায় শিশুরা মারা যায়! অর্থাভাবে শিশুশ্রম বৃদ্ধি পায়, চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মরে গরীবেরা, এমনই শত সহস্র চক্রে নিম্মবিত্ত হাসফাস করে- সেই দেশেই মাত্র এক অর্থবছরে ৯০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়!!!!!!!!!!!!!! কিভাবে?
বিজয় দিবসে শুধু ফানুস উড়িয়ে নয়
শুধু আলোক মালায় সজ্জ্বিত করে নয়
পায়রা উড়িয়ে নয়
নতুন পতাকায় একদিনের জন্য রেকর্ড গড়ার নেশায় নয়
এরকম জ্বলন্ত প্রশ্নের মূখোমূখি হয়ে পালিত হোক বিজয় দিবস। বিজয়ের প্রকৃত স্বাদাস্বাদনের জন্যই। প্রতি বছর একটা বিষয় নির্ধারিত হোক সমাধানের লক্ষ্যে। আগামী বর্ষ শিক্ষার, পরের বছর স্বাস্থ্য, নদী, নিরাপত্তা, নারী অধিকার দূর্নিতি দমন এভাবে প্রতিটি বছরকে কোন সুনির্দীষ্ট বিষয়ে লক্ষ্য অর্জনের শপথ নিয়ে পালিত হোক বিজয় দিবস। পরবর্তী বছরে অগ্রগতি মূল্যায়নের মাধ্যমে। শহীদদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায় এটাকে হৃদয়ে মস্তিকে চেতনায় নিবিঢ় সত্য হিসেবে ধারন করে।
মাগো- ভাবনা কেনো
আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে
তবুও বিপদ এলে আমরা যেন লড়তে জানি
তোমার ভয় নেই মা আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।
বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৪