somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত : আত্মঘাতী নীতির কারণে হাজারো কোটি টাকা লোপাট

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। সরকার দেশের অভ্যন্তরে তেলের দাম কমায়নি। ফলে জনগণকে বেশি দামেই তেল কিনতে হচ্ছে। তেলের দামের সঙ্গে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতেও বাধ্য করছে সরকার। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো (রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল) চালু রাখতে সরকার রাষ্ট্রীয় অর্থ লোকসান দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে সরকারের প্রভাবশালী লোকজন জড়িত। তাদের খুশি করতেই এসব করা হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে। তাদের মতে, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের স্বার্থে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট বন্ধের ষড়যন্ত্র চলছে। যে কারণে ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা হয়েছে। অথচ রেন্টালগুলোকে হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহ করে যাচ্ছে সরকার।

শুল্ক ও ভ্যাট এবং ৯ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ মওকুফ করায় সরকার ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৪ সালে ৬৪৮ কোটি ৮৫ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করেছে। সরকার গড়ে ১২ টাকা ৯৬ পয়সা দামে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনে নিয়েছে। সরকার জনগণের কাছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৫ টাকা ৬১ পয়সা হারে বিক্রি করেছে। এতে সরকারের কথিত ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।



ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে সরকার শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত জ্বালানি তেল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। শুল্ক ও ভ্যাটের পাশাপাশি ৯ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ ও রেয়াত (সার্ভিস চার্জ) পাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। ফলে এদের এক লিটার ফার্নেস অয়েলের (বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত জ্বালানি) দাম পড়ছে ৩০ টাকা। অন্যদিকে সরকার সব ধরনের শুল্ক এবং ভ্যাট দিয়ে ফার্নেস অয়েল আমদানি করায় এক লিটারের দাম পড়ছে ৬২ টাকা। অর্থাৎ এক লিটার ফার্নেস অয়েলে সরকার ৩২ টাকা গচ্চা দিচ্ছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বছরে ৯ লাখ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল আমদানি করছে। শুল্ক ও ভ্যাট এবং ৯ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ মওকুফ করায় সরকার ২ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৪ সালে ৬৪৮ কোটি ৮৫ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করেছে। সরকার গড়ে ১২ টাকা ৯৬ পয়সা দামে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনে নিয়েছে। সরকার জনগণের কাছে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৫ টাকা ৬১ পয়সা হারে বিক্রি করেছে। এতে সরকারের কথিত ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে কম দামে ফার্নেস অয়েল আমদানির সুযোগ দেয়া, তাদের কাছ থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনায় এক বছরেই ৮ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। সরকার নির্ধারিত দামে বিপিসি’র কাছ থেকে তেল নিয়ে যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার তেলের দাম পড়ছে ৬২ টাকা। অথচ তাদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ১৬-১৭ টাকা। এ হিসাবে ভাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিটের দাম পড়ার কথা ৮ টাকার কম। কিন্তু সরকার তাদের কাছ থেকে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনছে ১২ টাকা ৯৬ পয়সায়। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো আরো কম মূল্যে আমদানি করছে। এতে তাদের উৎপাদন ব্যয় কমেছে অনেক। এক্ষেত্রে সরকার চাইলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কমমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কিছু হচ্ছে না। উল্টো জনগণের পকেট কাটার জন্যই বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আশ্রয় নিয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির। অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) তেলের দাম সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল খোদ বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে বড় সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

রেন্টাল ও কুইক রেন্টালগুলো কম দামে জ্বালানি তেল কিনে বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করলেও বিইআরসি’কে দেয়া পিডিবি’র তথ্যে তা উল্লেখ করা হয়নি। উল্টো রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের জ্বালানি তেলের দাম দেখানো হয়েছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) রেট। সেই দামের ভিত্তিতে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিইআরসি।

বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের ভাড়াভিত্তিক যেসব রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কোম্পানি পিডিবি’র কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে তারা শুরু থেকেই নিজেরা ফার্নেস অয়েল আমদানি করছে। আমদানির জন্য তাদের কোনো ধরনের ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে হয় না। ৯ শতাংশ সার্ভিস চার্জও মওকুফ করা হয়েছে। এ কারণে তাদের আমদানি করা জ্বালানির দাম বিপিসি’র তেলের দামের অর্ধেকেরও কম পড়ে। বিশেষজ্ঞরা হিসাব কষে বলেছে, পিডিবি যদি এক্ষেত্রে ওই তেলের দাম রেন্টাল-কুইক রেন্টালের আমদানি করা রেটে দেখাতো তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজনই হতো না। একইসঙ্গে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।

অভিজ্ঞমহল মনে করে যে, বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় পিডিবি’কে কমপক্ষে আরো ৬ বছর রেন্টাল, কুইক রেন্টালের বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। আর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে এই ৬ বছর লুটপাট চালাতে পারবে সংশ্লিষ্টরা। এ কারণেই ইতিমধ্যে অনেক কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও সেগুলোর চুক্তির মেয়াদ নবায়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গত মেয়াদের শেষদিকে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ অবস্থান পরিবর্তন করেছে সরকার।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতি মিলিয়ন কিলো-ওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ৪৬ মিলিয়ন থেকে ১০৭ মিলিয়ন টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে জিডিপি’তে কুইক রেন্টালের মাধ্যমে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুতের অবদান ছিল প্রায় ২৩,৩১২ কোটি টাকা থেকে ১২১,১৬৮ কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে আরো অনেক বেশি হয়েছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন রেন্টাল-কুইক রেন্টালের হাতে ছেড়ে দেয়ায় বিদ্যুৎ মূল্যের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। নির্ধারিত সময়ে যদি সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে চলে আসত তাহলে পিডিবি’কে এই লোকসান গুনতে হতো না। মূলত, রেন্টাল-কুইক রেন্টালগুলো জিইয়ে রাখতে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করতে সরকারি কেন্দ্রগুলো নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আনা হচ্ছে না।

বিদেশি ষড়যন্ত্রে সরকারের আত্মঘাতী নীতির কারণে একদিকে কুইক রেন্টালের নামে এ পর্যন্ত লাখ লাখ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। সরকারের এসব যুলুমবাজী ও শোষণের বিরুদ্ধে জনগণকেই নিজেদের হক আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। প্রতিবাদী হতে হবে। প্রতিহত করতে হবে।

জাতীয় স্বার্থ জনগুরুত্বপূর্ন এবং ভূক্তভূগি সকল আমজনতার জানা উচিত বিধায় শেয়ার করা হলো।
মূল লেখক: মনিরুল ইসলাম
সংবাদ সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×