বাসে ঝিমুচ্ছে আইজুদ্দিন।
ঈদের বাড়ী যাবার ঝক্কি বছরে দুইবার করে পোহাতে হয়!
এক সপ্তাহ আগে থেকেই টিকেটে বুকিং! আবার যাত্রার দিনের ভোগান্তি ! অন্তত তিন চার ঘন্টা আগে না পৌছলে নিজের জায়গাটাও বেদখল! কেবিনও হাতছাড়া হয়ে যাওয়া!! হয়রানীর শেষ নেই!!
তার মধ্যে সকালে মিরপুর থেকে রওযানা দিলে বিকালে ঢাকার আরেক পাড়ে পৌছানোর নিত্য কষ্টতো আছেই! ডাইরেক্ট গাড়ী লোকাল হয়ে গেছে! চিল্লা চিল্লিতে কন্ডাকটার ছোড়া থোরাই কান দেয়! গায় যেন গন্ডারের চামড়া! কানে বুঝি তুলো দেয়া! হাল ছেড়ে দিয়ে
প্রচন্ড জ্যাম ঘামে গরমে তন্দ্রাচ্ছন্নতায় ধীরে ধীরে ডুবে যায়!
ডুবে যেতে যেতে হঠাৎ সব যেন পরিস্কার হয়ে যায়..
এক সুন্দর ছিমছাম সাজানো গোছানো রাস্তায় নিজেকে দেখতে পায় এক দারুন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে!
ডানে বায়ে তাকায়!
হ্যা! ঢাকাইতো!
এত পরিস্কার ঝকঝকে রাস্তা!
সাই সাই করে ছুটছে গাড়ী!
দুই মিনিটে ফার্মগেট পেরিয়ে গেল!
গাজীপুরের নিজের বাড়ী পৌছে অবাক! এত সুন্দর সাজানো বাড়ী! নিজেকেই নিজে চিমটি কাটে!
ধিরে সুস্থে ঢুকে স্বভাবশত আগে্ নিজের গরিবী ল্যাবে ঢুকেতো চক্ষু চড়কগাছ!
যেন ভুল করে নাসার কোন ল্যাবে ঢুকে পড়েছে।
কি হচ্ছে কি এসব???
ক্যালেন্ডারের দিকে তাকায় ২০৪০! সেকি ! তবে কি সময় যন্ত্রে চড়ে বসেছে!
ভাবনা ছেড়ে বেশ খুশি মনে নিজের অসমাপ্ত কাজগুলোর দিকে নজর দেয়! লাই ডিটেক্টর মেশিনের আদলে সে এমন কিছু বানাতে চাইছিল যাতে ব্যক্তি উপস্তিতি সম্ভব না হলে তার বক্তব্য বা মেসেজ স্ক্যান করলেও তার সত্য মিথ্য নির্ণয় করা যায়! ইতিহাসে যতসব গোঁজামিল আর দলান্ধতায় ডুবে থাকা দ্বৈতইতিহাসের যাতাকল সময়ে এই অদ্ভুত আইডিয়া তার মাথায় কিলবিল করত!
তারপর দীর্ঘ সময় বয়ে যায়!
সেই স্ক্যানারটা নিয়ে নাড়তে চাড়তে হঠাই ইউরেকা বলে লাফিয়ে ওঠে আইজু! স্ব-বিজ্ঞানি আইজু!
তিন দিন গভির অভিনিবেশে কাজের পর আজ তৃপ্তির নিঃশ্বাস নিল! একটা, দুটু তিনটে - ডকুমেন্ট স্ক্যান করতেই লাই ডিটেক্টর স্ক্যানারের ফলাফল শতভাগ সঠিক । আহ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!!! দু হাতে চুটকি বাজায়.. গান গায় - হাঔয়া মে উড়তা যায়ে মেরা লাল দোপাট্টা মলমল... নিজেই হেসে ওঠে হা হা হা....
অলস দৃষ্টিতে আশে পাশে তাকায়। পুরানো কাগজের স্তুপে হঠাৎই বহু পুরানো ২০১৫ সালের একটা নিউজ পেপার পেয়ে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। এটা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার ইচ্ছেটা চাগিয়ে উঠল! বেশ উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে! বর্তমানের পাশাপাশি অতীতের বিষয় নিয়েও লাই ডিটেক্টর স্ক্যানার কত টুকু কাজ করে।
প্রথম নিউজের প্রথম প্যারাটা স্ক্যান করল
তিনি ......সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিপুল সংখ্যায় তথাকথিত গুম, বিরোধী নেতাকর্মী ও ইসলামপন্থীদের গণগ্রেপ্তার এবং গণমাধ্যম এবং ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর নতুন কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশটিকে কার্যত একটি নিপীড়ক, এক দলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ডিটেক্ট বাটনটা চাপতেই টি টি টি করে লাল বাতি জ্বলে উঠল! ভ্র কুচকে রইল আইজু! মেশিন ঠিক মতো কাজ করছে তো!
এবার অন্য অংশ আবার স্ক্যানিংয়ে দিল...
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে ... রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির চেয়ারম্যান আতা রহমান, ডেইলি স্টাট সম্পাদক মাহপুজ ইনাম, টিআইবিটির নির্বাহী পরিচালক ইফতির বক্তব্য আসে; তারা সরকারের কার্যক্রমের সমালোচনা করেন।
আতা রহমান বলেন, “বাংলাদেশে কর্তৃত্বমূলক শাসন এখন এক ব্যক্তির শাসনের দিকে যাচ্ছে। এর ফল হিসেবে গণতন্ত্র এখন খাদের কিনারায়।”
বাংলাদেশ এক ‘অভূতপূর্ব’ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দাবি করে ------ বলেন, সরকার বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে নিঃশেষ করে ফেলেছে। এখন গণমাধ্যমের সমালোচনায় নেমেছে। বিরুদ্ধ মত সহ্য করতে পারছে না তারা।
ডিটেক্ট বাটনটা চাপতেই - নীল বাতি জ্বলে উঠল!
প্রিভিউতে গিয়ে আবার স্ক্যানিং দিল...
“আমার কাজ সাধারণ মানুষের উন্নয়ন। আমার রাজনীতি সাধারণ মানুষের জন্য, নিজের জন্য নয়... জনগণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আছে।”
“জনগণ চায়, তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হোক। আমি তাদের সেই চাহিদা পূরণেই কাজ করছি। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও চাকরির ব্যবস্থা করছি।”
ডিটেক্ট বাটনটা চাপতেই অস্বাভাবিক ভাবে টিট টিট টিট করতে লাগল আর লাল বাতি জ্বলে নিভে জ্বলে নিভে চলছে! ভয় পেয়ে গেল আইজু! এমনতো কখনো করেনি! তাড়াতাড়ি রিসেট করে দিল লাই ডিটেক্টর স্ক্যানার!
পত্রিকাটা হাতে নিয়ে চেয়ে আছে। অবাক বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটছে না। ঐ সময়ের মানুষ তবে কিভাবে জীবন যাপন করেছে ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে!
কিন্তু বিজ্ঞানীর আগ্রহ বড় বালাই।
নিউজের শেষাংশটা দেখেই আবার মেশীনে হাত দিল! চালূ হল লাই ডিটেক্টর স্ক্যানার! আবার স্ক্যানিং দিল.. “গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান কার্যকর, মানুষও সন্তুষ্ট। “তাহলে আপনি কী করে আমাকে বলেন যে আমি শাসন করছি। আমি শাসন করছি না, জনগণের সেবা করছি।”
এবার নার্ভাসনেসটা কেন যেন বেড়ে গেল! হঠাৎই ঘেমে উঠতে লাগলো আইজু! হাত খানিকটা কাঁপছে কি? তারতো এমন হবার কথা না। এক গ্লাস ঠান্ডা জল খেয়ে নিল। এবার বেশ সতেজ লাগছে।
ডিটেক্ট বাটনটা চাপতেই ....বুমমমমমমমমমম লাই ডিটেক্টর স্ক্যানার!টাই যেন জ্বলন্ত এক্সক্লুসিভ হয়ে পুরো ল্যাবটা সহ উড়ে গেল!!!
হায় হায়! আমার ল্যাব! আমার ল্যাব করতে করতে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছে!!!
এই মিয়া সোজা হইয়া বন! হঠাৎ পাশের প্যাসেঞ্জাের গুতো খেয়ে ধরমড় করে সোজা হয় আইজুদ্দিন! গরমে, ভীরে ঘেমে নেয়ে একাকার! বাসটা ঠায় দাড়িয়ে কারওয়ান বাজারের জ্যামে!
আপনা মনেই হেসে ওঠে আইজুদ্দিন!
তাহলে এতক্ষন দুঃস্বপ্ন দেখছিল! সাড়ে তিনটায় লঞ্চ! নাহ এবারও ঈদের লঞ্চটা বুঝি মিসই হয়ে যাবে! যেতে হবে ছাদে করে!
মনটা বিষিয়ে ওঠে অজান্তেই!!!
@@@@
সবাইকে ঈদ শূভেচ্ছা!
@ ফান পোষ্টের সকল চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত মৃত অনাগত কারো সাথে মিলে গেলে কাকতাল/কোকিলতাল মাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২১