somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাদমান ক্যাসপার ক্ষমা করো! আমরা বড় বেশী অন্তর্মূখী!!! এই অভিমানেই কি আমাদের ছেড়ে গেলে!!! যেখানেই থাক ভাল থেকো!!

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"আমাকে একটু ভাত দাও মা, আমি কতদিন ভাত খাই না, ডাল দিয়ে হলেও একটু ভাত দাও আমাকে মা"।

তার বাবা ছুটে বের হয়ে গিয়েছিলেন পাশ থেকে, যে ছেলের এতটুকু ক্ষুধা তিনি কখনো লাগতে দেননি, সেই প্রাণের কলিজা এখন ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে। কিন্তু তার তো মুখে কোন খাবার খাওয়া নিষেধ। কিভাবে তিনি ছেলের এই ছটফট মুখ দেখবেন?



এরপর ক্যাসপারের একটা ভালো এবং সফল অপারেশন হয়েছে, এবং ব্লিডিং হওয়ার মূল সমস্যা খুঁজে সেটাকে ফেলে দেয়া হয়েছে। অপারেশনের পরে এই আদুরে ছোট্ট ভূত কথা বলেছে, নিজের নাম বলেছে, বাবার - মায়ের নাম বলেছে। বাবা-মা, ডাক্তাররা অন্যান্য শুভাকাঙ্ক্ষীরা সবাই বেশ খুশি

কিন্তু পরম আদরে বড় হওয়া ছেলেটা ধুম করে অসুস্থ হয়ে গেল পরদিন দুপুর থেকেই। সমস্যা হলো তার ফুসফুসে, সে শ্বাস নিতে পারছে না। কোন একটা ঝামেলার কারণে তার ফুসফুসে ইনজুরি হয়ে গেছে। ডাক্তার এবং নার্সরা যথাসাধ্য করল, সাধ্যের বাইরে গিয়েও যা করা দরকার সেটাই করার চেষ্টা করল। ফলাফল হলনা কোন। প্রতি মুহূর্তে অবনতি হতে লাগলো তার শারীরিক অবস্থার। তার বিপি (ব্লাড প্রেশার) পাওয়া যাচ্ছিলো না, ইউরিন বন্ধ হয়ে গেলো। ফলাফল হলো মারাত্মক। ইউরিন না হবার কারণে তার প্রভাব পড়তে শুরু করলো কিডনিতে। বিপি না বাড়ার ফলে ইফেক্ট পড়লো শরীরের সব জায়গায়। দ্রুত ওকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেয়া হলো, পুরো রাত চললো লাইফ সাপোর্টে। পরে ডাক্তাররা বিভিন্ন কনসালটেন্টদের পরামর্শে ক্যাসপারকে কিছু নতুন ঔষধ দেয়ার ফলে ধীরে ধীরে তার বিপি বাড়তে লাগলো, ইউরিনও কিছু হতে থাকলো, কিডনীর ঝামেলাও সে ওভারকাম করে ফেললো। জানা গেল ওর ব্লাড প্রেসার কিছুটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ইউরিন আউটপুট। হৃদস্পন্দন কমেছে। শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কম। তাছাড়া আর সব প্যারামিটার এর উন্নতি হয়েছে।
১৬/১৭ ঘন্টা আগে এতটুকুই জানতাম। ওকে নিয়ে আমি কোন পোষ্ট দেইনি কিন্তু ওর রেগুলার আপডেট আমি রেখেছি, সামহাউ বাচ্চাটার প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে, এ কারণেই আপডেট রাখা। বুকে একটা আশা ক্যাসপার দ্রুপ ঠিক হয়ে যাবে, আল্লাহ একটা মিরাকল ঘটিয়ে দিবে ...



কিন্তু এই মুহূর্তে আমি জানি, ক্যাসপার আর নেই, সে চলে গেছে ...চলে গেছে সে সবাইকে ছেড়ে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন... চার বছরের ফুটফুটে বাচ্চাটা আর কোনদিন ফিরে আসবেনা, আর কোনদিন মা বলে ডাকবেনা, বাবার কাছে পাহাড়ে যাওয়ার আবদার করবেনা ... কোনদিন না ............

সাদমান ক্যাসপারকে নিয়ে লেখা ব্লগারনিশা মাহমুদার পোষ্টথেকে ..

আর বাবার সাথে পাহাড়ে উঠতে চাইবে না ক্যাসপার। বাবারর সাথে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত যেতে চাইবে না। বাবার সাথে অজানা কোনো স্টেশনের প্লাটফরমে শুয়ে পড়বে না। না, ক্যাসপার ফেরে নি। ক্যাসপার চলে গেছে না ফেরার দেশে। অথচ এমন তো কথা ছিল না। মুহাম্মদ সাদমান ক্যাসপার। মা বাবার সঙ্গে চট্টগ্রামে থাকে। ক্যাসপার বড় হলে বাবার মতো ট্রেকার হবে। বিয়ার গ্রেইলের মতোও হতে পারে, ওই শো'টার সবগুলো পর্ব ক্যাসপারের মুখস্ত। তাই সে নিজের কাজ এখন থেকেই নিজে করে। ভাত খাওয়া, খেলা শেষে নিজের খেলনা গুছিয়ে রাখা, টয়লেট শেষে নিজে নিজেই পানি ঢেলে দেওয়া। বাজে গন্ধ ক্যাসপার একফোঁটাও পছন্দ করে না।



তখনই বাঁধলো সমস্যাটা। ক্যাসপার দেখেছে তার টয়লেটের সাথে ঝরঝর করে রক্ত যাচ্ছে। বোঝেনি, কী সর্বনাশটা চলছে নিজের ভেতর। ব্যথা পায়, কাঁদে, কাউকে বলেনা। চার বছরের বাচ্চা, কীভাবে বোঝাবে? একদিন মায়ের সন্দেহ হলো। ছেলে টয়লেটে কাঁদছে, জোর করে ভেতরে গেলেন। এবং রক্তের পরিমান দেখে স্তব্ধ হয়ে পড়লেন। এতো রক্ত! এরপরে চট্টগ্রামের রয়েল ক্লিনিক নেওয়া হলো। তারপরে অবনতি হলে ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও পরবর্তীতে পিজিতে নেওয়া হয়। এখানেই ক্যাসপারের রক্তক্ষরণের কারণ শনাক্ত ও তা অপসারণ করা সম্ভব হয়। ২৭ আগস্ট ক্যাসপারের সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। গত জুম্মার নামাজের পরে সারাদেশে ক্যাসপারের জন্য দোয়া করা হয়।

সাদমানের জন্য সামুতেও পোষ্ট এসেছিল। খুব কম! সাড়াও খুব কম!!! ব্লগার রোহানের আকুতি ভরা পোষ্ট
আমারা কি সবাই মিলে পারিনা এই ছোট্ট মাসুম বাচ্চাটাকে বাচাতে..? "ক্যাসপার কে বাচাতে এগিয়ে আসুন..!

বোকা মানুষ বলতে চাই ভাইয়ের ভ্রমন পোষ্ট সংকলনটি উৎসর্গ করা হয়েছে সাদমান ক্যাসপারের নামে...

এই মাসের ভ্রমণ সংকলন উৎসর্গ করা হল সদ্য প্রয়াত আমাদের কনিষ্ঠতম ট্র্যাভেলার কিড সাদমান ক্যাসপার এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে। যে বয়সে বাচ্চারা খেলে বেড়ায় বাসার উঠোনে আর আত্মীয় স্বজনের কোলে, সেই বয়সে চার বছরের এই শিশু ঘুরে বেড়িয়েছে বাবার সাথে পাহাড়-সাগর-ঝর্ণার কোলে। কিন্তু নির্মম বাস্তবতার গ্রাসে সকল মায়া ছিন্ন করে এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে অতি অল্প সময়ে অসীমের পাণে পাড়ি জমিয়েছে এই ছোট্ট শিশুটি। বাংলাদেশের পুরো ট্র্যাভেলজগতের সকলকে কাঁদিয়ে হারিয়ে গেছে না ফেরার দেশে। ক্যাসপার সম্পর্কে আজকের কালের কণ্ঠে প্রতিবেদনে চোখ রাখতে পারেনঃ আর ফিরবে না ক্যাসপারএবং বিদায় ক্যাসপার
চট্টগ্রাম ঈদগাহপাড়ার বাসিন্দা আফজাল হোসেন অপু ও ঝুমুর দম্পতির একমাত্র সন্তান সাদমান কেসপার। অপু পেশায় একজন স্টেইনস্লাস ডিজাইনার ও ট্রেকার। তিনি লিভিং উইথ ফরেস্ট ও ট্যুরিজম বিডি নামের দুটি ওয়েবসাইটের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। কালপুরুষ অপুদা’র ছেলে। বয়স চার। আমাদের ট্রাভেলার কমিউনিটির আদরের ছোট্ট পিচ্চি। আদুরে, তুলতুলে পুচকাটার যখন জন্ম হয়, মা ছিলেন অসুস্থ। ক্যাসপার বেড়ে উঠেছে তার বাবার কোলে। ক্যাসপারের বাবা, অপু, একজন ট্রেকার। 'রোপ নিসো? মগ? কবে আসবা? ক্যাসপারের আধো আধো বোল শুরু হয়েছে এসব কথা দিয়ে।হতেই হবে। ক্যাসপার তো তার বাবার 'কইলজা!'

শত চেষ্টার পর ও বাঁচানো গেলোনা আমাদের ছোট্ট বাবুটাকে।



রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী গ্রামে রামগতির হাটের পশ্চিমে তালুকদার বাড়িতে তৃতীয় জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে সাদমান ক্যাসপারকে। - See more at: Click This Link
শেষ ঠিকানায় ক্যাসপার



ফেসবুকে ক্যাসপারের জন্য অফিসিয়াল ইভেন্ট পেইজ

## এই ইভেন্টটি ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে করা হলো। কালপুরুষ অপু’দা এবং রিলেটেড অনেকেই যুক্ত হয়েছেন। উনারা সবাই এই ইভেন্ট থেকেই কাজ করছেন। সুতরাং,এটাই ক্যাসপারের জন্য উদ্যোগের অফিসিয়াল ইভেন্ট। এই ইভেন্ট ছাড়া অন্য কোথাও ক্যাসপারকে নিয়ে কোন পোষ্ট কিংবা ইভেন্ট চোখে পড়লে আমাদের জানান।

আমাদের সাথেই থাকুন। ক্যাসপারের স্মৃতিতে চলুন সবাই মিলে কিছু করি.......

ইভেন্ট পেইজের আহবানে অবম্যই সবাই একমত। তোমায় থাকতে তোমার জন্য কিচু করতে পারিনি!!!

চলে গিয়ে আমাদের অক্ষমতা, ব্যর্থতা, অন্তর্মূখীতায় ডুবে থাকা সবাইকে যেন তুমি লজ্জ্বা দিয়ে গেলে! সাহসী ক্যাসপার, ট্রাকার ক্যাসপার! ভাল থেকো! আমাদের ক্ষমা করো!!!! কালপুরুষ অপু ভাইকে আল্লাহ মনোবল দিন। সাহস দিন এই শোককে শক্তিতে পরিণত করার তৌফিক দিন।



ছবি কার্টেসী: ফেসবুক, বোকা মানুষ বলতে চায়, রোহান ভাই, কালের কন্ঠ ..
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫১
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×