১. আমার অফিসে বসের ড্রাইভার আমাকে বলল, তার ছেলে অনার্সে পড়ে। পরীক্ষা অনেক দিন পর পর হয়। এই সময়টায় যদি তাকে কোন চাকুরি দেয়া যেত, তাহলে তার উপকার হত। আমি বললাম, এত কম সময়ের জন্য কে তাকে চাকুরি দিবে? তাছাড়া তার পড়ালেখাও শেষ হয়নি এখনও। আমি উনাকে পরামর্শ দিলাম, বরং এই সময়টাতে তাকে ড্রাইভিং শিখতে বলেন, জীবনে অনেক কাজে লাগবে। চাকুরি করা লাগবে না...
২. উনি বললেন, ড্রাইভিংও তো একটা চাকুরি। তাছাড়া ড্রাইভিং-এ অনেক প্যারা, মানুষের কথা শুনতে হয়। আমি বললাম, কারো অধীনেই কেন তাকে ড্রাইভিং করতে হবে? উবার আছে, পাঠাও আছে। ড্রাইভিং-এ অনেক টাকা। চাকুরি করে আর কত টাকাই পাওয়া যায়। বয়স থাকলে আমি নিজেও ড্রাইভিং করতাম...
৩. উনি আমার কথা শুনে মনে হয় রাগ করলেন। উনার ধারণা হল, আমি চাইছি না আমার মত চেয়ার টেবিলের কাজ উনার ছেলে করুক। এটা উনার দোষ না। এটা আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার দোষ। গ্রামে গঞ্জে গণহারে অনার্স/মাস্টার্স খোলার পর সবার এখন অফিসিয়াল চাকুরি করার ইচ্ছে হয়। অথচ একজন সাধারণ বিষয়ের মাস্টার্সের চাকুরি জীবন শুরু হয় ৮/১০ হাজার টাকা দিয়ে। তাও এত এত শিক্ষিত বেকারের ভীড়ে একটা চাকুরি যোগাড় করাও অনেক কঠিন। এরপর বিশেষ কোন স্কীল না থাকলে বয়স হয়ে গেলে সেই অফিসিয়াল চাকুরিটাও আর থাকে না...
৪. বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকার অনেক বেড়ে গিয়েছে। এখন দরকার শিক্ষিত ড্রাইভার, শিক্ষিত মেকানিক, শিক্ষিত টেকনিশিয়ান, শিক্ষিত কৃষক, শিক্ষিত সিকিউরিটি অফিসার। একজন টাইলস মিস্ত্রি, একজন থাই মিস্ত্রি, একজন ড্রাইভারের উপার্জন একজন মাস্টার্সের চেয়ে বেশী। ব্যপারটা সবাইকে বুঝতে হবে। সামাজিক ট্যাবু ভাঙতে হবে...
৫.এখন কেউ কেউ বলবেন, আপনি এত বড় বড় কথা বলেন, আপনি কি আপনার মেয়ের বিয়ে ড্রাইভারের সাথে দিবেন, মেকানিকের সাথে দিবেন? উত্তরটা হল - এখনই দিব না। আর সামাজের মানসিকতার পরিবর্তনও কাল থেকেই বদলাবে না। কিন্তু এখন থেকে শুরু করলে ২০ বছর পর যেটা হবে সেটাতে সমাজের অনেক উপকার হবে...
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ২:১০