অনেক আগ্রহ ভরে দৈনিক সকালের খবর কিনলাম আজ। বছরখানেক ধরে আসি আসি করেও অবশেষে আজ প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকাটি। আগ্রহের মাত্রাটা তাই বেশিই ছিল মনে হয়। পত্রিকা পড়ার পর আমার প্রতিক্রিয়াটাই এখানে তুলে ধরছি।
পত্রিকার গেট আপ একেবারে খারাপ না, ভালোই। তবে লোগোটার উপরে-নিচে স্পেসিং বেশি হয়ে গেছে বলে দৃষ্টিকটু লাগছে আমার কাছে। পত্রিকাটির একটা বিশেষত্ব চোখে পড়ার মতো। পুরো পত্রিকার কোন নিউজে জাম্পিং নাই। জাম্পিং না থাকায় পৃষ্ঠা প্রতি নিউজ আইটেম কমে গেছে। একসাথে পুরো নিউজ পড়ে শেষ করা যাচ্ছে। পৃষ্ঠা উল্টাতে হয় না বলে পড়তে আরাম পাওয়া যায়। তবে এর অসুবিধা হলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিউজ ফার্স্ট পেজ বা ব্যাক পেজে স্থান পায় না, ভেতরের পেজে চলে যায়। যেমন ৩ নম্বর পৃষ্ঠার দিনে ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকে রাস্তা! শিরোনামের নিউজটি ফার্স্ট পেজে বা ব্যাক পেজে আরো ভালো ট্রিটমেন্ট পাওয়ার দাবি রাখে।
আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয়, অন্যান্য পত্রিকার চেয়ে তুলনামূলক নিউজ অনেক কম ছাপা হয়েছে পত্রিকাটিতে। বিজ্ঞাপনের আধিক্যেই যে এই দশা তা স্পষ্ট বুঝা যায়। ধারণা করছি, প্রথম তিন দিনের বিশেষ সংখ্যার পর এটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
আরো একটা মজার ব্যাপার না বলে পারছি না, কালের কণ্ঠ যেদিন প্রথম বের হয়, সেদিন তারা রবিন্দ্রনাথের একটা কবিতার লাইনকে প্রথম সম্পাদকীয়’র শিরোনাম করেছিল। কবিতার লাইনটি হলো, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম।’ সকালের খবরের প্রথম সম্পাদকীয়’র শেষ প্যরায়ও এই লাইনটি রয়েছে। আশ্চর্য মিল!!
শুনে আসছিলাম, সম্পাদক থেকে শুরু করে অধিকাংশ হর্তা-কর্তা বিএনপি মাইন্ডের। আমার অবশ্য এই ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে, আওয়ামীলীগ সরকার বিএনপি সমর্থিত পত্রিকাকে বাজারে আসতে দেবে। তবে পত্রিকায় বিএনপি মনোভাবের কোন ছাপ চোখে পড়লো না। বরং প্রথম দিনেই সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় কামাল লোহানীর যে কলাম তারা ছাপিয়েছে তা সরকারী দলের চাটুকারিতার উৎকৃষ্ট দলিল হয়ে থাকবে। শুধু চাটুকারিতাই নয়, আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রচ্ছন্নভাবে পত্রিকাটিকে সাবধানও করে দেওয়া হয়েছে যে, কিভাবে পত্রিকা চালাতে হবে।
‘সকালের খবর’ শিরোনামে কামাল লোহানী লিখেছেন,
আজ তাই মহাজোট সরকারকে নানা বাধা, সঙ্কট প্রতিবন্ধকতায় ফেলতে নিত্যই মতলব এঁটে চলেছে। নির্বাচনে পরাজিত হয়ে হন্যে হয়ে নানা দিকে আপত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিরোধীরা। নিজেদের সৃষ্ট (?!) দ্রব্যমূল্য সমস্যা, বিদু্যৎ ঘাটতি-এমন সঙ্কটের অজুহাতে রাজপথ গরম করতে চেষ্টা করছে, সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে মীর্জা ফখরুল, নজরুল ইসলাম খান, মাঝেমধ্যে এমকে আনোয়ার সাহেবও দেখি মানুষকে ভাবিয়ে তুলতে বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকেন।
কিন্তু এ তো গেল একটা দিক। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক শক্তিকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে জনগণের করতে চাইলে আমাদের যেতে হবে ওই সাধারণ মানুষের কাছে। সত্য উদঘাটন করতে হবে এবং বাস্তবসম্মত, জনকল্যাণমুখী কাজে যে অগ্রগতি হচ্ছে, তার বহুল প্রচার করতে হবে। বিরোধী দল কী বলছে তাকে তোয়াক্কা না করে জনগণকে বিশ্বাস করতে হবে এবং সে কারণেই জনগণের কাছে পেঁৗছতে হবে। বিরোধী দলের অযাচিত মিথ্যাচারের প্রচারণার জবাব না দিয়ে বাস্তবে কী করছে সরকার জনকল্যাণে মনে হয় সে কথাই বেশি করে বলা দরকার।
এ ক্ষেত্রে সংবাদপত্র তথা মিডিয়ার দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কি বুঝলেন, বিএনপি’র পত্রিকা মনে হয়?