বাংলাদেশকে কেন এখনো ধরা হচ্ছে না, এ ধাঁধার জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। আল কায়েদা জুজুর ভয় দেখিয়ে আফগানিস্তানকে তছনছ করে দেয়া হলো; সেই ''জুজুর বুড়ো' ওসামা বিন লাদেনকে পাকড়াবার নামে আমেরিকার যুদ্ধ দফতর পেন্টাগন আর গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এখন পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পাহাড়ী এলাকাগুলো চষে বেড়াচ্ছে; অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনঅধ্যুষিত বাংলাদেশে কেন এখনো হামলা হচ্ছে না তার জবাব খুঁজে এখন ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে কারো কারো। সেলিগ হ্যারিসন হচ্ছেন তাদেরই একজন। বর্তমানে হাডসন ইনস্টিটিউটের সাথে সম্পৃক্ত এই হ্যারিসন ভদ্রলোক এক সময়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতেও কাজ করেছেন। তিনি চান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের স্বার্থ যেন সাজুয্যপূর্ণ হয়।
'গেট আ গ্রিপ অন ঢাকা' (ঢাকাকে কব্জায় আনো) শিরোনামে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সেলিগ হ্যারিসন লিখেছেন, ওসামা বিন লাদেনের খোঁজে পেন্টাগন আর সিআইএ যখন পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পাহাড়ী এলাকাগুলোয় মাথা কুটছে, আল কায়েদার একজন প্রতিষ্ঠাতা সহযোগী তখন বাংলাদেশের বনাঞ্চলে সন্ত্রাসী ঘাঁটি গড়ে তুলছে নীরবে নিভৃতে। আর এ কাজে তাকে ছত্রছায়া দিচ্ছে 'ইসলামপন্থী শক্তিগুলোর দোসর বর্তমান সামরিক কর্তৃপক্ষ' বা মিলিটারী রেজিম। হ্যারিসন লিখেছেন, বাংলাদেশে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফজলুর রহমান খলিল হচ্ছেন এখন বাংলাদেশের জঙ্গল এলাকার সন্ত্রাসী ঘাঁটি গড়ে তোলার নায়ক। ১৯৯৮ সালে বিন লাদেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন, সেই ঘোষণার ছ'জন স্বাক্ষরদাতার অন্যতম হচ্ছেন ফজলুর রহমান।
নিবন্ধে বলা হয়, হরকতের এজেন্টরা ভারতে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মুম্বাই ও বেনারসে হামলা হয়েছে ২০০৬ সালে, হায়দরাবাদে ২০০৭ সালে এবং জয়পুরে হয়েছে এ বছর মে মাসে। এ অভিযোগ ভারতের। আর আমেরিকায় বিশ্ব প্রশাসনও বেসরকারীভাবে ভারতের সাথে এ বিষয়ে একমত। কিন্তু হরকতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনা কিংবা 'ইসলামিস্ট'দের সাথে সংযোগ রক্ষাকারী উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদেরকে অপসারণে 'বাংলাদেশের সামরিক শাসক' জেনারেল মইন উ আহমেদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে রহস্যজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রৃ।
নিবন্ধে বলা হয়, (জেনারেল) আহমদ ২০০৭ সালের জানুয়ারীতে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান পরিচালনা করে জরুরি ক্ষমতা হাতে নেন। যুক্তরাষ্ট্রের বুশ প্রশাসন তাকে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানালেও নির্বাচনে 'কারচুপির' যেসব প্রয়াস তিনি চালাচ্ছেন সেগুলো তারা (ওয়াশিংটন) উপেক্ষা করে যাচ্ছে।
এতে বলা হয়, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ, নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ দেশের হরকত ও তার সহযোগী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো পাকিস্তানের মার্কিনবিরোধী ইসলামী শক্তিগুলোর সাথে প্রত্যক্ষ সংযোগ রক্ষা করে চলেছে।
নিবন্ধের শেষে বলা হয়, বাংলাদেশে অবিলম্বে জরুরি ক্ষমতার অবসান ও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জোর চাপ দেয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রর এবং দাতাগোষ্ঠীর।
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান : একসুরে বাঁধা
অন্যদিকে প্রখ্যাত সাময়িকী 'নিউজউইক' ছেপেছে প্রায় অভিন্ন মাত্রার আরেকটি নিবন্ধ, সেখানে 'সেনাবাহিনীতে ঘাপটি মেরে থাকা ইসলামিস্ট'দের চক্রান্তের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে 'তালেবান-স্টাইলই মাদ্রাসা' শিক্ষা ব্যবস্থার কথা।
ম্যালকম বেইন্সের পাঠানো এ নিবন্ধেও উদ্ধৃতি নেয়া হয়েছে সেলিগ হ্যারিসনের যিনি 'ঢাকাকে কব্জায় আনো' বলে নিবন্ধ ছেপেছেন লস এঞ্জেলেস টাইমসে।
নিউজউইকের নিবন্ধকারকে হ্যারিসন বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে সেই সুযোগে ইসলামিস্টরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করতে পারে এবং দেশটিকে 'সন্ত্রাসের আঞ্চলিক স্বর্গরাজ্যে' পরিণত করতে পারে।
আর ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটিতে দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত সুমিত গাংগুলি নিউজউইকের নিবন্ধকারকে বলেছেন, ইসলামিস্ট মিত্রদের সাথে মিলে বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে চাচ্ছে। আর আর্মির ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ইসলামিস্টরা দেশে জরুরি অবস্থা দীর্ঘায়িত করার পাঁয়তারা করছে। সুমিত গাংগুলির হিসেবটা এ রকম: আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের কব্জা করতে গেলে তারা 'আমাদের' হাত গলে বাংলাদেশে নেমে পড়বে। বেলুনের এক অংশে চাপ দিলে যেমন অন্য অংশ ফুলে ওঠে। দু'টি নিবন্ধেই একটি শব্দ ঘুরে ফিরে এসেছে। শব্দটি হলো : গ্রিপ।
নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মতে, এই কব্জা করার মানসিকতা নিয়ে, বাংলাদেশকে ঘিরে কল্পনার ফানুস ওড়াচ্ছেন আজ অনেকেই। বিশ্বব্যাপী মুসলিমবিরোধী মনোভাব, ইসলাম বিদ্বেষ এবং মুসলিম বিশ্বের সম্পদ দখলের অশুভ প্রবণতার অংশ হিসেবে আজ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এমনকি অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে কব্জা করতে পারলে যারা খুশি হয়, তাদের খুশি করতে পারলে খুশি হয় ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো। ওদের এই খুশি ভাগাভাগির খেলায় এখন অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম আমাদের।
মূল লেখা দেখতে View this link
সংশ্লিষ্ট লেখা দেখতে- View this link
আরো- View this link