
আজ এইদিনে ৩১ জুলাই ১৯৬৫ সালে ইংল্যান্ডের দক্ষিণে গ্লুসেস্টারশায়ারের ছোট্ট একটি শহর ইয়েটে জন্ম গ্রহন করেন সময়ের আলোচিত লেখিকা কিংবদন্তি "হ্যারি পটারে"র স্রষ্টা জে কে রাউলিং ।
অনেকটা গ্রাম্য জীবনের আবহেই বেড়ে উঠেছেন রাউলিং। তার বাবা পিটার ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আর মা অ্যানি গবেষণাগারের টেকনিশিয়ান। পিটার ও অ্যানি ছোটবেলা থেকেই তাদের দুই মেয়েকে মজার মজার গল্পের বই কিনে দিতেন। রাউলিংয়ের ছেলেবেলার অভিজ্ঞতাই পরে তার লেখালেখির উপাদান যুগিয়েছে।
টিনএজ বয়সে তিনি স্বপ্ন দেখতেন একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক হওয়ার। আর ভাবতেন, তার লেখা বই দোকানে হটকেকের মতো বিক্রি হবে। কী আশ্চর্য্, শেষ অবধি তার স্বপ্ন সত্যিই পুরণ হয়েছে। অবশ্য নিজের এ স্বপ্নের কথা ছোটবেলায় লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি মনের গহিনে।
মায়াবি জগতের এই ফিকশন সিরিজটি লেখা শুরুর আগে নানা জায়গায় চাকরি করেছেন রাউলিং। ২৬ বছর বয়সে চলে যান পর্তুগালে, সেখানে তিনি ইংরেজি শেখাতেন। ওই সময় পুর্তগিজ সাংবাদিক জর্জ অ্যারান্টেসকে বিয়ে করেন। ১৯৯৩ সালে আগস্টে রাউলিংয়ের কোল জুড়ে জন্ম নিলো তাদের মেয়ে জেসিকা।
হ্যরি পটার সিরিজের প্রথম গল্পটি ১৯৯৫ সালে লেখা শেষ করলেও এই চরিত্রটির আইডিয়া তার মাথায় আসে প্রায় পাঁচ বছর আগে। লোকজনে ভর্তি এক পাতাল ট্রেনে চড়ে ম্যানচেষ্টার থেকে লন্ডন যাচ্ছিলেন রাউলিং। এই প্রচণ্ড ভিড় এবং বিরক্তিকর জায়গায় হঠাৎ করেই তার কল্পনার জগতে উঁকি দিল এতিম এক ছেলে। যে ছেলেটি বাস করে তার নিচু মনের এক ফুফু ও ফুপার বাড়িতে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, ছেলেটি জানে না আসলে সে মায়াবী ক্ষমতাধর এক জাদুকর।
একই সঙ্গে হ্যারির চেহারাটাও ভেসে ওঠে তার মানসপটে। এ অভিজ্ঞতাটি লেখিকা রাউলিং বর্ণনা করেছেন এভাবে - “খুব ছোটবেলা থেকে লিখলেও এই আইডিয়াটির মতো কোনো ব্যাপারে আমি এতো উত্তেজিত হইনি। ট্রেন ভ্রমণের প্রায় চার ঘণ্টা বসে আমি পুরো বিষয়টি নিয়ে ভাবলাম। মনের চোখে দেখতে পেলাম মোটা ফ্রেমের চশমা পরিহিত কালো চুলের হ্যারিকে; যে জানে না সে বিষ্ময়কর জাদুকরি ক্ষমতাধর একটি ছেলে।”- ওই সময় থেকেই তিনি এতিম এই ছেলেকে নিয়ে একটি গল্প লিখতে আরম্ভ করেন হ্যারি পটারের গল্প।
হ্যারি পটার লেখার আগে জে কে রাউলিং ছিলেন অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মতোই নিতান্ত সাধারণ কেউ। নিজের আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুবান্ধব ছাড়া আর কেউই তাকে চিনতো না।
শুধু কী তাই, তিনি হ্যারি পটার লিখে বেশকিছু দিন প্রকাশকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু কেউই তার লেখা প্রকাশ করতে সম্মত হয়নি। তাদের ধারণা ছিলো তারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এতে। কিন্তু যে প্রকাশনীটি এই ঝুঁকি নিতে রাজি হয়েছিলো তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথম বইটি প্রকাশের পরই বদলে যায় হ্যারির স্রষ্ট্রা রাউলিংয়ের জীবনও। এখন পুরো বিশ্বের পাঠক তাকে চেনে এবং জানে।
২০০৭ সালে বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফর্বস বিশ্বের ক্ষমতাবান সেলিব্রেটিদের একটি তালিকা তৈরি করে তাতে জে কে রাউলিং ছিলেন ৪৮ তম। টাইম ম্যাগাজিন ২০০৭ সালের পার্সন অব দি ইয়ার-এ তাকে রানার-আপ ঘোষণা করে।
সারা বিশ্বজুড়ে হ্যারি পটার চরিত্রটির সফলতার কারণ সম্ভবত এটাই যে, অসাধারণ কোনো মায়াবী ক্ষমতা তার নেই বরং মানবীয় বৈশিষ্ট্যগুলোই তার মধ্যে বেশি প্রকট। সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ কাটিয়ে হ্যারি পটার কেবল তার গল্পেই নয়, চিরকিশোর হয়ে সব সে যুগের ছোটবড় সকল মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে, একথাতো অনায়াসেই বলা যায়। আর তার সাথে সাথে বেঁচে থাকবেন হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রাউলিং।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০০৮ সকাল ৭:০৭