স্কুলে পড়ার সময় জাহিদুর রহমান (জাহিদ) ছিল আমাদের লিডার। ওর সেরকম বিশেষ কোয়ালিটিও ছিল । স্মার্ট, একরোখা, দূরন্ত। এতোসব গুণপনার কারনেই ও আমাদের নেতা হয়ে উঠেছিল। ক্লাস কিংবা ক্লাসের বাইরে, টিফিন টাইমের বাঁদরামিতে কিংবা ক্লাস-পার্টিতেও ওই ছিল মধ্যমনি। টকটকে ফর্সা, চশমা পরা, বাকপটু জাহিদ পড়াশোনাতেও ভালো ছিল বেশ। ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেইন, ক্রিকেট দলের দলনেতা জাহিদ মারপিটেও ছিল ওস্তাদ। একে- ওকে পাঞ্জা লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিত মারপিট লাগানোর উছিলায় ...
জাহিদদের বাসা ছিল ঢাকার দিলু রোডে । মাঝেমাঝে ওদের বাসায় যেতাম। ঝকঝকে দোতলা বাড়ি। দোতলায় ওদের পড়ার ঘরে বসে গল্প করতাম। এটা- ওটা খাওয়াতো। একটা ব্যাপার আজও মনে আছে। বাসায় জাহিদ খুব চুপচাপ আর শান্ত ছিল । সম্ভবত বাড়ির বড়দের ভয় পেত ও । স্কুলে কিন্তু ওর অন্যমূর্তি। বেপরোয়া, লড়াকু, ডানপিটে। রেগে গেলে ওর ফর্সা মুখটা কেমন লালচে হয়ে উঠত। মাথার পিছন দিকের চুলগুলি ছিল একটু খাড়া- খাড়া। ওর রণমূর্তি দেখে তার অনুগত আমরাও ভয় খানিক খেতাম। ওর সঙ্গে সম্পর্কটা যেন সাংঘর্ষিক হয়ে না- ওঠে সেই দিকটায় লক্ষ্য রাখতাম।
শৈশবেই মানুষকে বিচ্ছেদ-বেদনা সইতে হয়। জাহিদ ক্লাস এইটে অন্য স্কুলে চলে গিয়েছিল। এরপর ওকে আর কখনও দেখিনি। আশির দশকের মাঝামাঝি শুনেছিলাম যে ও নাকি জার্মানিতে আছে। জীবন কারও জন্য থেমে থাকে না। ওকে একরকম ভুলেই গিয়েছিলাম। তবে অনেকটাই অন্য রকম ছিল বলেই জাহিদ মনের মধ্যে গভীর একটা দাগ রেখে গিয়েছিল।
অন্য অনেকের মতোই ফেসবুকে আমারও অ্যাকাউন্ট আছে। বন্ধুবান্ধবের সংখ্যাও প্রায় হাজার খানেক। নিয়মিত ছবি আপলোড করা ছাড়াও ব্লগের পোস্টগুলিও আপলোড করি। দিনে অভ্যেস মতন বার-কয়েক চোখ বুলাই পেজটাতে। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এলে অ্যাড করি, খুব একটা বাছবিচার করি না। সেরকম গতকালও দু-তিনটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাড করেছি।
আজ একটা মেসেজ পেলাম। মোহাম্মদ জাইদুর রহমান লিখেছে-
Kire kemon asisch? Tor sathey kokhono kotha hoyni skype
kinba messenger gulote! Du ek line likhis ar jogajog sutro ta k kaje lagaish. Onek din por tor kotha keno sobar kothai mone porse.
ওর প্রোফাইলে দ্রুত চোখ বুলিয়ে দেখি যে স্কুলের নাম লেখা রয়েছে উইলস লিটিল ফ্লাওয়ার, সন-তারিখও ঠিকঠাক মিলে যাচ্ছে। মোহাম্মদ জাইদুর রহমান? তার মানে স্কুলের সেই জাহিদ ! কিন্তু ... কিন্তু ওর নাম তো জাহিদুর রহমান জানতাম! যাক, ফেসবুকের কল্যাণে প্রায় তিরিশ বছর পর স্কুল জীবনের হারিয়ে যাওয়া এক বন্ধুকে ফিরে পেলাম!
জয়তু ফেসবুক!
কিন্তু জাহিদের কথাগুলির উত্তরে ঠিক কী লিখব বুঝতে পারছি না ...