somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যান গগ এবং বৌদ্ধধর্ম

০১ লা মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কেবল ওস্তাদ আঁকিয়েই নন, মানুষ হিসেবেও অতি উত্তম ছিলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। যিনি বলেছিলেন:An artist needn't be a clergyman or a churchwarden, but he certainly must have a warm heart for his fellow men. একনিষ্ট খ্রিস্টান হলেও জীবনের এক পর্যায়ে জাপানি সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে বৌদ্ধ দর্শনের সংস্পর্শে এসেছিলেন এই বিশাল হৃদয়ের মানুষটি, এমন কী একটি ছবিতে নিজেকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হিসেবে কল্পনা করেছেন এই ওস্তাদ আঁকিয়ে ...

১৮৭০ এর দশকে ফ্রান্সে হঠাৎ করেই জাপানি সংস্কৃতি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে । ফ্রান্সে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ প্রবল হয়ে ওঠে, যাকে Japonisme বলা হয়। জাপানি শিল্পের নান্দনিক শৈলী পশ্চিমা শিল্পের চেয়ে আলাদা হলেও জাপানি সূক্ষ্ম সৌন্দর্যবোধ ফ্রান্সে আলোচিত হতে থাকে। কাঠের ব্লকে ছাপচিত্র থেকে শুরু করে (যাকে বলা হয় ukiyo-e) ‘কিমোনো’ অবধি ফ্রান্সে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে শান্তিবাদী বুদ্ধের দর্শনও আলোচিত হতে থাকে। ‘জগতের সকল প্রাণি সুখি হোক’-বুদ্ধের এই অপার মানবিক বাণী শিল্পপ্রেমিক ফরাসি জনগনকে স্পর্শ করেছিল।



ukiyo-e বা জাপানি কাঠের ব্লকে ছাপচিত্র। ukiyo-e শব্দটির অর্থ ‘ভাসমান বিশ্ব’। বৌদ্ধদর্শন অনুযায়ী: দুঃখময় জগতে মানুষ ভেসে ভেসে নির্বানের পথে যাত্রা করে ...জাপানি কাঠের ব্লকে ছাপচিত্রেও বৌদ্ধ দর্শনের ছাপ স্পস্ট।



Portrait of Pere Tanguy (1887-1888)

জাপানি সংস্কৃতির প্রভাব ভ্যান গগ এর ছবিতে পড়েছিল। এই ছবিটিই বলে দেয় ভ্যান গগ কত গভীর ভাবে জাপানি সংস্কৃতিকে উপলব্দি করেছিলেন।

জগৎ দুঃখময়, দুঃখের কারণ আছে, দুঃখকে অতিক্রম করা যায় এবং সে পথও আছে-বুদ্ধের এই শিক্ষা একনিষ্ট খ্রিস্টান হয়েও ভ্যাগ গগ আন্দোলিত হয়েছিলেন। নির্বানে র পথ আসলে ধ্যানের পথ। কাজেই বিশেষ এক উদ্দেশ্য নিয়ে ১৮৮৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যান গগ ফ্রান্স ত্যাগ করে আরলেস যান। আজন্ম অস্থির ছিলেন ভ্যান গগ। এবার যদি বদ্ধনির্দেশিত পথে ধ্যান করে স্থির হওয়া যায়। রক্তের অর্ন্তগত পাগলামী নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ...বুদ্ধও গৃহত্যাগ করেছিলেন অসীম নির্জনতায় নিজেকে ধ্যানমগ্ন রেখে হৃদয়ে সত্যের অনুভূতির সন্ধ্যানে ।



আরলেস। মানচিত্র। উনিশ শতকী নির্জন শহর আরলেস। অবস্থান দক্ষিণ ফ্রান্সে। অনেকের মতে ভ্যান গগ-এর জীবনে আরলেস অধ্যায় সবচে সৃজনশীল। এই মফস্বল শহরেই অনেক বিখ্যাত ছবি এঁকেছেন ডাচ ওস্তাদ।




Avenue of Plane Trees near Arles Station

এই ছবিটি আরলেস পর্যায়ে আঁকা । বাস্তবতার নিখুঁত বর্ননা কমই দিয়েছেন ভ্যান গগ। একটি দৃশ্য দেখে মনে যে ভাব সৃষ্টি হল সেই ভাব ফুটিয়ে তুলেছেন বলেই ভ্যান গগ কে চিত্রকলায় Expressionism -এর পথিকৃৎ বলা হয়। বাস্তবতা বিষয়ে বৌদ্ধদর্শনের একটি ধারণা হল বাস্তবতা- বিভ্রান্তিকর। তবে তার মানে এই নয় যে বাস্তবতা অসত্য বা উদ্ভট কল্পনা। কিন্তু আমাদের ধারণা ও প্রত্যয় এই ধারণা দেয় যে- আমরা যে উপাদান দ্বারা গঠিত সেই উপাদান থেকে আমারা পৃথক। মোট কথা, বৌদ্ধদর্শনে বাস্তবতা হল কর্মের প্রকাশ ( মেনিফেস্টশান অভ কার্মা।)



An Old Woman of Arles,

এই ছবিটিও আরলেস পর্যায়ে আঁকা । নির্জনতার সন্ধানে আরলেস গেলেও মানুষকে এড়িয়ে যাননি ওই উত্তম মানুষটি। বোঝাই যায় অতি যত্নে এই নারীর ছবি এঁকেছিলেন। যে ভ্যান গগ একবার বলেছিলেন, I feel that there is nothing more truly artistic than to love people....বুদ্ধের শেষ জীবনের একটি মানবিক ঘটনা স্মরণ করি। একজন চন্ডাল বুদ্ধকে নিমন্ত্রণ করেছিল। বুদ্ধের শিষ্যেরা সে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে নিষেধ করেছিল এই ভেবে যে এরা ‘অখাদ্য’ খায়। বুদ্ধ সংকীর্ণমনাদের বারণ শোনেননি। তিনি সেই অচ্ছুতের বাড়ি নিমন্ত্রণ খেতে গেলেন। লোকটা বুদ্ধকে ‘শূকরমদ্দপ’ খেতে দিল। সেটি খেয়ে সেই যে বুদ্ধ অসুস্থ বোধ করলেন-আর সুস্থ হননি ...

মহামতি বুদ্ধের পরনে ছিল সন্ন্যাসীর পোশাক । যাকে চীবর বলা হয়। ভ্যান গগও নিজেকে কল্পনায় চীবরে আবৃত করেছিলেন ...



VanGogh-self-portrait-dedicated to gaugin ...

আরলেস পর্যায়ের এই ছবিটি নিয়ে শিল্পবোদ্ধাদের মাঝে আগ্রহের শেষ নেই আজও। তার কারণ আছে। এই আত্মপ্রকৃতিতে নিজেকে বৌদ্ধ সাধু কল্পনা করেছেন ভ্যান গগ। ছবিটি সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন, ... ব্রোঞ্জের উপাসনারত শাশ্বত বুদ্ধ। যার চোখ, জাপানি কায়দায় তির্যক।

মহাত্মা ভ্যান গগ একবার বলেছিলেন ... Conscience is a man's compass. এই ভেবে বিস্মিত হই ভ্যান গগ উনিশ শতকে বুদ্ধের বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন- যে বুদ্ধ একবার উচ্চারণ করেছিলেন- ‘জলের ফোঁটাটির প্রতিও আমার দয়া হইত।’

উৎসর্গ: অমিত চক্রবর্তী এবং নষ্ট কবি।

তথ্যসূত্র

http://blogs.princeton.edu/wri152-3/f05/dtso/

Click This Link
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×