somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অং সাং সুচি-র রবীন্দ্রনাথ

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিয়ানমারের বিরোধী দলীয় নেত্রী অং সাং সুচি। ১৯৮৯ সাল থেকে অন্তরীন জীবন যাপন করে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছেন। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে অনঢ় ব্যাক্তিত্বময়ী এই নারী বিশ্বজুড়ে গনতন্ত্রের আইকনে পরিনত হয়েছেন। সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তাঁর অটল অবস্থান বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা অর্জন করেছে। তবে সুচি যে তাঁর এই মানসিক দৃঢ়তা রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে অর্জন করেছেন -এই তথ্যটি বাঙালির জন্য বিস্ময়কর হতে পারে...

১৯৯১/৯২ সালের কথা। মিয়ানমারের অবরুদ্ধ নেত্রী অং সাং সুচি-র মুক্তির জন্য স্বাক্ষর করেছিলাম বইমেলায়। সে সময় ভেবেছিলাম সুচি মুক্তি পেয়ে মিয়ানমারে শাসনভার গ্রহন করলে বাংলাদেশের জন্যেই লাভ। কেননা, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিদ্যমান শাসনামলে মুক্তবাজার অর্থনীতির পথ রুদ্ধ । অথচ, বাংলাদেশে দারিদ্র হঠানোর জন্য প্রয়োজন বিদেশি বাজার- যেখানে বাংলাদেশি পন্যের অবাধ প্রবাহ অক্ষুন্ন থাকবে । ভারতের সঙ্গে নানা কারণে সুষম বানিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলা কঠিন। কাজেই গনতান্ত্রিক মিয়ানমার বাংলাদেশি পণ্যের বাজার হয়ে উঠতে পারে, তবে তার আগে সুচি কে মুক্তি লাভ করতে হবে। এসব ভেবেই সুচির মুক্তির জন্য স্বাক্ষর করেছিলাম।



মিয়ানমারের মানচিত্র। দীর্ঘকাল সামরিক জান্তা জেঁকে বসে আছে বলেই এ দেশটির ভবিষ্যৎ সতিই্য ভাবায় ...

মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে মানবতা লঙ্ঘনের নানান অভিযোগও রয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্তেও মাঝেমাঝেই উত্তেজনা জিইয়ে রাখে। ৯০ এর দশকের শুরুতে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের উৎখাত করল অমানবিক পন্থায়। সম্প্রতি ঘূর্নিঝড় নার্গিস মিয়ানমারে আঘাত হানল। সে সময় সামরিক জান্তা আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রত্যাখান করে অসংখ্য মিয়ানমারবাসীর মৃত্যুর কারণ হয়েছিল।

তবে সুচির জন্য মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পথে একটি সমস্যা আছে। সেটি হল- মিয়ানমারের ৭০% কারেন জনগোষ্ঠীর বাস। এরা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে আসছে। সামরিক সরকার আর যাই হোক অগনতান্ত্রিক উপায়ে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা অটুট রেখেছে। অং সাং সুচি-র গনতান্ত্রিক সরকার কি পারবে মিয়ানমারের অখন্ডতা বজায় রাখতে?
এমন একটি সংশয় কিন্তু থেকেই যায়।
যা হোক। এই পোস্টের মিয়ানমারের রাজনৈতিক ইস্যু নয়।বরং মিয়ানমারের বিরোধী দলীয় নেত্রী অং সাং সুচি-র বিপন্ন জীবনের বাঙালির প্রিয়তম কবি রবীন্দ্রনাথের প্রভাব।



২০০১ সালে সুচি গৃহবন্দি থাকাকালীন সময়ে নোবেল বিজয়ীদের উদ্দেশ্যে এক চিঠিতে লেখেন: ‘আমার গৃহবন্দির দিনগুলোয় আমি সবচে মূল্যবান শিক্ষা লাভ করেছিলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা থেকে ...যার অনেক কাব্যই আত্মার সেই গহীন প্রদেশে পৌঁছয় যা আমরা সচরাচর আবিস্কার করতে সক্ষম হই না ।’

২০০১ সালের ৮ ডিসেম্বর সুচির নেবেল অর্জনের দশম বার্ষিকী। এই উপলক্ষে সুচির সম্মানে নোবেল বিজয়ীরা একত্রিত হয়েছিলেন। সুচি তাঁদের উদ্দেশ্যে এক বক্তব্যে বলেন: There are no words of comfort in the poem. No assurances of joy and peace at the end of the harsh journey. There is no pretence that it is anything but evil luck to receive no answer to your call, to be deserted in the middle of the wilderness, to have no one who would hold up a light to aid you through a stormy night. It is not a poem that offers heart’s ease, but it teaches you that a citadel of endurance can be built on a foundation of anguish. How can anybody who has learnt to ignite his heart with the thunder-flame of his own pain ever know defeat? Victory is ensured to those who are capable of learning the hardest lessons that life has to offer’.


সুচি রবীন্দ্রনাথের ঠিক কোন্ কবিতাটির সম্পর্কে বলছেন সেটি ঠিক বোঝা না গেলেও রবীন্দ্রকাব্যই যে মিয়ানমারের গনতন্ত্রের মানসকন্যার মানসিক শক্তির অন্যতম উৎস তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। সুচি যে আত্মিক শক্তির কথা বলছেন সেটি ঠিক এই মুহূর্তে প্রতিটি বাঙালির জীবনেও বড় প্রয়োজন...কেননা, এক নদী রক্তের বিনিময়ে বাঙালি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ করলেও সে তার নির্ধারিত লক্ষ্যে আজও পৌঁছতে পারেনি। বাংলাদেশ জুড়ে যে অপার দারিদ্র-তা ওই আত্মিক শক্তির অভাবেই।
জীবনের কঠিন পথ পাড়ি দিতে রবীন্দ্রনাথ বাঙালি জীবনে আজও অনিবার্য ।
তবে, দুঃখজনক হল এই যে ... যার লেখনী থেকে বাঙালির শক্তি ও উদ্যম সংগ্রহের কথা- সেই রবীন্দ্রনাথ-নির্মিত পতিসরের স্কুলবাড়িটি ‘ভাষার মাসে’ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বিচিত্র এই বাংলাদেশে ...কাজেই, জাতীয় জীবনে ঘোর তমসা যে সহজে কাটছে না সেটি অনুমান করা যায় ...

তথ্যসূত্র:

Click This Link
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×