ভ্যান গগ (১৮৮৬ সালের আত্মপ্রতিকৃতি)। কে না জানে ডাচ চিত্রকর ভ্যান গগ ছিলেন ওস্তাদ আঁকিয়ে, চিত্রকলায় Expressionism -এর পথিকৃৎ । এই ওস্তাদের ছবি ও বিচিত্র জীবন নিয়ে আজও আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। এই কিছু দিন আগেও খবরে উঠে এলেন ভ্যান গগ। কায়রোর মাহমুদ খলিল জাদুঘর থেকে চুরি গেছে তাঁর চিত্রকর্ম ... এ নিয়ে হইচই পড়ে গেল। ১৯৭৮ সালে একবার ওই একই জাদুঘর থেকে চুরি গিয়েছিল এই ওস্তাদের ছবি; পরে ১৯৮৮ সালে তা কুয়েত থেকে উদ্ধার করা হয়। তো, যাকে নিয়ে এত হইচই মানুষ হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন? আজ এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক ...
ভ্যান গগ সম্বন্ধে বলা হয় ...His paintings are characterized by thick brush strokes, brilliant colors, and jagged lines, through which Van Gogh expressed his emotional response to his subjects rather than providing an accurate description of them. As a result he became a leader in the development of expressionism in painting. ( দেখুন "Vincent van Gogh." Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007.)... তবে আমরা তাঁর চিত্রকলার স্টাইল কিংবা টেকনিক নিয়ে আলোচনা করব না। আমরা মানুষ ভ্যান গগকে বুঝতে চাই।
নেদারল্যান্ডের মানচিত্র । নেদারল্যান্ড শব্দের মানে: ‘নিম্নভূমি’। আমরা জানি দেশটির অবস্থান সমুদ্রসীমার নীচে, বাধ দিয়ে টিকে আছে। এই দেশটাকে হল্যান্ডও বলা হয়। তবে হল্যান্ড হল নেদারল্যান্ডের একটি প্রদেশ। কাজেই অনেকের মতে নেদারল্যান্ড বোঝাতে হল্যান্ড ব্যবহার করা অনুচিত। নেদারল্যান্ডের অধিবাসীরাই- ‘ডাচ’। এই শব্দের অর্থ: ‘যে নেদারল্যান্ডের থেকে এসেছে বা যে নেদারল্যান্ডের বাস করে’। নেদারল্যান্ডের ভাষাও ‘ডাচ’ নামে পরিচিত।
১৮৫৩ সালের ৩০ মার্চ নেদারল্যান্ডে ভিনসেন্ট ভ্যান গগ-এর জন্ম। । জায়গার নাম জুনডারট।
জুনডারট এর নিসর্গ। এই রহস্যময় নিসর্গই শিল্পীকে অনুপ্রাণিত করে থাকবে। তবে ভ্যান গগ এর বেশির ভাগ ছবিরই প্রেক্ষাপট ফ্রান্স।
ভ্যাগ গন এর বাবা ছিলেন প্রোটেস্ট্যান্ট যাজক। যে কারণে ভ্যান গগ-এর শৈশবে কট্টর ধর্মীয় আবহ ছিল। আর তার প্রভাবে হয়ে উঠেছিলেন একনিষ্ট খ্রিস্টান। যাজকবৃত্তি গ্রহন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
যুবা বয়েসের ছবি।
কিশোর বয়েস থেকেই ভ্যান গগ অতিরিক্ত আবেগপ্রবন ছিলেন। আর ছিলেন অস্থির। ঘন ঘন মূর্চ্ছা যেতেন। কান কেটে ফেলেছিলেন বলে রটনা আছে। আসলে তিনি কান কাটেননি, কানের লতি কেটে ফেলেছিলেন মাত্র। যা হোক। কখনও আর্ট গ্যালারির সেলসম্যান, কখনও ফরাসি ভাষার শিক্ষক, কখনও ধর্মতত্ত্বের ছাত্র, কখনও ধর্মপ্রচারক হিসেবে জীবিকা বেছে নিলেও বেশি দিন কোনও পেশায় টিকতে পারেননি ওই অস্থিরতার জন্যই । বছর দুয়েক খনিশ্রমিকদের সঙ্গে বসবাস করেছিলেন। শ্রমিকের জীবনের কঠোরাতা উপলব্দি করতে পেরেছিলেন।
পটেটো ইটারস (আলু খেকো) । এটি ভ্যান গগ এর আঁকা একটি বিখ্যাত ছবি। ছবিটা বলে দেয় শ্রমজীবির জীবনের কতটা গভীরে পৌঁছেছিলেন এই ডাচ ওস্তাদ।
ঠিক এই সময়েই ধর্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। তবে মানুষের ওপর বিশ্বাস হারাননি। বলেছিলেন, An artist needn't be a clergyman or a churchwarden, but he certainly must have a warm heart for his fellow men. দুঃখদারিদ্র শিল্পীকে মানসিক যন্ত্রনা দিলেও সৌন্দর্যবোধ বাঁচিয়ে রেখেছিল। ভ্যান গগ-এর ধ্যানজ্ঞান হয়ে ওঠে শিল্প। তবে ঈশ্বর বিশ্বাস পরিত্যাগ করেননি। বলেছিলেন, But I always think that the best way to know God is to love many things. কী অসাধারণ কথা!
১৩ বছর বয়েসে।
উনিশ শতকে শিল্পের তীর্থভূমি ছিল প্যারিস। প্যারিসে গিয়েছিলেন ভ্যান গগ। ওখানে এক ভাই থাকতেন। সেই ভাইয়ের নাম থিও। তার সঙ্গেই ঘনিষ্টতা গড়ে উঠেছিল। থিও হয়ে উঠেছিল ভ্যান গগ এর বন্ধু। জীবনে ৮০০ চিঠি লিখেছেন ভ্যান গগ। বেশির ভাগই থিওকে। একবার লিখেছিলেন, Conscience is a man's compass. ধর্মবিশ্বাসের সরূপ এভাবে বদলে গিয়েছিল। প্রকৃত শিল্পীর যা হয়।
নক্ষত্রময় রাত্রি। ফ্রান্সে থাকাকালীন বিখ্যাত ‘স্টারি নাইট’ আঁকেন। দিনের চেয়ে ভালোবাসতেন রাত। বলেছিলেন-I often think that the night is more alive and more richly colored than the day.
অল্প সময়ে প্রায় ৯০০ ছবি আঁকেন। অবশ্য জীবদ্দশায় মাত্র একখানি ছবি বিক্রি করতে পেরেছিলেন। তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে যখন তিনি মৃত। প্যারিসের কাছে জীবনের শেষ তিন মাস কাটান। ডা. Paul Gachet অসুস্থ শিল্পীকে দেখাশোনা করতেন। Gachet ছিলেন দরদী মানুষ। ডাক্তারের ছবিও এঁকেছেন ভ্যান গগ।
Portrait of Dr. Gachet. এটি ভ্যান গগ-এর আঁকা ৯০০ ছবির মধ্যে অসম্ভব জনপ্রিয়। আসলে এই দয়ালু ডাক্তারের সহৃদয়তা পৃথিবীর মানুষ আজও মনে রেখেছে। শিল্পপ্রেমিক মহৎ হৃদয়ের অধিকারী ডা: Dr. Gachet নিঃসঙ্গ একজন চিত্রকরের শেষ জীবনে সেবা করেছিলেন। ১৯৯০ সালে ছবিটি ৮২.৫ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয় ! (লক্ষণীয় নিজস্ব দুঃখবোধ ডাক্তারের মুখেচোখে সঞ্চারিত করেছেন ভ্যান গগ!)
জীবনের শেষ পর্যায়েও ছবি এঁকেছেন ভ্যান গগ। পরিচিত সব দৃশ্য ... গ্রামের গির্জা ...গম ক্ষেত ...গম ক্ষেতে কাক ...
গমক্ষেতে কাক। কী ভীতিকর অনুভূতি আনে মনে!!! এই ছবিতে জীবনের অন্তিম লগ্নের মানসিক যন্ত্রণার ছাপ পড়েছে।
‘গম ক্ষেতে কাক’ ছবিটা আঁকা শেষ করে নিজেকে গুলি করেন ভ্যান গগ। সময়টা ১৮৯০ সালের ২৭ জুলাই। না, তক্ষনাৎ মারা যাননি ... মারা যান এর ২ বছর পর ।
আত্মপ্রতিকৃতি; ১৮৮৬ থেকে ১৮৮৯ সালের মধ্যে ৩০টি আত্মপ্রতিকৃতি এঁকেছিলেন ভ্যান গগ । এটি মৃত্যুর এক বছর আগে আঁকা
এই নিবন্ধের শিরোনাম মানুষ ভ্যান গগ ...যিনি একবার বলেছিলেন ...I feel that there is nothing more truly artistic than to love people.
এইই মানুষ ভ্যান গগ-এর প্রকৃত পরিচয় ...
তথ্যসূত্র:
Click This Link
Click This Link
http://www.vangoghgallery.com/misc/bio.html
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:১৯