যুদ্ধ কেউই চায় না। তথাপি ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মান সৈন্যরা পোল্যান্ডে অনুপ্রবেশ করে । এর পর অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিও ক্রমশ দীর্ঘ এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ... যে যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটে, যে যুদ্ধে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত হয় লং রেঞ্জ রকেটসহ অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক ও বোমারু বিমান ... যে যুদ্ধের অন্তিম লগ্নে বর্ষন করা হয় আণবিক বোমা -যা লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল মানবজাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় ... যে যুদ্ধটির মূল কারণ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহন এবং ১৯২৯ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহামন্দার অশুভ অভিঘাত
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানেই যুদ্ধের রগরগে বর্ননা, ভয়াবহ ধ্বংসলীলার চিত্র, আউসভিৎস, গ্যাস চেম্বার, মার্কিন রণতরীর ওপর জাপানি বোমারু বিমানের হামলা, জ্বলন্ত পার্ল হারবার ... অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রকৃত কারণটি অনালোচিত থেকেই যায়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ অর্থনৈতিক। যার প্রেক্ষাপটটিও কম বিস্ময়কর নয় ...
ইউরোপের মানচিত্র।
প্রথম মহাযুদ্ধে আগ পর্যন্ত বিশ্বের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি । প্রথম মহাযুদ্ধের পর ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি তার পূর্বেকার অবস্থান হারায় এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক কেন্দ্রটি স্থানান্তরিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন ও ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঋন নেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাভবান হয়েছিল। যুদ্ধের আগে ইউরোপীয় দেশগুলির কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋনের পরিমান ছিল ৪ বিলিয়ন ডলার; প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউরোপীয় দেশগুলির ঋনের পরিমান দাঁড়ায় প্রায় প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইউরোপের মানচিত্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মনি পরাজিত হয়েছিল। পরাজিত জার্মানিকে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ গুনতে হয়েছিল।
প্রথম মহাযুদ্ধের পর মার্কিনীরা হয়ে উঠেছিল বিশ্বের প্রধান অর্থ ও শিল্পপন্যের রপ্তানিকারক। যার ফলে বিনিময়ের মাধ্যমও বদলে গিয়েছিল নাটকীয় ভাবে। ব্রিটেন আগে পন্য লেনদেন করত পন্যের বিনিময়ে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য, খনিজ পদার্থ ও শিল্পে স্বয়ং সম্পূর্ন হওয়ায় মার্কিন পন্যের বিনিময়ে নগদ অর্থ দাবী করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র । ইউরোপ এই অর্থ পরিশোধ করল জার্মানির কাছ থেকে পাওয়া ক্ষতিপূরণের অর্থে। জার্মানি আবার এই বিপুল অর্থ ঋণ নিয়েছিল খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই। গত শতাব্দীর বিশের দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের ওপর জার্মানিকে দিয়েছিল। (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমন করেছিল অর্থনৈতিক স্বার্থে ...প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পিছনে মার্কিন ষড়যন্ত্র ছিল কিনা সেটি মোহশূন্য ইউরোপীয় ইতিহাসবিদদেরই খুঁজে বার করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপরাধী রাষ্ট্র; রাষ্ট্রটি ভোগবাদ প্রচার করে বিশ্বময় দারিদ্রের পরিমান বাড়িয়ে তুলেছে ...)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারখানা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উত্তর আমেরিকার কৃষকেরা ও উৎপাদনকারীরা ফুলে ফেঁপে উঠেছিল। কেননা, যুদ্ধবিধস্ত ইউরোপ ছিল মার্কিন ও কানাডিও বাজার।
উত্তর আমেরিকার চাষি ও উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে খাদ্য ও অন্যান্য পন্য কিনত ইউরোপ । সে সময় অনেক কৃষক ও উৎপানককারী ইউরোপের চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যাঙ্ক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ গ্রহন করেছিল । ওদিকে ইউরোপ কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে ছিল না। তারা দ্রুত পরিত্যক্ত কারখানা ও খামার সংস্কার করে। এর ফলে ১৯২৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৫.৯ মিলিয়ন টন গম অবিক্রিত পড়ে থাকে!
বিংশ শতকে কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল নানা দেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অতিরিক্ত উৎপাদন হচ্ছিল। এমন কী জাভায় আখ চাষীরা দ্বিগুন উৎপান করছিল। অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলাফল ভালো হয়নি। অব্যাহতভাবে মূল্য পড়ে যাচ্ছিল। যে কারণে খাদ্য উৎপাদনকারীরা লাভের মুখ দেখছিল না। ( ...২ বছর আগে বাংলাদেশে কাঁচা মরিচের কেজি ৮০/৯০ টাকায় বিক্রি হওয়ার পর মানিকগঞ্জের কৃষকেরা অন্যান্য ফসলের বদলে অধিক হারে মরিচ উৎপন্ন করে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছিল। টিভি পর্দায় শাঈখ সিরাজের অসহায় মুখটি আজও মনে পড়ে ...আসলে একটি উন্নয়নশীল দেশে কৃষির অগ্রগতির পথটি অত্যন্ত দুরূহ ও জটিল। কেননা, এতে নানা ফ্যাক্টর জড়িত থাকে। মেধাবী অর্থনীতিবিদেরা যেন বাংলাদেশের কৃষকের সঠিক পথটি দেখান ...)
একটি মার্কিন পত্রিকায় মার্কিন শেয়ার বাজারে ধসের খবর। ১৯২৯ সালের ২৪ অক্টোবর। এ দিনটিকে বলা হয় ‘ব্ল্যাক থারসডে’ বা কালো বৃহস্পতিবার। আমরা বলি, ‘অর্থনৈতিক মহামন্দা’। এ প্রসঙ্গে জনৈক মার্কিন ইতিহাসবিদ লিখেছেন: That was the day that the New York stock market crashed.People who held stocks had bought them on margin. That meant that they owed their lender for the difference between the stocks' value and the price at which they had been purchased. Desperate to cut their losses, investors swarmed the exchange in an effort to sell their shares before the value tumbled even further.
মার্কিন শেয়ার বাজারে বিক্ষোভ। এ চিত্রটি আজকাল আমাদের দেশেও পরিচিত হয়ে উঠছে...যদিও এক গবেষনায় দেখা গেছে বাংলাদেশে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পরিমান সামগ্রিক অর্থনীতির ২% এরও কম ।
মার্কিন মহামন্দার প্রতিক্রিয়া হল বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের নানা প্রান্তের ব্যাঙ্কগুলি ঋন দেওয়া বন্ধ করে দিল এবং বকেয়া ঋণ আদায়ের চেস্টায় মরিয়া হয়ে উঠল। সে চেস্টা ব্যর্থ হল। কারণ, খাদ্য উৎপানদকারীরা ইউরোপের বাজার হারানোর জন্য এবং কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে অধিক উৎপাদনের জন্য বিপুল ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছিল। বকেয়া পরিশোধের মতো নগদ অর্থ তাদের কাছে ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে প্রায় ৫,০০০ ব্যাঙ্ক নিজেদের দেউলিয়া ঘোষনা করে। বিনিয়োগের অভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয় পড়ল। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পন্য বিক্রি করতে পারল না। এমন কী তাদের খামারের পশুদের পর্যন্ত অভূক্ত রাখল।
কুড়ি দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছিল তা এক গাঢ় অন্ধকার মেঘে ঢেকে গেল।
মহামন্দার সময় চাকরি প্রার্থনা করে এক মার্কিন যুবক দাঁড়িয়ে। বছর খানেক আগেও টিভি পর্দায় আমরা ব্রিটেনে এরকম নিদারুন দৃশ্য দেখেছি।
মহামন্দার প্রভাব পড়েছিল আর্ন্তজাতিক সহযোগীতার ক্ষেত্রেও। বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিজস্ব অর্থনীতি রক্ষা করতে আমদানীকৃত পন্যের ওপরে অধিক হারে করারোপ করে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপসহ অন্যান্য দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ১৯১৭ সালের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর থেকে সোভিয়ে ইউনিয়নও বিচ্ছিন্ন ছিল । সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণে বিশাল বিশাল অর্থনৈতিক কেন্দ্র গড়ে তুলছিল। ব্রিটেন ভূতপূর্ব উপনিবেশ (যেমন: কানাডা অস্ট্রেলিয়া) নিয়ে গড়ে তুলছিল কমনওয়েলথ।
জার্মান এক নায়ক হিটলার। আদতে সীমাবদ্ধ চেতনার অধিকারী একজন মানুষ। অজস্র মানুষের মৃত্যুর বিনিময়ে আমৃত্যু ইনি জার্মান জনগনের উষ্ণ ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা লাভ করতে চেয়েছিলেন ... আর এখানেই ভুল করেছিলেন ... কেননা, তৎকালীন শুভবোধ সম্পন্ন জ্ঞানী মানুষেরা জানতেন হিটলারের আকাঙ্খা বিশ্বপ্রেমশূন্য-যা পূরণ হবার নয় ... যে কারণে হিটলারকে এক জার্মান সামরিক বাংকারে লুকিয়ে আত্মহত্যা করতে হয় । হিটলারের আত্মহননটি তাৎপর্যপূর্ণ । যা আমাদের অ-আগ্রাসী এবং বিশ্বপ্রেমিক হয়ে উঠতে শিক্ষা দেয়, হাঁটতে বলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের প্রদর্শিত পথে ...
ইউরোপে ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে জার্মানির পরিস্থিতিই ছিল সবচে ভয়াবহ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধারে দেনায় জর্জরিত হয়ে উঠেছিল দেশটি। সে দেশে তিন জনের মধ্যে একজন শ্রমিকই ছিল বেকার। হিটলার হতাশাগ্রস্থ জনগনের আশাআকাঙ্খা উপলব্দি করতে পেরেছিলেন। ধুরন্ধর রাজনীতিবিদের মতোই তিনি জার্মান জনগনের দুঃখ দুর্দশার অবসান ঘটাবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন । তিনি জার্মান জনগনকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন ... বর্তমান দুঃখদুর্দশার পিছনে আছে প্রথম মহাযুদ্ধে জার্মানির পরাজয় এবং সে পরাজয়ের পিছনে ইহুদিদের ইন্ধন। তিনি জার্মানদের অবিলম্বে সমরাস্ত্র কারখানায় যেতে নির্দেশ দিলেন এবং সেই সঙ্গে ধ্বংসপ্রাপ্ত জার্মান সামরিক বাহিনীকে পুর্নগঠনের পদক্ষেপ গ্রহন করলেন। একজন ইতিহাসবিদের ভাষায়... His aggressive, racist policies made the prospect of future hostilities almost inevitable.
বিশ্বপ্রেমশূন্য দর্শনে বিশ্বাসী বলেই এই একনায়কের সামরিক বাদশাহী বেশি দিন টিকেনি ...রবীন্দ্রনাথ ভবিষ্যতে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি জেনারেল টিক্কা খান বলেছিলেন ...‘পূর্ব পাকিস্তানে মানুষ নয়, জমি চাই!’। ... তেমনি সম্প্রসারনবাদী হিটলারও অনুরূপ উক্তি করেছিলেন- বিশেষ করে জার্মান সীমান্তের পূর্বাঞ্চলের জমির ওপর হিটলারের শ্যেনদৃষ্টি পড়েছিল। ভার্সাই চুক্তির পর জার্মানির ভূখন্ডটি সঙ্কুচিত হয়েছিল। হিটলারশাসিত নাজী জার্মানি পররাষ্ট্র নীতিতে lebensraum গ্রহন করে। এই জার্মান শব্দটির অর্থ: ‘বসবাস করার স্থান’।
জার্মান ট্যাঙ্ক। এই চলমান সমরযন্ত্রটি কিছুকালের জন্য হলেও জার্মান পররাষ্ট্রনীতি সফল করেছিল ...
জার্মানি ১৯৩৮ সালের ১৩ মার্চ অস্ট্রিয়া আক্রমন করে দখল করে নেয়। এরপর ঐ বছরেই ২৮/২৯ তারিখে ফ্রান্স ও ব্রিটেন জার্মানির কাছে চেকোশ্লাভাকিয়ার বড় একটি অংশ হস্তান্তর করে। পরের বছর জার্মান সৈন্যরা পুরো চেকোশ্লাভাকিয়া দখল করে নেন। জার্মানি যুদ্ধ ছাড়াই দুটো দেশ দখল করে নেয়।
কি এর কারণ?
হয়তো ব্রিটেন ও ফ্রান্স প্রথম মহাযুদ্ধের পুনরাবৃত্তি করতে চায় নি। তারা হিটলারকে ছাড় দিয়ে আরেকটি যুদ্ধ এড়াতে চেয়েছিল। তবে হিটলারের ভূমিতৃষ্ণা সম্বন্ধে ১৯৩৮ সালে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। কাজেই অস্ট্রিয়া ও চেকোশ্লাভিয়া দখল করার পর পোল্যান্ডের দিকে চোখ পড়ে সম্প্রসারণবাদী হিটলারের। তবে পোল্যান্ড কে সরাসরি আক্রমন করার জন্য উছিলা দরকার ছিল। দুর্ধষ জার্মান প্যারামিলিটারি এস. এস বাহিনীর প্রধান হেইনরিখ হিমলার হিটলারকে সেই পথ বাতলে দেন। হেইনরিখ হিমলার এর পরিকল্পনাটি ‘অপারেশন হিমলার’ নামে পরিচিত।
জার্মান পোল্যান্ড সীমান্ত। পোল্যান্ডের অবস্থান ডান দিকে অর্থাৎ পুব দিকে। এই সীমান্ত অতিক্রমের ফলে সূচিত হয়েছিল মানবজাতির ইতিহাসে সবচে কলঙ্কিত অধ্যায় ২য় বিশ্বযুদ্ধ।
১৯৩৯ সালের ৩১ অগাস্ট । রাত। জার্মান নাজীরা একজন অপরিচিত বন্দিকে পোলিশ (পোল্যান্ডের) ইউনির্ফম পরায়। এরপর তাকে পোলিশ-জার্মান সীমান্তে নিয়ে যায়। জায়গাটার নাম Gleiwitz ...ওখানেই জার্মানরা বন্দিকে গুলি করে। এরপর ‘অপারেশন হিমলার’ অনুযায়ী প্রচার করা হয় সশস্ত্র পোলিশরা সীমান্তবর্তী জার্মান রেডিও স্টেশন আক্রমন করেছে। পরদিনই জার্মান সৈন্যরা পোল্যান্ডের ওপর Blitzkrieg শুরু করে। এই জার্মান শব্দটির অর্থ: ‘বিদ্যুৎপ্রবাহী যুদ্ধ’।
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স যুদ্ধ ঘোষনা করে।
ইটালি অবশ্য জার্মানির পক্ষালম্বন করেছিল।
জাপানের ২য় বিশ্বযুদ্ধের জড়িয়ে পড়ার পিছনে ছিল মার্কিন অর্থনৈতিক মন্দা। যার ফলে চেরি ফুলের সুন্দর দেশটি রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠে ...ঘনিয়ে আসে হিরোসিমা ও নাগাসাকি আণবিক বিস্ফোরণ ...
১৯২৯ সাল পর্যন্ত জাপান তার ৯০% রেশম (সিল্ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করত। মার্কিন মহামন্দা বাজারটি ধ্বংস করেছিল। মার্কিন বাজার থেকেই জাপানের দুই-পঞ্চমাংশ রপ্তানী আয় আসত । (ইদানীং জাপানি ব্যবসায়ীরা চিন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগকে ইতিবাচক মনে করছে। এই ব্যাপারটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য শুভ বলেই বিবেচনা করি। তবে, জাপানি বিনিয়োগকারীদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য যেন অব্যাহত থাকে।) ...যা হোক। ১৯৩১ সালে সামরিক রাহিনী জাপানের ক্ষমতা গ্রহন করে। এর পরপরই জাপান কাঁচামাল ও বাজার দখলের জন্য চিন আক্রমন করে।
২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে চিনে জাপানের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন।
১৯৩১ সালে জাপান চিনের মাঞ্চুরিয়া দখল করে। নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন এবং দক্ষিণ এশিয়া থেকে ইউরোপীয় উপনিবেশ হটানোই জাপানের উদ্দেশ্য ছিল ।
এই আলোচনার শুরুতেই বলেছি যে, যুদ্ধ কেউই চায় না। তথাপি ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডকে জার্মান সৈন্যরা অনুপ্রবেশ করে । অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলি ক্রশম দীর্ঘ এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যা হোক। ২য় বিশ্বযুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মহামন্দার অবসান ঘটায়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাগুলি সমরাস্ত্র উৎপাদন করে। যদিও প্রথম দিকে ইউরোপের যুদ্ধে মার্কিন প্রতিক্রিয়া ছিল মন্থর-পার্ল হারবার ও হাওয়াই দ্বীপে জাপানি হামলার পরে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ওদিকে জার্মানি ইতালি ও জাপানের সম্প্রসারণবাদী নীতির বিরুদ্ধে ইউরোপীয় দেশগুলি রুখে দাঁড়ায়।
ছ’ বছরের ধ্বংসযজ্ঞ আরম্ভ হয়।
সে ভয়াবহ যুদ্ধের ফলাফল আমরা জানি।
আসলে হিটলার ছিলেন সংর্কীণ চেতা রাজনীতিবিদ। পোল্যান্ড আক্রমনের পূর্বে জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছিল। তবে হিটলারের সম্প্রসারণবাদী নীতি সফল হয়নি। জার্মানিতে সোভিয়েত আগ্রাসনের ফলে হিটলার তার আসন্ন পরাজয় টের পেয়েছিলেন। ওদিকে ১৯৪৫ সালে ফ্রান্সের ম্যাজিনো লাইন ভেদ করে ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ বাহিনী দুর্নীবার গতিতে এগিয়ে গিয়েছিল জার্মানির দিকে।
হিটলার মৃত; অথচ কবিতা ও গানে বিশ্বপ্রেম প্রতিফলিত হওয়ায় রবীন্দ্রনাথ বিশ্বসভায় দিনদিন উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন ... পৃথিবীতে বেঁচে থেকে রবীন্দ্রনাথ গেয়েছিলেন ...
ভালোবাসি, ভালোবাসি
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি ।।
আকাশে কার বুকের মাঝে ব্যথা বাজে,
দিগন্তে কার কালো আঁখি আঁখির জলে যায় গো ভাসি ।।
সেই সুরে সাগরকূলে বাঁধন খুলে
অতল রোদন উঠে দুলে ।
সেই সুরে বাজে মনে অকারণে
ভুলে-যাওয়া গানের বাণী, ভোলা দিনের কাঁদন-হাসি ।।
এ রকম অনাবিল প্রেমময় গীত জার্মান ভাষাতেও আছে। হিটলার সেসব পড়েননি বা পড়লেও তার মর্ম উদঘাটন করতে পারেন নি। আসলে পৃথিবীর সব দেশেই উগ্র জাতীয়তাবাদীরা ‘দেশ’, ‘দেশ’ করে বহুৎ আস্ফালন করে ...কিন্তু শিল্পসাহিত্যের মানবিক দিকটি অগ্রাহ্য করে ...
রাজনীতিবিদেরা কবি হয়ে ওঠেনা বলেই জাপানের সামরিক সরকারের সাম্রাজ্যবাদী নীতির খেসারত দিতে হয়েছিল হিরোসিমা ও নাগাসাকির নিরপরাধ জনগনকে ...দেশে দেশে সামরিক শাসনের বিরোধীতা এ কারণেই ...
এরকম ভীতিকর দৃশ্য যেন মানুষকে দেখতে না হয়
২য় বিশ্বযুদ্ধে মোট হতাহতের সংখ্যা জানতে ক্লিক করুন
Click This Link
(ডিসকভারি চ্যানেলে ২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে চমৎকার সিরিজ প্রচার করছে ...আগ্রহীরা দেখতে পারেন।)
তথ্যসূত্র:
Click This Link
Click This Link
Click This Link
http://www.johndclare.net/RoadtoWWII7a.htm
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:১৯