somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: ইশতার

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খ্রিস্টপূর্ব ৬৮০। মাঝরাতের ব্যাবিলন নগরে ধবল জ্যোস্না ছড়িয়ে আছে। আজারু মাসের মাঝামাঝি। বেশ গরম পড়েছে। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া ভেসে আসছে ইউফ্রেতিস নদীর দিক থেকে। রাজপথ সুনসান করছে। মাঝে মাঝে ঘর্ঘর শব্দ তুলে চলে যাচ্ছে একটি কি দুটি রথ। শোনা যায় রাত-প্রহরীর হুঁশিয়ারি, কখনও বা ক্ষিপ্ত কুকুরের ডাক।
নগরের মারদুক দরওয়াজার কাছে একটা সংকীর্ণ গলিমুখ। একটি রথের পিছনে অন্ধকারে চারটি ছায়ামূর্তি জড়োসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এলিজার সতর্ক কন্ঠে ফিসফিস করে বলল, সাবধান! রাজপথে প্রহরীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
লাযের কেঁপে উঠল। শ্বাস ফেলল সে। তার নিঃশ্বাসে রসুনের গন্ধ। মুখ ফিরিয়ে নেয় আহাব । তার হৃৎপিন্ডের ধক ধক ধক ধক শব্দ সে নিজেই শুনতে পাচ্ছে। তারা যে কাজে বেরিয়েছে তাতে বেঁচে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম-হয়তো এ কারণেই। আহাবের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে জেটথ্রো। সে এদের মধ্যে সামান্য লম্বা। রাত্রির আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, মহান এল এলোহিম (ঈশ্বর) আমাদের সহায় হন।
এ কথায় লাযের-এর বুক দুলে উঠল। সত্যিই কি আজ রাতের আত্মঘাতি অভিযানে মহান এল এলোহিম সাহায্য করবেন? তার চোখের সামনে ব্যাবিলন এর রাজা ২য় নেবুচাদনেজার ইয়েররুশহালাইম (জেরুজালেম) নগর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিলেন। আব মাসের ৯ তারিখে রাজা সলোমনের উপাসনালয় তছনছ করল ব্যাবিলনিয় সৈন্যরা-তখন কি করলেন মহান এল এলোহিম? লাযের-এর বুক অভিমানে তির তির করে কাঁপে। জেরুজালেমের রাজা যেহোইয়াকিম কে উৎখাত করে রাজার ভাই জেডেকিয়াহ কে সিংহাসনে বসিয়েছেন ব্যাবিলন এর রাজা ২য় নেবুচাদনেজার। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর। তিনি রাজা যেহোইয়াকিম কে চোখ বেঁধে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন । ব্যাবিলনে ১০,০০০ হিব্রুভাষীকে বন্দি করে এনেছেন । এলিজার, লাযের, আহাব ও জেটথ্রো তাদেরই অর্ন্তভূক্ত। আগে এদের বাড়ি ছিল জেরুজালেম, এখন এরা ব্যাবিলনে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছে। এরা নির্বাসিত ঠিকই, তবে বন্দি নয়। এদের স্বাধীন পেশা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আছে। পেশায় এরা কাঠমিস্ত্রী।
মহান এল এলোহিম আমাদের সহায় হন। কথাটা প্রতিধ্বনিত করল এলিজার ।
অস্ত্র ঠিক আছে কিনা দেখে নাও। লাযের বলল।
কোমরের কাছে গোঁজা হাতুরি স্পর্শ করে আহাব বলল, আছে ।
চল রওনা হই। জেটথ্রো বলল।
মারদুক দরওয়াজার পশ্চিমে প্রেম ও উর্বরতার দেবী ইশতার-এর উপাসনালয়। ওই উপাসনালয় এদের গন্তব্য । তারা ইশতার এর মূর্তি ভেঙে ফেলবে। ব্যাবিলনের দেবী ইশতার এর উপাসনালয়ে অবাধ যৌনতা নির্বাসিত রক্ষণশীল হিব্রু স¤প্রদায়ের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ এবং জঙ্গি মনোভাবের সৃষ্টি করেছে। ব্যাবিলন নগরে নারীরা স্বাধীন এবং এবং সেই স্বাধীনতার উৎস দেবী ইশতার - দেবী ইশতার-এর বিরুদ্ধে এটাই ওদের ক্রোধের কারণ। জেরুজালেমের হিব্রু ভাষীদের সমাজটি রক্ষণশীল, হিব্রুসমাজে নারীর অধিকার সীমিত। হিব্রু সমাজে সম্পদের ওপর নারীর অধিকার নেই। ভাই না থাকলে পিতার সম্পদ বোন পায় ঠিকই- তবে যেন সম্পদ হাতছাড়া না হয়ে যায় সে কারণে তাকে গোত্রের মধ্যেই বিয়ে করতে হয় । হিব্রু সমাজে স্বামী ইচ্ছে করলেই বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারে, তবে স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ চাইলে স্বামীর অনুমতি লাগে, কাজেই সে অনুমতি সহজে মেলে না । অথচ ব্যাবিলনে নারীদের ওপর এত বিধিনিষেধ নেই ;এ নগরে নারীরা স্বাধীন, তাদের যৌনসঙ্গী নির্বাচনের স্বাধীনতা রয়েছে। ব্যাবিলনের প্রতিটি মেয়েকে জীবনে অন্তত একবার ইশতার-এর উপসনালয়ে যেতে হয়। সেখানে আগত অচেনা পুরুষকে দেহদান করতে হয়। সেই অচেনা পুরুষটি মেয়েদের কাছে যায়, বাছাই করে, পছন্দ হলে পয়সা ছুড়ে দেয়। তারপর মেয়েটি সেই অচেনা পুরুষটিকে দেহদান করেই তবে বাড়ি ফিরতে পারে। ব্যাবিলনের নির্বাসিত জীবনে এই সব অভূতপূর্ব প্রথা জানার পর নির্বাসিত হিব্রুভাষীদের মধ্যে গভীর বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেবী ইশতার- এর ওপর ক্রোধ ও বিতৃষ্ণা অনুভব করে। তারা গোপনে ইশতারকে ‘ব্যাবিলনের বেশ্যা’ বলে। তাদের ঘৃনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে- তারা ইশতার এর মূর্তি ভেঙে ফেলতে চায়। নির্বাসিত হিব্রুরা এই চারজনকে আত্মঘাতি অভিযানের জন্য নির্বাচিত করেছে। এরা প্রত্যেকেই জানে দেবী ইশতার-এর উপাসনালয়ে প্রবেশ করে কারও জীবিত ফিরে আসার সম্ভবনা ক্ষীণ।



দেবী ইশতার-এর উপাসনালয়টি ব্যাবিলন নগরের উত্তর-পুবে। বসন্তকালে বাৎসরিক ধর্মীয় মিছিল যে পথ দিয়ে যায়, তার ঠিক পাশে। বড় একটি তোরণের পরে সিঁড়ি উঠে গেছে। ওপরে সুপরিসর প্রাঙ্গন, তার বাঁ পাশে সার সার কক্ষ। তারি একটি কক্ষে এত রাতেও মশাল জ্বলে আছে। কক্ষের ভিতরে আরামদায়ক শয্যার ওপরে হেলান দিয়ে বসে আছেন ব্যাবিলন নগরের প্রবীণ কবি লাবাশহি । এই গুমোট রাতে ঝুঁকে বানুনু-র কপালে চুম্বন এঁকে দেন তিনি। বানুনু খিলখিল হাসিতে ভেঙে পড়ে। মধ্যবয়েসি বানুনু ইশতার-এর উপাসনালয় নারী পুরোহিত। ছিপছিপে শরীরটি তার দীর্ঘদেহী । পরনে শ্বেত রঙা স্বচ্ছ বসন, ঘরে মশাল জ্বলেছিল, সেই আলোয় বানুনু-র শরীরের বাঁকগুলি স্পষ্ট, মুখটা কেমন ফ্যাকাশে। চোখের দৃষ্টিতে ঘোর, যেন মাদকে আচ্ছন্ন। চুলে সোনালী রং করেছে। চোখে ঘন কাজল। লাবাশহি-র দাড়িতে আদর করে আঙুল বুলিয়ে দেয় বানুনু ।
মধ্যরাতে ব্যাবিলনের নির্জন পথে হাঁটছিলেন লাবাশহি, প্রায়ই হাঁটেন, হেঁটে হেঁটে নির্ঘুম রাত পাড় করেন, ঘুমন্ত নির্জন নগর ব্যাবিলনের নগরের রূপ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন । মাথার ওপরে তখন ঘুরে যায় নক্ষত্রেরা ...
আজ হাঁটতে হাঁটতে বানুনু-র কথা মনে পড়ে গেল। বানুনু -র সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না। আজ দেখা করতে এলেন। লাবাশহি-র হাতে রূপার পানপাত্র। সে পানপাত্রে ইলাম রাজ্যের রক্তিম ডালিম-মদ। সন্ধ্যার পর থেকে যথেষ্ট পান করেছেন তিনি । তবে তাঁর চোখ দুটি রক্তিম হয়ে ওঠেনি। মদ পানে ব্যাবিলন নগরে লাবাশহি-র জুড়ি মেলা ভার।
বানুনু বলল, নতুন কি লিখলে কবি?
লাবাশহি বললেন, লিখছি ইশতার-বন্দনা। তবে খসড়া- এখনও চূড়ান্ত করিনি।
তবুও শুনি। আদুরে গলায় বলল বানুনু।
লাবাশহি জলদ কন্ঠে আবৃত্তি করেন-

ইশতার, ইশতার!
চোখে জ্বলে প্রেম তার,
আকাশের আনন্দিত মেয়ে।
কবে তুমি এসেছিলে
আমাদের প্রেমের নগরে
কামার্তা কিশোরীর আহবানে ...

আকাশের আনন্দিত মেয়ে। বাহ্ । বাহ্ । বানুনু উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে বলল।
লাবাশহি হাসলেন। বললেন, ইশতার ব্যাবিলন নগরের নারীদের সুখি করেছেন। বলে পানপাত্র তুলে ধরলেন ওপরে।
সত্যি । বলে বানুনু মাথা ঝাঁকাল।
সহসা লাবাশহি প্রায় চিৎকার করে বলে ওঠেন, রাজা ২য় নেবুচাদনেযর এর জয় হোক।
লাবাশহি খোশ মেজাজে আছেন বোঝা গেল। বানুনু মুচকি হেসে প্রতিধ্বনি তুলল, রাজা ২য় নেবুচাদনেযর এর জয় হোক।
লাবাশহি ঝুঁকে বানুনু-র কপালে চুম্বন এঁকে দেন। মধ্যবয়েসি বানুনু, বহু অভিজ্ঞায় ঋদ্ধ, তা সত্ত্বেও কেঁপে ওঠে এই নারী। প্রসঙ্গ পালটিয়ে বলল, রাজপ্রাসাদে কি সব হচ্ছে শুনলাম কবি, মালীরা কি সব গাছপালা রোপন করছে।
লাবাশহি মাথা নাড়লেন। তিনি রাজকীয় পরিবারের সদস্য; রাজা নেবুচাদনেজার এর নিকট আত্মীয়। এক চুমুক ঝাঁঝালো তরল গিলে বললেন, রাজা ২য় নেবুচাদনেযর-এর নির্দেশে রাজপ্রাসাদের অলিন্দে ও ছাদে সবুজ বাগান তৈরি করা হচ্ছে, সে বাগানে সুগন্ধী সব উদ্ভিদ রোপন করা হচ্ছে।
রাজপ্রাসাদে বাগান তৈরি করা হচ্ছে? কেন?
জান তো বানুনু - রাজা ২য় নেবুচাদনেযর-এর স্ত্রী রানী অ্যামিটিস পারস্যের মদ্র রাজ্যের মেয়ে।
হ্যাঁ জানি। বলে মাথা নাড়ল বানুনু।
মদ্র দেশটি ব্যাবিলনের তুলনায় সবুজ-শ্যামল। ধূসর ব্যাবিলন রানীর মন বিষন্ন করে রাখে। রানীকে ভীষণ ভালোবাসেন রাজা। রানীকে খুশি করতেই রাজার নির্দেশে রাজপ্রাসাদের অলিন্দে ও ছাদে সবুজ বাগান তৈরি করা হচ্ছে।
রাজা রানীকে এত ভালোবাসেন?
হ্যাঁ।
ওহ্ । রাজার ভরাট মুখটি স্মরণ হয় বানুনু-র। এ বছরও নববর্ষে ‘পবিত্র বিবাহ উৎসব’ পালনের সময় রাজার সঙ্গে যৌনমিলনে অংশ নিয়েছিল বানুনু ... কেননা, ইশতার দেবীর আর্শীবাদে বসন্তকালেই তো নবীন পাতারা লাভ করে নবজীবন ...বড় সুখের সে স্মৃতি। রাজা বড় একনিষ্ট প্রেমিক, তিনি নারীর শীৎকারের তারতম্যের মর্ম বোঝেন। অথচ সেই প্রেমময় রাজাই কি না জেরুজালেম ধ্বংস করলেন। কথাটা লাবাশহি কে না বলে পারল না বানুনু।
লাবাশহি বললেন, ইব্রিরা (হিব্রুভাষীরা) দেবী ইশতার বিরোধী, তারা নারীর স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এই রাজার ক্রোধের কারণ। ইব্রিরা দেবতা এল এলোহিম এর উপাসনা করে। এই ক্রোধী ও প্রতিহিংসাপরায়ন দেবতার চোখে পুরুষ প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ, নারীর মর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণির, পুরুষের পরে ।
বলছেন কি কবি! বানুনু বিস্মিত হয়ে যায়।
হ্যাঁ। যা সত্য তাই বলছি। ব্যাবিলনে নির্বাসিত ইব্রিরা দেবী ইশতারকে ব্যাবিলনের বেশ্যা বলে।
আশ্চর্য! কি স্পর্ধা! রাজা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না যে-
লাবাশহি বললেন, নির্বাসিত ইব্রিরা দেবী ইশতারকে ব্যাবিলনের বেশ্যা বলে বটে, তবে তার অকাট্য প্রমাণ নেই-তাই। আর জান তো রাজা ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী।
বুঝলাম। বানুনু বলল। তা জেরুজালেমবাসী ইব্রিরা কি বিশ্বাস করে?
লাবাশহি বললেন, তারা বিশ্বপ্রকৃতি সম্বন্ধে ব্যাক্তিমানুষের মনগড়া ব্যাখ্যায় বিশ্বাস করে। বলে হাসলেন।
ওদের বিশ্বাস তাহলে আমাদের মতো না?
না,না। ব্যাবিলনে বিশ্বপ্রকৃতি সম্বন্ধে যে ধারণা বিদ্যমান, তা আসলে জনমানুষে ধারণা-যা গড়ে উঠতে দীর্ঘকাল সময় লেগেছে।
তা হলে কারা সত্য?
লাবাশহি বললেন, সেটি বড় কথা নয়, আমাদের বিশ্বাস ভুল হতে পারে তবে সে বিশ্বাস মানুষের জন্য কষ্টকর নয়। জেরুজালেমবাসী ইব্রিদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষকে ইশ্বরের সৃষ্ট দাস মনে করে, মানুষকে কষ্ট দেয়, বিশেষ করে নারীকে ... ওদেও এমন বদ্ধ সমাজ, যেখানে একজন স্বাধীন মুক্তমনা কবিরও জন্ম হয় না, হলেও তার কবিতায় এল এলোহিম প্রশংসা করে। ধিক!
এল এলোহিম?
ইব্রিদের ঈশ্বর-এর নাম।
ওহ্ ।
দরজার কাছে মৃদু খসখস শব্দ হয়।
বানুনু চমকে উঠে বলল, কে ওখানে?
লাবাশহি বললেন, আমার নতুন দেহরক্ষী আরশাকা।
ওহ্ ।
লাবাশহি বললেন, আমি কবি বলেই আমাকে নির্ঘুম দীর্ঘ রাত্রি অতিবাহিত করতে হয়, আমার মৃত স্ত্রীর স্মৃতিকে বহন করতে হয়। আমি আজও আরাহুনা কে ভুলতে পারি না বানুনু । বিরহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে রাত্রিবেলায় ব্যাবিলন নগরে হাঁটি। সে সময় আমার দেহরক্ষী আরশাকা আমাকে অনুসরন করে ।
ওহ্ ।
কক্ষটির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল দেহরক্ষী আরশাকা। কৃষ্ণকায় পেশল শরীর তার। আরশাকা-র জন্ম ইলাম রাজ্যের পুবের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়, এরা দুদ্ধর্ষ যোদ্ধা হয়। আরশাকা-র পরিবার বেশ কয়েক পুরুষ ধরে ব্যাবিলনের রাজকীয় পরিবারের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করছে । সশস্ত্র আরশাকার কোমরের কটিবন্ধে ঝুলছে কয়েকটি তীক্ষ্মধার ছোরা।
আরশাকার ভীষণ রক্তের তৃষ্ণা ।
সে তৃষ্ণা কখনও মেটে না।



এত রাতে দেবী ইশতার এর উপাসনালয়টি নির্জন হয়ে আছে। এলিজার, লাযের, আহাব ও জেটথ্রো পাশাপাশি সিঁড়ি বেয়ে উপাসনালয়ের প্রাঙ্গনে উঠে আসে। ওদের পরনে ওয়ারদু (দাস)-দের পোশাক। এ পোশাক কারও মনে সন্দেহের উদ্রেক করে না। প্রাঙ্গনে মধ্যরাতেও ভেসে আছে সুগন্ধী ধোঁয়া। আজারু মাসের পূর্নাঙ্গ বৃত্তাকার চাঁদ তার অকৃপন হাতে কিরণ ঢেলে দিচ্ছে। তারা প্রাঙ্গনে উঠে আসতেই জ্যোøার আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে শ্বেত রঙের ঘুঘু পাখি নেমে এল প্রাঙ্গনে। শ্বেত বর্ণের ঘুঘু পাখি দেবী ইশতার-এর প্রিয় পাখি। সম্ভবত তারা কোনও অশুভ ইঙ্গিত টের পেয়েছে।
প্রাঙ্গনের মাঝখানে দেবী ইশতার-এর দু-হাত ছড়ানো পাথরের মূর্তি। দেবীর মুখে কেমন এক মায়া ছড়ানো। নগ্ন দেবীর স্তন দুটি প্রকট, পেটটি উচুঁ, যেন সন্তানসম্ভাবা। প্রেমের দেবী ইশতার-যিনি বলেন: আমি পুরুষকে রূপান্তরিত করি নারীতে। আমিই নারীর জন্য সাজিয়ে তুলি পুরুষকে ... আমিই পুরুষের জন্য সাজিয়ে তুলি নারীকে ...
আরশাকা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ছিল । ওদের দিকে চোখ যেতেই তার শরীরের রক্তস্রোত দ্রুতগামী হয়ে ওঠে। চোখের পলকে আরশাকা হাত চলে যায় ছোরার হাতলে। লাযের দেবী ইশতার-এর মূর্তির সামনে উবু হয়ে বসে, এক লাফে তার কাঁধে চড়ে বসে এলিজার, তার হাতে বড় একটি হাতুরি।
আরশাকা ক্ষিপ্র গতিতে একে একে ছোরা ছুড়ে মারে ।
আর্তনাদ করে একে এক লাযের আহাব ও জেটথ্রো প্রাঙ্গনে পড়ে যায়।
আর্ত চিৎকার শুনে কক্ষ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে লাবাশহি । তার পিছনে বানুনু। সম্ভবত আরশাকা -র মনোসংযোগ ব্যহত হয়েছিল। একটি ছোরা লক্ষভ্রষ্ট হয়ে এলিজার-এর পায়ে বিঁধে প্রবল যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে এলিজার।
লাবাশহি কর্কস কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, এই কে তোমরা?
এলিজার চুপ করে থাকে।
কি চুপ করে রইলে কেন! কে তোমরা? বল!
এলিজার ব্যথা সহ্য করে। মুখচোখ কুঁচকে আছে ওর।
ইব্রি?
এলিজার মাথা নাড়ে। সে হাঁটু গেড়ে বসেছে। মাথা নীচু করে, অনেকটা প্রার্থনার ভঙিতে।
লোকটা ইব্রি শুনে ঘৃনাবোধ করে বানুনু । এরা মানসিক ভাবে অসুস্থ - না বোঝে শিল্প, না বোঝার চেষ্টা করে নারীকে । পা তুলে সজোড়ে এলিজার এর মুখে লাখি মারে বানুনু । লোকটা ছিটকে সিঁড়ির কিনারে পড়ে, তারপর সিঁড়ি বেয়ে গড়াতে গড়াতে নীচে ।
সিঁড়িতে পদশব্দ শোনা যায়।
সশস্ত্র প্রহরীরা উঠে আসছে।
ব্যাবিলনের মহান রাজা ২য় নেবুচাদনেযর নিশ্চয় একে বিষধর সাপভর্তি গর্তে ফেলে হত্যা করার নির্দেশ দেবেন।
বানুনু ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছিল। এখন মুখ ফিরিয়ে দেবী ইশতার-এর দিকে তাকায়। দেবী ইশতার-এর মুখে ক্রর হাসি ছড়িয়ে আছে যেন। যেন তিনি জানেন, এই রক্ষণশীল উন্মাদেরা আগামী আড়াই সহস্র বছর নারীকে তাদের মনগড়া অনুশাসনের পুঁতিগন্ধময় অন্ধকারে নিক্ষেপ করে পৃথিবীতে দীর্ঘকালব্যাপী এক অন্ধকার যুগের সূচনা করবে ...
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১২ সকাল ১০:৩৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×