somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উয়ারী-বটেশ্বর কি প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের কেন্দ্র ছিল?

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দিন যত যাচ্ছে বাংলার প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে মানুষের আগ্রহ যেন বেড়ে চলেছে। একটা সময় ছিল যখন ঐতিহাসিক তথ্যাদিতে কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় ঐতিহাসিকের আগ্রহ ছিল, এখন সাধারণ মানুষও সেসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কৌতূহলী হয়ে উঠছে। এর কারণ বোধহয় মিডিয়ার সক্রিয় ভূমিকা। আজকাল প্রধান দৈনিকের লাইফস্টাইল ম্যাগাজিনগুলোও বাংলাদেশি পুরাকীর্তি সম্বন্ধে সচিত্র প্রতিবেদ প্রকাশ করে। পাহাড়পুর কিংবা ময়নামতির বৌদ্ধবিহারের ওপর নির্মিত প্রামাণচিত্র ড্রইংরুমের টিভির পর্দার মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে নানা বয়েসি টিভির দর্শকের কাছে।
এটা গেল বাঙালির অতীতচর্চার একদিক।
অন্যদিকে বাংলার অপার প্রত্নসম্পদ ধীরে ধীরে উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে । বাংলা যে এত অমূল্য প্রত্নরাজি তার নরম পলল মাটির বুকে লুকিয়ে রেখেছিল তা কে জানত! এখন সেসব আবিস্কৃত হচ্ছে। একশ কি দুশো বছর আগে গ্রামের রাখাল পথের পাশে মাটির নিচে কাঁচের পুঁতি কি কালো রঙের রুলেটেড মৃৎপাত্র খুঁজে পেলে ভাবত জ্বীনভূতের কান্ড, ... কিংবা নিজেই আত্মসাৎ করত পুরাবস্তু। আর এখন? এখন গ্রামাঞ্চলে অকস্মাৎ কুড়িয়ে পাওয়া সাত রাজার ধন নিয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হয়, তারপর ওগুলো জেলা সদরে ঠিকই পৌঁছে যায়; পত্রিকায় ছবি ওঠে, দেশের মানুষ জানতে পারে ঐশ্বর্যময়ী বাংলার প্রত্নস্থল আর প্রত্নসামগ্রীর কথা।
আর এভাবেই পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এল ঢাকা বিভাগের নরসিংদী জেলার এক সুপ্রাচীন কীর্তি। নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত উয়ারী এবং বটেশ্বর নামে দুটি গ্রামে প্রাচীন যুগের প্রত্নবস্তু পাওয়া যাওয়ায় হইচই পড়ে গেছে। দেশে ও বিদেশে যথেস্ট কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। বাঙালি প্রত্নতাত্ত্বিকগন যথেষ্ট মাথার ঘাম ফেলছেন একে বোধগম্য পর্যায়ে তুলে আনতে।



নরসিংদী জেলার মানচিত্র । এককালে উয়ারী গ্রামের উত্তর দিকে কয়রা নদী। সে নদীটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে বইত; এখন নদীটি প্রায় মৃত । নরসিংদীর পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ ও আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে অবস্থিত হাজার বছরের প্রাচীন এক দুর্গনগরীর কথা জানা গেছে। ইংরেজিতে যাকে বলে Citadel । তাহলে হাজার বছরের পুরনো বাঙালি কেবলমাত্র কৃষিকাজই করেনি -সে দুর্গনগরীও তৈরি করেছিল? সে নগরীতে আসত ভিনদেশি বণিকেরা। কয়রা, ব্রহ্মপুত্র নদ ও আড়িয়াল খাঁ নদী তে ভাসত ওয়ারী-বটেশ্বর বণিকের ধনররত্নপূর্ণ নৌকা?

উয়ারী এবং বটেশ্বর গ্রামে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্বন্ধে এম.এম হক এবং এস.এস মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন, ‘১৯৩৩ সালে মুহম্মদ হানিফ পাঠান নামে একজন স্কুল শিক্ষক সর্বপ্রথম ওয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব জনসমক্ষে তুলে ধরেন। পরবর্তীকালে দীর্ঘ সময় ধরে তার পুত্র সৌখিন প্রতœতাত্ত্বিক মুহম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান ওয়ারী-বটেশ্বর থেকে প্রত্নবস্তু সংগ্রহ এবং পাশাপাশি গবেষণাও আরম্ভ করেন। বিভিন্ন সময়ে অনুসন্ধানের ফলে আবিস্কৃত হয়েছে যে, ওয়ারী-বটেশ্বর গ্রাম দুটির অধিকাংশ স্থানজুড়ে প্রাচীন বসতি ছিল। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রাম যেমন-রাঙ্গারটেক, সোনারুতলা, কেন্দুয়া, মরজার, চন্ডীপাড়া, পাটুলি, জয়মঙ্গল, হরিসাঙ্গন, যশোর, কুন্ডাপাড়া, গোদাশিয়া এবং আব্দুল্লানগরেও প্রাচীন বসতি চিহ্ন পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর পরিমানে স্বল্প-মূল্য পাথরের পুঁতি, কাঁচের পুঁতি, লৌহনির্মিত প্রত্নবস্তু, ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রাসহ আরও অনেক ধরনের প্রত্নবস্তু পাওয়া যায়। জমি-চাষ, পুকুর- খনন, বৃষ্টির কারণে ভূমির উপরিভাগের ক্ষয় প্রভৃতি কারণে প্রত্নবস্তুর দৈবাৎ প্রাপ্তি। স¤প্রতি এক সীমিত আকারের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তুর সন্ধান মিলেছে। এগুলির মধ্যে রুলেটেড মৃৎপাত্র, নবড্ মৃৎপাত্র, উত্তর ভারতীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, স্বল্প-মূল্য পাথরের পুঁতি, কাঁচের পুঁতি, পাথরের ফ্লেক, চিলতা এবং সার অংশ, লৌহবস্তু এবং লৌহ গলানোর ফলে তৈরি বল জাতীয় বস্তু, মাটির দেয়ালের অংশ এবং পোড়ানো কার্যক্রমের চিহ্ন খুবই গুরুত্ব বহন করে ।’ (বাংলাপিডিয়ার প্রবন্ধ থেকে)



উয়ারী এবং বটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তু; হাজার বছর আগে বেঁচে থেকে প্রাচীন বাংলার বাঙালিরা এসব সামগ্রী স্পর্শ করেছে, ব্যবহার করেছে ...এমন ভেবে গভীর শিহরণ অনুভব করাই যায়।



উয়ারী এবং বটেশ্বর এ খনন কার্য চলছে।



উয়ারী এবং বটেশ্বর সম্বন্ধে দৈনিক পত্রপত্রিকায় বিস্তর লেখা হচ্ছে। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করছে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে । ভিড় করছে ইতিহাসে আগ্রহী তরুণ-তরুণীরা। তারা বিস্ময়ের সঙ্গে অবলোকন করছে নানাবিধ প্রত্নসম্ভার, সোনার বাংলার গৌরবময় সোনালি অতীত। ইতিহাসশাস্ত্রের শিক্ষা ব্যতীত কেবলমাত্র মানবিক প্রজ্ঞা প্রয়োগ করে তারা বুঝতে পারে যে জাতি হাজার বছর আগেই দুর্গনগরী নির্মাণ করার কলাকৌশল আয়ত্ম করতে সক্ষম হয়েছিল, কেবলি কৃষিকাজে লিপ্ত থাকেনি-কালের ধারায় সে জাতির স্বাধিকার ও সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত। সে জাতিকে কেউই ‘দাবায়ে রাখতে’ পারবে না।
দর্শনার্থীদের কারও কারও মনে একটি প্রশ্ন উকিঁ দেওয়ার কথা: উয়ারী- বটেশ্বর-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের কি কোনও সম্পর্ক ছিল?
গ্রিক সম্রাট আলেকজান্দার ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বে ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চল আক্রমন করেছিলেন। সেই সময়কার প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে গঙ্গাঋদ্ধি নামে একটি পরাক্রান্ত ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রের কথা শোনা যায়। গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রটি গঙ্গারিডি, গঙ্গারিডই, গঙ্গাহৃদি, গঙ্গাহৃদয়, গঙ্গারাঢ় গঙ্গারাষ্ট্র প্রভৃতি নামেও পরিচিত। এমন নামের কারণ? যে রাষ্ট্র গঙ্গা দ্বারা ঋদ্ধ বা সমৃদ্ধ সেই রাষ্ট্রই গঙ্গাঋদ্ধি, গঙ্গাহৃদি বা গঙ্গাহৃদয়। বিদেশি ভাষায় ঋদ্ধি হয়ে গেছে রিডি বা রিডই। নদীজল দ্বারা একটি অঞ্চল ঋদ্ধ হতেই পারে। কেননা, সভ্যতায় নদীর ভূমিকা অপরিসীম। জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন, Approximately 5000 years ago the first complex, politically centralized civilizations began to crystallize independently along a number of river valleys throughout the southern half of Asia and northern Africa . These civilizations constitute the next step in the organization and centralization of human economic, political, religious, and social institutions and practices.
তবে প্রাচীন ভারতের বুক চিরে উত্তর-পশ্চিম থেকে পুব-দক্ষিণে গঙ্গা নদীটি বইতে বলে গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের অবস্থান সম্বন্ধে কি সিদ্ধান্তে আসা যায়? ‘প্রাচীন বাংলার জনপদ ও জনজাতিগোষ্ঠী’ গ্রন্থে কাবেদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘প্রাচীন গ্রীক ও রোমান লেখক-ঐতিহাসিকদের লেখনীতে বহুলকথিত ‘গঙ্গারিডি’ বা ‘গঙ্গারিডাই’ জাতি ছিল সম্ভবত প্রাচীন বঙ্গজাতি, গ্রীকবীর আলেকজান্ডারের আক্রমনকালে যার পরাক্রমশালী নৃপতি ছিলেন নন্দবংশীয় কোনও সার্বভৌম রাজা। আর এই বঙ্গ রাজ্যেরই অন্যতম গাঙ্গেয় বা সমুদ্র-বন্দর ছিল ‘গাঙ্গে’ বা ‘গাঙ্গে-নগরী’। অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘ নন্দবংশীয় রাজা ধননন্দ আলেকজান্ডারের সমসাময়িক। এঁর রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র। গ্রিক লেখকদের কাছে ইনি ‘আগ্রামেস’ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন শক্তিশালী শাসক ছিলেন। তাঁর সৈন্যবাহিনীতে ২০,০০০ অশ্বারোহী, ২০০,০০০ পদাতিক, ২০০০ রথ এবং ৩০০০ হাতি ছিল। গঙ্গাহৃদি ও প্রাসি তাঁর শাসনাধীন ছিল।' (প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। ১ম খন্ড। পৃষ্ঠা, ১৩১)
ঐতিহাসিক শ্রীরমাপদ চন্দ লিখেছেন,‘রাঢ়ে তখন পরাক্রান্ত গঙ্গরিডই রাজ্য প্রতিষ্ঠিত।’ প্রাচীন রাঢ়-এর অবস্থান ছিল বর্তমান পশ্চিম বাংলায়। ঐতিহাসিক শ্রীরমাপদ চন্দর বক্তব্য অনুযায়ী প্রাচীন বাংলার পশ্চিম অংশ গঙ্গা গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের অংশ ছিল। তা হলে , উয়ারী- বটেশ্বর-সংস্কৃতির সঙ্গে প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের কি কোনও সম্পর্ক ছিল? উয়ারী- বটেশ্বর কি প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের -এর অংশ? কিংবা উয়ারী- বটেশ্বর-এর কি গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের কেন্দ্র বা রাজধানী ছিল? সৌখিন প্রত্নতাত্ত্বিক মুহম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান এরকম সম্ভাবনার কথা একবার উল্লেখ করেছিলেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক দিলীপ কুমার চক্রবর্তী মনে করেন যে, এ অঞ্চলের (উয়ারী- বটেশ্বর) সঙ্গে দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়া এবং রোমান সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ছিল। উয়ারী- বটেশ্বর গ্রামে রুলেটেড মৃৎপাত্র, নবড্ মৃৎপাত্র, স্যান্ডউইচ কাঁচের পুঁতি, স্বর্ণ দিয়ে আবৃত এক ধরণের কাঁচের পুঁতি, উচ্চ মাত্রায় টিন মিশ্রিত ব্রোঞ্জ পাওয়া গেছে। দিলীপ কুমার চক্রবর্তী যে অনুমান করেছে এসব প্রত্নবস্তু তার পক্ষে প্রমাণ দেয়।
তবে বর্তামান উয়ারী- বটেশ্বর এর অবস্থান আর গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের কেন্দ্রটি একই স্থানে ছিল না। ড. অতুল সুর লিখেছেন, ‘গ্রিক রোমান ও মিশরীয় সূত্র থেকে আমরা মাত্র এইটুকু জানতে পারি যে গঙ্গারিডি রাষ্ট্র গঙ্গানদীর মোহানা দেশে অবস্থিত ছিল এবং ওই রাষ্ট্রের প্রধান বন্দরের নাম ছিল ‘গাঙ্গে’। তার মানে গঙ্গারিডি রাষ্ট্র যে নিম্ন-বাঙলায় ছিল, সে সম্বন্ধে কোনও সন্দেহ নেই। যদিও ভারতীয় সাহিত্যে গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের কোনও উল্লেখ নেই, তবু যারা বাঙলাদেশের সঙ্গে বানিজ্য করত তারা যখন গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের উল্লেখ করে গেছে, তখন গঙ্গারিডির অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দিহান হবার কোন কারণ নেই।’ ( দ্র. কাবেদুল ইসলাম। প্রাচীন বাংলার জনপদ ও জনজাতিগোষ্ঠী। পৃষ্ঠা, ৯৯) গ্রিক ঐতিহাসিক ডিওডোরাস সিকুলাস লিখেছেন,‘সমুদ্রের মোহনায় গঙ্গা যেখানে আত্মবিসর্জন দেয় সেটা ‘গন্ডারিডাই’ রাজ্যের পূর্বসীমা।" রোমান ঐতিহাসিক প্লিনি লিখেছেন, "গঙ্গার অন্তিম প্রবাহ‘ গঙ্গারিডেস’ দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত।" পক্ষান্তরে প্রাচীন বাংলায় উয়ারী- বটেশ্বর এর অবস্থান নরসিংদীর পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ ও আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে অবস্থিত। যেখানে হাজার বছরের প্রাচীন এক দুর্গনগরী আবিস্কৃত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল, উয়ারী- বটেশ্বর গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের না হলে গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের কেন্দ্র বা রাজধানী কোথায় ছিল?
আধুনিক ঐতিহাসিকদের অনুমান কলকাতার ৩৫ কিলোমিটার উত্তপুবে বিদ্যাধরী নদীর পাড়ে প্রাচীন চন্দ্রকেতুগড় ছিল গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের কেন্দ্র বা রাজধানী । অমিতা রায় লিখেছেন: Chandraketugarh an archaeological site. Located on the Vidyadhari, once an important tributary of the Bhagirathi, Chandraketugarh (Chandraketugad) is situated 35 kilometres northeast of calcutta in the district of 24 Parganas of West Bengal. Excavations at the site for several years have revealed materials, which prove the antiquity of the site and its archaeological importance. The excavated material is in the collection of the asutosh museum and the State Archaeological Museum, Calcutta, and in addition there are a number of private collections in and around the town. .... The site still remains to be definitely identified. But there is reason to believe that this was possibly the ancient 'Gange', a place mentioned both by Periplus and Ptolemy. (বাংলাপিডিয়া)
ড. অতুল সুর এর বক্তব্য আবার স্মরণ করি, ‘গ্রিক রোমান ও মিশরীয় সূত্র থেকে আমরা মাত্র এইটুকু জানতে পারি যে গঙ্গারিডি রাষ্ট্র গঙ্গানদীর মোহানা দেশে অবস্থিত ছিল এবং ওই রাষ্ট্রের প্রধান বন্দরের নাম ছিল ‘গাঙ্গে’।



প্রাচীন বাংলার মানচিত্র । ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন,‘ গ্রীকগন গন্ডরিডই অথবা গঙ্গরিডই নামে যে এক পরাক্রান্ত জাতির উল্লেখ করিয়াছেন, তাহারা যে বঙ্গদেশের অধিবাসী, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। ...গঙ্গানদীর যে দুইটি স্রোত এখন ভাগীরথী ও পদ্মা বলিয়া পরিচিত, এই উভয়ের মধ্যবর্তী প্রদেশে গঙ্গরিডই জাতির বাসস্থান ছিল। ’ ... নরসিংদী জেলার অবস্থান পদ্মার উত্তরে হওয়ায় এই প্রশ্ন ওঠে-তাহলে নরসিংদী জেলার উয়ারী এবং বটেশ্বর সংস্কৃতির সঙ্গে গঙ্গরিডই জাতির কি সম্পর্ক? গঙ্গরিডই জাতির দুটি সংস্কৃতিক কেন্দ্র?

উয়ারী-বটেশ্বর সংস্কৃতির সময়কাল সম্বন্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন,‘ দুর্গপ্রাচীর, পরিখা, ইটের স্থাপত্য, চুন-সুরকির রাস্তা, কারিগরশ্রেণীর উপস্থিতি, কারখানা, মুদ্রা ও বণিকশ্রেণীর উপস্থিতি আদি-ঐতিহাসিক যুগের (৬০০-৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) নগরব্যবস্থার কথা পরিস্কার ঘোষনা করে। ’ (দৈনিক প্রথম আলো। ২৫/৭/২০০৮) প্রখ্যাত ঐতিহাসিক দিলীপ কুমার চক্রবর্তী মনে করেন যে, উয়ারী-বটেশ্বর টলেমি উল্লেখিত সোনাগড়া। কার্বন-১৪ পরীক্ষার ফলে এ পর্যন্ত খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের মানববসতির চিহ্ন পাওয়া গেছে। উৎপত্তি ও বিকাশ খ্রিস্টপূর্ব ৭০০-১০০ এবং খ্রিষ্টীয় ৫০ অব্দ। প্রশ্ন হল, প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের সঙ্গে উয়ারী- বটেশ্বর-এর দুর্গনগরীর কি কোনও সম্পর্ক আছে? সম্পর্ক যে ছিল সেটি বোঝা যায়। তবে সম্পর্কের ধরণটিই এখনও বোধগম্য নয়। উয়ারী- বটেশ্বর সভ্যতা প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের কেন্দ্র না হলেও যে গুরুত্বপূর্ন নগরী ছিল তা অনুমান করা যায়। গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্য খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে প্রাসির শাসনাধীন ছিল। প্রাসি হল মগধ। প্রাসি শাসন করত নন্দ বংশের রাজারা। এই বংশের শাসনকাল ৩৬৪ থেকে ৩২৪ খ্রিস্টপূর্ব। তাহলে উয়ারী- বটেশ্বর সভ্যতাও কি মগধের অধীন ছিল? হ্যাঁ, সেরকম অনুমান অসিদ্ধ নয়। কেননা, নন্দদের উৎখাত করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য (৩২৪-৩০০খ্রিস্টপূর্ব) মগধ জয় করেছিলেন এবং খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকেই পুন্ড্রবর্ধন (বর্তমান বগুড়া) মৌর্যদের অধীন চলে গিয়েছিল। পুন্ড্রবর্ধন এর অবস্থান ছিল উয়ারী- বটেশ্বর সভ্যতার পশ্চিমে । এ কারণেই অনুমিত হয় উয়ারী- বটেশ্বর সভ্যতাও মগধের অধীন ছিল।
যা হোক। উয়ারী- বটেশ্বর সভ্যতার সঙ্গে প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রের সর্ম্পকটির বিষয়টি সম্পর্কে কোনও নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয়। কেননা, কোনও কোনও ঐতিহাসিক এই দাবী করছেন যে প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যেই প্রাচীন বাংলার প্রথম সার্বভৌম রাষ্ট্র। তা হলে এই প্রশ্নও উঠতে পারে যে গঙ্গাঋদ্ধি রাষ্ট্রটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হলে সে রাষ্ট্রটি মগধের অধীন যায় কি করে?
পরিশেষে একথা বলা যায়। ঠাকুরমার ঝুলির দিন শেষ। এ যুগে ইতিহাস হয়ে উঠেছে বিজ্ঞান। অতীতের প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে নিরিখ করে সন্তোষজনক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে উয়ারী-বটেশ্বর প্রাচীন বাংলার গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্যের কেন্দ্র ছিল কি না?

উৎসর্গ: সালাউদ্দীন শুভ্র এবং এসরেজওয়ানা :P

তথ্যসূত্র:

কাবেদুল ইসলাম। প্রাচীন বাংলার জনপদ ও জনজাতিগোষ্ঠী।
অধ্যাপক সুনীল চট্টোপাধ্যায় প্রাচীন ভারতের ইতিহাস। ১ম খন্ড।
বাংলাপিডিয়া
এবং
http://wari-bateshwar.blogspot.com/
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:২৫
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×