আমাদের কারও কারও এমনও মনে হতে পারে যে- ভালো মানের জামদানি শাড়ি কেবলমাত্র টাঙ্গাইলেই তৈরি হয় আর এর উদ্ভব বড় জোড় বৃটিশ আমলে। নাঃ। জামদানি শাড়ির শিকড়টি আরও পুরনো-সেই খ্রিস্টপূর্ব যুগেই প্রোথিত হয়েছিল। কেননা, জামদানি নকশার প্রচলন ও মসলিন কাপড়ের বিকাশ পাশাপাশিই শুরু হয়েছিল। নকশি কাঁথার মতোই আজ জামদানি শাড়ি বাংলার অনিবার্য সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে উঠলেও- এটি ঠিক নকশি কাঁথার মতন একান্ত দেশিও নয়, বরং মুগল-পারসিক ঐতিহ্যের এক সুন্দর নান্দনিক উত্তারাধিকার।
একটা সময় ছিল। যখন আমি ভাবতাম যে শাড়ি একান্ত ভাবেই বাঙালি নারীর বসন, অর্থাৎ বাংলার; যে কারণে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কোনও নারীকে শাড়ি পরা নারী দেখলে সামান্য গর্ব বোধ করে ভাবতাম যে -অন্যরা আমাদের দেশের পোশাকটি পড়ছে। আসলে আমার ধারনা ঠিক ছিল না। আসলে সেই খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে নারীদের শাড়ি পরার প্রচলন ছিল। যদিও নাম ও পরার ধরন ছিল অন্যরকম এবং সেই প্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের একেক অঞ্চলের নারীরা একেকভাবে শাড়ি পরে আসছেন।
পন্ডিতদের মতে-প্রাকৃত ভাষার ‘সাট্টিকা’ শব্দ থেকে শাড়ি শব্দের উদ্ভব। আদি বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্যে ‘সাট্টিকা’ শব্দটি পাওয়া যায়। প্রাচীন সিন্ধুসভ্যতার অধিবাসীদের পোশাকের যে বর্ননা পাওয়া যায়-তা অনেকটা শাড়ির মতোই, বিশেষ করে পুরোহিতদের পরিধেয় বসনের বর্ননা থেকে আমাদের সেরকমই মনে হয় । দক্ষিণ ভারতের ক্ষেত্রেও ঐ একই কথাই প্রযোজ্য। দক্ষিণ ভারতে প্রাপ্ত প্রাচীন লেখনীতে শাড়ির মতন বস্ত্রের কথা উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন ভারতের একজন অন্যতম বিদগ্ধ মানুষ ছিলেন ভরত। তিনি 'নাট্যশাস্ত্র' নামে একখানা বই লিখেছিলেন । সে বইতেও এক ধরনের দীর্ঘ সূক্ষ্মবস্ত্রের কথা রয়েছে যা আমাদের শাড়ির কথাই মনে করিয়ে দেয়।
প্রাচীনবঙ্গেও নারীর পোশাক ছিল বর্তমান কালের শাড়ির অনুরুপ। অর্থাৎ, সেলাইবিহীন দীর্ঘ বস্ত্র খন্ড। কালে কালে অবশ্য শাড়ি পরার ধরন বদলেছে-যা স্বাভাবিক। শাড়ি নিয়ে গবেষনা করেছেন বিশিষ্ট ফরাসী নৃতাত্ত্বিক চানতাল বোউলানঞ্জার। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে শাড়ি পরার ধরনকে কয়েক ভাগে ভাগ করেছেন। এর মধ্যে অতি অবশ্যই বাঙালি নারীর শাড়ি পরার ঢংটিও রয়েছে। এবং কে না জানে- বাংলার সংস্কৃতির ইতিহাসে কোলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির অবদান কত গভীর। সে বাড়ির মেয়েরাই উনিশ শতকে শাড়ি পরার একটি ঢং ঠিক করে দিয়েছিল। সম্ভবত কোলকাতার উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রোণিই সেটির অনুসরণ করেছিল। গ্রামের চিত্র সম্ভবত অন্যরকম ছিল। আমি পূর্ব বাংলার গ্রামের কথা বলছি। এখন যেমন দেখছি -গ্রামের মেয়েদের শাড়ি পরার স্টাইলটি তখনও প্রায় এমনই ছিল বলেই অনুমান করি। গ্রামীন নারীর শাড়িতে সবুজ রঙের আধিক্যের কি কারণ? যা বাংলার বিস্ময়কর সবুজ প্রকৃতিরই সহজ প্রতিফলন-যা পরিশেষে আমাদের জাতীয় পতাকার রং হয়ে উঠেছে।
যা হোক। শাড়ি বাংলার একান্ত নয় ভেবে সামান্য বিষন্ন হয়েছিলাম। তবে জামদানি শাড়ির ইতিবৃত্তটি জেনে আবার উৎফুল্ল হয়ে উঠি। কেননা, ভারতীয় উপমহাদেশে যত রকম শাড়ি তৈরি হয় তার মধ্যে জামদানি তার বুনন ও সৌন্দর্যর জন্য বিশিষ্ট। আমার কেন যেন মনে হয়, বাংলাদেশের বাইরে এমন তাৎপর্যময়ভাবে আর কোনও পরিধেয় বস্ত্র সম্ভবত বিকাশ লাভ করেনি। নকশি কাঁথার মতোই জামদানি শাড়ি আজ বাংলার সংস্কৃতির অনিবার্য প্রতীক হয়ে উঠলেও- এটি ঠিক নকশি কাঁথার মতন একান্ত দেশিও নয়, রহস্য এখানেই, এটি বরং মুগল-পারসিক ঐতিহ্যের এক সুন্দর নান্দনিক উত্তারাধিকার। পারস্য কিংবা উত্তরভারতে জামদানির উদ্ভব সম্ভব ছিল না। রহস্য এখানেও।
২
বাংলার মাটির এমনই গুণ। যে কারণে জনৈক ইতিহাসবিদ লিখেছেন- “ফুটি তুলো দিয়ে চমৎকার মসলিন তৈরি হত। ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে ফুটি তুলোর গাছ জন্মাত। অন্য আরও দু-ধরনের তুলাকে বলা হত-বৈরাইট এবং দিশি । এগুলো অত জাতের ছিল না-ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জন্মাত। এগুলি দিয়ে ইষৎ নিচু মানের কাপাড় তৈরি হত।”
কাজেই মসলিন হল বাংলার মাটিরই গুণ।
এবং, জামদানি আর মসলিনের সম্পর্ক ঘনিষ্ট।
জামদানি শাড়ির ইতিবৃত্ত নিয়ে অল্পবিস্তর পড়ে মনে হল -আজকাল আমরা জামদানি বলতে যা বুঝি তার প্রাথমিক বিকাশ হয়েছিল সেই খ্রিস্টপূর্ব যুগেই যেহেতু জামদানি আর মসলিনের সম্পর্ক ঘনিষ্ট আর মসলিনের ইতিহাস সেরকমই পুরনো। প্রাচীন ভারতের চিন্তাবিদ কৌটিল্য ‘অর্থশাস্ত্র’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। সে বইয়ে প্রাচীন বঙ্গ ও পুন্ড্রে (বর্তমান বগুড়া) এক ধরনের মিহিন কাপড়ের কারখানার কথা উল্লেখ করেছেন কৌটিল্য। পেরিপ্লাস শব্দটি গ্রিক। এর মানে: ‘সমুদ্রের বুকে পাল তুলে ভেসে বেড়ানো।’ পেরিপ্লাস আসলে নৌপথে বানিজ্যিক বিবরণ। খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে রচিত হয়েছিল: “পেরিপ্লাস অভ দ্য ইরিথ্রিয়ান সি” নামে একটি গ্রন্থ। সে গ্রন্থেও বঙ্গের মিহিনবস্ত্রের কথা রয়েছে। তা ছাড়া আরব, চিন ও ইটালিয় পর্যটকর ও ব্যবসায়ীদের বৃত্তান্তেও বঙ্গের সূক্ষ কাপড়ের কথা বারবার উল্লেখিত হয়েছে। যা থেকে বোঝা যায় প্রাচীন কাল থেকেই বাংলার সূক্ষ্ম মিহিবস্ত্র সমাদৃত হয়ে আসছিল।
জানা যায় যে-সেই সময়ে পুন্ড্র ও বঙ্গে চার ধরনের বস্ত্রের প্রচলন ছিল: ক্ষৌম, দুকুল, পত্রোর্ণ ও কার্পাসী। দুকুল নামের কাপড়ের বিবর্তনই মসলিন। এবং জামদানি নকশার প্রচলন ও মসলিনের বিকাশ পাশাপাশি শুরু হয়েছিল। অবশ্য আরও পরে। মুসলিম আমলে।
৩
চর্তুদশ শতকে ইবনে বতুতা সোনারগাঁয়ে সুতিবস্ত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তখন বাংলায় মুসলিম আমল। মুসলমানরা বাংলায় এসে অনেক কিছুই বদলে দিচ্ছিল। বদলে যাচ্ছিল বাঙালি জীবন যাপনের ধারা। অনিবার্যভাবেই পরিধেয় পোশাকেও সে দিন বদলের ছাপ পড়েছিল। বাঙালির ফতুয়া দীর্ঘায়িত হয়ে- হয়ে উঠছিল পাঞ্জাবি। শাড়ির পাশাপাশি উচ্চবিত্ত নারীরা পরছেন সালোয়ার-কামিজ।
যাক। জামদানি শাড়ির প্রকৃত অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছিল মধ্যযুগের মুসলিম আমলেই। জামদানি শাড়ি আসলে পারস্য ও মুগল -এই দুটি মিশ্র সংস্কৃতির ফসল। যার রসদ যুগিয়েছিল বাংলার উর্বর মাটি।
জামদানি বলতে এখন শাড়ি বোঝালেও সে সময়টায় অর্থাৎ মুসলিম আমলে জামদানি বলতে স্কার্ফ ও রুমালও বোঝাত। জামদানির ব্যবসা মুসলমানরাই করেছেন। দীর্ঘদিন-এবং একচেটিয়াভাবে।
৪
এখন তাহলে 'জামদানি' শব্দটির মানে বোঝার চেষ্টা করা যাক।
একটি সূত্রমতে- ফারসি 'জামা' শব্দের মানে কাপড়। আর, 'দানা' অর্থ বুটি। সব মিলিয়ে জামদানি মানে
বুটিদার কাপড়।
অবশ্য, আরেকটি মত অনুযায়ী-জামদানি শব্দটির উদ্ভব পারসিক শব্দ থেকে। জাম, মানে ফুল। আর দানি মানে ফুল রাখার পাত্র বা ফুলদানি।
৫
কোনওই সন্দেহ নেই যে-পূর্ববাংলায় জামদানি শাড়ির উৎকর্ষতা তুঙ্গে উঠেছিল মুগল আমলেই। মিহিন কাপড়ের ওপরের চমৎকার নকশাগুলি ছিল আসলে মুগল-পারসিক শিল্পরীতিরই প্রভাব। জামদানির উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছিল ঢাকা জেলার আশেপাশেই।
গবেষক ফোরবেস ওয়াটসন, ‘টেক্সটাইল মেনুফ্যাকচারাস্ অ্যান্ড কসটিউমস অভ দ্য পিপল অভ ইন্ডিয়া’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। সে বইয়ে ওয়াটসন লিখেছেন,‘নকশাদার মসলিন, জটিল ছাপচিত্রের কারণে, ঢাকার বস্ত্রপন্যের মধ্যে সবচে দামী ছিল।’ তখন ঢাকার জেলায় এমন কোনও গ্রাম ছিল না যে গ্রামে একটিও তাঁত ছিল না । গ্রামের তাঁতীরা ইউরোপ, ইরান, আর্মেনিয়া আর মুগল-পাঠান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসা করত । মুগল সম্রাট, বাংলার নবাবরা ও অন্যান্য অভিজাতরা এজেন্ট নিয়োগ করতেন এসব ঢাকাই মসলিন ও জামদানি পন্য কেনার জন্য। মুগল শাসনের সময় থেকেই ঢাকার মসলিনের স্বর্ণযুগ সূচিত হয়। তারপর থেকে দেশে-বিদেশে জামদানি ও মসলিনের চাহিদা বেড়ে যায়। এভাবে মসলিন ও জামদানি নির্মাতার উন্নতি হয়।’
ঢাকা সোনার গাঁও, ধামরাই, বাজিতপুর ছিল জামদানি ও মসলিন কাপড়ের জন্য বিখ্যাত।
কিন্তু, ঠিক কখন জামদানির ওপর আমরা এখন যে রকম দেখি সেরকম ফুল ফুল নকশা তোলার কাজ শুরু হল?
ঠিক জানা যায় না।
তবে, অনেকেরই অনুমান-বাদশা জাহাঙ্গীরের সময় থেকেই ফুলের মসলিনের প্রচলন আরম্ভ হয়েছিল। আমরা জানি, ১৬০৮ সালের পর থেকে বাদশা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুকাল অবধি ঢাকার নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর। জাহাঙ্গীরনগর তখন সুবা বাংলার রাজধানী। হ্যাঁ। তখন একটা বিরাট পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা ছিল।
৬
জামদানির রং ও বুনন ও নকশা অবশ্যই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে। যেমন, ১৯৬০এর দশকে নাকি লাল জামদানি জনপ্রিয় হয়েছিল। জামদানি নকশার প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে এর জ্যামিতিক অলঙ্করণ। নকশা কাগজে আঁকা হত না। দক্ষ কারিগর স্মৃতি থেকে নকশা আঁকেন...যাক। সে সব অবশ্য ইতিহাসের বিষয় নয়-কারিগরি দিক। সে সব দক্ষতা- নৈপুন্য নিয়ে আলাদা করে লিখব না-হয়।
দ্বিতীয় পর্ব
স্কুলের পড়ার দিনগুলির কথা ভাবি। মা তখনও বেঁচে এবং শোওয়া ঘরে পুরনো আলমারিটা খোলার সময় বিচ্ছিরি শব্দ হত। ছুটির দিনে মা আলমারি খুলে শাড়িগুলি বিছানার ওপর ছড়িয়ে দিত। আমি মোড়ার ওপর বসে। বোনেরা পা গুটিয়ে বিছানার ওপর। শাড়ির ওপর লোভী চোখ- কে কোন্ টা নেবে। বিয়ের আগেই আমার চারবোন একটি করে ট্রাঙ্ক তাদের বিছানার নিচে রেখেছিল। ট্রাঙ্কের ভিতরে অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে ছিল বে ক’টি শাড়ি। তার মধ্যে জামদানিও ছিল গোটা কয়েক।
ঘরে ন্যাপথলিনের গন্ধ। আমার চোখও রোদ ও শাড়ির ওপর। কত ধরনের শাড়ি- বেগনি জর্জেট, নীল রঙের কাতান, লালপেড়ে গরদ। অল্প বয়েসেই আমি অন্য শাড়ির সঙ্গে জামদানির পার্থক্য বুঝে গেছিলাম। জামদানির হাতে বোনা অপরুপ জ্যামিতিক নকশা তখনই আমার চোখ কেড়েছিল। তখনই বুঝে গেছিলাম যে-আলমারি ভরতি অন্য শাড়ি থাকলেও মেয়েরা জামদানিকেই বিশেষ এক ‘ট্রেজার’ মনে করে। আমার মা, বোনেরাও।
২
আমার মেজো বোন দেখতে শ্যামলা; চশমা পরা, কিছুটা গম্ভীর। ঢাকার একটা মেয়েদের কলেজে সাইকোলজি পড়ায়। তখনকার দিনে আমার মেজ বোন বেগনি রঙের একটা জামদানি পড়ত বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে কিংবা কোনও বিশেষ ফাংশানে। (আমরা তখন ফাংশান শব্দটি ব্যবহার করতাম।) আমি লেখক হয়ে উঠব বলেই সে সময় লক্ষ না করে পারিনি যে - বেগনি রঙের জামদানি শাড়ি পরা আমার মেজ বোনের মুখে কেমন এক গভীর তৃপ্তি, এবং অনেক অনেক গভীর সন্তুষ্টি।
৩
বছর সাতেক আগে শান্ত্বনার (আমার মেজ বোনের নাম) একটি মেয়ে হয়েছে। ফাইরুজ। ক্লাস টুয়ে পড়ে। ফাইরুজ কলেজে উঠলে ওকে আমি একটা জামদানি শাড়ি কিনে দেব। বেগনি রঙের। আমি এক সময় জামদানি শাড়িটির ইতিহাস মোটেও জানতাম না। এখন সামান্য জেনেছি। কাজেই আমি ফাইরুজকে আমি একটা বেগনি রঙের জামদানি শাড়ি কিনে দেব। তার কারণ আছে।
৪
আমার বোনেরা সালোয়ার- কামিজ ছাড়া কখনও শার্ট-প্যান্ট কখনও পরেনি; আমাদের মা লিবারেল ছিলেন-তার পরও আমার বোনেরা কখনও শার্ট-প্যান্ট পড়েনি। আমি জানি ফাইরুজরা পরবে। পড়ুক-তাতে ক্ষতি কি। সমাজের বিবর্তন হয়। মুসলমানরা বাংলায় আসার পর বাঙালির পরিধেয় পোশাকেরও পরিবর্তন হয়েছিল। বাঙালির ফতুয়া দীর্ঘায়িত হয়ে- হয়ে উঠছিল পাঞ্জাবি। শাড়ির পাশাপাশি উচ্চবিত্ত নারীরা পরছেন সালোয়ার-কামিজ। এখন তো শার্ট-প্যান্ট অনেকেই পড়ছে ।
৫
তখন বলছিলাম- ফাইরুজ কলেজে উঠলে ওকে আমি একটা জামদানি শাড়ি কিনে দেব। বেগনি রঙের। কেননা, আমি জামদানির ইতিহাস জেনেছি বলেই আমার কাছে জামদানি পারস্য, মুগল ও বাঙালি সংস্কৃতির মিলনের প্রতীক। মিলনই তো ভালোবাসা। নয় কি? এরকম নিবিড় মিশ্রন এককালে বাংলার সজল মাটিতে সম্ভবপর হয়েছিল ভেবে আমি কেমন অন্যমনস্ক হয়ে যাই। মানবসভ্যতার দুটি গুরুত্বপূর্ন সংস্কৃতিকে ধারন করে বাংলা নিজেকে এক অপরুপ সূক্ষ্ম সৌন্দর্যর কাছাকাছি নিয়ে গেছে। আমার কানে ভাসে: “ফুটি তুলো দিয়ে চমৎকার মসলিন তৈরি হত। ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে ফুটি তুলোর গাছ জন্মাত।”
এসমস্ত ভেবেই আমি কেমন যেন অভিভূত হয়ে যাই। সেই সঙ্গে আমার এও মনে হয় যে ফাইরুজরা হয়তো একসময় বিদেশে চলে যাবে। তা যাক। কিন্তু, তারপরও ফাইরুজের কাছে যেন ওর মায়ের সেই বেগনি রঙের শাড়িটি থাকে।
এবং, আমার দেওয়া শাড়িটিও যেন ওর কাছে থাকে ।
(এই লেখাটি আগেও একবার পোস্ট করেছিলাম। লেখাটির গুরুত্ব বিচেনা করে এডিট করে আবার পোষ্ট করলাম।)
উৎসর্গ: অপসরা
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৩