জন
প্রায়শ আমি ভাবি। ‘অভিমান’ শব্দটি কি অন্য ভাষায় রয়েছে। হিন্দি ভাষায় রয়েছে জানি। ছেলেবেলায় ‘অভিমান’ নামে একটি হিন্দি সিনেমা দেখেছি। ভাষাতাত্ত্বিগন বলেন যে- বাংলা আর হিন্দি সম্পর্কের দিক থেকে মামাতো-খালাতো ভাই। (নাকি বোন?) যা হোক। আমার কেন যেন মনে হয় ‘অভিমান’ শব্দটি খুব বেশি ভাষায় নেই। কেননা, এ এক গহীন আবেগীয় বিষয়। আর, জগতে আবেগ-অভিমানে কি মূল্য? সেসব কথা মনে রেখেই একদিন আমি লিখলাম-
স্বগত লগ্নে জমাট স্তব্দতা
(তা হলে) ঘুম পেলে ক্ষতি কি?
তোমার চোখে গভীর বিশ্বাস
হারালে ক্ষতি কি?
কেবলি অভিমানের রাত
তবে কেন প্রতীক্ষা?
ক্ষয়া চোখে ভুলের বিন্যাস
নিভু স্বপ্নের বাতিটা।
আমাকে তুমি জাগিয়ে একা কেন ঘুমালে?
আমাকে এড়িয়ে তোমার আকাশে কবে ফুল ঝরেছে বল।
তোমার চারুগৃহ কেন যে খুলে যায়?
দেওয়ালে মাথা কোটে ধূসর আঁধার
দুচোখ অন্ধের উপড়ে ফেল তুমি
মাতাল ভাঁড় হোক সঙ্গী তার।
আমাকে তুমি জাগিয়ে একা কেন ঘুমালে
আমাকে এড়িয়ে তোমার আকাশে কবে ফুল ঝরেছে।
জন
সময়টা সেই ২০০০ সালের মাঝামাঝি। অনেক রাতে জন এল । আজও আমার মনে আছে- রাতটা ছিল চানরাত (ঈদের আগের রাত) ছিল। প্রায় ১টার মতন বাজে। ঢাকা শহরে চানরাতে রাত ১টা কিছুই না। জন নতুন কম্পোজিশনটা বাজিয়ে শোনাল গিটারে। বরাবরই মতো আমি মুগ্ধ। এবার অবশ্য মেলোডির পরিমান দেখেখানিকটা বিস্মিতও। এখন কম্পোজিশনটা ওপর আমাকে লিরিক লিখতে হবে। ভাবলাম কী লিখব? কম্পোজিশনটা ধাঁচটা বুঝতে হয় আমাকেই ...মনে হল অভিমানী ... তখনই মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দিল। ‘অভিমান’ শব্দটি কি অন্য ভাষায় রয়েছে। হিন্দি ভাষায় রয়েছে জানি। ছেলেবেলায় ‘অভিমান’ নামে একটি হিন্দি সিনেমা দেখেছি। ভাষাতাত্ত্বিগন বলেন যে- বাংলা আর হিন্দি সম্পর্কের দিক থেকে মামাতো-খালাতো ভাই। (নাকি বোন?) যা হোক। আমার কেন যেন মনে হয় ‘অভিমান’ শব্দটি খুব বেশি ভাষায় নেই। কেননা, এ এক গহীন আবেগীয় বিষয়। আর, জগতে আবেগ-অভিমানে কি মূল্য? সেসব কথা মনে রেখেই নিউজ প্রিন্টের খাতায় বল পয়েন্টে লিখলাম -
স্বগত লগ্নে জমাট স্তব্দতা
(তা হলে) ঘুম পেলে ক্ষতি কি? (সুর করার সময় এই তা হলে বাদ পড়েছিল )
তোমার চোখে গভীর বিশ্বাস
হারালে ক্ষতি কি?
কেবলি অভিমানের রাত
তবে কেন প্রতীক্ষা?
ক্ষয়া চোখে ভুলের বিন্যাস
নিভু স্বপ্নের বাতিটা। (এই লাইনটা জন-এর)
জন কথাগুলি সুরে বসাতে লাগল । আমি সিগারেট ধরিয়ে সোফায় হেলান দিয়েছি। ঘরে টিউব লাইট জ্বলে ছিল। একটু আগে যা লিখলাম -তা সুরে সুরে শুনছি। এসব মুহূর্তে আমার নিজেকে বিশাল কিছু মনে হয়। মনে হয় যেন আমি প্রশান্ত মহাসাগরের মালিক।
আমি বাথরুমে যাব। উঠে দাঁড়ালাম। জন মুখ তুলে বলল-কোরাস তো লিখলেন না?
ও, কোরাস ...? বলে আমি ঝুঁকে এই কথাগুলো লিখলাম-
আমাকে তুমি জাগিয়ে একা কেন ঘুমালে?
আমাকে এড়িয়ে তোমার আকাশে কবে ফুল ঝরেছে বল।
পরে এ দুটো লাইন ব্যাপক ‘হিট’ হয়েছিল। এমন কী মেয়েরাও আমার তৎকালীন মটোরোলায় (এল সিক্স) ফোন করত। আমি বলতাম: এই মেয়ে, আমি তোমার আঙ্কেলের বয়েসি না?।
ও প্রান্তে কী হাসি। মেয়েরা হাসতে খুব পছন্দ করে।
ব্ল্যাক।
বাথরুম থেকে ফিরে এলাম। এবার অভিমানের শেষ প্যারা লিখতে হবে। কোরাস তো লিখে ছিয়েছি। শেষ প্যারায় আটকে গিয়েছিলাম। মাঝেমাঝে এমন হয়। আমি তো পেশাদাশ গান লিখিয়ে তো নই- তাই। কি করি? কি করি? জন অপেক্ষা করছে। সেসব দিনে আমি ছিলাম বেকার আর বেকারার-খুব কবিতা লিখতাম। ডায়েরিতে মন্দাক্রান্তা ছন্দে একটা কবিতা লিখেছিলাম।
তোমার চারুগৃহ কেন যে খুলে যায় দেয়ালে মাথা কোটে অন্ধকার
দুচোখ অন্ধের উপড়ে তুলে ফেল মাতাল ভাঁড় হোক সঙ্গী তার।
অগত্যা ডায়েরি বার করে সে দুটো লাইনই দিলাম। জন সুরের কারণে ঈষৎ বদলে নিল-
তোমার চারুগৃহ কেন যে খুলে যায়?
দেওয়ালে মাথা কোটে ধূসর আঁধার
দুচোখ অন্ধের উপড়ে ফেল তুমি
মাতাল ভাঁড় হোক সঙ্গী তার।
অভিমান গানটির জন্য আমি আমার একটি প্রিয় কবিতা জলাঞ্জলি দিয়েছি। তাতে আমার বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই। এই কথাটা বলার কারণ আছে। অভিমান গানটা যখন আমি আর জন করছি ... তখনও আমারা কেউই জানতাম না যে- ব্ল্যাক নামে যে ব্যান্ডটি গড়ে উঠছে তার ওপর একদিন বি বি এ-র ছাত্ররা থিসিস করবে। থিসিসটি পাঠ করার জন্য ক্লিক করুন।
http://www.mediafire.com/?inymxmmznnz
আমি লিরিক লিখে দিলে জন আর জাহান কম্পোজিশনটা নিয়ে বসে। ডানে জাহান। অভিমান গানে জাহান এর বাজানো লিডটা আমি এদেশের মিউজিক্যাল এরিনায় মাইলস্টোন বিবেচনা করি। আমি সব সময়ই বলতাম এলোমেলো লিড বাজালেই হবে না -লিড-এর যেন অর্থ থাকে-কম্পোজিশনের সঙ্গে যেন সঙ্গতি থাকে। এ প্রসঙ্গে তাহাসানের কথাও উঠে আসে। অভিমান-শব্দটিকে কি ভাবে মিউজিক্যালি প্রকাশ করা যায়? তাহাসান কিবোর্ডে তাই দেখিয়েছে। শুরুর সুরটা তো ওরই বাজানো।
অডিও
Click This Link