সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; পরিচালক, বাংলাদেশ এন্ভাইঅরনমেন্টাল ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বেলা -দীর্ঘদিন ধরে শ্রমজীবি মানুষের কল্যাণে অসম সাহসী এক যুদ্ধ করে এ বছর (২০০৯) ছিনিয়ে নিলেন সম্মানজনক গোল্ডম্যান এন্ভাইঅরনমেন্টাল প্রাইজ। বিশ্বের পরিবেশবাদীরা এখন এই সাহসী নারীকে দেখছেন অত্যন্ত সম্ভ্রমের চোখে ...
বিশ্বের ধনিক দেশের লোকেরা নাকি বুড়ো ঘোড়াকে গুলি করে মেরে ফেলে; অথচ, মুনাফার লোভে তাদের বিশাক্ত অকেজো জাহাজগুলি ভেঙ্গে ফেলার জন্য বাংলাদেশের মতন গরীব দেশে পাঠিয়ে দেয়! গরীব দেশেগুলোয় সস্তা শ্রমের ওপর গড়ে ওঠে তথাকথিত শিপ ব্রেকিং ইন্ড্রাষ্টি- যে জাহাজর ভাঙ্গার শিল্পে নিয়োজিত শ্রমজীবি মানুষ বিষময় পরিবেশে দুই-এক বছর কাজ করেই ক্যান্সার কি চর্মরোগে আক্রান্ত হয়। তারপর তাদের হাত পা ক্ষয়ে যেতে থাকে; কয়েক বছর জাহাজ ভাঙ্গার কাজ করলে তারা এমনই অর্থব হয়ে পড়ে যে তারা আর অন্য কাজ করতে পারে না!
কেন তা হলে জাহাজ ভাঙ্গা বন্ধ হচ্ছে না?
তথাকথিত শিপ ব্রেকিং ইন্ড্রাষ্টির মালিকপক্ষ দাবি করে বাংলাদেশের ৮০% লোহানাকি তারাই জোগায়। পরে, এ ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখা গেল এই পরিমান শতকরা ২৫ ভাগের বেশি নয়। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিশ্বে ১৪টি দেশ প্রাকৃতিকভাবে লোহার স্বাভাবিক যোগান আছে। আর, মাত্র পাঁচটি দেশে শিপ ব্রেকিং হয়। অন্যরা তা হলে কী ভাবে লোহা পায়? শ্রীলঙ্কা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ থেকে বেশি দামে লোহা কেনে না।
অন্য আরেকটি কারণে শিপ ব্রেকিং এর মতন অমানবিক শিল্পটি বন্ধ করা যাচ্ছে না। তা হলো-জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প প্রায় কুড়ি (২০) হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান করেছে। এ প্রসঙ্গে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যখনই শিপ ব্রেকিং ইন্ড্রাষ্টির মালিকপক্ষর কাছে শ্রমিকদের তালিকা চেয়েছি-তারা যথাযথ তালিকা দিতে পারেনি। আর, মৃত্যুর ঝুঁকিপূর্ন এমন কাজের বদলে বেকারত্ব ভালো।
তাঁর যুদ্ধ
২০০৩ সালে বেলার চট্টগ্রাম অফিস স্থাপন করার পরপরই সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হন। তারপর এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেন। তখন একবার বিস্ফোরণ হয়ে অনেক শ্রমিক মারা যায়। তিনি আরও জানতে পারেন: এক সময় ধনিক দেশগুলি নিজেরাই জাহাজ ভাঙ্গত-পরে এর ক্ষতিকর দিকটা বুঝতে পেরে বন্ধ করে দেয়। আজও পাঁচটি দেশে চলছে জাহাজ ভাঙ্গার কাজ: ভারত পাকিস্থান বাংলাদেশ তুরস্ক ও চিন। ধনিক দেশগুলি অকেজো জাহাজ তথা টক্সিক বর্জ্য বাংলাদেশে পাঠায়। তারা কখনও বলে- আমরা তো ৮০% টক্সিস ক্লিন করে দিয়েছি। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রশ্ন-বাকি ২০% টক্সিক পরিস্কার করার মত টাকা তো বাংলাদেশ সরকার দেয় না। তা হলে? কাজেই পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে ব্যাপক। শ্রমিকরাও মরছে ধুঁকে ধুঁকে ক্যান্সার ও চর্মরোগে।
শুরু হল সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সংগ্রাম।
না, কোটি কোটি টাকার মুনাফা জড়িত বলে জাহাজ ভাঙ্গা বন্ধ করতে পারেন নি তিনি -তবে জনগনকে সচেতন করেছেন। এ কারণেই দেড় লক্ষ ডলারের সমমূল্যের সম্মানজনক গোল্ডম্যান এন্ভাইঅরনমেন্টাল প্রাইজটি লাভ করেছেন । পুরস্কারটি গত ২০ বছর ধরে দেওয়া হচেছ। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি নারী যিনি এ পুরস্কার লাভ করলেন।
আপনাকে অভিনন্দন: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দেখুন এই পরিবেশ-সচেতন বাঙালি নারীর যুদ্ধ
সূত্র:
http://www.goldmanprize.org/2009/asia
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৮:৫২