আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী। এই দিনটি গত কয়েক বছর যাবত খুবই ধুমধামে কাটে বাংলাদেশে। বিশেষ করে শহুরে তরুন তরুণীরা উচ্ছাসে মেতে উঠেন! ফুলের ব্যবসায়ী যেন চাঁদ রাতে বিক্রির ব্যস্ততায় কাটান এই দিন | এই দিবস যিনি সপ্তাহিক যায়যায় দিন পত্রিকার বদৌলতে বাংলাদেশে আমদানি করেছিলেন তিনি এখন নির্বাসিত। তাঁর এই ভালবাসার দিনে ১৩ হাজার মাইল দূরে বৃটেনে অবস্থান করছেন।
তবে, দেশের ইতিহাসে একট কলঙ্কিত দিন এটি। ভালবাসার উচ্ছাসে মেতে থাকা তরুণ তরুণীদের ক’জনই বা জানেন সেই দিনের ঘটনা! ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারীতে একটু ফিরে যেতে চাই। কি ঘটেছিল সেদিন?
১৯৮২ সালের মার্চ মাসে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে অপসারিত করে তৎকালীন সেনা প্রধান এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। শুরু হয় সামরিক স্বৈরতন্ত্র। এই সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম জেগে উঠেছিলেন ছাত্র সমাজ। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ডাকা হয়েছিল সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি। এরশাদের প্রণীত শিক্ষানীতির প্রতিবাদ ও গণতন্ত্রের দাবীতে এই কর্মসূচির দিনে ঢাকায় ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়েছিল বেপরোয়া পুলিশ।
১৪ ফেব্রুয়ারীর কর্মসূচি উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী সমবেত হয়। পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘেরাও করে রাখে। সামরিক রসকারের ভয় ভীতি উপেক্ষা করে ছাত্র ছাত্রীদের মিছিল ষ্মারকলিপি দিতে সচিবালয়ের দিকে এগিয়ে যায়। এর সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে জাহাঙ্গরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইকোর্ট এলাকায় পৌছামাত্রই হিংস্ত্র পুলিশ হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে। টিয়ারশ্যাল, জলকামান রাবার বুলেট ও গুলি ছোড়া হয় মিছিলে। লাঠি চার্জ তো আছেই। ছাত্ররা এদিক সেদিন ছোটাছুটি করে আশ্রয়ের সন্ধানে। শিশু একাডেমিতে শিশুদের একটি অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ওই অনুষ্ঠানেও হামলা চালায়।
সেদিন পুলিশের গুলিতে জাফর, জয়নাল, দীপালী সাহা, আইয়ুব, ফারুক, কাঞ্চন সহ অনেককে হত্যা করে। দশ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়, কিন্তু সরকারি প্রেসনোটে শুধু ১ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়। আহত হয়েছে অগুণতি, গ্রেফতারও হয়েছে অসংখ্য। সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ও ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করে।
এই সময় লাশ গুম করা হয়েছে বলে ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশে লাশ গুম নতুন ঘটনা নয়, পার্থক্য হচ্ছে সামরিক সরকারের চেয়ে বেসামরিক সরকার এই ক্ষেত্রে অনেক পারঙ্গম।
স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এই দিনটি মাইলফলক হয়ে আছে। মহান ভাষা আন্দোলনের মাসে অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এই দিনটি যোগ করে আরেকটি ইতিহাস। সুতরাং ১৪ ফেব্রুয়ারীকে পশ্চিমাদের নিকট থেকে ধারকরা ভালবাসা দিবস নয়, মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রামের দিন হিসাবে ক’জন ষ্মরণ করেন!
এই লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস গুলো যারা ষ্মরণ করিয়ে দেওয়ার কথা তারাই বা কি সঠিক দায়িত্ব পালন করছেন!
আসুন আমরা ১৪ ফেব্রুয়ারী নিহত হওয়া সংগ্রামীদের শ্রদ্ধার সাথে ষ্মরণ করি। ইতিহাস থেকে প্রেরণা নিয়ে আমাদের লুট হওয়া অধিকার ফিরিয়ে আনার শপথ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২২