২০১১ সালে এইচ এস সি পাশ করার পর অনেক আশায় ছিলাম যে সরকারি মেডিকেলে ভর্তি হবো।কিন্তু ডাক্তার হবার যে স্বপ্ন ছোটবেলা থেকে দেখছিলাম... সেটা দুলিস্যাত হয়ে গিয়েছিলো মাত্র এক ঘন্টার ভর্তি পরীক্ষায় ।এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম দেশের বাইরে পড়ালেখা করব।ইন্টারনেটে অনেক খুঁজাখুঁজির পর জানলাম যে চীনে কম খরচে সরকারি মেডিকেলে MBBS পড়া যায়।তাই এইখানে চলে আসা।যারা চীনে পড়তে চান তাদের জন্য কিছু পরামর্শ লিখলাম।আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে।
চীনে পড়ালেখা করতে হলে যেসব বিষয় আপনার জানা দরকারঃ
১)চীনে MBBS, CIVIL ENGINEERING,EEE,HYDROELECTRIC ENGINEERING,BBA ,AERONAUTICAL ENGINEERING ইত্যাদি বিষয়ে পড়া যায়। MBBS এ পড়া কিছুটা costly হলেও CIVIL ENGINEERING,EEE,HYDROELECTRIC ENGINEERING,BBA ,AERONAUTICAL ENGINEERING এ স্কলারশিপ পাওয়া যায়।তবে প্রতিবছর final exam এ ভালো করলে MBBS এ স্কলারশিপ দেয়।
২)চীন এ পড়তে হলে ......যে কোন সালে ssc এবং hsc পাশ করলেই হবে।তবে পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা ও আবেদন করতে পারবে।
৩)প্রথমে ssc এবং hsc এর মার্কসিট,সার্টিফিকেট,পাসপোর্ট ভার্সিটিতে জমা দিয়ে অফার লেটার এর জন্য আবেদন করতে হবে।
৪)চীনের ভার্সিটি গুলার ওয়েবসাইট চাইনিজ ভাষায় হওয়াতে নিজে নিজে আবেদন করা কষ্টসাধ্য।এক্ষেত্রে বিভিন্ন এজেন্সীর সাহায্য নিতে পারেন।তবে প্রতারক থেকে সাবধান।
৫)কাগজপত্র গুলা পাওয়ার ৩ সপ্তাহের মধ্যে JW-202 পাবেন।এই কাগজটা নিয়ে পরবর্তীতে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসার জন্য ঢাকার গুলশানে অবস্থিত চায়না দুতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে।
৬)ভিসার পাওয়ার জন্য আর একটি কাগজের দরকার হয় Health certificate .।ঢাকার United Hospital থেকে মেডিকেল Checkup করিয়ে উক্ত সার্টিফিকেট টি নিতে হয়।
৭)ভিসার জন্য আবেদন করার ২ দিনের মধ্যেই ভিসা পাওয়া যায়।তবে অনেকে প্রথমবার ভিসা পায় না। এক্ষেত্রে ২য় বা ৩য় বার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
৮)ভিসা পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব চলে আসায় ভালো।কারন ভিসার মেয়াদ থেকে ১ মাস। চীনে আসার পর আবার ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হয়।
৯)এবার আসি ভার্সিটির মান প্রসঙ্গে।চীন কোন প্রাইভেট ভার্সিটি নাই,সবগুলো সরকারি।আছে প্রায় ১১০০ মেডিকেল কলেজ।তবে সবগুলে বিদেশি ছাত্র পড়তে পারে না।BMDC চীন এর সবগুলা মেডিকেল এ বাংলাদেশী ছাত্র পড়ার অনুমতি দেয় না। যেসব ভার্সিটির মান ভালো শুধুমাত্র সেইসব ভার্সিটিকে ‘BMDC’permission দেয়।তাই চীন এ আসার আগে অবশ্যই BMDC থেকে একটা সার্টিফিকেট আনতে হয়।
১০)এখানকার এক এক ভার্সিটির টিউশন ফি এক এক রকম।MBBS এর জন্য টিউশন ফি ঃ১৪০০০ RMB-৭৫০০০ RMB per year...(১ RMB=১৩ টাকা)। আমার ভার্সিটির টিউশন ফি ২৪০০০ RMB per year.
১১)আর আবহাওয়া ও এক এক শহরে এক এক রকম।
১২) ভার্সিটি পছন্দ করার আগে দেখে নিনঃভার্সিটি যে province এ অবস্থিত সেখানকার গড় তাপমাত্রা কত।ওই ভার্সিটির world wide rank কত।ওই ভার্সিটিতে বাংলাদেশী ছাত্র ততা বিদেশী ছাত্র আছে কি না।
১৩)অনেকে বিদেশে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করতে চান।কিন্তু চীন সব ভার্সিটিতে এই সুযোগ পাওয়া যায় না।তাই আগেভাগে খোজ খবর নেন।আর যারা MBBS এ পড়তে চান তারা জব এর আশা না করলে ও চলবে।কারন সারাদিন ক্লাস আর ল্যাবে এ কাটাতে হবে। এইখানকার ভার্সিটি গুলা Theory ক্লাস এর চেয়ে practical ক্লাসে অনেক বেশী মনোযুগী।
১৪)বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিকেলে এককালীন সব টাকা পরিশোধ করতে হয়।কিন্তু এইখানে তা করতে হয় না।প্রত্যেক বছর টিউশন ফি হিসাবে pay করতে হয়।
১৫)বিদেশে পড়ালেখা করতে আসার আগে রান্নাবান্নায় হাতেখড়ি করেন।নাইলে না খেয়ে থাকতে হবে।কারন প্রথমে এসেই চাইনিজ খাবার খাওয়া অসাধ্য ব্যাপার। তবে অনেক ভার্সিটিতে বাঙ্গালী অথবা পাকিস্তানি কান্টিন থাকে(আমাদের ভার্সিটিতে ২ টায় আছে) ।
১৬)এইখানে আসলে চাইনিজ ভাষা শিখাটা বাধ্যতা মুলক।তবে ভয়ের কিছু নেই,সুন্দরী ম্যাডামরা অনেক যত্ন সহকারে চাইনিজ শিখাবে।
১৭)পরিশেষে একটা কথা বলি......এখন ইন্টারনেট এর যুগ।তাই প্রতারিত হওয়ার সুযোগ অনেক কম।যে ভার্সিটি তে আসতে চান সেটা সম্পর্কে Google এ দু-চারটা ক্লিক করেন।অনেক কিছুই জানতে পারবেন।সত্য মিথ্যা যাচায় করুন।প্রতারিত হবেন না।উচ্চশিক্ষা নামের সোনার হরিণের পিছনে দৌড়িয়ে সময় নষ্ট না করে এখনি সিদ্ধান্ত নিন।
সবাই ভালো থাকবেন।আসুন সবাই মিলে একটি শিক্ষিত,সুন্দর সোনার বাংলা গড়ে তুলি।ধন্যবাদ সবাইকে।
বেলাল তামজীদ
China Three Gorges University
Yichang,Hubei,China