শনি/রবি বার আমি প্রায় আমার ছানাপোনা নিয়ে এদিক সেদিক বের হয়। নির্দিষ্ট কোথাও প্রোগ্রাম না থাকলে সাধারনত বড় কোন সুপার মলের ফুড কোর্টে আইসক্রিম, ড্রিংস বা বা কোন খাবার কিনে বসে খাই আর চারপাশের সব কিছু দেখি। পাশের টেবিলে বসা ৪/৫ বছরের বাচ্চাটাকে দেখলাম অনেক্ষন ধরেই মায়ের সাথে একটা টয় কেনার জন্য ঘ্যান ঘ্যান করছে। মা বার বার বলছে একই খেলনা ক'দিন আগেও কিনলাম আবার কেন? এভাবে দুই পক্ষের দর কষাকষির এক পর্যায়ে দেখলাম বাচ্চাটি সপাৎ করে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো। এবং শুধু শুয়ে পড়াই নয় রীতিমত ফুড কোর্টের এ মাথা ও মাথা গড়াগড়ি যেতে লাগলো। আমি আর আমার মেয়ে হাসতে হাসতে শেষ। দেখলাম বাবা মা নির্বিকার, পাত্তাই দিচ্ছে না ছেলের এ কান্ডকে। নিজের মতো করে খেয়েই যাচ্ছে। ওদিকে ছেলেতো চিৎকারের সহিত ফুড কোর্টের ফ্লোরে যাবতীয় ময়লা পরিস্কারের দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা সবাই এমনভাবে তাকালাম যে বাবা মা বাধ্য হয়ে ওরে ফ্লোর থেকে উঠালো।




আমার ছেলে ছোটবেলায় ঠিক এমন করতো। কিছু চাইলে সেটা না পেলে সাথে সাথে সেখানে পড়ে যেত। মনে হতো যেন অজ্ঞান হয়ে গেছে। কোনভাবেই তাকে সেখান থেকে উঠানো যেত না। যতক্ষন পর্যন্ত তাকে তা কিনে না দেয়া হতো তাকে বাসায় নেয়াই মুসকিল হতো।



আরেকবার বোনের ৪ বছরের মেয়েকে নিয়ে গেছিলাম মার্কেটে পাশের বাসার বাচ্চার জন্মদিন এর গিফ্ট কেনার জন্য। ড্রেস দেখছিলাম কেনার জন্য। আমার বোনের পুঁচকা হঠাৎ একটা চকরা বকরা ঝকমকে ড্রেস দেখে সেটা কেনার জন্য বায়না ধরলো। বল্লাম, এমন অদ্ভুত ড্রেস আমি মরলে কিনে দিবো না। সাথে সাথে আমার বোনের পুঁচকা গায়ের সব জামা কাপড় খুলে পুরোপুরি ন্যাংটো হয়ে গেল মূহুর্তেই। আমি হতভম্বের উপর যদি কিছু থাকে তাই হয়ে গেলাম। লজ্জায় মরার সুযোগ পেলাম না তার আগেই ড্রেসটা কিনে কোনরকমে বাসায় দৈাড়ালাম।



আমার ছেলে ফ্লোরে স্লিপ করার খেলা খুব খেলতো। কিভাবে যেন সে জানতে পারলো তেল খুব স্লিপারি। তাই একবার সে ৫ লিটারের দুই ক্যান তেল ফ্লোরে ঢেলে তারপর তাতে স্লিপ খেলতে যেয়ে দেখে আর উঠতে পারছে না। অনেক চেস্টার পর যখন আর উঠতে পারেনি তখন আমাকে ডাক দিলো সাহায্যের জন্য। ফ্লোরের সে তেল আর তার গায়ের সে তেল তুলতে আমার এবং আমার সকল এ্যাসিসটেন্টদের জান মোটামুটি শিক কাবার।






আমার বোনের যখন দ্বিতীয় বেবি পেটে তখন ছেলেকে সবাই মিলে খুব কাউন্সিলিং দিচ্ছিল। ও ছিল অসম্ভব দুষ্ট, এক মিনিটের জন্যও কেউই শান্তিতে থাকতে পারতো না ওর জ্বালায়। আমরা বোঝাতে লাগলাম তোমার বোন আসলে এই হবে ওই হবে খুব মজা হবে ব্লা ব্লা ব্লা। অনেকক্ষন সবার বক্তৃতা শোনার পর সে উঠে যেয়ে ঘরের যাবতীয় তালার চাবি জমা করতে লাগলো। আমরা অবাক হয়ে জানতে চাইলাম সব চাবি দিয়ে কি করবে। সে খুব অবজ্ঞা ভরে বললো বোনকে প্রথমে আলমারিতে ঢুকায়ে লক করবো, তারপর সে আলমারি স্টোরে রুমে ঢুকাবো তারপর সব তালা সেখানে দিবো। যাতে সে বের হতে না পারে। কারন আজকাল বাচ্চারা এতো দুস্ট হয় তার উপর আমার সব খেলনায় হাত দিবে...........।




আমার মেয়ের সময় ছেলেকে যখন কাউন্সিলিং দিচ্ছিলাম যে তোমার বোন যখন আসবে তখন খুব মজা করে দু'জন খেলবা। তখন সে অবাক হয়ে বললো ও এখন কোথায়? আমি বল্লাম ও এখন আমার পেটে। ও সাথে সাথে কান্না জুড়ে দিল, মা তুমি ওকে কেন খেয়ে ফেলেছো,........... ভ্যা ভ্যা ভ্যা....... এক্ষুনি বের করো, এক্ষুনি।




ছোটবেলায় গাংচিল ছবির স্যুটিং এর সেট করা হয়েছিল চিটাগাং এর ফিস হার্বারে। বাবা তখন ফিস হার্বারের দায়িত্বে ছিলেন। নায়ক প্রয়াত বুলবুল আহমেদ ও অন্জনা ছিল নায়ক নায়িকা। তাদের অনারে মা টি পার্টি দিয়েছিল। সে উপলক্ষে আমরা ভাই বোনরা ক'দিন থেকেই খুব এ্যাক্সাইটেড ছিলাম তাদেরকে দেখার জন্য। আমার ৩ বছরের ভাই অবাক হয়ে জানতে চাইলো কে আসছে। তাকে বোঝালাম নায়ক আসছেতো তাই এতো খুশি আমরা। যথারীতি তারা আসার পর প্রথমেই অামার ভাই জানতে চাইলো নায়ক কোথায়। মা বুলবুল আহমেদকে দেখিয়ে বললো এই যে নায়ক। শুনে বুলবুল আহমেদ তাকে কোলে নিয়ে বললো তুমি নায়ক দেখতে চাও? এই যে আমিই নায়ক। আমার ভাই খুব বিরক্ত হয়ে বললো, তুমিতো মানুষ তুমি কেন নায়ক হবে? এ্ই বলে সে কান্না জুড়ে দিল আমি নায়ক দেখবো....।




আমার ছয় বছরের ছোট ভাইকে নিয়ে কাহিনীর শেষ নেই। সে এখন দুই রাজকন্যার পিতা এবং বুয়েট শেষে পিএইচডি করার পর জার্মানীতে ইর্ন্টান্যাশানাল জবে আছে। বলতে গেলে তার সেসব কাহিনী নিয়ে একটা বই লিখা যাবে। লিখাটা শুরু করেছিলাম তাকে এসব জানানোর উদ্দেশ্যে। আর আমি ছিলাম তার সব কাজের সাহায্যকারী।
এরকম আমার হাজার কাহিনী আছে আমার জীবনে এ দস্যু বাহিনী নিয়ে। শুধু ভাই ই নয় আত্মীয় অনাত্বীয় বাহিনীর কাহিনীতে জীবন পরিপূর্ণ............ আবার আসবো কোন এক সময় আমার বাহিনীর বাকি কাহিনী নিয়ে। কারন ভয়ংকর এ বাচ্চাদের সাথে আমার সম্পর্ক সবসময়ই খুব ভালো।
পারিবারিক ছবি আমি পাবলিকলি শেয়ার করতে পছন্দ করিনা। তারপর ভাইয়ের কিছু ছবি শেয়ার না করে পারলাম না (দু:খিত, লিখার সাথে পারিবারিক ছবি যোগ করার জন্য)।
প্রথম জন্মদিনে বাবার কোলে ভাই।
আমার খুব প্রিয় একটা ছবি ভাইয়ের। ১০ কেজি ফোন হাতে ফোন করার চেস্টায়!!!!!!!
মামা প্রথমবার দেশের বাইরে থেকে এ ড্রেসটা এনেছিল ওর জন্য। ড্রেসটাতে একটা বাশিঁ ছিল। সে যখন এটা পড়ে বাইরে যেত তখন বাশিঁ বাজিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোলের চেস্টা করতো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৮