প্রিয় লেখক খায়রুল আহসান ভাই এর গল্পঃ বোবার কান্না পড়ার পর মনে হলো হায়রে আজ যদি ছেলেটি এদেশ জন্মাতো তাহলে সে অনেক কিছুই হয়তো করতে পারতো। তাই প্রিয় খায়রুল আহসান এর গল্পটি পড়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমি জানি, অনেকের মনেই দোলা দিবে যে যেখানে সুস্থ্য মানুষের কোন ব্যবস্থা দেশে নেই সেখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করা হয়তো বাড়াবাড়ি। কিন্তু একটু যদি ভাবি স্টিফেন হকিংস এর কথা, হয়তো এরকম কাউকে আমরা পেয়েও যেতে পারি। বা এ অসার হাতকে খুব সহজেই কর্মীর হাত তৈরী করতে পারি শুধুমাত্র একটু চেস্টায়, তাই নয় কি??? শুধু দরকার সবার একটু সহযোগীতা, একটু সহমর্মীতা।
যাই হোক ভাই ও বোনেরা আমরা দেশের প্রতিবন্ধীদের নিয়া ভাবার টাইম নাই তাইতো কোটা আন্দোলনের সুপারিশ নাকি প্রতিবন্ধী কোটার কাটছাট !!!!! আমরাই মনে হয় মধ্যম উন্নত দেশের তালিকায় থাকা একটি দেশ যে খুব একটা প্রতিবন্ধীদের নিয়া ভাবি না। বিশ্বের মনে হয় সব সভ্য দেশেই প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে। শুধু চাকরীতেই নয় বাসে রেলে রাস্তায় খেলায় সবখানেই আছে। এমন কি তারা যাতে নির্বিগ্নে চলাফেরা করতে পারে তাই হুইল চেয়ার মুভ করার জন্য সেখানেই স্মুথ রাস্তা তৈরী করা হয়, বাসে উঠার জন্য এক্সট্রা সিঁড়ির ব্যবস্থা ও থাকে। স্কুল কলেজ ভার্সিটি সরকারী সেবা সব স্থানেই কোটা আছে এবং আছে তাদের উপযোগী চলাচলের ব্যবস্থা, অনেকটা নীচের ছবির মতো।
-
-
-
যা বলছিলাম নিজের অভিজ্ঞতা........ আমার ভার্সিটিতে প্রচুর স্টুডেন্ট থাকায় একটি সাবজেক্টে ২/৩ জন টিচার পড়ায়। তাই আমরা সাধারনত: কে ভালো পড়ায় ও ভালো মার্কিং করে তা জেনে রেজিস্টার করি। এই সেমিস্টারে তাই বন্ধু-বান্ধব সর্কেলকে কল দিতেই সবাই এক বাক্যে বললো ওসমন্ড এর ক্লাস নাও। এই বিষয়ে যেমন ভালো পড়ায় তেমনি মার্কিং ও ভালো। যাহোক, প্রথম ক্লাসে একটু দেরী হয়ে গেল ঢুকতে। দৈাড়াতে দৈাড়াতে ঢুকেই অনুমতি চাইলাম। কর্নার থেকে ওসমন্ড এক গাল হেসে উঠে বললো, ইয়ং লেডি, আমার ক্লাসে ঢুকার বা বের হবার কোন রেস্ট্রিকশান নেই। যার যখন খুশি ঢুকবে, যখন খুশি বের হবে তবে সাইলেন্টলি, অন্যকে ডিস্টার্ব করে নয়। কারন তোমরা সবাই এডাল্ট, ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা তোমাদের আছে। আর আমার লেকচার যে তোমার ভালো লাগবেই তা ও ঠিক না, তাই তোমার মুক্তি দরকার সে সময়টার জন্য.......। এই বলে হাহাহাহা করে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো।
যাই হোক ক্লাসে ঢুকে তাকালাম ওসমন্ড এর দিকে, একটু থতমত খেলাম। হুইল চেয়ারে বসা ওসমন্ড নিজে চলাফেরা করতে পারে না, শরীর অনেক ভারী কিন্তু ভারী চশমার ফাকেঁ বুদ্ধিদীপ্ত দুটি চোখ। খুব আমুদে সে, সারাক্ষনই হাসি লেগে থাকে মুখে। আর পড়ানোর স্টাইল এক কথায় অসাধারন, ক্লাস কখন শুরু হয় বা কখন শেষ হয় তাই বুঝতে পারি না এতোটাই মনোযোগী থাকি।
সে তার জীবন কাহিনী বলতে খুব পছন্দ করে। সময় পেলেই শুরু করে এটা সেটা, স্কুলের কথা প্রতিবেশীর কথা, বউ বাচ্চাতো কমন বিষয়। মাঝে মাঝে রিডল দেয় সল্ভ করার জন্য যা আমাদের জন্য আইসব্রেক পড়ার ফাঁকে। এক সময় নিজের জীবনের শুরুটা শেয়ার করলো আমাদের সাথে। জন্মের পরই তার কঠিন রোগের বাচাঁ মরার লড়াই চলছিল। প্রায় আড়াই বছর পর্যন্ত ছিল হাসপাতালে। সিঙ্গেল মায়ের কাছে বড় হওয়া ওসমন্ড এর স্ট্রাগল ছিল সবার চেয়ে একটু বেশীই। তারপর স্কুল শুরুর পর থেকে মায়ের চেস্টা সাথে ক্লাস টিচারদের সহযোগীতায় আজকের ওসমন্ড। ক্লাসের সমবয়সীদের থেকেও অনেক সহযোগীতা পেয়েছে সবসময়ই। প্রতিবন্ধী ছিল বলে ক্লাসের টিচারকে এক্সট্রা কেয়ার নিতে হতো। এবং তিনি তা হাসি মুখেই করতেন। ক্লাসের পর অতিরিক্ত সময় দিতেন তাকে। প্রথম দিকে কোনভাবেই পড়ায় কোন্সেন্ট্রেশান ধরে রাখতে পারতো না। অনেক চেস্টার পর ডাক্তাররা বুঝতে পারলো তাঁর আইবল কিছুক্ষন পর পরই সরে যায়। তাই ট্রিটমেন্টের এর পর এমন চশমা পড়তে হয় তাকেঁ। ডাক্তার, টিচার, ক্লাসমেট সবাই অসম্ভব স্নেহ করতো ভালোবাসতো। রিসেসে(টিফিন পিরিওড) যখন একা বসে থাকতো তখন অফিসরুম থেকে কেউ না কেউ এসে তাকে সঙ্গ দিতো।
একদিন ক্লাসে আগে আসলাম বলে তাঁর সাথে গল্প করতে বসলাম। ওর আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে মজার সব কথা বলছে। বললো, জানো ওর একটা গার্লফ্রেন্ড আছে এ বয়সেই। কখনই কারো সাথে খেলনা শেয়ার করে না কিন্তু পাশের বাসার সেলিনা আসলে সব খেলনা নিয়ে হাজির হয়, এ বলে হো হো করে হেসে উঠলো। ঠিক আমার মতো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন? তুমিও কি অল্প বয়স থেকেই গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করেছে নাকি?? আরো অট্ট হাসিতে বলতে লাগলো অনেকটা। শুনো আমার কাহিনী.....
আমারও ঠিক সেলিনার মতো চমৎকার একটি প্রতিবেশী ছিল। আমিও ওর পিছনে অাঠার মতো লেগে থাকতাম। কিন্তু ও কোনভাবেই পাত্তা দিতো না। তারপর যখন একটু আধতু ভাব হতে লাগলো তখন ক্লাসে নতুন একটি মেয়ে আসলো, আমি দেখেই ক্রাশ খেলাম। অনেক কস্টে তার সাথে সম্পর্ক করলাম। কিন্তু সে কোনভাবেই আমাকে বয়ফ্রেন্ড করতে রাজি না। যাহোক একসময় ওর থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যা হলো। আমি শুনে ওকে আমার সাথে থাকার প্রপোজ করলাম। আমরা একসাথে থাকা শুরু করলাম। ও ওর মতো থাকে আমি আমার মতো। কিন্তু তারপরও আমাকে বয়ফ্রেন্ড করতে রাজি হয়নি। এর মধ্যে আমি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে শুনে জেনে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলাম। কিন্তু আমার গোড়া ধার্মিক পরিবার এর কথা চিন্তা করে বিষয়টি কাউকে জানালাম না। ঠিক নয় মাস পরে জেরিন একদিন এসে আমাকে বললো যে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছে। এবং ইসলামে বিবাহ বর্হিভুত কোন ছেলের সাথে থাকা জায়েজ নয় তাই সে চলে যাবে। আমি তখন কি বলবো বুঝতে পারিনি কিন্তু আনন্দিত মনে হয় জীবনে হয়নি। তখনই তাকে আমার কথা বললাম, ও শুনে সাথে সাথে আমাকেই বিয়ের প্রপোজ করে ।.............
একটু অবাক হয়ে জানতে চাইলাম তোমার নামতো চেইন্জ করোনি!!! তাই আমি বুঝতে পারিনি তুমি মুসলিম।
নাহ্, কারন এখনো কেউই জানে না...... এ কথা বলে আবারো অট্ট হাসি। তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বলে, যে মা তাঁর জীবন সেক্রিফাইস করেছে আমার জন্য তাঁকে কষ্ট দিতে চাই না, বুঝেছো ইয়ং লেডি।
-
-
-
যাক্গা, ফুল প্রেম লতা পাতা নিয়াই লিখুম এখন থেইকা। সক্কলেই খুশি তাইলে.......... ওম শান্তি ওম শান্তি। তাই আইজকার এ চেস্টা!!!!!!!!! দৈাড়ের উপ্রে থাইকা লিখা দিসি তাই নিজগুনে পইড়া নিয়েন। আর খুঁচাখুঁচি করতে চাইলে করতে পারনে তয় আমার টাইম নাইক্কা। তাই ডিলিট বাটনের উপ্রে আল্লাহ্ ভরসা...............!
বি:দ্র: ছবি গুগুল মামার সাহায্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০২১ ভোর ৫:০১