প্রথমদিন ক্লাসে ঢুকেই মেয়েটির দিকে চোখ আটকে গেল। চাইনীজই হবে.... যেমন সুন্দরী তেমনি তার ড্রেস এবং সাজগোজ, ঠিক প্রয়োজন মতো... কোথাও বাড়তি কিছু নেই। কানাডিয়ান ইয়ং মেয়েগুলা কিন্তু সবসময়ই দারুন পরিপাটি হয়ে থাকে। এমনভাবে ফাউন্ডেশান থেকে শুরু করে আইস্যাডো দেয় যে মনে হয় এখনি কোন পার্টিতে যাবে। দেখতে খুবই ভালো লাগে। এ মেয়েটির সাজগোজটা খুবই ন্যাচারাল ওয়েতে করা। আমি যেভাবে হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়েছিলাম কিন্তু বাকি তেমন কাউকে দেখলাম না খুব একটা তাকাতে। যাহোক ক্লাসে দু'জন করে গ্রুপ করতে বলা হলো অনলাইন এ্যাসাইনমেন্ট এর জন্য। আমার ক্লাসের বড় অংশই গ্রাজুয়েশান থেকে এক সাথে পড়ে তাই সবাই মোটমুটি সবাইকে চিনে আমি সহ কয়েকজন ছাড়া। যেহেতু আমি ইর্ন্টান্যাশনাল স্টুডেন্ট তাই ১০০% নতুন। আমি পড়লাম মহা বিপদে......। কিছুক্ষনের মাঝে দেখলাম সবাই একে একে গ্রুপ করে ফেললো আর আমি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম কাকে বলা যায়....। চোখ পড়লো আমার সামনে বসা মেয়েটার দিকে, তাকিয়ে মনে হলো ইন্ডিয়ানই হবে, আমার মতো ব্রাউন। তাই ওকেই প্রথমে প্রশ্ন করলাম, আমি তোমার সাথে গ্রুপ করলে কি তোমার আপত্তি আছে? মেয়েটা হতাশ ভঙ্গীতে বললো, আমার বয়ফেন্ড এ ক্লাসে, আজ আসেনি। আমিতো ওর সাথেই গ্রুপ করবো। তবে তোমাকে আরেকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই, ও পার্টনার খুঁজছে।
যাহোক, নীরা নামের শ্রীলংকান মেয়েটির সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল ডেব্বি। নীরা অন্য ইউনিভার্সিটি থেকে এসেছে, তাই কাউকেই চিনে না। খুব মিশুক ডেব্বিই আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে। ওওওও বলে রাখি, আমি খেয়াল করেছি এখানে আগ বাড়িয়ে কথা কেন জানি কেউ তেমন বলে না। একান্ত বাধ্য না হলে নিজের গন্ডীর বাইরে মিশে না। যেন সবাই খুব সিরিয়াস..... ক্লাসে ঢুকে, ক্লাস ফলো করে, অফ টাইমে মোবাইলে বুঢ হয়ে থাকে.. বড় জোড় কয়েক জনের সাথে কথা বলে.. এর বেশী না। আরো আছে, আমরা যেমন ইউনিভার্সিটি জীবনে দারুন হইচই করতাম ক্লাসে.... গল্পে, আড্ডায়, চেচামেচি, স্যারদের বিরদ্ধে.... সব কিছুতেই ছিল আমাদের দারুন পার্টিসিপেশান। কিন্তু এরা এতো বেশী ঠান্ডা যে অবাকই হই, শত ঝামেলাতেও রা নেই। মনে পড়ে, একবার ইউনিভার্সিটিতে একটা পরীক্ষার কোশ্চেইন খুব খারাপ ছিল। পোলাপান সবাই চেয়ার বেঞ্চ ভেঙ্গে চুড়ে একাকার...... সবাই ডিপার্টমেন্ট এর সামনে কয়েক ঘন্টা দাড়িয়েছিলাম, মিছিল টাইপের কিছু বের করার চেস্টা ও করেছিলাম। কিন্তু অবাক বিষয় ঠিক একই ঘটনার মুখোমুখি হই এখানে ফইনালে। পরীক্ষার হলে কোশ্চেইন দেখে ভাবলাম আমিই মনে হয় কম জানি। কিন্তু হল থেকে বের হয়ে বাকিদের জিজ্ঞাসা করতেই বললো, তারা ও পারেনি। কিন্তু যখনই আমি বল্লাম চলো প্রফেসারের সাথে কথা বলি দেখলাম সবাই খুব অবাক হলো। ওরা বল্লো, টিচারের দায়িত্ব কোশ্চেইন করা আর আমাদের দায়িত্ব পড়া। উনি যেকোন জায়গা থেকেই প্রশ্ন করতে পারেন। আমরা কম পড়েছি বলেই আন্সার করতে পারিনি, এতে উনার সাথে কথা বলার কি আছে!!! ...................... এ্যা বলে কি পোলাপান!!!!!!!!!!!!!!!
খুব শান্ত মেয়ে নীরা গুনে গুনে কথা বলে। বয়সে অনেক জুনিয়র হলেও আমাদের পার্টনারশীপটা আমি খুব এনজয় করতাম। নীরা ছিল অসম্ভব ভালো ছাত্রী, যেকোন ডিসকারশানই সে খুব সিরিয়াসলি নিতো। তাই প্রতিটি পরীক্ষায় আমরাই খুব ভালো মার্কস পেতে লাগলাম। যদিও এখানে কখনই কেউই কারো মার্কস জানে না বা জানানো হয় না। তবে সবার আলোচনায় কম্পেয়ার করে আমরা বুঝতে পারলাম আমাদের ৯০+ মার্কসই হাইস্ট। এভাবে দু'তিনটায় হাইস্ট মার্ক পাওয়ার পর ডেব্বি একদিন আমাকে জিজ্ঞাসা করলো আমাদের মার্কস। ও খুব মন খারাপ করে বললো তাদের মার্কস খুব কম আসছে। আমরা অভয় দিলাম সব রকম সাহায্য করার। নীরা যেহেতু খুবই কম কথা বলতো তাই সাবমিশনের আগে আমিই মোটামুটি ডেব্বিকে সব সলিউশান বলে দিতাম বা ওকে আমাদের সব কাজ ইমেইলে সেন্ড করে দিতাম।
যাহোক এরই মাঝে ডেব্বির সাথে সে সুন্দরী গ্রুপের দারুন ফ্রেন্ডশীপ খেয়াল করলাম। সুন্দরী মোট চারজন এক সাথে চলে এবং এরা এক জন ছাড়া আরেকজন কোথাও যায় না। এভাবে কিছুদিন চলার পর খেয়াল করলাম ডেব্বি সুন্দরীদেরে মাঝ ছাড়াও পুরো ক্লাসেই দারুন জনপ্রিয়। ক্লাসের আগে বা পরে সে দম ফেলতে পারে না, সবাই ওকে টানাটানি করে একটু কথা বলার জন্য। জানলাম ক্লাসে ওই সেরা ছাত্রী, হাইস্ট মার্কস ওর দখলে......৯০+। বিষয়টি একটু অবাকই লাগলো। একদিন নীরাই বলে উঠলো আমাকে, আচ্ছা ডেব্বিতো দেখি কিছু তেমন জানে না। প্রতিটা সাবমিশনের আগে তুমি আন্সার পাঠাও আর আমি কম করে ২০ টা কল রিসিভ করি আর তুমি ১০ টা ওকে বোঝানোর জন্য..... বিষযটি একটু অবাক করার মতো!!!!!!
সুন্দরী মেয়েটির নাম রেজি চ্যাং, দারুন মিশুক। দেখতে কিছুটা চাইনিজ হলেও ওর মা কানাডিয়ান। দাদী ভিয়েতনামী এবং ওদের পরিবারে মোটামুটি সারা বিশ্বের জাতি থেকে রিপ্রেজেন্টটিভ আছে বাংলাদেশ ছাড়া তবে ইন্ডিয়ান আছে। এটা অবশ্য কানাডার কমন কালচার। চারপাশ থেকে ইমিগ্রান্ট আসার কারনে একটা মিক্স জাতি তৈরী হচ্ছে। বিশেষ করে চাইনিজ কানাডিয়ান বা কালো সাদা মিলে একটা শংকর জাতি........। আমরা এক সাথেই ক্লাস শেষ করে সাবওয়েতে দৈাড়াতাম ট্রেন ধরতে। তাই প্রায়ই দিন একসাথে বাসায় ফিরতাম। এক ঘন্টা জার্নিতে অনেক কথা বলতাম। মেয়েটির সবচেয়ে ভালোলাগে অসম্ভব হাসে আর খুব খোলামেলা। বয়ফ্রেন্ড এর সাথে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ায় আর ছবি তোলে। আমি যেহেতু ইর্ন্টান্যাশনাল স্টুডেন্ট এবং কানাডায় নতুন তাই রেজি সব কিছুই আমাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিত। এখানকার কালচার, কি করতে হবে, কোথায় যেতে হবে, কি করলে কি হবে, লোকাল এক্সেন্ট, কোথায় কি ভালো পাওয়া যায়, কোথায় সেল দেয় .......... সবকিছু ওর নখদর্পনে .......... রীতিমত আমার আনপেইড টিচার। আমি অনেক অনেক কিছুই ওর কাছ থেকে শিখেছি। সি ইজ এ্যাকসিলেন্ট। এতোটা ভালো মনের মেয়ে ও........ সত্যিই আমার বন্ধু-বান্ধব ভাগ্য খুবই ভালো। জীবনে এতো বেশী হ্যাল্প পেয়েছি বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে তা তুলনাহীন।
এরই মাঝে নীরার একাট ফ্যামিলি প্রোগ্রাম ছিল। আমাকে এক্সাম একাই চালিয়ে নিতে বললো। আমি ভাবলাম যাক ডেব্বির কাছ থেকে হ্যাল্প নেয়া যাবে এই বার। ওকে ফোন করতেই, ও আকাশ থেকে পড়লো.... এক গাদা কাজের ফিরিস্তি দিয়ে আমাকে বোঝালো সে কি রকম বিজি, তারপর ও কিছু একটা পাঠানোর আস্বাস দিল। এবং এরপর উত্তর যা পাঠালো তা দেখে আমি হাসতে হাসতে ফিট, সাধারন জ্ঞানটুকু ও নাই মনে হয়, ভুলভাল উত্তর। নীরাকে বলতেই বললো, বাদ দাও তুমি যা পারো অান্সার পাঠাও। আমাদের সবগুলোতেই ভালো মার্কস, একটায় কম পেলে সমস্যা হবে না। যাহোক রেজাল্টতো পরের দিনই পেয়ে যাই তাই একটু কিউরিসিতে ডেব্বির মার্কস জানতে চাইলাম, দেখলাম ও ৯০+ পেয়েছে। একটু খটকা লাগলো, আমাকে যে আন্সার পাঠিয়েছে তা দিয়ে ১০ ও পাওয়ার কথা না।
একদিন কথা প্রসঙ্গেই রেজির সাথে ডেব্বির কথা আসলো। ওতো ডেব্বির প্রশংসায় পঞ্চমুখ... ওর মতো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট আর হয় না। প্রতিটা অনলাইন এক্সাম এর উত্তর ওর মুখস্থ যেন। এতো দারুনভাবে এন্সার করে, অসাধারন। এবং সবাইকে ও সাবমিশনের আগে আন্সার পাঠিয়ে দেয়। প্রতিটা উত্তর ওরা সবাই ডিসকাস করে, তারপর তারা সবাই মিলে ১০০% সঠিক এন্সার পোস্ট করে। আমাকে আরো বললো, তোমরা নিশ্চয় ভালো নাম্বার তুলতে পারছো না। তুমি অবশ্যই ডেব্বিকে পরীক্ষার আগে নক করবা। যাহোক আমি বল্লাম, আমার আর নীরার দরকার নেই কারন আমাদের অলরেডি ৯০+ মার্কস আছে। ও একটু অবাকই হলো..... বিশ্বাস করলো কি না জানি না.. ।
বাসায় ফিরে নীরাকে সাথে সাথেই ফোন দিয়ে জানালাম ডেব্বির কথা। ও কেন যেন এতো রেগে গেল... বল্লো, আর দুটো পরীক্ষা বাকি আছে। তুমি কোন আন্সার ওকে দিবে না , নো নেভার। আমি একটু কিছু বলতে চাচ্ছিলাম... কিন্তু ওর রাগী ভয়েস শুনে আর সাহস করলাম না। যাহোক যথারীতি অনলাইনে কোশ্চেইন সাবমিট করার সাথে সাথেই ডেব্বির ফোন, আন্সার পাঠাও। আমি পড়লাম মহা বিপদে, কি বলি তাকে। কোনরকমে বল্লাম এখনো করিনি, করলে পাঠাবো। এভাবে ওকে স্কিপ করতে লাগলাম। তারপর ঠিক পোস্টের আগের রাতে রীতিমত ঝাড়ি দিয়ে টেক্সট্ করলো, কেন আমি তাকে এখনো উত্তর পাঠাচ্ছি না। নীরাকে কল দিতেই ওর স্বাভাবিক উত্তর, টেক্সট্ ইগনর করো। আমি ওর কোন কল রিসিভ করছি না, তুমি ও করবা না। এভাবে ওকে ইগনোর করার এক পর্যায়ে হঠাৎই রেজির ফোন পেলাম। ও বললো, দেখো প্রতিবারে ডেব্বি আন্সার আমাদের সাথে শেয়ার করে তারপর আমরা সবাই ইউএন্ডে বসে ঠিক করে সাবমিট করি। কিন্তু এবার ডেব্বি সিক তাই ও বলেছে আমাদেরকে উত্তর রেডি করতে। কিন্তু সময় মাত্র আছে এক রাত, কিভাবে কি করি বুঝতে পারছি না। তোমরা যদি করে থাকো তাহলে তোমাদের সাথে কি একটু ডিসকাস করতে পারি??????
-
-
-
-
-
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন: উপরোল্লিখিত ঘটনাটি এবং এর সাথে লতায় পাতায় জড়িত সকল চরিত্র আমার অনুর্ভর মস্তিস্কের ফসল। তাই এর সাথে কানাডিয়ান বা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, নাহিদ চাচ্চুর নকল বা ঘুষ থিউরির সহিত কোনভাবেই মিল খোঁজার চেস্টা করিবেন না। যদি করিতে চান সেটা একান্ত অাপনার ব্যাক্তিগত পছন্দ।
এবং কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্ধেষ এর অভিযোগ এনে হিউমেন রাইটস্ সোসাইটিতে সু করতে চান বা নকল করার অভিযোগ এনে কানাডিয়ান শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে সু করতে চান ..... ওয়েলকাম.........নিজ দায়িত্বে করতে পারেন ।
জগতের সকল প্রাণি সুখী হোক!!!
বি:দ্র: ছবি গুগুল মামা, বান্ধবীদের ছবি দেয়ার সাহস করলাম না। দেশে প্রায় অনুপস্থিত হলে ও কানাডায় প্রাইভেসি এ্যাক্ট বলে একটা কঠিন বিষয় আছে!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:৩১