হেড অফিস থেকে এইচ আর হেড জেনির ফোন পেয়েই বুঝলাম গুড়ুত্বপূর্ন কিছু।
তোমার ওখানে নতুন একজনকে পাঠাচ্ছি। ওয়ান উইক হাতে কলমে কাজ শিখাও তারপর একা কাজ করতে দাও।
ওকে পাঠাও বলে ফোনটা রাখতেই বিশাল চিন্তায় পড়ে গেলাম।
প্রথম টেনশান ছেলে নাকি মেয়ে! মেয়ে হলে কথা নেই বাট ছেলে হলে কথা আছে! ছেলে হলে স্ট্রাটেজী এক রকম হবে মেয়ে হলে অন্য রকম। ওয়েল তবে আমার ধারনা মেয়েই হবে কারন কানাডায় পাবলিক ডিলিং কাজে মেয়েদেরকেই নিয়োগ দেয় সাধারনত। গুড, মেয়ে হবার সম্ভাবনাই বেশী। এবার দ্বিতীয় কোশ্চেইন, মেয়েটি কি ইয়ং নাকি ওল্ড ইয়ং?
ওল্ড (ইয়ং) হলে সমস্যা নেই। নিজের বয়সের আশেপাশে হবে তাই আট নয় ঘন্টা পাশাপাশি কাজ করা সহজ হবে। আর ইয়ং হলে একটু কিন্তু আছে। তবে ওল্ড যদি ব্রিটিশ হয় তাহলে খবর আছে। নিজেরাই শ্রেষ্ঠ এই ভাব নিতে নিতে মুখের ফ্যানা তুলে ফেলে। আর যদি ইয়ং (ওভার স্মার্ট) কেউ হয় তাহলে একটু সমস্যা বৈকি। এখানে সাধারনত বাসে ট্রেনে কেউই কথা বলে না বা বললে ও এমন নীচু স্বরে বলে যে পাশের কেউই শুনতে পায় না। কিন্তু মাঝে সাঝে যখনই কোন হৈচৈ শুনা যাবে বা হাই ভলিউমে গান শোনা যাবে তাকিয়ে দেখা যাবে ওইগুলা নির্ঘাত এ যুগের ওভার স্মার্ট ইয়ং। প্রায়ই ট্রেনে বা বাসে দেখবেন পাছার অর্ধেক পেন্ট খোলা, আল্লাই জানে এরা কেন বেল্ট পড়ে না বা নিজের কোমড়ের চেয়ে ১৮ ইঞ্চি বড় পেন্ট পড়ে ঘুরে বেড়ায় (ভাগ্যিস আন্ডারওয়ার পড়ে)।... তারপর সেই প্যান্ট পাছা থেকে নেমে হাটু আর কোমড়ের মাঝে ঝুলতে থাকে। আন্ডারওয়ার পুরোটা দেখা যায় এবং মাঝে সেটা যখন হাটু অবধি পৈাছে যায় তখন দয়া করে টেনে উঠায়। বুঝলাম নিজের পেন্ট কেনার পয়সা নাই, ওকে বাপের বা দাদার পেন্ট পড়িস কিন্তু বেল্ট কেনার পয়সা না থাকলে অন্তত একটা দড়িতো নিদেন পক্ষে পেন্টে বাঁধতে পারিস। এভাবে রাস্তা ঘাটে আন্ডারওয়ার দেখা বড়ই বিরক্তিকর ... পারতপক্ষে ওদিকে তাকায়ে সারাদিনের জন্য মেজাজটা বিগড়ায়ে রাখি না।
তারপর আরো কিন্তু আছে, অফিসে অলরেডি একখান ইয়ং আপু আছেন। যিনি সারাক্ষনই তার লিভিং পার্টনারের গল্প করতে করতে মুখের ফেনা তুলে ফেলে আর আমাদের বাকি সবার সংসারে আগুন লাগানোর অবস্থা করে। কারন তার বয়ফ্রেন্ড তার কি কি ভাবে সেবা করে, রান্না করে অফিস পর্যন্ত দিয়ে যায়, মাসব্যাপি তার জন্মদিন পালন করে, দোকানের সেরা গিফটা কিনে দেয়, সারা দিন সারা রাত কত যত্ন আত্বি করে...... এই হিসেব নিকেশ শুনতে শুনতে আমরা বাকিরা পেরেশান। তার উপ্রে কাজে কামে ঘন্ট কিন্তু সারাক্ষনই আমি কি হনুরে ভাব নিয়ে থাকে। আমরা মাইনকার চিপায় থাকর টেনশানে আছি।
যাহোক যা বলছিলাম............. মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছি ভালো কেউ যেন আসুক.............। যাহোক শুভক্ষনে হাজিরা দিলেন উনি এবং তাকে দেখেই আমার ভিমড়ি খাওয়ার অবস্থা। ইয়া মোটা এক বয়স্ক মহিলা। হাসি মুখে হাত বাড়ায়েই বললো, হাই আ'ম ক্যারোল। আমি এখানে জয়েন করতে এসেছি। আমার তো ওর দিকে তাকায়ে হাাা আ আ আ। এতো মোটা কাউরে এতো সামনে দেখি নাই এ জীবনে। বইতে বা মুভিতে এরকম ফানি ক্যারেক্টার দেখি বা মাঝে সাঝে রাস্তায় দেখি কিন্তু সামনে!!! সেই লাঞ্চিয়ন গল্পের কথা মনে করায়ে দিল বহুদিন পর। তার পরপরই আমার অফিসের চেয়ারগুলোর জন্য টেনশান হতে লাগলো, না জানি ওইগুলা আজকেই ভবলীলা সাঙ্গ করে...........

এরপর শুরু হলো আমার ক্যারোল পর্ব। চমৎকার ভঙ্গীতে সারাক্ষনই হাসে ক্যারোল। এবং অসম্ভব কথা বলে। সাতদিনের মধ্যে সে তার এক্স হাজবেন্ড, এক্স বয়ফেন্ড, তার ছেলে মেয়ে, তার বাসার বিড়ালটা.... সবই আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। বাসার সিংকটা কালার থেকে শুরু করে এক্স হাজবেন্ড এর বউ এর সাথে তার কতবার কথা হয় কি কি কথা হয়, তার এক্স হাজবেন্ড এর ক্যান্সার কি অবস্থায় আছে..... সব আমি মূহুর্তে বলে দিতে পারবো। এবং তার বাবার ৮৪ বছর বয়সে নতুন গার্লফ্রেন্ড এর ছবি দেখেতো আমি টাস্কিত (কেউ চাইলে চান্স নিলে ও নিতে পারেন...

সারাক্ষনই আনন্দ নিয়ে থাকে ক্যারোল আর সাথে থাকে খাবার। ব্যাগল আর ডায়েট কোক তার খুব প্রিয়। একবার বলেই ফেললাম, তুমি এসব খেয়ে আরো মোটা হচ্ছো একটু ফ্রটস ভেজিটেবল খাও। ও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি যায়। বলে, প্রতিবারেই ডাক্তারের চেম্বারে গেলে ডাক্তার আমাকে বের করে দেয়। বলে ওজন না কমিয়ে আসবা না, আমি কোন ট্রিটমেন্ট দিবো না। কিন্তু দু:খের বিষয় প্রতিবারেই আমি ওজন বাড়িয়েই তার চেম্বারে যাই। এই বলে সে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে। লাঞ্চে আমার শুধু সালাদ আার জুস খাওয়া দেখে তার আরেক দফা হাসি। বলে তুমি এ ঘাস লতাপাতা খেয়ে কিভাবে বেচেঁ আছো!!! ডাক্তার আর রেস্ট্রুরেন্ট এর ব্যবসারতো তুমিই বারোটা বাজাবা। তাই সে প্রায় আমার জন্য এটা সেটা নিয়ে আসে। কানাডায় সাধারনত কেউই খাবার শেয়ার করে না বা কারো জন্য পয়সা খরচ করে না, যার যা খাবার সে খায় কিন্তু ও ছিল ব্যাতিক্রম অনেকটা।
এমন আমুদে ক্যারোলের সাথে বন্ধুত্ব করতে বয়স বা সাইজ কোন ফ্যাক্টর ছিল না। আমরা সুযোগ পেলেই গল্প করি। ওর বিষয় পরিবার আমার বিষয় রাজনীতি। তখন ট্রাম্প হিলারীর ক্ষমতার লড়াই চলছে। কানাডা স্পষ্টত: হিলারীকে সমর্থন দিচ্ছে... আমি সারাক্ষনই ট্রাম্পকে গালি দিচ্ছি আর তার রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে উল্টা পাল্টা বকা দিচ্ছি। আমি যাই বলি ও মেনে নেয়। আর বলে সত্যিই তুমি ঠিকই বলছো। ও কখনই কিছু বলে না।
একদিন হঠাৎ বলে, আমি যখন ছোটবেলায় ইসরাইলে যেতা.......। আমি একটু অবাক হয়ে বল্লাম, তুমি কেন ইসরাইলে যেতে? ক্যারোল বললো, আমিতো ইসরাইলের। আমার ফ্যামিলির সবাইতো সেখানে থাকে। আগে প্রায় বছরে যেতামই। মা মারা যাবার পর বাবা আর আগ্রহ করে না তাই যাওয়া হয় না।.....
যাহোক, এই লিখার মোরাল হলো.......... সবার আগে মানুষ সত্য তাহার উপর নাই!
.
.
.
.
এইবার উৎসর্গের পালা:
প্রিয় ব্লগার ডঃ এম এ আলী ভাই, ব্লগের ইবনে বতুতা জুন আপু, মলাসইলমুইনা ভাই, মনিরা সুলতানা, চাঁদগাজী ভাই সহ সকল প্রবাসী ব্লগারদের, যারা শত প্রতিকূলতার মাঝে ও লিখে যাচ্ছেন বিদেশের মাটিতে। সমৃদ্ধ করছেন ব্লগটিকে, সমৃদ্ধ করছেন আমাদের জ্ঞানকে। ভাইরে দেশে থেকে অনেক কিছুই করা যায় কিন্তু বিদেশের মাটিতে শত বাধাঁর মাঝেও নিজের দেশকে ভিন্ন জাতির মাঝে তুলে ধরা, দেশের পজিটিভ ইমেজ তুলে ধরা, অনেক অনেক কঠিন কাজ। প্রতিটি স্টেপেই সারা বিশ্বের সাথে কম্পিট করে আমাদের মাথা উচুঁ করে দাড়াতে হয়, নিজেকে জানান দিতে হয়, নিজের দেশের ভালোটা ঢোল পিটাতে হয়।
অনেক অনেক ভালো থাকেন।
ছবি: গুগুল মামা। সহকর্মীর ছবি দিতে চাই না.............
আর বিপক্ষে মন্তব্যকারীদের বলছি, এটা ব্লগ, রাজনৈতিক মাঠ বা আদালত নয়। আমার ব্যাক্তিগত মন্তব্যকে আপনার পার্সোনালি নিলে সেটা আপনারই সমস্যা আমার নয়।
সবাই অনেক ভালো থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৯:৪৯