জীবনে যে ভুতেদের দেখা পাইনি তা কিন্তু ঠিক না। ছোট বড় মাঝারি বেশ ক'বার তাদের সাথে আমার একান্ত সাক্ষাৎকার হয়েছিল। অনেক ঘটনার মাঝে আজ শুধু দু'টি ঘটনা নিয়ে আসলাম। প্রথমটা ছোট, পরেরটা একটু বড়! আসল ভুত বলে কথা!!
২০১৪ সালের দিকে। সুইজারল্যান্ডে একটা ফান্ড নেগোসিয়েশান মিটিং এ এ্যাটেন্ড করতে গেছিলাম। আমি ছিলাম মূল প্রেজেন্টার। তাই মারাত্বক টেনশান এ ছিলাম। আমার চাপাবাজির উপর ডিপেন্ড করছিল অনেক কিছু। হোটেলে পৈাছে পরদিনের জন্য ঘড়িতে এ্যালার্ম সেট করে ঘুমাতে গেলাম। যাইহোক, এ্যালার্ম বাজার পর তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নীচে গেলাম ব্রেকফাস্ট করতে। কথা ছিল ঠিক আটটায় গ্রুপের বাকি সবাই লবিতে জড়ো হয়ে এক সাথে যাবো। যেহেতু কারো হাতেই সুইস সিম নেই তাই এ ছাড়া গতি নেই। যথারীতি রেডি হয়ে নীচে নেমেই ভয় পেয়ে গেলাম আমি.......। একটা জন প্রানী ও নেই পুরো হোটেল। পুরো লবিতে পিনপতন নীরবতা। ঘড়ি দেখে নিলাম, নাহ আটটা বাজে। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার, বিশাল লম্বা লবির প্রতিটা দরজা বন্ধ, চারপাশে আধাে আধো আলো, কোথাও কেউই নেই। একা এক রুমে ছিলাম কোন ভয় পাইনি ঠিকই কিন্তু এবার ভয় পেতে শুরু করলাম। মনে হলো কোন ইংলিশ হরোর মুভি দেখছি। সবাই আমাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে, এখনি কোন চিপা থেকে হঠাৎ খুনি বের হয়ে আসবে এবং গলা চিপে ধরবে। আতংকে নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না তখনই হঠাৎ রিসেপশানের পিছনের ঘড়ির দিকে নজর পড়লো, ৩টা ১০!!! মানে??? এক ঝটকায় বুঝতে পারলাম অতি উত্তেজনায় ঘড়ির টাইম ঠিক করি নাই। ইহা বাংলাদেশী টাইমের এ্যালার্ম.... সকাল আটটা.........
এবার আসি আসল ভুতের ঘটনা....................
ঘটনার মূল পাত্রী আমার বড় বোন। অসম্ভব পড়ুয়া আমার বোনের জীবনের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান বই। হাটতে চলতে উঠতে বসতে বাথরুমে এমন কি ঘুমানোর সময় ও তার বালিশের নীচে বই থাকে। পড়তে পড়তে সে তার নিজের জীবনতো তেজপাতা বানিয়েছে সাথে আমরা বাকি ভাই বোন মামাতো চাচাতো ফুফাতো সবার জীবনও ভর্তা বানিয়ে ছেড়েছে। কারন খুব সোজা, আমাদের সকলের পিতা মাতার কাছে সে একজন আদর্শ। কথায় কথায় সকলে উদাহরন হিসেবে তাকে হাজির করে। ওর মতো কেন ভালো রেজাল্ট করিস না, ওর মতো কেন পড়িস না, ওর মতো কেন এটা শুনতে শুনতে আমাদের সবার জীবন পুরোই তেলাপোকা। মানে তেলাপোকা দেখলে সবাই যেমন সেন্ডেল তুলে মারতে আসে তেমনি আমাদের দেখলে বড়রা হই হাই করতে থাকে..... এক মহা যন্ত্রনা।
যাই হোক সে বড়বোন হঠাৎ ই খুব সমস্যায় পড়লাে। যারা মেডিকেলে পড়েছেন বা এর সাথে যুক্ত তারা জানেন ফার্স্ট প্রফ আর সেকেন্ড প্রফ কি রকমের কঠিন পড়া। এবং মেডিকেলের মতো পরীক্ষায় সব সময় প্রথম হওয়া আমার বড় বোন হঠাৎ সেকেন্ড প্রফ পরীক্ষার আগে হোস্টেল ছেড়ে বাসায় হাজির। ঘটনা কি? পরীক্ষার আগে পড়া ছেড়ে বাসায় কেন???? দেখি তার অবস্থা খুব খারাপ... সে অসুস্থ। এবং তার অসুখটা হলো সে কিছুই মনে রাখতে পারছে না এবং কিছুক্ষন পড়ার পর তার চোখে সব ঘোলা দেখে। বাবা সব শুনে গম্ভীর হয়ে বললো, পড়া এক মাস বন্ধ রাখ, অতিরিক্ত পড়ার চাপে আর টেনশানে এরকম হয়েছে। শুনেতো বড়'পা কান্নাকাটি, দুই মাস পর পরীক্ষা এক মাস কেন এক মিনিট ও পড়া বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। বাবা দুই ধমক লাগিয়ে চলে গেল। কিন্তু মা'তো মহা টেনশানে পড়ে গেল...। চাচা ফুফু নানু দাদু মামা আমাদের চৈাদ্দ বংশের সবাইকে খবর দিতে লাগলো। এবং বড় আপা বলে কথা....... মোটামুটি কেউ আর বাকি নেই বংশের, সবাই হাজির...........।
চাচা ফুফু নানু দাদু মামা বিশাল বোর্ড মিটিং বসলো, কেন এমন হচ্ছে, কোন ডাক্তারের কাছে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সব কিছু শুনে টুনে নানু বললো, এটা আর কিছুই না জ্বিনের আছড়। অসম্ভব বিজ্ঞান মনোষ্ক দাদু কিঞ্চিত রেগে গেল কিন্তু নানু নাছোড় বান্দা। বললো, আমার কাছে ভালো কবিরাজের খোঁজ আছে আমিই সব ব্যবস্থা করছি জ্বিন ছাড়ানোর। মা ছাড়া সবাই ভ্যাটো দিলে কিন্তু নানুর জোড়াজুড়িতে কেউ আর কিছু বলার সাহস পেল না। বাবা স্পষ্ট বিরক্ত হলেও শাশুড়ির বিরুদ্ধে কথা বললেন না। আচ্ছা একটু বেড়ানোতো হবে, এই বলে বাবা চুপ থাকলেন। অতপর: সিদ্ধান্ত হলো নানুর বাড়ি যাবার। ওওও বলে রাখি, আমার নানু সহ মামারা সবাই ঢাকাবাসী, গ্রামের বাড়িতে কেয়ার টেকার থাকে তবে নানা বা নানু প্রায় যায়। যেহেতু মা সহ আরো অনেকে যাবে তাই নানু একটু চিন্তায় পড়লো সবার খাবার দাবার সহ বা অন্যান্য কিছু ম্যানেজ করার জন্য। সে সব ব্যবস্থা করার জন্য নানু মামাকে আগে পাঠিয়ে বাজার সহ সব কিছু ঠিক করার সিদ্ধান্ত হলো।
এবার আসলো আসল দ্বন্ধে। কে কে যাবে?? দেখা গেল সব কাজিন মামা চাচা ফুফু সবাই যাবার জন্য চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিল। ফ্রিতে এমন সিনেমা দেখার সুযোগ কেউই হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। ছোট মামা ছোট চাচা আরা বাবাকে দেখতে পেলাম আনাচে কানাচে বেশ গোপনে কিছু শলা করতে। তারপর ফাইনাল ডিসিশানে আসলো, মামার সাথে ছোট চাচা ও যাবে আগে ভাগে সব কিছু ম্যানেজ করতে। সব শুনে বড় মামা ঢাকা থেকে আগেই রওনা দিয়ে দিলেন। আম্মু আর বড়আপা ছাড়া আর কাউকেই সুযোগ দিলো না। কিন্তু আমি হলাম নাছোড়বান্ধা। ডাইরেক্ট হাঙ্গার স্ট্রাইক করে বসলাম। আমাকে না নিলে তোমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত নো খাবার............ (আমার মাকে পটানো সবচেয়ে ইজি কৈাশল এটি কারন আমি জানি একবেলা ও মা এটা এ্যালাউ করবে না)। যাক, শেষ পর্যন্ত আমি ও অন্তর্ভুক্ত হলাম কিন্তু অবাক হলাম মামা এবং চাচা দুইজনেই আমার ব্যাপারে ভেটো দিল। অথচ এরা দুইজনেই আমাকেই সবচেয়ে বেশী পছন্দ করে এবং আমি তাদের খাস চামচা। দু'জনের লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া থেকে শুরু করে সিনেমা দেখার প্রধান সাহায্যকারী আমি।
যাহোক, যথারীতি মামা চাচা এক ঘন্টার মধ্যেই রওনা হলো এবং আমরা পরদিন সকালে রওনা হলাম। এবং সাধারনত এ কবিরাজ নিজের বাসা ছাড়া অন্য কোথাও চিকিৎসা দেন না কিন্তু নানুর বিশেষ অনুরোধে ও নগদ ২০০০ টাকার ঘোষনায় শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন। ও বলে রাখি আশির দশকে ২০০০ টাকা কিন্তু অনেক.......।
সব দেখে শুনে কবিরাজ মহাশয় বললেন, এ শুধু সাধারন আছড় না কঠিন বান মারা হয়েছে মানে তাবিজ করা হয়েছে বড় আপাকে যাতে সে পরীক্ষায় খারাপ করে। কবিরাজ মহাশয় বিশাল এক ফর্দ দিলেন.... একটা নতুন শাড়ি, একটি নতুন গামছা, চার আনা সোনা, নতুন ধানের তুস, সোয়া সের চাল, এক ভাড় খাটিঁ দুধ সরাসরি ধোয়ানো, এভাবে আরো একগাধা জিনিস। সব জোগাড় হবার পর বললো, আজ রাতেই হবে আয়োজন। আমি একটু মিন মিন করে বললাম, ভুতেরা কি আমাবশ্যা ছাড়া আসে? আকাশেতো চাঁদ দেখা যাচ্ছে। কবিরাজ মহাশয় এক ধমক দিয়ে বললেন, ভুতদেরকে কিভাবে আনতে হয় তা আমার জানা।
তারপর সন্ধ্যার পর পরই শুরু হলো বাড়িরে উঠোনে সে আয়োজন। বিশাল একটা গামলায় জোগাড় হলো। কবিরাজ বললো তিন পুকুরের জল আনতে কিন্তু সেটি হবে ঠিক মাঝ পুকুরের জল। এই ঠান্ডার সন্ধ্যায় ময়নার মা'কে (নানুর কেয়ার টোকার) সবাই ধরে বেধেঁ ঠেলেঠুলে পুকুরে নামিয়ে দিল সবাই। সে কিছুতেই নামতে চাচ্ছিল না অনেকক্ষন চিঁচিঁ সুরে চেঁচালে কিন্তু কেউই তার কথা শুনলো না। সে ভয় পাচ্ছে যে পুকুরে নামলে ভুতেরা জেনে যাবে সে ও এই দলে আছে এবং সবাই যখন চলে যাবে সে একা এই বাড়িতে থাকবে তখন তাকে এসে ধরবে। যাইহোক অবশেষে জল দুধ তুলসি পাতা সহ আরো কি কি মিশায়ে নতুন কাপড় পড়িয়ে বড় আপাকে আনা হলো গামলার সামনে। কবিরাজ বললো, আমি প্রশ্ন করবো ও তুমি উত্তর দিবে। তোমার সব উত্তর আমি এ জলে দেখতে পাবো। কবিরাজ বড়'পার সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু করলো
তোমার সাথে পড়ে কোন মেয়ে যার চুল লম্বা একটু চিকন শ্যামলা গায়ের রং সে খুব তোমাকে হিংসা করে তুমি ভালো রেজাল্ট করো বলে, ঠিক?
হাঁ হাঁ ঠিক, আমার খুব ক্লোজ বান্ধবী ওর চুল লম্বা একটু চিকন শ্যামলা গায়ের রং সে ক্লাসের সেকেন্ড। আমার প্রতি সত্যিই জেলাস।
কবিরাজ বললো, জলের গামলায় তাকাও তাকে দেখতে পাবে, ও কিনা দেখ।
বড়'পা অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলো, বললো, কই কিছুতো দেখি না।
কবিরাজ একটা ধমক লাগিয়ে বললো, তোমার মন থেকে সব কুচিন্তা দূর করো, মনকে পুত পবিত্র করো নতুবা নতুবা কিছুই দেখতে পাবে না।
ধমক খেয়ে বড়পা বলতে লাগলো, হাঁ হা দেখতে পাচ্ছি........... ওইতো দেখা যায় সব। সাথে সাথে মা যোগ দিল। এ নিশ্চয়ই ইয়াসমীন। ক'দিন আগেইতো সে বাসায় তার মাকে নিয়ে এসেছিল।
কবিরাজ বললো, সে আপনার মেয়ের চুল ও বইয়ের পাতার টুকরো নেয়ার জন্য বাসায় এসেছিল। এবং তা দিয়ে বান মেরেছে যাতে ওর পড়া নষ্ট হয়।
সাথে সাথে মা দুইয়ে দুইয়ে চার যোগ করতে লাগলো। হাঁ, বুঝতে পারলাম তাইতো তার মাকে নিয়ে এসেছে ও ওর পড়ার রুমে উকিঁ দিচ্ছিল... আর হাঁ ওর মাথায় ও হাত রেখেছিল।........
কবিরাজ আরো বললো, তোমার সাথে পড়ে একটি ছেলে তোমাকে পছন্দ করে। তার কড়া নজর ও আছে তোমার দিকে।
বড়'পা লজ্জায় লাল হয়ে গেল... এখানে বলা বাহুল্য সব ক্লাসেই সব মেয়েদেরকে কেউ না কেউ পছন্দ করে। তার উপর বড়'পা ফার্স্ট গার্ল ও বিশেষ সুন্দরী।
এভাবে কিছুক্ষন ভিডিও পর্ব চলার পর রাতের খাবারের বিরতি। নানুর বিশেষ আয়োজন পোলাও রোস্ট খেয়ে রাত বারোটায় আবার আসল পর্ব শুরুর ঘোষনা দিয়ে কবিরাজ মহাশয় একটা ঘুম দিতে গেলেন। এবং বলে গেলেন, বড় আপা গোসল করে চুল খোলা রেখে নতুন শাড়ি পড়ে রেডি থাকতে। সাত জায়গা থেকে মাটি নিয়ে তাবিজ বানানো হবে। চৈারাস্তার মোড়, নতুন ও পুরাতন কবরের মাটি, নতুন ও পুরাতন পুকুরের মাটি....... এভাবে সাত স্থানের মাটি জোগাড় করতে হবে বড়'পাকেই। তবে আশার কথা মা সহ কবিরাজ সবাই থাকবে সাথে। বড়'পা ভয় পেলে ও কবিরাজ মহাশয় অভয় দিল যে সে থাকতে ভুতের দাদার ও সাধ্য নেই কিছু করার।
যথারীতি রাত বারোটায় রওনা হলো সবাই মাটি জোগাড়ে। দলের প্রথমে বন্দুক হাতে বড় মামা ( ও বলে রাখি আমার বড় মামার আবার দোনলা বন্দুক ছিল, উনি আবার শখের পাখী শিকারী। উনার গল্প আরেকদিন বলবো।) মাঝে আমরা ও শেষে লাঠি হাতে মামার কাজের ছেলে। কিন্তু ছোট মামা বা ছোট চাচাকে কিছুতেই ঘুম থেকে উঠানো গেল না। উনারা দু'জনেই এক বিছানায় ঘুমিয়েছে এবং গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিছুতেই তাদেরকে উঠানো গেল না। শেষে তাদেরকে ছাড়াই রওনা হলাম।
সন্ধ্যা মানেই গ্রামের রাত দুপুর। সেখানে সত্যিকারের রাত বারোটায় গ্রামের রাস্তা। ভয়াবহ নিরবতা..... শিয়াল ঝিঁ ঝিঁ পোকারা ও মনে হয় ডাকতে ভুলে গেছে। শুকনো পাতায় পা পড়তেই মড়মড় শব্দ তাতেই চমকে উঠছি আমরা সবাই। বার বার মনে হতে লাগলো কোন দু:খে যে আসলাম। এ যাত্রায় বাড়ি ফিরে গেলে আর কখনই এ মুখো হবো না, ভুত দেখার শখ পালিয়েছে। যাহোক, একে একে সব মাটিই জোগাড় হলো, বাকি থাকলো শুধু কবরাস্থানের মাটি। দেখা গেল স্বয়ং বড় মামাই প্রথমে মুখ খুললেন ভয় পেয়ে।
কবিরাজ মশাই, কবরের মাটি কি দিনের বেলা জোগাড় করলে হয় না?
একটু আমতা আমতা করে বললো কবিরাজ, হয় তবে একটু ঝামেলা লাগবে। এটা শুনেই মামার কাজের ছেলে তেড়ে আসলো।
আরে মিয়া ফাজলামো পাইছো। এত্তো রাইতে এইখান পর্যন্ত টাইনা আনছো আর দুই কদম পর কবরাস্থান। এখন কও দিনের বেলায় আনলে ও হইবে। তাইলে রাত বিরাতে আনলা কেন?? কোন কথা না, দুই কদম পর কবরাস্থান। তারপরই ঘরে যাওন।
তার কড়া ধমকে স্বয়ং বড় মামা ও কথা বাড়ালো না।
তারপর গ্রামের সে সরু রাস্তা ধরে খোলা কবরাস্থানে আমরা পৈাছালাম। আমি কখনই আগে কখনই কোন কবরাস্থানে যাইনি। সে মাঠে ঢুকতেই বড় একটা বট গাছ। আমরা সবাই দুরু দুরু বুকে এগিয়ে চলছি। ঠিক এমন সময় দেখি সে বটগাছের পাতায় সে যে কি ঝাকুঁনি। মনে হচ্ছে যেন পুরো গাছ ভেঙ্গে পড়ছে। মা মামা জোরে জোরে দুরুদ পড়া শুরু করেছে। গাছের ঝাপটা একটু কমতে না কমতেই ইয়া বড় বড় ঢিল আমাদের চারপাশে পড়তে লাগলো। আমরা পড়ি কি মরি করে এলোপাথারি ছুটছি। আর ঠিক তখনই দেখা গেল গত মাসে মারা যাওয়া করিমনের মায়ের কবরের পাশ থেকে এক সাদা কাফনের কাপড় পড়া লাশ আমাদের দিকে ছুটে আসছে। ও বাবা রে মাগো বলে কবিরাজ মহাশয় ১০০ মাইল স্পিডে দৈাড় দিলেন। আমার আর বড় আপারতো অজ্ঞান হবার অবস্থা। বড় মামা বন্দুক ধরছে একবার উল্টা দিকে আরেকবার সোজা করে। মা বার বার বলছে তুই ফাঁকা গুলি ছোড়, ফাঁকা গুলি ছোড় কিন্তু কে শুনে কার কথা। তারপর মামা চিৎকার শুরু করলো দিদি দিদি বন্দুক থেকেতো কোন গুলিই বের হচ্ছে না। আশ্চর্য্য, আমিতো গুলি ভরেই রেখেছিলাম... দেখা গেল দৈাড়ে সবার আগে কবিরাজ মশাই আর কাফন পড়া ভুতটা ঠিক কবিরাজ মশাই এর পিছনেই দৈাড়াচ্ছে। আমরা একটু পিছিয়ে আছি এবং তা দেখে দৈাড়ের গতি কমিয়ে দিলাম। এবং এক সময় কবিরাজ মশাইকে ধাওয়া করে পানিতে ফেলেই দেখি ভুত হাওয়া। আরে গেল কই?? মামার সাথে আনা টর্চ দিয়ে চারপাশে খুজেঁ কিছুই পেলাম না আমরা। অনেকক্ষন পর কাজের ছেলেটার দেখা পেয়ে মামা ধমক লাগালেন, কই ছিলি তুই?
যাহোক পানি থেকে কবিরাজ মশাইকে তুলে বাড়ি পৈাছালাম এবং পরদিন সকালে সেই যে ভাগলেন নাস্তাও খেলেন না। তারপর নাস্তার পর্ব শেষের পর মা আর মামা ছোট মামা, ছোট চাচা ও উনার কাজের ছেলেকে ডাকলেন। মা বললেন, হজ্ব থেকে আনা বাবার এহরামের কাপড়ে এতো কাঁদা মাটি লেগে আছে কেন? আমার তখনই সন্দেহ হয়েছিল। তারপর তোদের সেন্ডেলে এতো কাচাঁ মাটি দেখে প্রথমেই আলমারির এহরামের কাপড়ের কথা মনে পড়লো। তাই সকালে উঠেই চেক করতে গেলাম।
এবার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি গেল ছোট মামা, ছোট চাচা ও কাজের ছেলেটি। একে এক ফাঁস করলো তাদের ষড়যন্ত্র। এবং এর মূল কলকাঠিই নেড়েছিল বাবা। আমাদের মনে যেন কোন ভুতের ভয় না থাকে তার ব্যবস্থা করার জন্য অসম্ভব বিজ্ঞান মনস্ক বাবাই তাদের দু'জনকে আগে পাঠিয়েছিল প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে। তারা কবিরাজের মূল পরিকল্পনা শুনার পরেই কবরাস্থানেই আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেয়। আর সে কারনেই ঘুমের ভান করে আমাদের সাথে আসেনি ও আলমারি থেকে এহরামের কাপড় সরায়ে নেয়। কাজের ছেলেকে সাথে পাঠায় যাতে সঠিকভাবে আমাদেরকে গাইড করে জায়গামত নিয়ে যেতে পারে। বটগাছে সেই উঠেছে এবং গাছ ঝাকানো ও ঢিলের দায়িত্বই সেই পালন করেছে ওদেরকে জানান দিতে সাথে আমাদের ভয় দিতে। এবং তাদের পরিকল্পনা সাক্সেস করে। শুধুমাত্র ভয় ছিল মামার বন্দুক নিয়ে, যদি মামা গুলি ছুড়ে!! তাই ছোট মামা যাবার আগ মূহুর্তেই বন্দুক থেকে গুলি সরিয়ে নেয়।....
আমাদের ভুতের ঘটনা সেখানেই ইতি ঘটে শুধুমাত্র বড় আপা তার প্রিয় বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা ছাড়া .........
দীর্ঘ কাহিনী বললাম তবে সত্যিকারের ভুতের কাহিনী নিয়ে এর পরে কোন এক সময় আসবো...........।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৭:৫৯