সামুতে প্রায় দেখি কারো না কারো বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পোস্ট। তখন থেকে মাথায় ঘুর ঘুর করতো আমিও এমন একটা পোস্ট দিবো। কিন্তু গত ৯ বছরে ও এ লিখা হয়ে উঠলো না। যখনই বর্ষপূর্তি হয় তখনই দেখি কোন না কোন ঝামেলায় সে ক'দিন সামুতেই ঢুকা হয় না। তাই এবার ১০ বছরের মাথায় ভাবলাম নাহ্ লিখতেই হবে..... ১০ বছর বলে কথা! কিভাবে যে সামুতে ১০ টা বছর কাটালাম সেটাই বিস্বয়! তাই বসলাম কিছু চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেশ নিয়ে... দীর্ঘ ১০ বছরের হালখাতা।
শুরুটা : তখন ইউএন এ জব করতাম। নতুন প্রজেক্ট শুরু করেছিলাম কিন্তু ফান্ড তখনো না পাওয়াতে হাতে বেশ সময়। ঘড়ি ধরে ৯টা ৫টা অফিস করতেই হয়। কিন্তু কাজ কাম ছাড়া বসে থাকা আমার জন্য দূ:সহ জীবন। একদিন দেখি আমার অফিস সেক্রেটারী কি যেন পড়ছে আর হাসছে। কি পড়ছো জানতে চাইলে বললো সাম হোয়ার ব্লগ পড়ছি। তারপর সেই থেকে শুরু। প্রথম কিছু বছর শুধু সবার লিখা পড়ে কাটাতাম তারপর সময়ে পরিক্রমায় লিখা শুরু করলাম। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখা শুরু করলাম এই ব্লগে।
প্রথম সিরিজে লিখা: প্রথম দিকে আমি দৈনন্দিন জীবন বা পত্রিকার ভালো না লাগা কিছু বিষয় নিয়ে লিখতাম। এরই মাঝে শুরু করলাম নিজের সংসার... সে সংসারে আগমন ঘটলো সে জীবনের অবিচেছদ পার্টনার আমার বুয়ারা। সে বুয়ারা আমারে রীতিমত নাকে কানে দঁড়ি দিয়ে ঘুরাতো তাই তাদের দৈনন্দিন কাহিনী নিয়ে শুরু করেছিলাম আমার বুয়া সিরিজ। খুবই পাঠক প্রিয়তা পাওয়ার পর সে সিরিজে আমি প্রায় ৮ পর্ব লিখেছিলাম। এখনো ২/৩ টা ড্রাফটে আছে কিন্তু ফাইনাল করার সময় করতে পারছি না। এর কারন আমার ধৈর্য্য অনেক কম। তাই একটি লিখা দীর্ঘদিন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া আমার জন্য কঠিন একটি কাজ।
একটি পর্ব শেয়ার করলাম বর্তমান পাঠকদের জন্য ..... আমার কাজের বুয়া কাহানী.....পর্ব-২
বেকারত্ব নিয়ে পর্ব: এভাবে পাঠক প্রিয়তা পাওয়ার কারনে উৎসাহ বেড়ে গেল পরবর্তী লিখার জন্য। এই সময়ে আমার কাছে প্রায় নবীন/প্রবীন গ্রাজুয়েট কিংবা সদ্য এইচএসসি পাশ করা ছেলে-মেয়েরা আসতো পরামর্শের জন্য। কি সাবজেক্ট পড়বে বা কিভাবে চাকরী পাবো কিংবা অফিস সংক্রান্ত কোন পলিটিক্স এর ট্রিক্স ........ তারপর তাদের উদ্দেশ্যে বেঁছে নিলাম বেকারত্ব নিয়ে পর্ব।
একটি পর্ব শেয়ার করলাম.... বেকার বন্ধুদের জন্য ফ্রি উপদেশ (এ পর্ব শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য ছেলেদের প্রবেশ সম্পূর্ন নিষেধ) ........ পর্ব-৫
নারী নির্যাতন নিয়ে লিখা: বেকারত্ব নিয়ে লিখতে লিখতে খেয়াল করলাম আমি প্রায় লিখায় অফিসে দেখা মেয়েদের নির্যাতনের বিষয় উঠে আসে আমার লিখায়। এরই মাঝে নিজের একান্ত আগ্রহে জেন্ডার নিয়ে কাজ শুরু করলাম। বিখ্যাত জেন্ডার ট্রেইনার কামলা ভাসিন এর হাতে খড়ি আমার ট্রেনিং। তখনই অফিসে এর মেয়েদের জীবন কাহিনী পড়ে খুব অসহায় বোধ করতাম। কিছু করতে পারতাম না আবার সহ্য করা ও খুব কষ্টের। এরই ধারাবাহিকতায় শুরু করলাম অফিস পাড়ার মেয়েদের গল্প।
একটি পর্ব শেয়ার করলাম.... আপনি যদি চাকুরীজীবি মেয়ে হোন তাহলে লিখাটি আপনার জন্য..... আপনার সাথে মিলে যেতেও পারে (পর্ব ৩)
তারপর দিন গড়িয়ে রাত হলো আমার নতুন নেশা শুরু হলো ছবি তোলা.....আর শুরু হলো ছবি নিয়ে পোস্ট। যেখানেই যাই সাথে ক্যামেরা ও ক্লিক..... যাই দেখি তাই মনে হয় আহ্ ব্লগ বন্ধুদেরকে না দেখালেই নয়। একে একে অসংখ্য ছবি পােস্ট সাথে ভ্রমণ পোস্ট শুরু করলাম... যা এখনো দেই তবে একটু কম। কারন আগে দেশ থেকে বিদেশ যেতাম আর যাই দেখতাম মুগ্ধ হয়ে পোস্ট দিতাম। তেমন একটি পোস্ট : এটা ছবি ব্লগ.....আমার দেখা প্রিয় কিছু স্থানের ছবি পর্ব - ৪ (সুইজারল্যান্ড)
এরই মাঝে মাঝে আমি প্রায়ই লিখতাম আমার প্রিয় বিষয় শিশুদের নিয়ে, তাদের নির্যাতন নিয়ে, তাদের নির্যাতনের প্রতিকার নিয়ে।
তেমনি এক পোস্ট : আপনার শিশু সন্তানকে কিভাবে বাচাঁবেন নরপশুদের হাত থেকে !!!!!
এভাবেই পার করেছি আমার দীর্ঘ ব্লগ জীবন। সামহোয়ার ছাড়া অনেক ব্লগে ও লিখার অনুরোধ সত্বেও কখনো লিখিনি কারন মনে হয়েছে আমার এ অখাদ্য লিখা কেউই কস্ট করে পড়বে না। কিন্তু এরই মাঝে এক বন্ধুর ফেইসবুকে শেয়ার করা একটি পোস্ট দেখে আতকে উঠি। হাজার শেয়ার আরো লাখো লাইকের বন্যায় ভেসে আছে আমার উপরের শিশুদের নিয়ে লিখাটি। তারপর টনক নড়লো... আমার মতো অগা-জগার লিখার এতো মার্কেট ভ্যালু কেমনে । খোঁজাখুজিঁ শুরু করলাম ... অত:পর যত্রতত্র নিজের লিখার কপি পেস্ট অন্যের নামে জ্বলজ্বল করতে দেখে বাধ্য হয়ে ৫০ এর উপর পুরাতন লিখাগুলা ড্রাফট্ এ নিয়ে নিলাম।
কি পেলাম: এবার আসি ব্যালেন্সসিট মিলানোর পালা। কি পেলাম আর কি পেলাম না। পেলাম !!! অসংখ্য ভার্চুয়াল বন্ধু..... যাদের সাথে আছে মনের কোথাও লুকিয়ে থাকা মিল। তাই ভালোলাগা মন্দলাগা সুখ দু:খ শেয়ার করেছি, ঝগড়া করেছি, সমালোচনা করেছি, উৎসাহ পেয়েছি ও দিয়েছি আর যা দেখেছি তা ব্লগে তুলে এনে সবার সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আর পেয়েছি যেকোন খবরের পিছনে খবর। পড়েছি না জানা অসংখ্য তথ্য, দারুন কিছু প্রিয় বিষয়। পেয়েছি দারুন কিছু গল্প কবিতা ছড়াকারকে। যাদের প্রতিভা দেখলে তাজ্জব হই।
কি পেলাম না : এমন কিছু নেই আমার ডিকশানিরেতে তবে কিছু আপসোস বা দু:খ আছে। সেরকম কিছু দু:খ.... হাঁ, যে উচ্ছলতা, উদ্দীপনা, তর্ক-বিতর্ক, আড্ডা..........সেই সামুকে খুজেঁ পাই না এখন। আমি জানি একজন জানা আপু ও তার সাথে নিবেদিত প্রান কিছু তরুন কর্মী দিনের পর দিন এ ভার বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শত নাস্তিক আস্তিকের ঝড়, রক্তের বন্যায় ভেসে যাওয়া কিছু প্রিয় ব্লগারের মুখ, শাহবাগ আন্দোলনের সূচনা, সারা বিস্বে তোলপাড় করা ব্যানার হাতে তরুন তরুনীর সে স্রোত সামাল দিয়েছে সামু নিজ দক্ষতায়। ব্যাক্তি স্বার্থে ব্লগে নাস্তিকতা নিয়ে আসা বা আন্দোলন হাইজ্যাক ........... অনেক কিছুর সাক্ষী আমি। তারপর ও সাম হোয়ার টিকে আছে নিজ গুনে, কিছু অসাধারন ব্লগারের গুনে। কিন্তু দু:খ, এরকম অনেক অভিমানী ব্লগার ব্লগ ছেড়ে চলে গেছে। তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে কি আমরা পারি না? একটি শুভেচ্ছা মেইল কি দিতে পারি না? ফিরে আসার আহবান কি জানাতে পারি না? হয়তো পারি কিংবা পারি না। যেহেতু আমি নিজে এর সাথে জড়িত না তাই এর কঠিন অংশটুকু আমার জানা নেই। তারপরও একটু ইচ্ছে জানালাম।
তবে সত্যিই আশার কথা, ব্লগিং ও ব্লগের সে কালো মেঘ অনেকাংশে সরে গেছে। মোটামুটি এখন দেশের মানুষ জানে ব্লগ মানেই নাস্তিকতা না, ব্লগ মানেই সরকার বিরোধিতা না ..........। হাঁ, ফিরে আসছে অনেক পুরোনো, যোগ হচ্ছে ব্লগার সাথে নতুন মুখ। আশা করি সামহোয়ার তার যৈাবন ধরে রাখবে সবসময়। আর আমরা বছর ধরে ঘুরে ফিরে বেড়াবো এ ব্লগ থেকে অন্যব্লগে... একটু না হয় সুখ দু:খের গল্প করলাম, কারো জন্মদিনে একটি কবিতা বা কিছু লিখা উপহার দিয়ে চমকে দিলাম, কোথাও গেলে খারাপ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অন্যকে সাবধান করলাম, কোন গল্পের প্লট মাথায় আসলেই লিখে সবার মতামত নিলাম.......... থাক না স্বাক্ষী হয়ে অনেক টুকরো টুকরো স্মৃতি।
............. ভালো থাকুন সবসময়........ কোথাও যাবেন না, গেলে ও ফিরে আসবেন আবার.!!!!! হ্যাপি ব্লগিং।
অনেক অনেক দিন পর আমার প্রিয় কিছু ছবি শেয়ার করলাম (বি:দ্র: সময়ের অভাবে বেশি বর্ননায় যেতে পারলাম না, সব প্রিয় ছবি দিতে গেলে কয়েকটা পর্ব লাগবে তাই ও পথে গেলাম না....)।
কোটি কোটি গ্যালন পানির নীচে দাড়িয়ে রংধনু দেখার মাঝে যে কি অদ্ভুত শিহরন না দেখলে ফিল করা যায় না। নায়াগ্রা ফলসের একটি প্রিয় ছবি।
ড্রেসডান, জার্মানীর এর ভুতের এ বনটি দেখে অদ্ভুত লেগেছিল। দিনের বেলায় ও একটা গা ছম ছম পরিবেশ।
সুইজারল্যান্ড সে পাহাড়ী এলাকা যেখানে দিল ওয়ালে দুলহানিয়ার স্যুটিং হয়েছিল। সত্যিই সে টা অসাধারন জায়গা।
এটি সাক্সেনে সুইজারল্যান্ড। এতো সুন্দর নদীর পাশে, আহ কি যে সুন্দর........ বার বার যেতে মন চায়।
হতাশ হয়েছি বার্লিন ওয়াল দেখে, তাই শেয়ার করলাম।
আর প্রথমেই যে মেয়েটির ছবি দেখেছেন, ওটা মিশরের ক্লিউপেট্রার আদলে তৈরী মডেল। ওকে দেখে মনে হয়েছে আহ্ সে যুগে যদি কোন রানী হয়ে জন্মাতাম..........
অনেক অনেক ভালো থাকুন সবাই.....
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:০৫