somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

জীবন যেখানে যেমন, আমার প্রবাস জীবনের ডায়রী,............ বিদেশী বিড়ম্বনা !!!

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অফিস থেকে বাস ধরে ট্রেন স্টেশনে আসতেই শুনলাম মাইকে ঘোষনা চলছে, ভিক্টোরিয়া পার্ক স্টেশনে পার্সোনাল ইনজুরির কারনে এ ট্রেন উইডবাইন স্টেশনে এর পর আর যাবে না। সকল ট্রেন সার্ভিস বন্ধ করা হয়েছে। এবং বিকল্প সাটল বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাত্রীরা নেমে পড়ুন।

কানাডার ট্রেন সিস্টেম অসাধারন। এটা আমি অনেক বারই শেয়ার করেছি। কখনই এক মিনেটের জন্য দেরী হয় না। অামি ঠিক ঘড়ির কাটা ধরে বাসা থেকে বের হই, বাস ধরি ট্রেন ধরি আবার ঠিক সময়ে বাসায় ফিরি। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ অন্তত কয়েক মাস পর ই এ ধরনের ঘোষনা দেখি। প্রথম প্রথম পার্সোনাল ইনজুরির শুনে ভাবতাম স্টেশনে হয়তো কেউ অসুস্থ হয়ে গেছে। আর এখানে এতো বেশী সিকিউরিটি মেইনটেইন করে যে কেউ ট্রেন সার্ভিসে অসুস্থ হয়ে পড়লে সব ট্রেন বন্ধ করে ওই যাত্রীর সর্ব্বোচ ব্যবস্থার পরই আবার সব চালু করে। অনেকটা মশা মারতে কামান দাগানো অবস্থা। আমাদের দেশে পথে ঘাটে মরে পড়ে থাকলে ও কেউই তাকায় না অথচ এখানে... সামান্যতেই কঠিন ব্যবস্থা। এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রেন বন্ধ থাকলে ও কেউই একটু অসন্তষ্ট প্রকাশ করে না, একটু ও বিরক্ত হয় না... কোন ধাক্কা ধাক্কি নেই, পকেট মার নেই...। আমার ব্যাগপ্যাকের চেইন খোলা ছিল, পিছন থেকে এক হ্যান্ডসাম এসে বললো এবং চেইন লাগালাম। এ এক ঘন্টায় ব্যাগে রাখা টাকা সহ পার্স বা নতুন কেনা মোবাইল কেউই ছুয়ে ও দেখলো না। একবার জেনেভায় এয়ারপোর্টে আমরা কয়েকজন নীচে ব্যাগ রেখে রেস্টুরেন্টে খাচ্ছিলাম। এবং কিছুক্ষন পরেই অামার বস নোটিশ করলো তার পায়ের কাছে রাখা ল্যাপটপ ব্যাগ উধাও......। হাজার হাজার লোক আমরা প্লাটফর্মে দাড়িঁয়ে আছি, একটা করে বাস আসলো আর আমরা লাইন ধরে এগিয়ে বাসে উঠে যাচ্ছি। আমার বাসায় পৈাছাতে শুধু ৪০ মিনিট বেশী লেগেছে, বাড়তি কোন টাকা না। কারন ওইসব বাস সম্পূর্ন ফ্রি।

যাই হোক যা বলছিলাম, পার্সোনাল ইনজুরির কথা। পরে জানলাম এসব পার্সোনাল ইনজুরি আসলে আত্মহত্যা। এখানে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা খুবই কমন ঘটনা। কিন্তু কখনই এধরনের কোন নিউজ পত্রিকায় আসে না বা ট্রেন কেন বন্ধ রয়েছে তার কারন ও বলে না। কারন কি?? কারন এরা মনে করে এ ধরনের নেগেটিভ নিউজ অন্যকে উৎসাহিত করে। আত্মহননকারীরা বা হতাশাগ্রস্থ ব্যাক্তি একজন আরেকজনকে খুজেঁ পাবে। তাই কোনভাবেই তা জানানো হয় না এ ধরনের নিউজ। প্রতিটি ট্রেন বাস স্টেশনে বিলবোর্ড থাকে, আত্মহত্যা সংক্রান্ত। ফ্রি কল, ফ্রি কাউন্সিলিং এমন কি সরাসরি কথা বলার জন্য টেলিফোন বুথ থাকে। স্কুল কলেজ প্রতিটি জায়গায় মেন্টাল হেল্থ ক্লাস নেয়। নীচের ছবি দেখেন, স্টেশনের হেল্প লাইনের......



কিন্তু কেন??? কেন তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়???? খাওয়া পড়ার চিন্তা নেই, আমাদের মতো তেল আনতে নুন ফুরানো অবস্থা নেই, সরকারী বেসরকারী মাস্তান নেই, বাটপার নেই, অবাধ স্বাধীনতা.... চাইলেই পাল্টাও গার্ল ফ্রেন্ড বা বয় ফ্রেন্ড, বনিবনা হচ্ছে না সংসারে নোজা ডিভোর্স কারন অর্থনৈতিক টেনশান না থাকার কারনে মেয়েরা অন্তত মাটি কামড়ে স্বামীর মার-ধর খেয়ে পড়ে থাকে না, শশুড়-শাশুড়ি ননদ-দেবরের গুতা নেই, ইভ টিজিং নেই, পাড়া পড়শীর বাঁকা কথা নেই....... কোথাও কোন "নেই" নামক শব্দের এর বালাই নেই।

তাহলে কেন তাদের সুখে থাকতে ভুতে কিলায়। কেন তারা মরতে যায়??????? আমার মাঝে মাঝে তাদের আত্মহত্যার অবস্থা দেখে মনে হয় যেয়ে বলি, প্লিজ তোরা কয়টা দিন খরার সময় উত্তরবঙ্গে থেকে আয়। সারাদির মাঠে কাজ করবি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত... ক্ষেত নিড়ানো, ধান মাড়া, গরু চড়ানো তারপর পর এক মুঠো ভাত দিব। আর সে ভাত খাবার পর যে আনন্দ তা আগে ফিল করে আয়.... ছাগল কোথাকার।

হাঁ এর উত্তটা খুব সহজ, ওরা গবেষনা করে যেটা বের করছে তার থেকে আমরা ভালো জানি। ...... ফ্রি সেক্সের দেশ এটি। কে যে বাবা বা কে যে স্বামী তা অনেকেই জানে না। সম্পর্ক তৈরী হওয়ার মূল ভিত্তিই শারীরিক সম্পর্ক। একটি ছেলে বা একটি মেয়ে তার বয়:সন্ধি থেকে কতজনের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশানে জড়িয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। তারপর ঠক বাছতে গাঁ উজারের মতো একসময় দেখে বয়স অনেক এবং কাউকেই পাচ্ছে না জীবন সঙ্গী হিসেবে। তারপর শুরু হয় হতাশা। আর ফ্যামিলি বন্ডিং না থাকার কারনে কেউই এগিয়ে আসে না এ দু:সময়ে।

দ্বিতীয় কারন পরিবার না থাকা। শিশুদের মোটামুটি একটা বড় অংশই সিঙ্গেল মাদারের কাছে বড় হয়। বাবা নামক কেউ থাকলে ও তার সাথে মাসে বা বছরে দেখা হয়। মা একা সন্তানকে মানুষ করতে যেয়ে খুব একটা সময় দেয় না কারন তাকে নতুন বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করতে ব্যাস্ত থাকতে হয়। একাকী বড় হওয়া শিশুটি দিনের পর দিন হতাশায় ভোগে। পরিবারের আদর ভালোবাসা কোনভাবেই কপালে জোটে না। যদিও বা কালে ভদ্রে নতুন বাবা পায় কিন্তু সে সৎ বাবা খুব রেয়ারই আপন হয়।

পার্সোনাল এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করি। আমাকে অফিসে পাবলিক ডিলিং করতে হয় প্রায়। একবার এক দম্পতি এলো ফুটফুটে দু'টো মেয়ে নিয়ে। ছোটটির বয়স এক বছর আর বড়টি আমার মেয়ের সমান ৬ বছর। যেহেতু প্রায় ক্লায়েন্ট বাচ্চা নিয়ে আসে এবং কাজের মাঝে পুচকাগুলা খুব ডিস্টার্ব করে বাবা-মাদের তাই অফিসে কিছু খেলনা ও কালার করার সরন্জাম থাকে। তো দুই পিচ্চি আসার পর আমি অফিসের লগো টয় দিলাম ছোটটারে। ছোট মানুষ কিউরিসিটি থাকবেই তাই বড়টা একটু দেখতে চাইলো খেলনাটা। অমনি বাবাটা মারাত্বক ধমক লাগালো কেন ছোটটার খেলনা ধরছে। একটু ভ্যাবাচেকা খেলাম অামি কারন কানাডায় বাচ্চাদেরকে কেউই ওপেন ধমক দেয় না। আরেকটা টয় এনে ওকে দিতেই বাবাটা খুব বিরক্ত হলো। বললো, তুমি খুব লোভী, তোমার এভাবে ছোটদের জিনিস লোভ করা ঠিক হয়নি। মেয়ে প্রায় কাঁদো কাঁদো চোখে মায়ের কাছে এলে আবারো ধমক খেল বাবার। এই ১০ মিনিটে বাচ্চাটির এ নাজেহাল দেখে একটু সন্দেহ হলো। পরে মেয়েটির নাম এন্ট্রি করতে যেয়ে বুঝলাম ওর মেয়ে না কারন এখানে বাচ্চাদের নামে সাধারনত বাবার নামের অংশ লাগায় যাতে সবাই বুঝতে পারে কার সন্তান।

আর তৃতীয় কারন মারাত্বক প্রাইভেসী। এখানে প্রাইভেসীকে এতো বেশী গুড়ুত্ব দেয়া হয় যে বাবা মা পর্যন্ত সন্তান না চাইলে তার ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করে না। প্রাইভেসী এ্যাক্ট মারাত্বক সেনসেটিভ। যার দরুন কেউ কাউকে ডিস্টার্ব করে না বা কোন কারনে ঘাটায় না যার কারনে এক সময়ে একাকী হয়ে পড়ে। নিজের সুখ দু:খ শেয়ার করার মতো কাউকেই কাছে পায় না। এ একাকিত্ব এক সময় হতাশায় রুপ নেয়।

আজ এ পর্যন্ত আর লিখতে ইচ্ছে করছে না...........

ভালো থাকেন সবাই ........ মেরি ক্রিসমাস এন্ড হ্যাপি নিউ ইয়ার।

আরো বেশি কিছু জানার কারো ইচ্ছে থাকলে কানাডার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখতে পারেন। কানাডার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট



সকল ছবির ক্রেডিট গুগুল মামার।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৮:০৩
৫৬টি মন্তব্য ৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সুরের জাদু: গিটার বাজালে কি ঘটবে?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪১



গাজীপুরের পুবাইলের পুরনো গির্জাটি রাতের আঁধারে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই গির্জার নির্মাণকালে কিছু না জানা কুসংস্কারের অনুসরণ করা হয়েছিল। গাজীপুরের লোককথায় বলা হয়, এই গির্জার নিচে আটটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা, লোভী এবং সাম্রাজ্যবাদীও বটে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....

জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

এআই দ্বারা তৈরিকৃত রাজনৈতিক কার্টুন—যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অসাম্যতা ও রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এপিআই প্ল্যান্ট

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:১৮




ওষুধে দুটো উপাদান থাকে। ওষুধের যে রাসায়নিক উপাদানটি মূলত রোগ সাড়ানোর কাজ করে, সেটিকে বলে এপিআই। দ্বিতীয় উপাদানটিকে সহকারি উপাদান বলে, যেমন— স্টার্চ, রং বা ফ্লেভার।

এপিআইয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×