অফিসে চাকুরিরত মেয়েদের সাথে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে বাস্তবতার আলোকে আমার এ পর্বগুলো সাজিয়েছি যা সাধারন দৃস্টিতে হয়তো তেমন কিছুই নয় কিন্তু একটি মেয়ের প্রেক্ষাপটে অনেক কিছু .......
পর্ব ৩
সিড়িটার পাশটা খুব ছোট, দু'জন পাশাপাশি ক্রস করতে হলে ধাক্কা খেতে হয়। আস্তে আস্তে মেয়েটার পিছনে উঠছি কারন তার পাশ দিয়ে বা তাকে ধাক্কা দিয়ে উঠতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। মেয়েটি এডভান্স স্টেজ প্রেগনেন্ট, অনেক কস্টে পা'দুটো টেনে টেনে আস্তে আস্তে নিজের বিরাট শরীরকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে... এ অবস্থায় শরীরকে পাহাড় থেকে ও বড় মনে হয়। তিন তলায় উঠে মেয়েটি একটু হাফাচ্ছিল ... ক্রস করে যেতে যেতে পিছন ফিরে মুখের দিকে তাকালাম... ক্লান্ত, অবসন্ন চিরাচরিত একটা মুখ।
দু'দিন পর লম্বা মিটিং থেকে বের হয়ে রুমে বসতেই একটা স্লিপ। ভেতরে আসার অনুমতি দেয়ার পর দেখি সেই একই মুখ। বলুন, কি চাই?
ম্যাডাম আমি শরিয়তপুরের হ্যাল্থ্ এডুকেটর। আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই ..... আগামী সাপ্তাহে আমার ডেলিভারী ডেট কিন্তু এখনো মেটারনিটি লিভ এর অর্ডার পাইনি... গত ৪ মাস আগে এপ্লাই করেছি লিভ এর জন্য। আমি গত জুনে জয়েন করেছি, প্রায় আট মাস হলো এখানে।
তুমি এইচ আর সেকশানে এ যোগাযোগ করো.... এপ্লিকেশান করো। লিভ পলিসি অনুযায়ী তুমি লিভ পাবা।
কিন্তু এইচ আর সেকশানে বলেছে চাকরীতে জয়েন করার ৯ মাস না হলে মেটারনিটি লিভ পাওয়া যায় না। ওরা উল্টা আমাকে কেন পেগনেন্ট অবস্থায় জয়েন করেছি তার জন্য বকা দিচ্ছে। বলেন ম্যাডাম, জয়েনিং লেটার ফর্মে কোথাও পেগনেন্ট কিনা তার কোন ঘর পূরণ করার অপশান ছিল না। তাহলে আমি কিভাবে জানাবো। আমি ৩ দিন ধরে ঢাকায় আছি আর এখানে ছুটাছুটি করছি, ঢাকায় কোন আত্মীয় নেই... অনেক দূ:সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় আছি..... এইচ আর বলেছে লিভ উইদাউট পে দিতে পারে কিন্তু ম্যাডাম তাহলে খাবো কি? আমার স্বামী ও সিভিল সার্জেন অফিসের হ্যাল্থ্ এডুকেটর জয়দেবপুরে। দু'জনের টাকায় কোনরকমে চলে শাশুড়ি ননদ সহ ৭ জনের সংসার.... এর মাঝে বেতন না পেলে খাবো কি বাসা ভাড়া দিব কি????
এইচ আর পলিসির বাইরে আমার ক্ষমতা নেই তারপর ও তুমি এপ্লাই করলে আমি বিশেষ বিবেচনার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠাবো যাতে তোমার বিষয়টি কনসিডার করে।
কিন্তু ম্যাডাম, আমার হাটার ক্ষমতা ও নেই এ মূহুর্তে, কেউই আমার শারিরীক কস্টটা বুঝে না। শরিয়তপুরের অফিস থেকে বলে দিয়েছে কিভাবে অফিস চলবে তারা জানে না বা অামার রিপ্লেসমেন্ট এর ব্যাপারে তারা হেড অফিসের সাথে ও যোগাযোগ করবে না .... উল্টা ঠিকভাবে কাজ করতে পারছি না বলে অসম্ভব দূর্ব্যবহার করে। তাই এখানে আসলাম যদি কিছু করতে পারি কিন্তু এইচ আর উল্টা ধমক দিচ্ছে। ৩ দিন ধরে টেবিলে টেবিলে ধর্না দিচ্ছি কেউই কিছু হেল্প করতে পারছে না। তাই আপনার কাছে আসলাম... একজন মেয়ে হিসেবে অন্তত আমার কস্টটা বুঝবেন... কোন পথ বাতলে দিবেন।
যথারীতি এইচ আরকে ডাকলাম। কিছু করা যায় কিনা তার রিকোয়েস্ট করলাম... তারা এক কথায় উড়িয়ে দিল। আরো বললো, শরিয়তপুরের অফিস থেকে ফর্মাল রিকোয়েস্ট না এলে রিপ্লেসমেন্ট প্রসেস সম্ভব নয়। আর ও নিজের অফিসের সাথেই সম্পর্ক ভালো না.... কে তার জন্য ছোটাছুটি করবে !!!!!
ঠিক আছে কি করা যায় দেখছি বলে মেয়েটিকে ও এইচ আর কে বিদায় দিলাম... শরিয়তপুরের অফিসে ফোন দিলাম। অফিস প্রধানকে ফর্মাল রিকোয়েস্ট এর জন্য রিকোয়েস্ট করলাম। স্পস্ট বিরক্ত মনে হলেও কাজটা করার প্রতিশ্রতি দিল। হেড অফিসের একজনকে টেম্পোরারী পোস্টিং এর জন্য ফাইল প্রসেস করালাম। তারপর মেয়েটির ছুটি বিশেষ বিবেচনার জন্য রিকোমেন্ড করলাম.......
পরিশেষে; এইচ আর এর বিগ বস্ এসে বললো... আমাদের আর দরকার কি আপনিই যখন সব করতে পারেন.......... হাঁ করতে পারি, আমরা সবই করতে পারি.. যখন দেখি কিছু অথর্ব লোকজন সবকিছুকে অফিসিয়াল ফর্মেটে ফেলে দেখে... রুলস্ রেগুলেশান দেখে.... ঘটনার মানবিক দিক ও যে দেখা উচিত এটা বুঝেই না বা বুঝতে চায় না।
আজ এটুকু... পরবর্তিতে আসছি আরেকটি ঘটনা নিয়ে... ততদিন ভালো থাকুন....
আমার আগের পর্ব যদি পড়তে চান.....
আপনি যদি চাকুরীজীবি মেয়ে বা মা হোন তাহলে লিখাটি আপনার জন্য... আপনার সাথে মিলে ও যেতে পারে (পর্ব ২)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০১