ঘটনা ১ :
কতক্ষন থেকে খেয়াল করলাম রুমের সামনে কে যেন বার বার দরজাটা একটু ফাঁক করে উকিঁ দেয়ার চেস্টা করছে। কাজে কনসেন্ট্রেশান দিতে পারছিলাম না.... একটু বিরক্ত হয়ে উঠে দেখলাম, দরজার কাছে খুব জড়সড় হয়ে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কি চান? কিছু বলবেন?
জ্বি ম্যাডাম... মাথাটা তেমনি নিচু করা, চোখ তুলে তাকাতে ও ভয় পাচ্ছে।
রুমে আসেন... অভয় দিয়ে রুমে নিয়ে বসালাম। কিছু বলবেন? সহজভাবে কথা বলার চেস্টা করলাম। অনেকক্ষন চুপ থাকার পর অঝোরে কাঁদতে শুরু করলো মেয়েটি। এধরনের অবস্থায় আমি সবসময় অপ্রস্তুত হই আর কাদঁতে দেই যাতে নিজেকে হাল্কা করতে পারে... তারপর আস্তে আস্তে কাধেঁ হাত রাখলাম। বললাম, কিছু বলবেন?
ম্যাডাম, আমি খুব বিপদে পড়েছি। সকাল থেকে অফিসের সবার রুমে রুমে দৈাড়াচ্ছি। কেউ কিছু হেল্প করতে পারছে না... একজন বুদ্ধি দিল আপনার সাথে দেখা করতে। ম্যাডাম, আমি জানি একটি মেয়েই শুধু আরেকটি মেয়ের দু:খ বুঝে। তাই সাহস করে আপনার কাছে আসা। ম্যাডাম, যদি আপনি কিছু করতে পারেন...
ম্যাডাম, আমি মিরপুর অফিসের এ্যাসিসটেন্ট ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। আমার একটা ৫ বছরের মেয়ে আছে ও আমি আবার ৩ মাসের প্রেগনেন্ট। আমার টাকায় আমার সংসার চলে, আমার স্বামী একাট দোকানের কর্মচারী কিন্তু কোন টাকায় সে সংসারে দেয় না উল্টা প্রায় মারধর করে। এ অবস্থায় আমি সাধ্যমত চাকরী করি। কখনও অফিসে লেট করি না বা কাজে ফাকিঁ দেই না। বরং আমার স্যারের (মানে প্রধান ডাটা এন্ট্রি অপারেটর) সব কাজ সাধ্যমত করে দেই। কিন্তু স্যার আমাকে যখন তখন গালাগালি করে, আজে বাজে কথা বলে। বন্ধের দিন ও অফিস করতে হয়, এমনকি রাত ৮/৯ টা বেজে যায় মাঝে মাঝে। আর এদিকে বাসায় দেরী করে যাই বলে প্রায় আমার স্বামী আজে বাজে কথা বলে খুব মারধর করে।
গত পরশু আমি বেশী রাতে কাজ করবো না বলে একটু রাগ করে কথা বলেছিলাম স্যারের সাথে। স্যার আমাকে খুব ধমকিয়ে বলছিল, কিভাবে আমি এখানে কাজ করি তা দেখে নিবে। আর কাল সকালে চিঠি পেলাম আমাকে বরগুনাতে বদলী করা হয়েছে। ম্যাডাম, ঢাকার বাইরে বদলীর কথা শুনে আমার স্বামী তালাক দিবে বলেছে আর চাকরী ছেড়ে দিলে খাবো কি? আর স্বামীকে তালাক দিলে সমাজ তো আমাকেই বাজে মেয়ে বলবে। এখনতো মাথার উপর একটা ছায়া আছে, মেয়েটাকে বিয়ে দিতে বাবার একটা পরিচয়তো দিতে পারবো.... হোক মারধর খাচ্ছি কিন্তু তালাক দিলে তো তাও পাবো না।
আমি বুঝতে পারলাম কার কথা বলছে ....... তুমি এইচ আর সেকশানে কথা বলছো না কেন? আর আমি তো এইচ আর দেখি না আর অন্য ডিপার্টমেন্টের কাজে ইন্টারফেয়ার করা কি ঠিক?? তুমি একটা প্রেয়ার দাও।
বলেছিল ম্যাডাম কিন্তু তারা বলেছে, এটা উপরের অর্ডার তারা কিছু করতে পারবে না। আমাকে প্রেয়ার দিতে বলেছে, যদি ভবিষ্যতে পোস্ট খালি হয় তাহলে বিবেচনা করবে। কিন্তু ম্যাডাম, আমি জানি এটা কথার কথা। আমাকে আপনি বাচাঁন।
খুব মন খারাপ হলো... ঘটনা কি আমি জানি না তার উপর এ এইচ আর সেকশানের লোকজনকে আমি পছন্দ করি না কারন তারা এমন একাট ভাব নেয় যে তারাই চাকরী দাতা।
মিরপুর অফিসে ফোন করে খোঁজ নিলাম, ঘটনা কি জানার জন্য। সবাই মেয়েটির কথাই সত্য বললো। তারপর এইচ আর সেকশানের কে ডাকালাম, চিঠিটা দেখিয়ে তাকে বদলীর কারন জানতে চাইলাম। চিঠিটা দেখে সে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। গজ গজ করতে করতে বললো, আপনার কাছে ও এসেছে!! এ মেয়েটা খুব খারাপ, খুব বাজে মেয়ে। কাজ করে না উল্টা তর্ক করে ইউনুস সাহেবের সাথে। কাজে যারপর নাই ফাকিঁ দেয়...ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি । তারতো চাকরীই থাকে না... শুধু আমার দয়ায় চাকরীতে রেখেছি.......ইউনুস সাহেবের সাথে যেই বিহেব করেছে!!!
ঠান্ডা মাথায় বললাম, তাকে যে পানিশমেন্ট বদলি করেছেন তার ইনকোয়ারী রিপোর্ট দেন। অাচ্ছা দিচ্ছি বলে কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা রিপোর্টের কপি দিল আমার ডেস্কে ......... এবং তাজ্জব হয়ে দেখলাম চারজন সাক্ষী সহ রিপোর্ট মোটামুটি রেডি !!!! এবং সেখানে মেয়েটিকে চাকরীচ্যুত করার সুপারিশ করা হয়েছে..........
আজ এ পর্যন্ত...... আবার কথা হবে !!!
আমার আগের মেয়েদেরকে নিয়ে লিখা যদি পড়তে চান....
বেকার বন্ধুদের জন্য ফ্রি উপদেশ (এ পর্ব বিশেষভাবে মেয়েদের জন্য ছেলেদের প্রবেশের কোন প্রয়োজন নেই) ........ পর্ব-৬
যথারীতি আমার একটা তোলা ছবি...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০২১ সকাল ৮:২৩