আমার আজকের পর্ব শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য কারন আমি আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি মেয়েরা কতটা নিগৃহীত চাকরীর প্রতিটি পদক্ষেপে... কি প্রমোশন ক্ষেত্রে... কি সাবোর্ডিনেট হিসেবে ... কি বস্ হিসেবে.......। তাই তোমাদেরকে সর্তকতা মূলক ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বর্ননা দিতে আজকে আমার এ লিখা। অনেক বড় হওয়াতে লিখাটা দু'ভাগ করেছি, আশা করি তোমাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে।
কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশ একটা বিশাল ফেক্টর কারন আমি আপনি দিনের ৮০% সময় অফিসে থাকি। আর এ সময়টা যদি আমরা ভালো না থাকি তাহলে বাকি ২০% .... মানে জীবনটাই অতীষ্ট হয়ে যায় । আমি এমনও দেখেছি মেয়েরা শুধুমাত্র পরিবেশের কারনে চাকরী ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে আর যারা পারেন না তারা কতটা অসহ্য মানষিক যন্ত্রনা ভোগ করেন প্রতিদিন তা আমরা শুধু মেয়েরাই জানি বা বুঝি.....।
এবার আসি অফিসে তোমাদের ভূমিকা নিয়ে কিছু কথা....... তোমরা কি করবা.. কিভাবে তোমরা নিজেদেরকে প্রতিস্ঠিত করবে.........
আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করো, কেন চাকরী করছো???? সময় কাটানো জন্য নাকি বাবা, মা, স্বামী বা প্রেমিকের চাপে। তা যদি হয় তাহলে এতো সিরিয়াস হওয়ার দরকার নাই। জাস্ট সময়টাকে এনজয় করো। আর যদি চাকরীকে সিরিয়াসলি নাও তাহলে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখবা।
১) ধৈর্য্য, কাজ করার মানসিকতা, পজিটিভ চিন্তা আর পরিশ্রম তোমাকে সঠিক যায়গায় নিয়ে যাবে অবশ্যই। তাই অনেক প্রতিকূল পরিবেশে ধৈর্য্য হারাবে না। মনে রেখ, মেয়ে মানেই কিন্তু প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ধাক্কা খাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।
২) কোথাও জয়েন করে আগে পরিবেশ অনুধাবন করো। আগেই নিজেকে প্রকাশের জন্য ব্যস্ত হয়ো না। পরিবেশ অনুযায়ী নিজেকে আপডেট করো। নিজেকে ওদের একজন করে নাও। যেমন অফিসের সব মেয়ে বা ছেলেরা যদি খুব সেজে গুজে যায় তাহলে তোমাকে ও তা করতে হবে নতুবা তুমি ওদের একজন হতে পারবে না.. পিছিয়ে যাবা। সকালে যদি টি আড্ডা দেয়ার পরিবেশ থাকে তাহলে শত ব্যস্ততার মাঝেও আড্ডা দেয়া মিস্ করবা না।
৩) খুব বেশী কথা বলার চেস্টা করবে না কখনই, নিজেকে জাহির করার চেস্টা করো না সব সময়। প্রথম কিছুদিন শুধু জানার চেস্টা করো, অফিসকে বুঝো। কারো ব্যাক্তিগত বিষয়ে যেমন নাক গলাবে না আবার নিজের ব্যাক্তি জীবনের সবকিছুও প্রকাশ করবে না। মনে রেখ অফিস অফিসই.... অফিস কখনই আপন হয় না।
৪) নিজের ব্যাক্তি জীবনকে সবার সামনে তুলে ধরবে না। স্বামী, শাশুড়ি, ননদের বদনাম করার অনেক যায়গা আছে... অফিস নয় কিছুতেই। অফিস তোমার অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানোর জায়গা নয়। তোমাকে সামনে তারা সহানুভূতি দেখালেও পেছন থেকে তোমাকে নিয়েই সবাই হাসাহাসি করবে। অফিস একটা চরম কম্পিটেশান এর যায়গা। যেকোন সময় তোমার প্রকাশই তোমাকে বিপদে ফেলবে। মনে রেখ অফিস মনের কথা বলা যায়গা নয় কিছুতেই।
৫) সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট বিষয় অফিসে কখনই বস বা অন্য কলিগের বদনাম করবে না বা অন্যের বদনামে অংশগ্রহন ও করবে না কিছুতেই। অনেক সময় আড্ডায় অনেক কিছুই মুখ ফসকে বলা হয় বিশেষ করে বস্ দের বদনাম... তাতেও যোগ দিবে না। দেখবা অন্যের বলা কথা তোমার নামে কেউ লাগিয়ে দিয়েছে। আর কে যে বসের আপন আর কে যে পর তুমি তা না ও জানতে পারো।
৬) তুমি তোমার মনের কোন কথা কাউকে বিশ্বাস করে বলছো আর তা তাকে গোপন রাখতে বলছো তা কিন্তু হবার নয়। যে কথা তুমি নিজে গোপন রাখতো পারোনি সে কথা তোমার কলিগ কিভাবে গোপন রাখবে?? অফিসে আজ যে আপন একটু স্বার্থের ধাক্কা লাগলেই কাল সে আর কিছুতেই আপন থাকবে না মনে রেখ সবসময়।
৭) অফিস প্রেম করার যায়গা নয় এটা মনে রাখবা বিশেষ ভাবে। তবে কাউকে ভালো লাগলে আগে বাস্তববাদী হও। তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে তবেই ঝাঁপিয়ে পড়ো। কারো ব্যাক্তিগত দু:খের অংশীদার হতে গেলে তোমার জীবন কিন্তু দু:খে ভরে যাবে এটা খেয়াল করবে। অনেকে এক্সট্রা মেরিটাল সম্পর্কে জড়াতে চায়.... খবরদার তারা তোমাকে ছিঁবড়ে খেয়ে আবার নুতন সম্পর্ক গড়বে আরেক জনের সাথে।কখনই ওই পথে পা দিবে না। আবার ও মনে রেখ কলিগ হাজবেন্ড হবার সাথে সাথে কিন্তু তোমার কেরিয়ারের বারোটা বাজবে। কাজেই কারো সাথে সম্পর্কে জড়ানোর আগে চিন্তা ভাবনা করো... নিজেকে অনেক প্রশ্ন করো। তোমার দেখা শেষ্ঠ সহকর্মী কিন্তু শেষ্ঠ হাজবেন্ড না ও হতে পারে।
৮) আরেকটা কথা শুধু মেয়েরা শুনো....... সবসময় মনে রেখ তোমার দু:খের ব্যাথি কিন্তু একজন মেয়েই হতে পারে। যদি কিছু একান্ত কথা বলতে চাও বা পরামর্শ চাও তবে কোন মেয়ের সাথে শেয়ার করো। অবশ্যই তুমি কাউকে না কাউকে পাবে যে তোমার মানসিকতার অনেক কাছে...
৯) কখনোই কোন মেয়ের বদনাম করবে না। অনেক ছেলেরা বলে" মেয়েরা মেয়েদের শত্রু", একথা বলে তারা অন্য মেয়েদের বিরুদ্ধে তোমাকে লাগানোর চেস্টা করবে। তাই ওই পথে পা দিবে না কিছুতেই। খারাপ ছেলে যেমন আছে খারাপ মেয়েও আছে। তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেই চলে, শত্রুতা তৈরী করবেনা কিছুতেই।
১০) মনে রেখ অফিসে গ্রুপিং করবে না ... অফিসে দলাদলি করার যায়গা না। কারো সাথে মতবিরোধ হলে জাস্ট দূরে থাকো..... গ্রুপিং করবে না কিছুতেই। আজ তোমার গ্রুপ বিশাল শক্তিশালী কাল তোমার চাকরি না থাকলে কেউ তোমাকে কাছে ডাকবে না। তাই যেকোন ধরনের পলিটিক্স থেকে দূরে থাকো।
আবার ও বলি জীবনের জন্য চাকরী.. চাকরীর জন্য জীবন নয়। তাই তুমি শতভাগ চেস্টা করবে ভালো করতে ভালো থাকতে ততক্ষন পর্যন্ত যতক্ষন তুমি ভালো থাকবা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কিন্তু অবশ্যই ঘুরে দাড়াঁবা। মনে রাখবা চাকরীর জন্য জীবন নয়.... জীবনের সব দু:খই সাময়িক। সৎ, চেস্টা আর আত্ববিশ্বাস থাকলে পৃথিবী কিন্তু তোমার...
আজ এটুকু... আগের পর্ব যাদি পড়তে চাও.........
http://www.somewhereinblog.net/blog/belablog/29914329
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:১৬