somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উইন্ড অফ চেঞ্জ

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সিগারেটের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় সেই স্কুল জীবনে। কত মানুষের সাথে এই ক্ষুদ্র পরিসরের জীবনে পরিচয় হল তার হিসাব না রাখলেও এতটুকু বলতে পারি জীবন থেকে অনেক বন্ধুই হারিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে আমাকে খুব নিঃসঙ্গতায় পেয়ে বসে। মনে পড়ে যায় অতীতের স্মৃতিগুলো। এখন যেমন ঘরে বসেই সিগারেট খাই কিংবা রাস্তায় হাটতে হাটতে সিগারেট খাই কিন্তু সেই সময় একটা সিগারেট খেতে হলে বাসা থেকে বের হয়ে কয়েক মাইল দূরে গিয়ে খেতে হত। আমার এক বন্ধু ছিল সৈকত। আমার একমাত্র সিগারেট খাওয়ার সঙ্গী। এখন যেমন বেনসন না হলে চলে না তখন ক্যাপ্সটেন না হলে চলত না। তারপর পর্যায় ক্রমে গোল্ডলিফ, বাংলা ফাইভ খাওয়া হয়। এই বাংলা ফাইভ ছিল অমৃত একটা সিগারেট কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন আর এই সিগারেটটা পাইনা। একসময় বাংলা ফাইভ প্রচুর খেতাম। তখন সিগারেট মানেই ছিল বাংলা ফাইভ। কিন্তু এই সিগারেটটাকে যে আসলে কেন বাংলা ফাইভ বলা হত তার কোন প্রকৃত সংজ্ঞা আমার জানা নেই। অথচ সিগারেটটার আসল নাম ৫৫৫ ছিল। এখনও কদাচিৎ পাওয়া যায় তবে সেই বাংলা ফাইভটা না। তখন বাংলা ফাইভ সিগারেট কিনে খেতাম তিন টাকা করে। অথচ এখন একটা বেনসন সিগারেট কিনতেই দশ টাকা লাগে। মাঝে লন্ডন নামে একটা সিগারেট বের হয়েছিল। দুই টাকায় পাওয়া যেত। গোল্ড লিফের দাম যখন দুই টাকা থেকে বেড়ে গিয়ে আড়াই টাকা হয়ে গেল তখন এই লন্ডন সিগারেট দিয়েই দিন চলে যেত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল বুকিং পদ্ধতি। ফাস্ট বুক, সেকেন্ড বুক... দেখা গেল কেউ একজন সিগারেট ধরিয়েছে অমনি কেউ ফাস্ট বুক দিয়ে দিল। যে ফাস্ট বুক দিল তার কপালে জুটত সিগারেটে দ্বিতীয় টান। এভাবে একটা সিগারেটই খেতাম দশ এগারো জন মিলে। মাঝে মাঝে কলম দিয়ে দাগ কেটে ভাগাভাগি চলত।



তো প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই সৈকত এসে ডাকত সিগারেট খাওয়ার জন্য। আমি আর সৈকত মিলে এলাকা থেকে কয়েক মাইল দূরে গিয়ে একটা মাঠ ছিল সেখানে এক কোনায় যেয়ে বসতাম। কখনও আমি টাকা দিতাম, কখনও সৈকত। মাঝে মাঝে দুইজনে মিলে পয়সা দিয়ে একটা ক্যাপ্সটেন কিনতাম। তারপর মনের সুখে বাতাসে ধোঁয়া উড়িয়ে গান ধরতাম।

I follow the Moskva
Down to Gorky Park
Listening to the wind of change
An August summer night
Soldiers passing by
Listening to the wind of change.......

সৈকত খুব ভাল শিশ বাঁজাতে পারত। স্করপিয়ন্সের এই গানটার শুরুতে যে শিশটা আছে ঐটা সৈকত খুব ভাল পারত। তারপর সিগারেট শেষ করে বাসায় ফিরে আসতাম। পথে একটা হোটেল ছিল। হোটেলে ঢুকে ভাল করে মুখ ধুয়ে কুলি করে তারপর লেবু মুখে দিয়ে বাসায় ফেরাই ছিল দৈনিক কাজ। সৈকত শিশ বাজাত আর আমি গাইতাম

The world is closing in
Did you ever think
That we could be so close, like brothers
The future's in the air
I can feel it everywhere
Blowing with the wind of change.......

বাতাসের প্রবাহমানতায় পরিবর্তন এসেছে। বদলেছে এই পৃথিবীর স্বরূপ। সেই মাঠ আজ আর নেই। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে মানুষের বসবাস। নেই সেই ক্যাপ্সটেন সিগারেট। নেই সেই একসাথে দুই বন্ধুর একটা সিগারেট শেয়ার করে খাওয়ার সন্ধ্যার প্রহরগুলো। দূরের কোন অপার্থিব জগতে চলে গেছে সৈকত। যে জগতের আমি স্বপ্ন দেখি প্রিয় বন্ধুটির সাথে জীবনে শেষবারের মত সিগারেটে একটি টান দেয়ার। কেউ কি আমাকে দেবে সেই যাদুময় মুহূর্তের সন্ধান! কতটা নিঃসঙ্গতা নিয়ে আজও আমি সেই চেনাজানা পথ ধরে হেটে চলি। সন্ধ্যার বাতাসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে গেয়ে চলি

Take me to the magic of the moment
On a glory night
Where the children of tomorrow share their dreams
With you and me
Take me to the magic of the moment
On a glory night
Where the children of tomorrow dream away
in the wind of change.......

কেবল আমার এই গানের সাথে এখন আর সুর তোলেনা প্রিয় সেই শিশ.......

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×