অটিজম হচ্ছে মস্তিষ্কের বিন্যাসগত সমস্যা । অটিজম শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে, যার ফলে শিশু শুধুমাত্র নিজের মধ্যে আচ্ছন্ন থাকে, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে । শিশু যখন শুধু নিজের মধ্যে আচ্ছন্ন থাকে তখন তার অন্যদের সাথে যোগাযোগ, সামাজিকতা, কথা বলা, আচরণ ও শেখা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
হেনরি মোস্লে
ইদানিং অটিজম নিয়ে মানুষ কিছুটা জানলেও এ রোগটি আগে থেকেই ছিল। শনাক্তকরণ সম্ভব হয়নি বলেই রোগটিকে নতুন মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রথম ধারণা দেন হেনরি মোস্লে নামে একজন ব্রিটিশ সাইকিয়াট্রিস্ট ১৮৬৭ সালে। তিনিই প্রথম লক্ষ্য করেন যে কিছু কিছু শিশুর সামাজিক ও শারিরীক আচার-আচরণ এবং বুদ্ধিমত্তা অন্যন্য বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের থেকে আলাদা ।
লিও ক্যানার
পরবর্তীতে লিও ক্যানার, একজন আমেরিকান সাইকিয়াট্রিস্ট, ১৯৪৩ সলে এই অসুখের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন এবং এর নাম দেন ইনফেনটাইল অটিজম ।
অটিজম শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের একটি প্রতিবন্ধকতা যার লক্ষন সাধারণত শিশুর জন্মের ৩ বছরের ভিতরে প্রকাশ পায় ।অটিজম বলতে শুধুমাত্র একটি অসুখকে বুঝায় না, আসলে এটি কয়েকটি অসুখের সমষ্টি । যাকে বলে অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার (Autism Spectrum disorder/ASD) । অটিজম আক্রান্ত শিশুদের ভিতরে সামাজিক আচার-আচরণ, যোগাযোগ ও ব্যবহারজনিত সামান্য সমস্যা থেকে শুরু করে প্রচন্ড সমস্যাগুলো ও এই স্পেকট্রাম এ অন্তর্ভুক্ত, যার ফলে সামান্য সমস্যা থেকে শুরু করে অধিক সমস্যাগ্রস্ত শিশুরা এর আওতায় চলে আসে।
অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার (Autism Spectrum disorder/ASD) এর মধ্যে আছে-
১ - ইনফেনটাইল অটিজম (Infantile Autism) - এইধরনের শিশুদের সামাজিক আচরণ, মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগ (Verbal and Non Verbal Communication) ও ত্রিুয়াকলাপের সমস্যা এবং পুনারবৃত্তিমূলক আচরণ থাকে ।
২ - রেটস সিনড্রম (Rett’s syndrome)- এই রোগ শুধু মেয়েদের হয়ে থাকে। এক বছর পর্যন্ত শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে । তারপর তার সামাজিক ও মানসিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় । এরা কথা বলতে পারে না, এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা প্রচন্ড রকমভাবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হয়ে থাকে। এরা হাত-পা ও ঠিক ভাবে নড়াচড়া করতে পারে না ।
৩ - এ্যাজপার্গার সিনড্রোম (Aspergar syndrome) - এ রোগ সাধারনত ছেলেদের হয় । এদেরকে অটিস্টিক সাইকোপ্যাথ বলা হয় । এরা কিছু কিছু কাজ বা আচরণ বার বার করতে থাকে । তবে কথা ঠিকমত বলতে পারে । যদিও কথা বলার ধরন এবং গলার স্বর একটু ভিন্ন রকম হয় । এরা একাকী এবং আলাদা থাকে । তবে কিছু কিছু ছোট ব্যাপারে এদের মধ্যে অধিক আগ্রহ দেখা যায় ।
৪ - চাইল্ডহুড ডিজইনটেগ্রেটিভ ডিজঅর্ডার(Childhood Disintegrative Disorder)- এর আরেক নাম হেলারস্ ডিজিস। এদের সাধারণত দুই বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে । পরবর্তীতে এদের সামাজিক আচরণের সমস্যা দেখা যায় । এদের সাধারনত Neurological problem প্রকট থাকে । এরা হাত পা সঠিকভাবে নাড়াচড়া করতে পারে না এবং নিজের প্রসাব-পায়খানার কথা বলতে পারে না ।
৫ - এটিপিক্যাল অটিজম (Atypical Autism)
৬ - অন্যান্য । (Pervasive Developmental Disorder - Not Otherwise Specified)
শিশুটি অটিস্টিক কিনা বুঝবেন কিভাবে ?
অন্য সকল শিশুর মতোই প্রত্যেক অটিজম আত্রুান্ত শিশু আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী । তাই একজন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য থাকবে অন্য আরেকজন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে সেই একই বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ নাও থাকতে পারে ।
তবে যে প্রধান তিনটি সমস্যা সকল অটিস্টিক শিশুর মধ্যে দেখা যায় তা হল ---
১ - স্বাভাবিক সামজিকগত আচরণ সমস্যা (Social impairment)
২ - মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগ সমস্যা (Verbal and Non Verbal Communication Impairment)
৩ - পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ এবং ত্রিুয়াকলাপ সমস্যা (Restricted & Repetitive activity & interest)
১ - স্বাভাবিক সামজিক আচরণ সমস্যা (Social impairment)
• এরা সাধারনত একা একা থাকে ।
• অন্যদের সাথে মিশতে, খেলতে এবং কথা বলতে চায় না ।
• কথা বললেও অটিস্টিক শিশুরা অন্যের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে চায় না।
• মানুষের প্রতি আগ্রহ কম প্রদর্শন করে।
• কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক আচার আচরণের উন্নতি হলেও সামাজিক দায়িত্ব, ভাববিনিময় ও অপরের প্রতি সহানুভুতির সমস্যা রয়ে যায় ।
• অটিস্টিক শিশুদের আদর-ভালবাসার প্রতি আকর্ষন কম । যেমনঃ তাকে কোলে নেওয়া বা আদর করা সে পছন্দ করে না । তবে অনেক অটিস্টিক শিশু তার প্রতি বাবা মার স্নেহ-মমতা বুঝে ।
• বন্ধু বান্ধবের সাথে খুব কম মিশে ।
• অকারণে হাসে, কাঁদে বা ভয় পায় ।
• প্রথাগত শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কম কিন্তু ছোট ছোট বস্তুর প্রতি আগ্রহ বেশি।
• বিপদ সম্পর্কে অসচেতন।
• যে কোন বিষয় কেউ কেউ অতিমাত্রায় সতর্ক আবার কেউ কেউ মোটেই সতর্ক নয়।
• অনেক বেশি শব্দ অপছন্দ করে।
২ - মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগ সমস্যা (Verbal and Non Verbal Communication Impairment)
• কথা বলা, প্রকাশ ভঙ্গিমা ও সঠিক ভাবে বাক্য বলায় সমস্যা থাকে । (৩০% অটিষ্টিক শিশু কথা বলতে পারে না ।
• ছোট বয়সে বাবলিং (babling) কম হতে পারে ।
• দেরীতে কথা বলা শুরু করে এবং কথায় কিছুটা ভিন্নতা থাকে।
যেমনঃ
- তোতাপাখির মত কথা বলে (parroting/ ecolalia)
- একেবারেই নতুন শব্দ তৈরী করা (Neologism)
• আবার অনেকই একই শব্দ ও বাক্য বার বার বলে ও করে ।
• কখনো কখনো দুই বছর পর্যন্ত কথা বলার ক্ষমতা সঠিক থাকলেও পরবর্তিতে তার অভাব দেখা যায় ।
• কথা বললেও শুধু প্রয়োজনীয় কথা বলে, আলাপচারিতা/গল্প করতে পছন্দ করে না ।
• কেউ কেউ অস্বাভাবিক স্বরে (abnormal tone) কথা বলে । যেমনঃ গান গাওয়ার মত ।
• ভাষার বিকাশ দেরিতে হয়।
৩ - পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ এবং ত্রিুয়াকলাপ সমস্যা (Restricted & Repetitive activity & interest)
• অটিস্টিক শিশু পারিপার্শ্বিক অবস্থা পরিবর্তন পছন্দ করে না । যেমনঃ ঘরের আসবাবপত্র পুনর্বিন্যাস করলে সে অস্থির হয়ে পড়ে।
• একই রুটিন মেনে চলতে পছন্দ করে ।
• একই কাজ বার বার করে। যেমনঃ শরীর বার বার সামনে পিছনে দোলানো, বার বার হাত তালি দেয়া, একই জায়গায় দাড়িয়ে ঘুরা, বারবার হাতের আঙুল মোচড়ানো।
• একই ধরনের খেলা করে (orderly play), যেমন লাইন ধরে জিনিস সাজানো ।
• যা দিয়ে খেলার কথা নয় তা দিয়ে দীর্ঘক্ষন খেলা বা কাছে রাখা । যেমনঃ ছোট এক টুকরো কাগজ ।
• কল্পনাযুক্ত (Innovative or strategic play) খেলা খেলতে পারে না।
• ঘুর্নীয়মান খেলনা পছন্দ করে ।
• একই খাবার পছন্দ করে।
• একই পোষাক বারবার পরতে চায় ।
• কোন খেলনার একটি বা দুটি অংশ নিয়ে খেলতে বেশি পছন্দ করে, পুরো খেলনাটি নয়। কখনো কখনো খেলনার একটি অংশ দিয়ে সারাক্ষন খেলতে থাকে ।
অন্যান্য লক্ষন সমূহঃ
১ - বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী -৭০% বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, ৩০% স্বাভাবিক বুদ্ধি সম্পন্ন
২ - খিচুনি -এক চতুর্থাংশ বাচ্চার মধ্যে দেখা যায় ।
৩ - অনেকক্ষেত্রেই অতিচঞ্চলতা ও ভাংচুরের প্রবনতা থাকে ।
৪ - মনসংযোগের অভাব থাকে ।
৫ - নিজের ক্ষতি করা যেমনঃ নিজের মাথায় আঘাত করা, নিজের চোখে খোঁচা দেওয়া বা হাত কামচনো ।
৬ - অহেতুক অতিমাত্রায় ভয় পাওয়া ।
৭ - কখনো কখনো কাপড়ে প্রসাব পায়খানা করে ফেলে ।
৮ - মাঝে মাঝে ঘুমের সমস্যা ও দেখা যায় ।
৯ - আলো, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, রং, স্পর্শ প্রভৃতির প্রতি অন্যদের চেয়ে প্রতিত্রিুয়া একটু আলাদা ।
জন্মের পর শিশু অটিস্টিক কিনা কিভাবে বুঝবেন ?
(Early Sign)
১ - এক বছর বয়সের মধ্যে বাবলিং না করা ।
২ - এক বছর বয়সের মধ্যে কোন কিছু ইশারা করে না দেখানো ।
৩ - অনুকরণ করার প্রবনতার অভাব ।
৪ - শব্দ শুনে ভয় পাওয়া বা চিৎকার করা ।
৫ - পরিবর্তন অপছন্দ করা ।
অটিস্টিক হবার কারণঃ
অটিজমের জন্য দায়ী সঠিক কোন কারণকে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি । তবে কিছু কিছু গবেষণা থেকে অটিজমের কারণ হিসেবে -
• মস্তিষ্কের গঠনগত ক্ষতি (Structural damage of brain)
• মস্তিষ্কের বিকাশগত প্রতিবন্ধিকতা (Brain based development disorder)
সাম্প্রতিক কালে বিশেষজ্ঞরা মস্তিষ্কের বিকাশের প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসেবে ব্রেনের কিছু অস্বাভাবিক রাসায়নিক কার্যকলাপ কিংবা ব্রেনের কিছু অস্বাভাবিক গঠনকে দায়ী করেছেন ।
• শরীরের নিউরো কেমিক্যাল এর অসাম্যতা
• কোন কোন ক্ষেত্রে জেনেটিক্যাল কারণকে দায়ী করা হয়।
▶ এছাড়া অন্যান্য কারণ
- প্রসুতীকালীন সমস্যা
- গর্ভকালীন/পরবর্তী¬তে সংত্রুামিত ব্যধি
অটিস্টিক শিশুর জন্য যা প্রয়োজনঃ
• শিশুটি অটিস্টিক কিনা তা দ্রত সনাক্তকরণ ।
• দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, বিশেষ করে বিশেষ শিক্ষা প্রদান করা হয় এমন বিদ্যালইয়ে ভর্তি করা ।
• অকুপেশনাল এবং স্পীচ থেরাপস্টের পরমর্শ গ্রহণ ।
• বিশেষ প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ ।
• অন্য শিশুদের বিশেষ করে অ-প্রতিবন্ধী শিশুদের সাথে বেশি মেশার সুযাগ তৈরী করা।
• মনে রাখবেন বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী এবং অ-প্রতিবন্ধী শিশুদের তুলনায় অটিস্টিক শিশুর যারা দেখাশুনা করছেন অর্থাৎ বাবা-মা এবং সেই পরিবারের সহযোগিতা (Care of the Caregivers)বেশী প্রয়োজন হয় ।
অটিস্টিক শিশুর জন্য যা করা জরুরীঃ
• শিশুটিকে সহজ ভাবে গ্রহণ করুন ও শিশুর বর্তমান অবস্থা মেনে নিয়ে ধৈর্য্যশীল, সহমর্মী ও আন্তরিক হোন ।
• শিশুর সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করুন ।
• শিশুর শেখার উপযোগী পরিবেশ তৈরীসহ সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
• শিশুকে সহজ ভাষায় নির্দেশনা দিন এবং তাকে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করুন ।
• শিশুকে তার দৈনন্দিন কাজ করতে সাহায্য করুন ।
• কোন কাজ সে সঠিকভাবে করতে পার লে তাকে উৎসাহ দিন (আদর, চুমু, পিঠ চাপড়ে দেয়া প্রভৃতি)।
যা করবেন নাঃ
▶ শিশুকে ভয় দেখাবেন না ।
▶ শারীরিক আঘাত করবেন না ।(অনেক বিরক্তিতেও না)
▶ কোন কাজ করানোর জন্য জোর করবেন না ।
▶ শিশুকে ঘরে বন্দি করে রাখবেন না।
▶ বিপদজনক জিনিস শিশুর হাতের কাছে রাখবেন না ।
শিশুর ভিতরে নিম্মোক্ত সমস্যা/ সমস্যাগুলি দেখা গেলে অবশ্যই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন কিংবা বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্রে যোগাযোগ করুনঃ
শিশুর যদিঃ
* ৬ মাসের ভিতরে স্বতঃর্স্ফুত ভাবে না হাসে ।
* ৯ মাসের ভিতরে তার চর্তুপাশের যত্নকারীদের কথা, শব্দ,হাসি এবং মুখের ভাবভংগীর সাথে প্রতিক্রিয়ামূলক আচরণ না করে ।
* ১ বছরের ভিতরে মুখে কোন শব্দ না করে (Babling)
* ১ বছরের ভিতরে কোন অংগভংগি না করে (আংগুল দিয়ে দেখানো, টাটা দেয়া, হাত দিয়ে শক্ত করে ধরা)
* ১৬ মাসের ভিতরে একটিও শব্দ না বলা ।
* ২ বছরের ভিতরে দুইটি শব্দের সংমিশ্রনে (অনুকরণ বা পুনরাবৃত্তি না করা) বাক্য না বলা ।
* শিশুটির অর্জিত কথা বলার ক্ষমতা বা সামজিক আচার আচরণমূলক দক্ষতা যদি হঠাৎ করে হারিয়ে যায় ।
ব্লগের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা সেবার সাথে জড়িতদের জন্যঃ
CHAT-THE CHECKLIST FOR AUTISM IN TODDLERS
কোন শিশুর বিকাশগত ব্যাপারে কোন সন্দেহ হলে ১৮ মাস বয়সেই আপনি নিম্মোক্ত পরীক্ষাগুলো করতে পারেনঃ
অভিভাবককে জিজ্ঞাসা করুনঃ
১ - শিশুটি কি খেলনা চায়ের কাপে মিছিমিছি চা বানাতে বা বা অন্য কোন কল্পনাযুক্ত খেলা খেলতে পারে ?
২ - শিশুটি কি তার পছন্দের জিনিসটি আংগুল দিয়ে দেখাতে পারে ?
শিশুটিকে খেয়াল করুনঃ
১ - শিশুটি কি আপনার চোখে চোখে তাকায় ?
২ - শিশুটির মনোযোগ আকর্ষণ করুন, তারপর শিশুরা পছন্দ করে এমন একটি জিনিষের দিকে আংগুল দিয়ে বলুন, এই দেখো কি সুন্দর খেলনা। শিশুটির চেহারা খেয়াল করুন । শিশুটি কি সাথে সাথে জিনিষটির দিকে তাকালো ?
৩ - শিশুটিকে জিজ্ঞেস করুন লাইট/ফ্যান দেখাও তো ? শিশুটি কি লাইট বা ফ্যান আংগুল দিয়ে দেখাতে পারে ? (অন্য কিছুর কথা ও বলা যায় )
অটিস্টিক শিশুরা সাধারণতঃ এই কাজগুলো পারে না । তাই পরীক্ষাটির মাধ্যমে ১৮ মাসেই কোন শিশুকে অটিজম বলে সন্দেহ হলে আপনারা দ্রুত পরবর্তী পরীক্ষার জন্য refer করতে পারেন ।
অটিজম আক্রান্ত শিশুর উন্নতি সম্ভব
একজন অটিস্টিক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়ার পূর্বে নিচের বিষয়গুলো যাচাই করা প্রয়োজন
o বুদ্ধিমত্তা
o কথা বলার ক্ষমতা
o যোগাযোগের ক্ষমতা
o অস্বাভাবিক আচরণ
o সামাজিক আচরণ
o শারীরিক অসুস্থতা
o মানসিক সমস্যা
চিকিৎসা ব্যবসহাপনা (Management) প্রধান তিনটি ধাপঃ
১ - অস্বাভাবিক আচরণের চিকিৎসা
২ - অটিজম শিশুর পিতামাতাকে সহায়তা করা
অস্বাভাবিক আচরণের চিকিৎসাঃ
অটিস্টিক শিশুদের যে বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ থাকে তার জন্য বিশেষ ধরণের চিকিৎসা দেয়া হয় । তাকে বলে কনটিনজেন্সি ম্যানেজম্যান্ট (Contingency management)
• সাধারনত মা বাবা তার শিশুকে একজন সাইকোলজিষ্ট বা থেরাপিষ্ট এর তত্ত্বাবধানে এই চিকিৎসা প্রদান করেন ।
• এই চিকিৎসার উদ্দেশ্য হল শিশুকে ভাল আচরণ শিক্ষা দেয়া ।
• এই ক্ষেত্রে শিশুকে ভাল কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হয়ে থাকে।
এটা সাধারনত চার ধাপে প্রদান করা হয় ।
- আচরণ চিহ্নিত করা ।
- কারন উৎঘাটন করা ।
- খারাপ আচরণ ভাল আচরণে পরিবর্তনের চেষ্টা করা
- পর্যবেক্ষণ করা (Monitoring)
অটিজম শিশুর পিতামাতাকে সহায়তা করা
• সাধারনত শিশুর আচরণের সাথে কিভাবে মানিয়ে নিতে হবে ও তাদের সমস্যা দ্রুত চিহ্নিত করে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে সে ব্যাপারে পিতামাতার অন্যদের সহায়তার দরকার হয় ।
• যে কোন অটিজম সেবা প্রদানকারী সংস্থার সাথে যুক্ত হওয়া যাতে মা বাবা অন্য অটিজম শিশুর পিতামাতার সাথে কথা বলে সমস্যার সমাধান বের করতে পারেন।
(ব্লগার নিমচাঁদ ভাই একজন অটিষ্টিক বেবীর বাবা হয়ে এ ব্যাপারে প্রচুর কাজ করছেন তার সেবা দান গ্রুপটির ফেসবুক লিঙ্কটি শেয়ার করলাম।)
• চিকিৎসক বা থেরাপিষ্ট এর সাথে অস্বাভাবিক আচরণ বা অন্য ব্যাপারে কথা বলে তার সমাধান নেয়া
• জেনেটিক কাউন্সেলিং।
জেনে রাখুনঃ
• লিও ক্যানার ১৯৪৩ সালে প্রথম অটিজম আবিস্কার করেন ।
• অটিজম লালন-পালনজনিত ত্রুটির ফলে হয় না ।
• অটিজম মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে বেশি দেখা যায় । ছেলে মেয়ের এই অনুপাত ৪-৫:১।
•বেশির ভাগ অটিস্টিক শিশুর মানসিক বিকাশ অ-প্রতিবন্ধী এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিশুদের তুলনায় ধীরগতি সম্পন্ন । তবে কিছু কিছু শিশু বিশেষ মেধাসম্পন্ন হয়।
• ঔষধ ব্যবহারের ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে খুব সামান্য পরিমাণে আচরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় ।
• ছোট বেলাতেই যদি এদের জন্য বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেয়া যায় তবে তা খুবই কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারে ।
কিছু ভ্রান্ত ধারণাঃ
১- অটিষ্টিক বাচ্চারা খুব বুদ্ধিমান হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আইন্সটাইন বা নিউটনের উদাহরণ দেয়া হয়। আসলে অটিজমের অনেক গুলো মাত্রা থাকে,খুব সামান্য থেকে ভয়ানক সমস্যা সহ রোগীরাও অটিজমের অন্তর্ভুক্ত। আপনি যদি মনে করেন বাচ্চাটা অটিষ্টিক, সে বড় কিছু করে ফেলবে, তাহলে সেটা ভুল।ভালভাবে তার যত্ন ও চিকিৎসা না নিলে তার আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।
২- এটা নতুন রোগ-রোগটা ছিলই, শুধু আমরা জানতাম না, শনাক্ত হয় নি। বেশীরভাগ অটিষ্টিক শিশুই ভুত-জ্বীনের আসরের কারণে কবিরাজের কাছে যেত।
৩- অটিজম লালন-পালনের ত্রুটি বা পারিবারিক-সামাজিক সমস্যার কারণে তৈরী হয়।
৪- কিছুদিন গেলে এমনিতেই সেরে যাবে।
অটিজমের ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে ব্লগার নুশেরা এর একটি চমৎকার লেখা আছে।
লেখাটি বড় হয়ে গেল।বিরক্ত হলে দুঃখিত।কিন্তু এ বিষয় নিয়ে আধা খেচড়া লেখাটা ঠিক হত না।
(ব্লগার নিমচাঁদ ভাই একজন অটিষ্টিক বেবীর বাবা হয়ে এ ব্যাপারে প্রচুর কাজ করছেন তার সেবা দান গ্রুপটির ফেসবুক লিঙ্কটি শেয়ার করলাম।)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৮