প্রকৃতির কিছু গৎবাঁধা নিয়ম থাকে, যে নিয়মগুলোর ব্যাতিক্রম কখনই ঘটতে দেখা যায় না। শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে যায়, পৃথিবী বরফ যুগ, প্রস্থর যুগ, তাম্র যুগ পার হয়ে প্রবেশ করে আধুনিক নিউক্লিয়ার বা অন্তর্জাল যুগে। কিন্তু পরিবেশ তার সেই নিয়মগুলো সব যুগেই আকড়ে থাকে। এজন্যই সূর্য পশ্চিম দিকেই সবসময় ঢলে পড়ে, চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকেই ঘোরে বা গাছেরা নিজেদের জায়গা ছেড়ে হটাৎ করে চলতে শুরু করেনা। কিন্তু এসব কিছুর মাঝেই খেয়ালী পরিবেশ কেন বা কি কারণে মাঝে মাঝে একটু উদ্ভট আচরণ বা বৈসাদৃশ্য প্রদর্শ করে তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না। তেমনি একটি প্রাকৃতিক বৈসাদৃশ্য হল ক্যালিফোর্ণিয়ার ডেথ ভ্যালির চলমান পাথর।
রেস ট্রাক প্লায়া হচ্ছে ডেথ ভ্যালির খুবই সাধারণ একটা শুকিয়ে যাওয়া হ্রদ। প্রচন্ড গরমে শুকিয়ে চোচির হয়ে যাওয়া এই সাধারণ সমতল হ্রদটি দেখতেই প্রতি বছর এখানে হাজির হয় হাজার হাজার পর্যটক।এর কারন আসলে হ্রদটি নয়, এখানে প্রতিনিয়তই ঘটে একটা আজব ঘটনা। এখন পর্যন্ত ব্যাখ্যার অতীত এই ঘটনা দেখতেই এত লোকের সমাগম।
মনে করুন আপনার বাড়ির ছাদে একটা ইট রাখলেন, সকালে উঠে দেখলেন ইট টাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিছুদূর। টেনে যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে ছাদে টেনে নিয়ে যাওয়ার দাগ দেখে।কেউ বাসার ছাদে উঠেছে সেটাও সম্ভব না। সমস্যা হচ্ছে এই ঘটনা ঘটতে থাকল প্রতিদিন, দিন রাত যে কোন সময়। এই ডেথ ভ্যালীর শুকনো হ্রদে সেই ঘটনাটাই ঘটে।
কোন ও মানুষ বা পশু-পাখির সাহায্য ছাড়া বিভিন্ন আকারের পাথর নিজেরা পায়চারি করে বেড়ায় দিন-রাত ভর এই জায়গায়। এখন পর্যন্ত কোন বৈজ্ঞানিক এই রহস্যের সমাধান করতে পারেন নি। ছবি দেখলে প্রথমে আপনার মনে হতে পারে এ মনে হয় বাতাসের কারসাজি। কিন্তু সমস্যা হল প্রথমত কিছু পাথরের আকার এতই বড় যে মোটামুটি আইলা বা ক্যাটরিনা টাইপের ঝড় লাগবে এগুলোকে সরাতে। দ্বিতীয়ত পাথরগুলো সরে আসার ফলে যে দাগের সৃষ্টি হয় তা এতই নিখুঁত যে বাতাসের ধাক্কায় কোন পাথর নড়লে ততটা নিখুঁত হওয়া সম্ভব না।
বাতাস মতবাদ ছাড়া আরেকটি মতবাদ হল বরফ থিওরী।
বৃষ্টির পর যে পানি ফাটল গলে মাটির নিচে জমা হয় তা শীতকালে মাটির নীচে জমাট বেঁধে বরফের আস্তরণে পরিণত হয়। এই বরফের আস্তরন যখন গলে নড়তে শুরু করে তখন উপরে থাকা পাথরগুলো এর সাথে নড়ে।
পরবর্তীতে এই থিওরী টেকেনি, কারণ দেখা যায় পাথরগুলো এমন সময়েও নড়েছে যখন বরফের আস্তরণের পরিমাণ ছিল খুবই নগণ্য।
তবে শেষ কথা হচ্ছে এই চঞ্চল পাথর নিয়ে গবেষনা এখনও চলছে। যতদিন না কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত একে প্রকৃতির খেয়াল বলে মেনে নেয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৪