হেফাজতে ইসলামের এই আন্দোলনে জামাত যে লাভবান হবে এতে কোন ভুল নেই। এই আন্দোলনের সময়কাল, গণজাগরণ মঞ্চের সকল নেতাদের শাস্তি দাবী এবং নির্বিশেষে সব ব্লগারদের নাস্তিক ট্যাগিং এ সব কিছুই শেষ পর্যন্ত জামাতের পক্ষেই যাবে এবং এজন্য তারা নীতিগতভাবে এই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে (বাংলা লিকসের টেলিফোন আলাপ এর কথা বাদ দিলাম কেননা সেটাকে আমি এখন পর্যন্ত কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসেবে নিচ্ছি না)।
হেফাজতে ইসলামের আল্লামা শফীর ৭১ এ ভূমিকা নিয়ে ফিফার এই পোষ্টে কিছু মন্তব্যের বিরোধিতা করে নরাধম ও অন্যান্য আরও কয়েকজন কমেন্ট করেছেন, সেখানে স্বপক্ষে বিপক্ষে দু দিকের রেফারেন্স ই আছে। সেগুলো ভুল বা সঠিক কিনা তা প্রমাণ করা আমার পক্ষে সম্ভব না, কিন্তু একটা কথা বলতেই হচ্ছে তা হল হেফাজতে ইসলামীর এই আন্দোলনের সময়কাল এবং তাদের ১৩ দফা দাবী। এই আন্দোলনের সময়টা এমনই যে আল্লামা শফীরা চান বা না চান এই আন্দোলন যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে জামাতের যে অবস্থান, সেটাকে আরও সুদৃঢ় করবে। ফলে ৭১ ওনার ভূমিকা যাই থাক না কেন বর্তমানে সময়ে উনি যে আন্দোলনের সুচনা করলেন তা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ফেলল, শুধু তাই না এদের বিচারের দাবীতে যে সকল নিতান্তই সাধারণ মানুষ আন্দোলন করছিল তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস কে প্রশ্নবিদ্ধ করল। এর সাথে যোগ হয়েছে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বদানকারীদের কিছু ভুল এবং বিভিন্ন দলের সেই আন্দোলন থেকে লাভবান হওয়ার অপচেষ্টা।
আর ১৩ দফা দাবীর কয়েকটি হল মধ্যযুগীয়, হাস্যকর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর কয়েকটির সাথে আধুনিক মুসলিম পণ্ডিতরা দ্বিমত পোষণ করবেন বলে আমি মনে করি।
হেফাজতে ইসলামী একদিকে বলছে নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে আরেক দিকে নারী নেতৃতাধীন বি এন পি এর সমর্থন বা নারী প্রধানমন্ত্রীর সরকারের কাছে দাবী পেশ করতে কোন দ্বিধা করছে না।
শাহবাগের আন্দোলনের ফসল আওয়ামী লীগ ঘরে তুলতে চেয়েছিল, আর বি এন পি চেয়েছিল সেই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নিজের জোটকে অক্ষুন্ন রাখতে। সেখানে কোন আদর্শিক কারণে তারা কাজ করেনি পুরোটাই ছিল ভোটের রাজনীতি।
ঠিক তেমনি হেফাজতের এই আন্দোলন থেকে প্রধান দুইটি দল লাভবান হতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমাদের দেশের রাজনীতিতে ক্ষমতায় যাবার মত বড় লক্ষ্য আর কিছুই নেই, এই লক্ষ্যের কাছে যে কোন মত বা আদর্শের পরাজয় আমরা বারংবার দেখেছি, আমরা দেখেছি জামাতের সাথে এই দু দলের রাজনৈতিক আঁতাত, নির্বাচনের আগে তসবী আর স্কার্ফের ব্যবহার, বিদেশী প্রভুদের সাথে রাতভর বৈঠক, নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার জন্য সেনাবাহিনী সহ আইন শৃংখলা বাহিনী বা প্রশাসনে দলীয় লোকের মহাসমারোহ এবং এর সবই হয় নির্বাচনের বছর।
আর এখন নির্বাচনের বছর চলে এসেছে। তাই তো শেয়ার ব্যবসা, রেলের কালো বিড়াল, হলমার্ক, পদ্মাসেতু দুর্নীতে দেনায় ডুবে থাকা আওয়ামী লীগের চেষ্টা থাকবে এক হেফাজতের আন্দোলনের মাধ্যমে সব সুদে আসলে তুলে আনার। কে না জানে আমাদের দেশে বা এই উপমহাদেশে ধর্মের চেয়ে বড় শক্তি আর কিছুই নেই, শুধু দরকার নিজেকে এর পক্ষে রাখা । তাই তো এই আন্দোলনে জামাতের প্রত্যক্ষ মদদ থাকা সত্ত্বেও সরকার এই আন্দোলনকে শান্তিপূর্ন বলে আখ্যায়িত করছে
আর বি এন পি নিজেদের বিশাল জনসমর্থন বা বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে জনগনের অসমর্থন কে কাজে না লাগানোর ব্যর্থতাকে ঢাকতে চাচ্ছে হেফাজতের কোলে আশ্রয় গ্রহন করে, এর কারণ ও একটি ই সেটা হল ধর্ম কে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়া।
তাই শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন থেকে আদর্শিক কিছু অর্জিত হোক বা না হোক একটি দল এই আন্দোলনকে ব্যবহার করবে তাদের নরপশু নেতাদের ফাঁসীর হাত থেকে বাঁচাতে, আর বাকী দু দল চেষ্টা করবে কি করে আগামী ৫ বছরের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত করতে হয়। আর এই উদ্দেশ্যে তারা সাধারন জনগণ, মুসলমান বা অন্য যে কোন ধর্মের মানুষ বা ব্লগারদের কে ব্যবহার করতে এতটুকু কুন্ঠিত হবেনা।