ছবি - vectorstock.com
সততা ছোট তিন অক্ষরের একটি শব্দ, যা মানব চরিত্রের একটি বিশেষ ও শ্রেষ্ঠ গুণ এবং জীবনে এর প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা সীমাহীন। এ গুণ যার মাঝে আছে বা যে এই গুণ অর্জণ করতে সক্ষম হন , আল্লাহতায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। সত্যিকার মুমিন সততাকে চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্য থেকেও ঊর্ধ্বে মনে করেন। কেননা তারা জানেন, এটি ঈমান ও ইসলামের পূর্ণতা দান করে।সততা ও বিশ্বস্ততার প্রতি আহ্বান জানিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন," হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক "।( সূরা আত তওবা - ১১৯ )।
সততা অন্তরের প্রশান্তি লাভের সাথে সাথে নাজাত লাভ, জান্নাত অর্জন, খোদার সন্তুষ্টি এবং ধনসম্পদেও বরকতের মাধ্যম। সততা মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণ। মানবজীবনে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মহান আল্লাহপাক মানবসমাজকে যে সীমারেখায় চলতে নির্দেশ দিয়েছেন , এগুলোর মধ্যে সততা অন্যতম। সততা শুধু মুসলমান নয় বরং প্রত্যেক মানুষের জীবনেই প্রয়োজন, সে ইসলামের অনুসারী হোক বা অন্য ধর্মের, নেককার বা বদকার, অফিসার কিংবা কর্মী, শিক্ষক বা ছাত্র ,পীর কিংবা মুরিদ,ধনী হোক বা গরিব, পিতা-মাতা হোক বা সন্তান । মোটকথা, মানবজীবনের প্রতিটা বিভাগের সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল সততা। মানবসমাজের নিরাপত্তা, প্রশান্তি, সুখ-শান্তি, বিনির্মাণ, উন্নতির ভিত্তি হল সততা। এ কারণেই সততাকে আপন করে নিতে গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। এই গুণ মানুষকে উন্নত, আদর্শ ও নৈতিকতায় ভূষিত করে এবং এর মাধ্যমেই ইসলামি জিন্দেগির পূর্ণতা অর্জিত হয় এবং অর্জিত হয় মানবতার সর্বোচ্চ গুণ।
ছবি - bangla-love-sms.com
সততা কি -
সততা একজন ব্যক্তির চরিত্রে আরোপিত গুণ। গুণটি যখন একজন ব্যক্তির চরিত্রের ওপর আরোপিত হয় বা চরিত্রের সংশ্লেষে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে বলা হয় সৎ। সততার অস্তিত্ব চিন্তা বা মননে। সততার শারীরিক বা ব্যবহারিক অভিব্যক্তি চরিত্রের মাধ্যমে ফুটে ওঠে।ইংরেজীতে একটি প্রবাদটি আছে, " If Money is lost nothing is lost, wealth is lost something is lost, but character is lost everything is lost" অর্থ্যাৎ টাকা হারিয়ে গেলে কিছুই হারায় না, যদি সম্পদ হারিয়ে যায় তবে কিছু হারিয়ে যায়, কিন্তু যদি চরিত্র হারিয়ে যায় সবকিছু হারিয়ে যায়"। একজন ব্যক্তির মানষিক বা নৈতিক চরিত্র ভালো হলে তিনি সচ্চরিত্রের অধিকারী হন। অন্যদিকে মানষিক বা নৈতিক চরিত্র খারাপ হলে সে দুশ্চরিত্রের অধিকারী হয়ে থাকে। ইহলৌকিক জীবনে সমাজে আত্মসম্মান নিয়ে বসবাসের জন্য সততা একটি অপরিহার্য গুণ, যা সবার থাকা উচিত।
ছবি - depositphotos.com
কোরআন - হাদিসের আলোকে সততার নির্দেশনা এবং এর গুরুত্ব - প্রয়োজনীয়তা -
আল্লাহ পাক কোরআনুল কারিমের বহু স্থানে সততা ও স্বচ্ছতা অবলম্বনকারী নারী-পুরুষদের ফজিলত, আখেরাতে তাদের পুরস্কার, তাদের মর্যাদার ব্যাপারে বলেছেন ।কোরআন-হাদিস থেকে এ কথা বুঝা যায় যে , সততা বিষয়টি অনেক ব্যাপক। সততা শুধুমাত্র সত্য কথা বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং সত্য কথা বলার সাথে কাজ-কর্ম, আকিদা-বিশ্বাস সবগুলোতে সততা অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, " আর কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবী, সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ), শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ - যাদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন - তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী " । (সূরা নিসা, আয়াত - ৬৯)
কিয়ামতের দিন সততার কারণে জান্নাত মিলবে সত্যবাদীদের।এ ব্যাপারে আল কোরআনে বলা হয়েছে," আল্লাহ বলবেন, এ সে দিন যেদিন সত্যবাদিগণ তাদের সত্যের জন্য উপকৃত হবে, তাদের জন্য আছে জান্নাত যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তার প্রতি সন্তুষ্ট; এটা মহাসফলতা "। (সূরা মায়িদা, আয়াত - ১১৯)।
আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে পুরস্কৃত করেন তাদের সত্যবাদিতার জন্য এবং তার ইচ্ছা হলে মুনাফিকদেরকে শাস্তি দেন অথবা তাদেরকে ক্ষমা করেন। সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গ লাভ করার প্রতি আহ্বান জানিয়ে মহান আল্লাহ বলেন," মুমিনদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর সাথে তাদের করা অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ (অঙ্গীকার পূর্ণ করে) মারা গেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি;যাতে আল্লাহ্ পুরস্কৃত করেন সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদীতার জন্য এবং শাস্তি দেন মুনাফিকদেরকে যদি তিনি চান অথবা তাদেরকে ক্ষমা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(সূরা আহজাব, আয়াত - ২৩ - ২৪)।
মুমিন স্বচ্ছ, মুনাফিক অস্বচ্ছ। মুমিন স্বচ্ছ তাই তারা সত্যবাদী। মুমিনরাই যে সত্যবাদী আল্লাহ তায়ালা তা অন্য আয়াতে এভাবে বলেছেন, " তারাই তো মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি এবং তাদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে, তারাই সত্যনিষ্ঠ "। (সূরা হুজুরাত, আয়াত - ১৫)।
অনেক সৎ গুণের সমষ্ঠি হলো সততা। অসংখ্য হাদিসে ও সততার গভীরতার বিষয়টি ফুটে ওঠেছে। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, " যে ব্যক্তি নিয়তের বিশুদ্ধতা ও সততার সঙ্গে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনের প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায় পৌঁছাবে.... যদিও সে বিছানায় মৃত্যুবরণ করে "।(সহিহ মুসলিম)।
অন্য এক হাদিসে এসেছে,"যে ব্যক্তি সততা আন্তরিকতার সঙ্গে শাহাদত লাভ করতে চায়, শহীদ না হলেও শহীদের র্মযাদা ও সওয়াব দেয়া হবে "। ( সহিহ মুসলিম )।
সত্যবাদী ব্যবসায়ী কারা তা হাদিসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, "যদি ক্রেতা-বিক্রেতা সত্য বলে এবং ভালো-মন্দ প্রকাশ করে দেয় তাহলে তাদের লেনদেন বরকতময় হবে। আর যদি উভয়ে মিথ্যা বলে এবং দোষত্রুটি (পণ্যের) গোপন করে তাহলে এ লেনদেন থেকে বরকত উঠিয়ে নেওয়া হবে"।(সহিহ মুসলিম, হাদিস - ১৫৩২) ।
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে প্রমাণিত হয়, সিদ্দিক তথা সততা বলতে আন্তরিক বিশ্বাস এবং মনের ঐকান্তিকতার সঙ্গে সেই বিশ্বাসের স্বীকৃতি বুঝায়। আর বান্দা তার সব আমল বা কাজের প্রতিফল একমাত্র আল্লাহর কাছে আশা করে। আল্লাহতায়ালার নিকট সর্বাগ্রে বিচার্য বিষয় হচ্ছে, বান্দার আন্তরিকতা ও নিয়্যতের বিশুদ্ধতা। এর ভিত্তিতে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে পুরস্কৃত করবেন। অতএব বান্দাকে সদা-সর্বদা কথা-কাজে সততা, সত্যতা ও স্বচ্ছতা রক্ষা করতে হবে এবং মিথ্যার অভিশাপ, গ্লানি থেকে বাঁচাতে হবে।
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, " তোমাদের উচিত সততা ও সত্যতা অবলন্বন করা। কেননা সততা ও সত্যতা মানুষকে পুণ্যের পথে পরিচালিত করে আর পুণ্য জান্নাতের দিকে পরিচালিত করে । কোনো ব্যক্তি যখন সত্য কথা বলে এবং সততা ও সত্যতার গুণ বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। তখন আল্লাহর কাছে সত্যবাদী সিদ্দিক হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। আর তোমরা মিথ্যা থেকে বিরত থাক। নিঃসন্দেহে মিথ্যা পাপের দিকে চালিত করে। পাপ জাহান্নামে নিয়ে যায়। ব্যক্তি যখন মিথ্যা বলে এবং মিথ্যায় মনোনিবেশ করে তখন তার নাম আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয় "।
মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সৎ ও সত্যবাদী হবে এবং কখনোই মিথ্যাবাদী হবে না ,এমন নয়। সততা চর্চার বিষয়। সততার বিপরীত মিথ্যা। এটা পাপ, অন্যায় অপরাধের মূল উৎস। মিথ্যার চর্চা ও প্রচলনের ফলে মুসলিম সমাজে নেফাক, খেয়ানত ও প্রতারণার মতো নৈতিক অধঃপতন ও বিকৃতি দেখা দেয়।পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহর নেয়ামতপ্রাপ্ত বান্দার মধ্যে সিদ্দিকীন বা সাদেকীনদের কথা নবীদের পর পর উল্লেখ করা হয়েছে। সাদেকীনদের (সত্যবাদী) পক্ষে উন্নতি হওয়ার লক্ষ্যে প্রত্যেক মুমিনেরই চেষ্টা-সাধনায় ব্রতি হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) হচ্ছেন সর্বোত্তম আর্দশ ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নবুওয়ত লাভের অনেক আগেই তার সততা ও বিশ্বস্ততার সুনাম সুখ্যাতি কিংবদন্তীর মতো চার দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী নির্বিশেষে তৎকালীন সব মানুষ তাকে পরম বিশ্বস্ত সত্যবাদী উপাধিতে ভূষিত করে ছিল। তিনি প্রতিটি কাজে সততা, সত্যতা ও বিশ্বস্ততা রক্ষা করতেন। এমনকি তার রসিকতাও ছিল সত্য নির্ভর।
একটি দেশের সকল শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে - রাজনীতিবিদ, বিচারক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, কৃষিজীবী, পেশাজীবী, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী সবার জন্য সৎ হওয়া অপরিহার্য। জীবনের চলার পথে কারো অসৎ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই । নীতির সঙ্গে নৈতিকতা সম্পর্কিত। যা মান্য তাই নীতি। নীতির কাজ মূল্যবোধ নির্ধারণ করা, আদর্শের মানদণ্ড নির্ণয় করা। আর নৈতিকতা হলো নীতির বাহ্যিক রূপ। নৈতিকতা নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করে। নীতির স্থান কেবল ব্যক্তির চিন্তা-চেতনায়, বিবেকে, মগজে। আর নৈতিকতা শোভা পায় ব্যক্তির আচার-আচরণে, কাজকর্মে। তাহলে এ কথা বলা যায় যে - আমরা যা বলি, যে কাজ করি, যে ভাবাদর্শ মানি, তা আমাদের ভেতরকার লালনকৃত নীতি-নৈতিকতারই প্রতিচ্ছবি। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে সব সময় ধরা না পড়লেও আমরা প্রত্যেকেই তো কোনো না কোনো মতাদর্শ অন্তরে ধারণ করে থাকি এবং সেই মোতাবেক জীবন পরিচালনা করি। তাহলে প্রত্যেকেই কি আমরা নীতিমানের কাতারে পড়ি? কিন্তু তা তো নয়! তাহলে তো সমাজে আর কোনো মিথ্যা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সুদ, ঘুষ, অন্যায়, অবিচারের স্থান থাকত না।
ন্যায়ের বিপরীত হচ্ছে অন্যায়। ন্যায়ের পরিপন্থী যেকোনো কাজ অসৎ কর্ম হিসেবে বিবেচ্য। কোন কাজের বিনিময়ে উৎকোচ গ্রহণ বা প্রদান, অন্যায় সুবিধা গ্রহণ বা প্রদান, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ বা স্বার্থের বিনিময়ে কিছু করা, দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়া বা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া, অপরকে ঠকানো, মিথ্যা কথা বলা বা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া, সিদ্ধান্ত প্রদানে অযথা কালক্ষেপণ, গল্প-গুজবে অফিস সময় কাটানো, ব্যক্তিগত কাজে সরকারি সুবিধাদি ও অফিস সময়ের ব্যবহার, প্রভৃতি অনৈতিক বিধায় অন্যায় বা অসৎ কাজ।
ছবি - banglafeeds.info
কোরআন ও হাদিসের আলোকে সততার পুরস্কার -
আমাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার অসংখ্য অগণিত নিয়ামতের মধ্যে সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো ঈমান। ঈমান ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির নিশ্চয়তা দেয়। মানষিক প্রশান্তি অর্জনে ঈমানের আছে ব্যাপক ভূমিকা। মানুষ তার ঈমানের মাত্রানুযায়ী সে প্রশান্তি অনুভব করবে। তার ঈমান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানষিক প্রশান্তি ও তৃপ্তি বাড়বে। তার প্রতিটি কাজে ঈমানের স্বাদ অুনভব করবে। ঈমান মুমিনের জীবনে মানসিক প্রশান্তির নিশ্চয়তা দেয়। একজন মানুষের ব্যক্তি জীবনে ঈমানের প্রভাবটা বেশ উল্লেখযোগ্য।
** অনুপম জীবন -
আল্লাহর প্রতি ঈমান নির্মল জীবনের নিশ্চয়তা দেয়।যে জীবনের পরতে পরতে রয়েছে পবিত্রতা ও প্রশান্তির ছোঁয়া। মুক্তি মেলে দুনিয়ার যাবতীয় অস্থিরতা থেকে। জীবন সাজে বর্ণিল সৌন্দর্যে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, " মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, অবশ্যই আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর অবশ্যই আমরা তাদেরকে তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেব। " (সুরা নাহল, আয়ত - ৯৭)।
** সঠিক পথের দিশা -
আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস অন্তরকে সঠিক পথের দিশা দেয়। বিপদের সময় অনেক মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে। ছোট ছোট বিপদও তাঁর কাছে বড় মনে হয়। কিন্তু প্রকৃত ঈমানদার থাকে মহান আল্লাহর হেফাজতে। প্রকৃত ঈমান ঈমানদের মনোবল জোগায়। তাকে সঠিক পথের দিশা দেয়। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, " আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আপতিত হয় না এবং কেউ আল্লাহর উপর ঈমান রাখলে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আর আল্লাহ্ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত "। (সুরা তাগাবুন, আয়াত - ১১)।
** যাবতীয় কল্যাণের নিশ্চয়তা -
প্রকৃত ঈমান যাবতীয় কল্যাণ ও বরকতের নিশ্চয়তা দেয়। আসমানি বরকত ও জমিনের বরকতের অঙ্গীকার করা হয়েছে ঈমানদারদের জন্য। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, " আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমরা তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম , কিন্তু তারা মিথ্যারোপ করেছিল; কাজেই আমরা তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে পাকড়াও করেছি "। (সুরা আরাফ, আয়াত - ৯৬)।
** ঐশী নিরাপত্তা -
আল্লাহ তাআলার প্রতি আবিচল বিশ্বাস ও আস্থা ঈমানদারদের ঐশী নিরাপত্তা দেয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দাদের নিজ হেফাজতে রাখেন। তাদের আসমান ও জমিনের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন। তাদের যাবতীয় অস্থিরতা থেকে মুক্ত রাখেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, "নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে রক্ষা করেন (তাদের দুশমন হতে), নিশ্চয় তিনি কোন বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না "। (সুরা হজ, আয়াত - ৩৮)।
** অন্তরের প্রশান্তি -
প্রকৃত ঈমান মানষিক শান্তির নিশ্চয়তা দেয়। জীবনের কদর্যতা ও কলুষতা থেকে রক্ষা করে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, "যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলুম (শির্ক) দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত "। (সুরা আনআম, আয়াত - ৮২)।
** হকের ওপর অবিচলতা -
হিদায়াতের চাবি আল্লাহ তাআলার হাতে। কার ভাগ্যে হিদায়াত আর কার ভাগ্যে ভ্রষ্টতা আছে কেউ জানে না। কিন্তু প্রকৃত ঈমানদার আল্লাহ তাআলা হকের ওপর অবিচল রাখেন। তাদের হকের ওপর অবিচল থাকার তাওফিন দান করেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, " যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদেরকে সুদৃঢ় বাক্যের দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন এবং যারা যালিম আল্লাহ তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছে তা করেন "। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত - ২৭)।
** জান্নাতের সুসংবাদ -
আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান মুমিনদের জান্নাতের সুসংবাদ দেয়। তাদের জান্নাতের নিয়ামতরাজির সুসংবাদ দেয়। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,"যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না। তাদেরই জন্য রয়েছে বসবাসের জান্নাত। তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হয় নহরগুলো। তাদের তথায় স্বর্ণ-কঙ্কনে অলংকৃত করা হবে এবং তারা পাতলা ও মোটা রেশমের সবুজ কাপর পরিধান করবে এ অবস্থায় যে তারা সিংহাসনে সমাসীন হবে। কত সুন্দর সে পুরস্কার ও কত উত্তম সে আশ্রয়স্থল"। (সুরা কাহফ, আয়াত - ৩০ - ৩১) ।
ছবি - bangla-love-sms.com
পরিশেষে -
মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণ হচ্ছে সততা। প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য, জীবনে সততা ও বিশ্বস্ততার ফসল আহরণে যত্নবান হওয়ার। কেননা, সততা ও সত্যবাদিতা আখলাকে হাসানের অন্যরকম বৈশিষ্ট্য। যার মধ্যে এ গুণের সমাহার থাকবে সমাজের সব ধরনের লোক তাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করবে। সর্বোপরি আখেরাতে আল্লাহর কাছে এর বিনিময় লাভ করবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের সততার গুণে গুণান্বিত হওয়া উচিত। পৃথিবীর যেকোনো দেশ ও সমাজ যত বেশি সততা, নৈতিকতা ও নীতিজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ দিয়ে সমৃদ্ধ হবে, সে দেশ ও সমাজ তত বেশি আদর্শ ও ন্যায়নিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। পৃথিবীর প্রধান সব ধর্মমত যথা ইসলাম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, বৌদ্ধ প্রভৃতি ধর্মে ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধাচরণের কথা বলা হয়েছে। সব দেশের প্রচলিত আইনে অন্যায়-গর্হিত কাজ মাত্রাভেদে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বীর জন্য ঈমানদার হওয়া অত্যাবশ্যক। ঈমানদার ব্যক্তি মনেপ্রাণে অন্যায়কে বর্জন ও ঘৃণা করেন।আমরা যদি নিজেদের জীবনে চলার পথে চরিত্র গঠনে আত্মপ্রত্যয়ী হই এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সততা আঁকড়ে ধরে থাকতে পারি, তাহলে কখনো সাময়িক অসুবিধা হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে সফল ও শ্রদ্ধার পাত্র হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।সততা সর্বক্ষেত্রে সব শ্রেণীপেশার মানুষের মধ্যে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হলে অপর কোনো প্রতিবন্ধকতা দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না। তাই এ কথা অনস্বীকার্য যে, সততার মধ্যে নিহত আছে দেশ ও জাতির সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন, কল্যাণ ও মঙ্গল। তাই আমাদেরকে সদাসর্বদা কথা ও কাজে সততা, সত্যতা ও স্বচ্ছতা রক্ষা করতে হবে। মিথ্যার অভিশাপ ও গ্লানি থেকেও বাঁচতে হবে।মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার তাওফিক দান করুন।
তথ্যসূত্র - আল কোরআন,হাদীস
=================================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
মানব জীবন - ১৫ - " লজ্জা " Click This Link
মানব জীবন - ১৪ - "পর্দা " Click This Link
মানব জীবন - ১৩ - "ধর্ম " Click This Link
মানব জীবন - ১২ " সহ শিক্ষা " Click This Link
মানব জীবন - ১১ " শিক্ষা " - Click This Link
মানব জীবন - ১০ "পরিবার " - Click This Link
মানব জীবন - ৯ "বিবাহের পরে" - Click This Link
মানব জীবন - ৮ " মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য " - Click This Link
মানব জীবন - ৭ " তালাক " - Click This Link
মানব জীবন - ৬ "দেনমোহর - স্ত্রীর হক" - Click This Link
মানব জীবন - ৫ "বিবাহ" - Click This Link
মানব জীবন - ৪ " মাতৃত্ব " - Click This Link
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)"- Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link