ছবি - 123rf.com
মহান আল্লাহপাক মানুষকে সৃষ্টির সেরা বানিয়ে কিছু স্বভাবজাত সৌন্দর্য তার মধ্যে দিয়েছেন। এই গুণগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল লজ্জা। ইসলামে এর খুব গুরুত্ব অপরিসীম। মানব জীবনে এবং সমাজে লজ্জা এবং ঈমান একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যার মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানের গুণ থাকবে তার মধ্যে অব্যশই লজ্জার মতো মূল্যবান গুণও থাকবে। যার মধ্যে লজ্জা থাকবে না তার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ঈমানও থাকবে না । রাসূল (সাঃ) বলেছেন,"লাজুকতা ও কম কথা বলা ঈমানের দুটি বৈশিষ্ট্য। আর অশ্লীলতা ও বাচালতা মুনাফিকির দুটি বৈশিষ্ট্য "। আর তাইতো এই দুনিয়ায় জীবিত মানুষদের মাঝে কেউ আসল মানুষ, আবার কেউ পশু বা অমানুষ । যখন মানুষ মরে যায় তখন সে মৃত আর মৃতরা তখন শুধুই লাশ, সেখানে কোনো লজ্জা বা মনুষ্যত্বের দরকার নেই বা প্রয়োজন ও পড়েনা। তবে জীবিত সকল মানুষ তথা নর-নারী উভয়ের জন্যই লজ্জা এক অন্যতম অনুষংগ।
আমাদের সমাজে " লজ্জা নারীর ভূষণ " এ কথাটি অধিক প্রচলিত । ইসলাম নারীকে লজ্জা ও শালীনতার ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিলেও তা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই লজ্জাকে ভূষণ আখ্যা দেয়া হয়েছে । ইসলামী জীবন বিধানে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য শালীন ও লজ্জাশীল জীবন যাপন করা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, " লজ্জা ঈমানের অংশ" (আল জামিউ বাইনাস সাহিহাইন, হাদিস নং - ১২৭৩)।আর আর ঈমানের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
ছবি - ekushey-tv.com
লজ্জা বলতে কি বুঝায়
লজ্জা বা লজ্জাশীলতার প্রকৃত অর্থ হলো, এমন সৎ চরিত্র হওয়া, যা মানুষকে নোংরা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।লজ্জাশীলতা একজন মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। লজ্জা একটি নেতিবাচক বা যন্ত্রণাদায়ক মানষিক অবস্থাকেও বুঝায়। যা মানুষ তার কর্মের ফল হিসাবে এবং সমাজের প্রচলিত ভাল কাজের মানদণ্ডের সাথে তার নিজের কাজের তুলনা করে নেতিবাচক অবস্থা বা ফলাফল উপলব্ধি করে। মানুষের বিবেক তথা সহজাত আত্মউপলব্ধি থেকে লজ্জার উৎপত্তি ঘটে থাকে।যার আত্মউপলব্ধি যত বেশী তার লজ্জা তত বেশী ।আর যার আত্মউপলব্ধি তথা আত্মশ্রদ্ধা কম তার লজ্জাও কম ।আর লজ্জাহীন মানুষ পশুর সমান।
লজ্জা বা হায়া শব্দটি বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত হয়। রাসূল (সাঃ) বলেছেন," প্রত্যেক ধর্মেরই কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। লজ্জাশীলতা হলো ইসলামের প্রধান বৈশিষ্ট্য"। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন, "কোনো কিছুতে অশ্লীলতা তাকে শুধু কলুষিত করে আর কোনো কিছুতে লজ্জা তাকে শুধু সৌন্দর্যমণ্ডিত করে"। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং - ১২৬৮৯)।এই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নারী ও পুরুষের ভেতর কোনো ধরনের পার্থক্য না করেই তা সাধারণভাবে মানুষের ভূষণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লজ্জার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ গুণ অর্জন করতে হলে মুসলমান নারী পুরুষ সবার পর্দার প্রতি বিশেষভাবে যত্মবান হতে হবে।এই পর্দা শুধু মাত্র নামে নয়। মানব জীবনের সব জায়গায় বা সর্ব সেক্টরে পর্দার গুরুত্ব দিতে হবে। চোখের লজ্জা ঠিক রাখতে হলে বেগানা নারী - পুরুষের সরাসরি দেখা সাক্ষাৎ করা যাবে না। খারাপ জিনিস দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাত-পায়ের লজ্জা রক্ষা করতে চাইলে খারাপ কাজ করা থেকে নিজের হাত-পায়ের হেফাজত করতে হবে। অন্তরকে লজ্জাজনক বিষয় হতে বাঁচাতে খারাপ অশ্লীল বিষয় অন্তরে স্থান দেয়া যাবে না। এগুলোর প্রতি খুব যত্মবান হতে হবে। লজ্জার গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলোর প্রতি যত্মবান হলে পুরস্কারের মুকুট পরাবেন মহান আল্লাহ।
লজ্জা এক মহানিয়ামত আল্লাহর পক্ষ থেকে
লজ্জা এক নিয়ামত , মহা নিয়ামত - আল্লাহর পক্ষ থেকে। এ এক পরম সৌন্দর্য। এর দ্বারা পৃথিবীতে শান্তি, নিরাপত্তা লাভ হয়। এ জন্য একজন লজ্জাশীল চরিত্রবান মুমিন বিপুল পরিবর্তন আনতে পারেন তার জীবনে,পরিবারে ও সমাজে । শান্তি নিরাপত্তা, কল্যাণের শোভায় সুভাশিত করতে পারেন সমাজের প্রতিটা শাখায় এবং জায়গায়।
হজরত ইমরান ইবনে হুসাই (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সাঃ) বলেন, " লজ্জা শুধু কল্যাণই বয়ে আনে "। ( বুখারি শরীফ, হাদিস নং - ৬১১৭) ।লজ্জা প্রসংগে মহানবী (সাঃ) আরো বলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত লজ্জাশীল ও অন্তরালকারী। তিনি লজ্জা ও অন্তরালে থাকতে পছন্দ করেন" ( আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং - ৪০১৪)। রাসুলে আকরাম (সাঃ) আরো বলেন, "প্রতিটি ধর্মের একটি বিশেষ স্বভাব আছে। আর ইসলাম ধর্মের বিশেষ স্বভাব হলো লজ্জা" (মুয়াত্তায়ে মালেক, হাদিস নং - ৩৩৫৯)। এই সকল হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত হয়, ইসলামে লজ্জা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য আবশ্যক।
হজরত ওমর (রাঃ) এর ছেলে হজরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, " ঈমান ও লজ্জা এ দুটি ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। যখন এর একটি ছেড়ে দেয়া হয়, তখন অন্যটি এমনিতেই চলে যায়"।নবীজি (সাঃ) বলেন, লজ্জা এবং ঈমান একটি অপরটির পাশাপাশি বসবাস। যখন একটি ওঠে যায় তখন অন্যটিও ওঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ( মিশকাত শরীফ ) ।
ছবি - businessguidebd.com
লজ্জাশীল ব্যক্তির বৈশিষ্ঠ্য -
লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। লজ্জাশীলতার মাধ্যমে একজন মুসলমানের ঈমানের পরিমাপ করা যায়। যিনি অবলীলাক্রমে ও নির্দ্বিধায় লজ্জাকর কাজ করে যায় এবং নিজের বেহায়াপনা বা অশ্লীলতার জন্য এতটুকুন অনুতপ্ত হয় না, বুঝতে হবে তার ঈমানে বড় ধরনের কোনো ত্রুটি রয়েছে। অপর দিকে সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন ,যার দ্বারা কোনো লজ্জাকর কাজ সংঘটিত হলে, সাথে সাথে ভুলের জন্য আড়ষ্ট হয়ে মুখ লুকায় এবং বিবেকের কষাঘাতে জর্জরিত হয়। তখন বুঝতে হবে তার ঈমান জীবিত আছে।লজ্জা এক নিয়ামত মহানিয়ামত। পরম সৌন্দর্য। এর দ্বারা পৃথিবীতে শান্তি, নিরাপত্তা লাভ হয়। এ জন্য একজন লজ্জাশীল চরিত্রবান মুমিন বিপুল পরিবর্তন আনতে পারেন সমাজে। শান্তি নিরাপত্তা, কল্যাণের শোভায় শোভাশিত করতে পারেন সমাজের প্রতিটা সেক্টরে।লজ্জাশীলতা কোনো দুর্বলতার নাম নয়, বরং লজ্জাশীল ব্যক্তি একজন দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী। লজ্জা হলো তার চরিত্রের মার্জিত রুচিশীল পোশাকসদৃশ।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন," নির্লজ্জতা যাকে আকৃষ্ট করে সে চিরকলুষ হয়। অপরপক্ষে লজ্জা যাকে পরশ লাগায় সে চিরসুন্দর হয়ে উঠে "। লজ্জাশীল ব্যক্তি মানসম্মানকে এতটাই অগ্রাধিকার দেয় যে, প্রয়োজনে নিজের প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দেবে কিন্তু আত্মমর্যাদার অবমাননা হতে দেবে না। লজ্জা ও ভয় পাশাপাশি অবস্থান করে।
প্রথমত, লজ্জাশীল ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে। সে এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমার প্রতিটি কথা ও কাজ প্রত্যক্ষ করছেন। এ ধরনের ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহকে হাজির-নাজির জানে বলেই কোনো লজ্জাকর কাজ তার দ্বারা সংঘটিত হয় না।
দ্বিতীয়ত, লজ্জাশীল ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিত্ব, মর্যাদা ক্ষুণণ হওয়ার ভয় করে। মানুষের দৃষ্টিতে সে নিকৃষ্ট হেয় প্রতিপন্ন হবে এ ভয়ে যে কোনো অপকর্মে লিপ্ত হয় না। এটি কোন দুর্বল চিত্তের লক্ষণ নয়। বরং এ ধরনের ব্যক্তিরাই সমাজের দৃঢ়চিত্ত ও বীরোচিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন," লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। আর ঈমানের স্থান বেহেশত। অপর দিকে অকথ্য গালিগালাজ জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। আর জুলুমের স্থান দোজখ "। (আহমাদ)
লজ্জা মুমিনের ভুষণ। এটি মুমিনের চারিত্রিক সৌন্দর্যকে সুশোভিত করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) লাজুক প্রকৃতির নম্র-ভদ্র, সহনশীল ও কর্তব্যপরায়ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন।রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘লজ্জা ও ঈমান অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যখন একটির অভাব ঘটে, তখন অন্যটিও বিলুপ্তির পথ ধরে।’
ছবি - businessguidebd.com
লজ্জাশীলতার পুরস্কার
যে কোনো বান্দা লজ্জার গুণ অর্জন করবে তার জন্য ক্ষমা এবং অনেক বড় প্রতিদানের ওয়াদা করেছেন মহান আল্লাহ।এ প্রসংগে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, "নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, সওম পালনকারী পুরুষ সওম পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী নারী, আল্লাহ্কে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহ্কে অধিক স্মরণকারী নারী—তাদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান " ।(সুরা আহজাব, আয়াত - ৩৫) উক্ত আয়াতে লজ্জাস্থানসহ আরও কয়েকটি গুণের আলোচনা করে বলা হয়েছে " আল্লাহ এদের সবার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। লজ্জাশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অনেক মাকবুল হয়ে যায়। আল্লাহ তার দোয়া ফিরিয়ে দেন না। তাকে বিপদ-মুসিবতে ফেলেন না। সর্বোপরি তাকে সব রকমের সংকট থেকে বাঁচিয়ে আগলে রাখেন"।
এ মেহনত (লজ্জাশীলতা অর্জন ) ও কামাই বিনষ্ট হয় না মহান রবের দরবারে। রূহানী ও নৈতিক উন্নতি সাধনের অতুলনীয় উপায় মাধ্যম লজ্জাস্থানের হেফাজত। যে সব নারী-পুরুষ ব্যাভিচার থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখে। সর্বদা মহান আল্লাহর জিকিরে কাটায় আল্লাহ পাক তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং বিরাট প্রতিদানও দেন। নবীজি (সাঃ) কুরাইশ যুবকদের লক্ষ্য করে বলেছেন, " হে কুরাইশ যুব-জনতা! তোমরা তোমাদের লজ্জাস্থান হেফাজত কর। ব্যাভিচার থেকে বেঁচে থাক। শুনে রাখ, যে লজ্জস্থানের হেফাজত করবে তার জন্য জান্নাত"। এ থেকে বুঝা যায় লজ্জার বিনিময় জান্নাত। কাজ অল্প তবে পুরস্কার কিন্তু বড়। এ নিয়ামত অর্জন করার চেষ্টা করা চাই, তবেই অনেক লাভবান হওয়া যাবে।
লজ্জাহীন ব্যক্তির চরিত্র বা বৈশিষ্ঠ্য
লজ্জাহীন ব্যক্তির চরিত্র হয় অশ্লীল। সে সমাজের এমন হীন কাজ নেই যা সে করতে পারে না। এ ধরনের ব্যক্তি সাধারণত ফাসেক, পাপিষ্ঠ, কদাচারী, দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতিপরায়ণ হয়। লজ্জাহীনতা তার আচরণকে করে উদ্যত, স্বভাব হয়ে উঠে রুক্ষ, মেজাজের ভারসাম্য হারিয়ে সামাজিক জীবনযাপনে বেপরোয়া, উন্মাদ, পরশ্রীকাতর, পরধনে লোভী, টাউট-বাটপার ও দুর্নীতিবাজ এককথায় উন্মাদ ব্যক্তিতে পরিণত হয়। এদের আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো যে, এরা সাধারণত মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। মিথ্যাই এদের প্রধান পুঁজি হিসেবে কাজ করে। এরকম একজনমাত্র ব্যক্তিই একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্রের জন্য অশান্তি ও বিপর্যয়ের জন্য যথেষ্ট কারণ হতে পারে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যখন কোনো মানুষের অধঃপতন ঘটে, প্রথমে তার হৃদয় থেকে লজ্জার বিচ্যুতি ঘটে। পরে সে নিকৃষ্ট কাজের অনুগামী হয়। যখন কোনো পাপিষ্ঠ আল্লাহর রোষানলে নিপতিত হয় তখন তার হৃদয় থেকে লজ্জা উঠিয়ে নেন। আর যখন লজ্জা বিচ্যুত হলো, তখন হিংসুক হয়ে উঠে এবং হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে। শত্রুতা করতে দেখবে অথবা শত্রু দ্ধারা আক্রান্ত দেখবে"।
যদি উল্লিখিত দুই অবস্থায় কাউকেও দেখা যায়, তখন বুঝতে হবে তার থেকে আমানত উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং যখন সে আমানত বিচ্যুত হলো, তখন তাকে আমানত খেয়ানতকারী অথবা আমানত বঞ্চিত দেখতে পাবে। বস্তুত যখন তাকে এরূপ অবস্থায় দেখবে, মনে করবে তার থেকে স্নেহ-মমতা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আর যখন সে দয়া বিচ্যুত হলো, তোমরা তাকে বিতাড়িত, অভিশপ্তরূপে দেখতে পাবে। যখন তাকে এমতাবস্থায় দেখবে, মনে করো তার গলা থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলা হয়েছে। (অর্থাৎ ইসলাম বিচ্যুত হলো) (ইবনে মাজাহ)।
লজ্জাহীনতার পরিণাম
যার লজ্জা নেই তার মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই। যার মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই তার মধ্যে ঈমান ও থাকেনা। কারণ লজ্জাহীন ব্যক্তি আল্লাহর কোনো হুকুমের পরোয়া করে না। সমাজের সব কু-কাজের একচ্ছত্র নায়ক বনে যায়। এ ধরনের লোকেরা অশ্লীল ও নিন্দনীয় কাজ করে অনুতপ্ত হওয়ার পরিবর্তে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। লাখো-কোটি মানুষের ধিক্কারকে সে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়।
সমাজ ও সভ্যতার সব নিয়মকানুনকে সে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে। সামাজিক বিপর্যয় ও অসংখ্য বনি আদমের দুর্ভোগে সে পশুত্বের অট্টহাসি ছড়ায়। দুনিয়ার সব কিছুই তার জন্য অতি সামান্যই মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবী নামক এ গ্রহটি সব জীবের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তারা জলে-স্থলে সব জায়গায় ফ্যাসাদ ছড়িয়ে দেয়। আর এ সব পৃথিবীর নির্লজ্জ মানুষের কাজের ফলাফল হয়ে মানুষের দূর্ভোগ বাড়ায়।
নির্লজ্জরা সাধারণত হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়। সত্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করায় সত্যের চিন্তা ও উপলব্ধি করতে পারে না। অসত্য, অন্যায় ও অকৃতজ্ঞতার ওপর এদের জীবনের ভিত রচিত হয়। পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী এ ধরনের ব্যক্তিরা ইতিহাসে কালো পাতায় শুধু স্থান পেয়েছে। কিন্তু জীবিত নির্লজ্জরা এসব ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না।
ছবি - amarsangbad.com
মানব জীবনের যেসব ক্ষেত্রে লজ্জা নিন্দনীয় বা লজ্জা করা উচিত নয়
১। জ্ঞানান্বেষণে লজ্জা - শিখার জন্য এবং জানার ক্ষেত্রে কোন লজ্জা রাখা বা করা যাবেনা। জানার জন্য যে কোন ,যত খুশি প্রশ্ন করা যাবে। এ ব্যাপারে ধর্মেও বলা আছে, " জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজনে সুদুর চীন দেশেও যাও " । সন্দেহ নেই যে, বক্তব্যটি সঠিক ও বাস্তবসম্মত। ইলমে দ্বীন হাসিলের জন্য যত দূরের সফরই হোক, তাওফীক হলে করা উচিত। ইলম অন্বেষণে কখনো মেহনত-মুজাহাদকে ভয় পাওয়া উচিত নয়। তদ্রূপ পার্থিব জীবনে প্রয়োজনীয় শিল্প ও বিদ্যা শিক্ষার জন্যও দূর দূরান্তে সফর করা শুধু জায়েয নয় বরং তা একটি পর্যায় পর্যন্ত কাম্যও বটে। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জ্ঞানান্বেষণে লজ্জা না করায় আনসারি নারীদের প্রশংসা করে বলেন, " আনসারি মহিলারা কতই না উত্তম! লজ্জা কখনো তাদের ধর্মের বিষয়ে জ্ঞানান্বেষণে বিরত রাখতে পারে না " ( মুসলিম শরীফ, হাদিস নং - ৭৭২)। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, ‘লজ্জাশীল ও অহংকারী ব্যক্তি ইলম অর্জন করতে পারে না।’ (ইকাজুল ইফহামি ফি শরহি উমদাতুল আহকাম : ৪/৫০)
২। সত্য কথা বলা বা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে লজ্জা - প্রত্যেক মুসলমানদের সকল সময় সত্য কথা বলা ও সকল অবস্থায় সৎপথে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।পরিস্থিতি যাই হোক না কেন সত্য প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কখনো কাউকে লজ্জা ও ভয় পাওয়া উচিত নয়। সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, " হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা নবীর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ "। (সুরা আহজাব, আয়াত - ৫৩)
আল্লামা ইবনে হাজর (রহঃ) বলেন, "এমন কথা বলা যাবে না যে লজ্জাশীলতা ব্যক্তিকে সত্য প্রকাশ করতে অথবা ন্যায় কাজ করতে বাধা দেয়। কেননা তা শরিয়তসম্মত নয় "। (কুররাতুল আইন : ১/২০)
আল্লামা ইবনে রজব (রহঃ) বলেন, " নিশ্চয়ই অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, লজ্জা একটি প্রশংসনীয় বিষয়। লজ্জা এমন চরিত্র-উদ্দেশ্য, যা অতি সুন্দর কাজ করতে এবং গুনাহর কাজ পরিহার করতে আগ্রহ সৃষ্টি করে। তবে যখন কোনো ব্যক্তির দুর্বলতা ও অক্ষমতা আল্লাহর হক অথবা বান্দার হক আদায়ের মধ্যে সংক্ষেপ করাকে আবশ্যক করে, তখন তা লজ্জার অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা তা হলো দুর্বলতা, শক্তিহীনতা, অপারগতা ও লাঞ্ছনা "। (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ২১/৬) তখন লজ্জা পরিত্যাগ করে সত্য প্রকাশ করা উচিত। এক্ষেত্রে বরং লজ্জা নিন্দনীয় ।
যারা পার্থিব জীবনে লজ্জা-শরমের প্রতি গুরুত্ব দেবে এবং সব রকমের কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকবে আল্লাহ পাক তাদেরকে দুনিয়া-আখেরাতে অগণিত নিয়ামতে ভূষিত করবেন। দুনিয়াতে দেবেন ইজ্জত সম্মান আর আখেরাতে করবেন ক্ষমা।আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে লজ্জার গুণ অর্জন করার এবং বেপর্দা থেকে বেঁচে থাকার সুযোগ দান করুন। মহান আল্লাহপাক রাববুল আল আমিন আমাদের সবাইকে লজ্জাশীল তথা ঈমান ও আমলের বলে বলিয়ান হবার এবং সকল প্রকার অশ্লীলতা ও নিন্দনীয় কাজ পরিহার করার তওফিক দান করুন।
তথ্যসূত্র - আল কোরআন,হাদীস
=========================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
মানব জীবন - ১৪ - "পর্দা " Click This Link
মানব জীবন - ১৩ - "ধর্ম " Click This Link
মানব জীবন - ১২ " সহ শিক্ষা " Click This Link
মানব জীবন - ১১ " শিক্ষা " - Click This Link
মানব জীবন - ১০ "পরিবার " - Click This Link
মানব জীবন - ৯ "বিবাহের পরে" - Click This Link
মানব জীবন - ৮ " মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য " - Click This Link
মানব জীবন - ৭ " তালাক " - Click This Link
মানব জীবন - ৬ "দেনমোহর - স্ত্রীর হক" - Click This Link
মানব জীবন - ৫ "বিবাহ" - Click This Link
মানব জীবন - ৪ " মাতৃত্ব " - Click This Link
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)"- Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link