উৎসর্গ -"ব্লগার কামাল১৮ এবং ব্লগার চাঁদগাজী " - সহ সকল মুক্তমনা দাবীদার মানুষদেরকে যারা রসুল (সাঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ম সম্পর্কে সন্দিহান ।
মহান আল্লাহপাক ফেরেশতা ও মানবকুল থেকেই নবী-রাসুল মনোনীত করেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, " আল্লাহ ফিরিশতাদের মধ্য থেকে মনোনীত করেন রাসূল এবং মানুষের মধ্য থেকেও - নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা। " (সুরা হজ, আয়াত - ৭৫) । আর মানুষদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষগণই নবী ও রাসুল হয়ে থাকেন। নবী-রাসুলরা আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত এবং তিনি তাঁদের সব ধরনের চারিত্রিক ও মানবিক দোষত্রুটি থেকে রক্ষা করেন। এ ব্যাপারে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেন, " অবশ্যই তারা ছিল আমার মনোনীত ও উত্তম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।" (সুরা সোয়াদ, আয়াত - ৪৭)।আল্লাহ প্রতিটি জাতির জন্য তাদের স্বজাতি থেকেই নবী ও রাসুল প্রেরণ করেছেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, " আমি তো তোমাকে সত্যসহ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; এমন কোন সম্প্রদায় নেই যার নিকট সতর্ককারী প্রেরিত হয়নি"। (সুরা ফাতির, আয়াত - ২৪)।
পৃথিবীতে নবী-রাসুলদের আগমনের ধারাক্রম মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে শেষ হয়েছে। তাঁর পরে আর কোনো নবী-রাসুল আসবেন না। ফলে তিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সাঃ), তিনি নবীদের সর্দার এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষ ও জিনের জন্যও তিনি নবী। তিনি শেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না। তাঁর সম্মান ও মর্যাদার সাক্ষ্য পবিত্র কোরআন সহ সব আসমানি গ্রন্থে রয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সৃষ্টিজগতের জন্য কল্যাণস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহপাক মহানবী (সাঃ) কে মানবতার মুক্তির দূত ও সৃষ্টিজগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, " আর আমরা তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য শুধু রহমতরূপেই পাঠিয়েছি "। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত - ১০৭)।
এ ছাড়াও কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রশংসায় বলেন,"হে নবী! অবশ্যই আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর অনুমতিক্রমে তার দিকে আহবানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে "। (সুরা আহজাব, আয়াত - ৪৫ - ৪৬) ।
নবী-রাসুলদের কর্মপদ্ধতি ছিল উচ্চতর প্রজ্ঞা ও কল্যাণকামিতায় ভরপুর। পবিত্র কোরআনে নবী-রাসুল (সাঃ) দের মৌলিক চারটি কাজের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,"তোমাদের মধ্যে একজন রাসুল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদেরকে তাঁর আয়াতগুলো পড়ে শোনান, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। অথচ এর আগে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহিতে নিমজ্জিত ছিল"। (সুরা জুমুআ, আয়াত - ২) ।
আল্লাহ তাআলার পর তিনিই শ্রেষ্ঠ। তার মত আর কেউ নেই। তিনি সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মাটির তৈরী সকল মানুষ, আগুনের তৈরী সকল জিন, নূরের তৈরী সকল ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ মাটির তৈরী এ মহামানব রাসূল (সাঃ)। যেমন সকল নূরের তৈরী ফেরেস্তার মাঝে হযরত জিবরাঈল ( আঃ ) শ্রেষ্ঠ তেমনি মাটির তৈরী এ মহামানব রাসূল (সাঃ) সকল মাটির তৈরী পয়গম্বর, সকল মানুষ ও সকল জিন ও ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। তার মত উত্তম ও শ্রেষ্ঠ কোন সৃষ্টি আল্লাহ তাআলা কখনো সৃজন করেন নি, কখনো করবেন ও না। রাসুল (সাঃ) মানুষ মাটির তৈরি, যেমন কোরআন তৈরি কাগজ-কালি দিয়ে কিন্তু কোরআনের একনাম নূর বা হেদায়াত, তেমনি রাসূল (সাঃ) ও রক্তে-মাংসে তৈরি শরীরের মানুষ, কিন্তু তিনি হেদায়াতের নূর বা আলো মহামানব, এবং তিনিই মহৎ চরিত্র মর্যাদা সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্টিত।
রাসূল (সাঃ) মানুষ ছিলেন এ ব্যাপারে কাফেরদেরও কোন সন্দেহ ছিল না তার প্রমানে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে - "অথবা তোমার একটি সোনার তৈরী ঘর হবে, অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে, কিন্তু তোমার আকাশ আরোহণে আমরা কখনো ঈমান আনব না যতক্ষন তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব নাযিল না করবে যা আমরা পাঠ করব। বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? আর যখন মানুষের কাছে হিদায়াত আসে, তখন তাদেরকে ঈমান আনা থেকে বিরত রাখে কেবল তাদের এ কথা যে, আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন? বলুন, ফিরিশতাগণ যদি নিশ্চিন্ত হয়ে যমীনে বিচরণ করত তবে আমরা আসমান থেকে তাদের কাছে অবশ্যই ফিরিশতা রাসূল করে পাঠাতাম "।(সূরা বনী ইসরাঈল-আয়াত - ৯৩, ৯৪, ৯৫)।
আল কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, " তারা আরো বলে যে, তাঁর কাছে কোন ফেরেস্তা কেন প্রেরণ করা হল না? যদি আমি কোন ফেরেস্তা প্রেরণ করতাম, তবে গোটা ব্যাপারটি খতম হয়ে যেত। এরপর তাদেররকে সামান্য অবকাশও দেয়া হত না। যদি আমি কোন ফেরেস্তাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের রূপেই হত। এতেও সে সন্দেহই করত, যা এখন করছে"।(সূরা আনআম ,আয়াত -৮,৯)।
রাসূল (সাঃ) মানুষ ছিলেন এ ব্যাপারে কোন কাফেরেরও সন্দেহ ছিল না। মক্কার কাফেরদের আশ্চর্যের এটাইতো কারণ ছিল যে, আল্লাহ তাআলা কেন ফেরেস্তা ছাড়া মানুষকে রাসূল বানিয়ে পাঠালেন? এর জবাব আল্লাহ তাআলা কি সুন্দর শব্দে বলে দিলেন। যদি দুনিয়াতে মানুষের বদলে ফেরেস্তারা থাকতো তাহলে আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাই পাঠাতেন রাসূলরূপে। কিন্তু যেহেতু দুনিয়াতে মানুষ বাস করে তাই মানুষকেই পাঠানো হয়েছে রাসূল হিসেবে। এ সহজ কথাটি মক্কার কাফেররা বুঝতো না বলেই আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করে বুঝালেন।
মহানবী (সাঃ ) কে অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে যা এ দুনিয়ার আর কোন মানুষ বা নবীকে দেয়া হয়নি ।হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ ) ইরশাদ করেন, "আমাকে এমন পাঁচটি বৈশিষ্ট্য প্রদান করা হয়েছে, যা এর আগে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি।
১।এক মাসের পথের দূরত্ব পর্যন্ত শত্রুপক্ষের অন্তরে আমার ভীতি সঞ্চারিত করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।
২। সমগ্র ভূখণ্ডকে আমার জন্য মসজিদ এবং পবিত্রকারী অর্থাৎ নামাজ ও তায়াম্মুমের উপযুক্ত বানানো হয়েছে।
৩।আমার জন্য গনিমতের মাল হালাল করা হয়েছে, যা এর আগে কোনো নবীর জন্য হালাল করা হয়নি।
৪। আমাকে মহান সুপারিশের দায়িত্ব দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।
৫।পূর্বেকার সব নবী নিজ জাতির কাছেই প্রেরিত হতেন আর আমি পৃথিবীর সব মানুষের কাছে প্রেরিত হয়েছি।" (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং - ৫১২)।
অন্যদিকে মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর একটি উপাধি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া বা নবীদের সর্দার। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সব নবী-রাসুলের ওপর নেতৃত্বের মর্যাদা দান করেন।কিয়ামতের দিন মহানবী (সাঃ ) নবী-রাসুলদের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। উবাই ইবনে কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, " কিয়ামতের দিন আমি নবীদের ইমাম ও খতিব (মুখপাত্র) হব, আমি সবার সুপারিশকারী হব। এ কথা আমি অহংকার ছাড়াই বলছি "। (মিশকাত শরীফ, হাদিস নং - ৫১৩) ।
এ ছাড়া দুনিয়ার বিখ্যাত জ্ঞানী-গুণী মানুষ / মনীষীদের চোখেও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শ্রেষ্ঠত্ম প্রমাণিত -
১। স্যার জর্জ বার্নার্ড শ ‘দ্য জেনুইন ইসলাম’ বইয়ের প্রথম খণ্ডে লিখেছেন, " মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সব সময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি। কারণ এটি চমৎকার প্রাণবন্ত। আমার মনে হয়, এটিই একমাত্র ধর্ম, যা সদা পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা প্রতিটি যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি তাঁর (মুহাম্মদ) সম্পর্কে পড়াশোনা করেছি। চমৎকার একজন মানুষ। আমার মতে, খ্রিস্টবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, তাঁর মতো ব্যক্তির কাছে যদি আধুনিক বিশ্বের একনায়কতন্ত্র অর্পণ করা হতো, তাহলে তার সমস্যাগুলো তিনি এমন সাফল্যের সঙ্গে সমাধান করতেন, যা বহুপ্রতীক্ষিত শান্তি ও সুখ প্রতিষ্ঠা করত। আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি, যে মুহাম্মদের ধর্মবিশ্বাস আগামী দিনের ইউরোপের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যা এরই মধ্যে বর্তমান ইউরোপে গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করেছে "।
২। থমাস কার্লাইল ‘হিরোস, হিরো অ্যান্ড হিরো ওয়ার্কশপ অ্যান্ড হিরোইক ইন হিস্ট্রি’ বইতে লিখেছেন, " এই লোককে (মুহাম্মদ সাঃ) ঘিরে যে মিথ্যা (পশ্চিমা অপবাদ) পুঞ্জীভূত হয়ে আছে, যার ভালো অর্থ হতে পারে ধর্মান্ধতা, তা আমাদের নিজেদের জন্যই লজ্জাজনক"।
৩। মহাত্মা গান্ধী তাঁর ‘ইয়াং ইন্ডিয়া’ বইতে লেখেন, " আমি জীবনগুলোর মধ্যে সেরা একজনের জীবন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম, যিনি আজও লক্ষ-কোটি মানুষের হৃদয়ে অবিতর্কিতভাবে স্থান নিয়ে আছেন। যেকোনো সময়ের চেয়ে আমি বেশি নিশ্চিত যে ইসলাম তলোয়ারের মাধ্যমে সেই দিনগুলোতে মানুষের জীবনধারণ পদ্ধতিতে স্থান করে নেয়নি। ইসলামের প্রসারের কারণ হিসেবে কাজ করেছে নবীর দৃঢ় সরলতা, নিজের ব্যক্তিগত চাহিদা বিসর্জন দেওয়া, ভবিষ্যতের ব্যাপারে সতর্ক ভাবনা, বন্ধু ও অনুসারীদের জন্য নিজেকে চরমভাবে উৎসর্গ করা, তাঁর অটল সাহস, নির্ভয়তা, ঈশ্বর ও তাঁর (নবীর) ওপর অর্পিত দায়িত্বে অসীম বিশ্বাস। এসবই মুসলমানকে সব বাধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। যখন আমি মুহাম্মদের জীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড বন্ধ করলাম, তখন আমি খুব দুঃখিত ছিলাম যে এই মহান মানুষ সম্পর্কে আমার পড়ার আর কিছুই বাকি থাকল না " ।
৪। ডঃ উইলিয়াম ড্রেপার তাঁর বই ‘হিস্ট্রি অব ইনটেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্ট ইন ইউরোপ’ বইয়ে লেখেন, " জাস্টিনিয়ানের মৃত্যুর চার বছর পর, ৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে আরবে একজন মানুষ জন্মগ্রহণ করেন, যিনি সবার চেয়ে মানবজাতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। অনেক সাম্রাজ্যের ধর্মীয় প্রধান হওয়া, মানবজাতির এক-তৃতীয়াংশের প্রাত্যহিক জীবনের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করা—এ সব কিছুই সৃষ্টিকর্তার দূত হিসেবে তাঁর উপাধির যথার্থতা প্রমাণ করে"।
৫। আলফানসো দ্য লে মার্টিনি তাঁর বই ‘দ্য হিস্ট্রি দ্য লে টেরকি’-তে লেখেন, " উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব, লক্ষ্য অর্জনের উপায়গুলোর ক্ষুদ্রতা ও আশ্চর্যজনক প্রভাব যদি অসাধারণ মানুষের তিনটি বৈশিষ্ট্য হয়, তাহলে কে মুহাম্মদের সঙ্গে ইতিহাসের অন্য কোনো মহামানবের তুলনা করতে সাহস করবে? বেশির ভাগ বিখ্যাত ব্যক্তি শুধু সেনাবাহিনী, আইন ও সাম্রাজ্য তৈরি করেছেন। তাঁরা যদি কিছু প্রতিষ্ঠা করে থাকেন সেটা কিছুতেই জাগতিক ক্ষমতার চেয়ে বেশি কিছু নয়, যা প্রায়ই তাঁদের চোখের সামনে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই মানুষটি শুধু সেনাবাহিনী, আইন, সাম্রাজ্য, শাসক, লোকবলই পরিচালনা করেননি; সেই সঙ্গে তৎকালীন বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের জীবনকে আন্দোলিত করেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো তিনি দেব-দেবী, ধর্ম, ধারণা ও বিশ্বাসগুলো—এমনকি আত্মাগুলোকে পর্যন্ত আন্দোলিত করেছিলেন"।
৬। পৃথিবী বিখ্যাত বই ‘বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি’র লেখক মাইকেল এইচ হার্ট তাঁর বইতে বলেন, "মুহাম্মদকে সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষস্থান দেওয়াটা অনেক পাঠককে আশ্চর্যান্বিত করতে পারে এবং অন্যদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে; কিন্তু ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সেক্যুলার ও ধর্মীয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ সফল ছিলেন। সম্ভবত ইসলামের ওপর মুহাম্মদের তুলনামূলক প্রভাব খ্রিস্টধর্মের ওপর যিশু ও সেইন্ট পলের সম্মিলিত প্রভাবের চেয়ে বেশি। আমি মনে করি, ধর্মীয় ও সেক্যুলার উভয় ক্ষেত্রে প্রভাবের এই বিরল সমন্বয় যোগ্য ব্যক্তি হিসেবেই মুহাম্মদকে মানবেতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী একক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত করেছে"।
৭। বিশ্বখ্যাত বক্তা অ্যাডমন্ড বার্ক ভারতের সাবেক গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের ইমপিচমেন্ট (অভিশংসন/অভিযোগ) সংশ্লিষ্ট ভাষণে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে প্রবর্তিত ইসলামী আইনের প্রতি ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, " The Muhammadan Law is binding upon all, from the crowned head to the meanest subject. It is a law interwoven with a system of the wisest, the most learned and the most enlightened jurisprudence that has ever existed in the world "। বা "মুকুটধারী রাজা থেকে দীনতম প্রজা পর্যন্ত সবার ক্ষেত্রেই মুহাম্মদ প্রবর্তিত আইন সমানভাবে প্রযোজ্য। এ আইন হচ্ছে প্রাজ্ঞতম মনীষীদের চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে গ্রথিত পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানসমৃদ্ধ ও আলোকিত মানবিক আইনের ন্যায়শাস্ত্র, যা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি"।
৮। মানবসভ্যতার ইতিহাসে নারীর মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে যে ব্যক্তি জোরালোভাবে প্রথম সোচ্চার হন, মানবজীবনে নারীর অধিকার পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে ব্যক্তি অপরিসীম অবদান রাখেন, সত্যিকার অর্থে নারী জাগরণ ও নারী মুক্তির প্রবক্তা যে ব্যক্তি, তিনি হচ্ছেন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)। মানব ইতিহাসে দেখা যায় তিনিই প্রকৃতপক্ষে প্রথম মহাপুরুষ, যিনি নারী জাতিকে প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে মনীষী পিয়ের ক্রাবাইট (Pierre Crabite) বলেছেন,"Muhammad was the greatest champion of women’s rights the world has ever seen"। বা " মুহাম্মদ নারী অধিকারের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রবক্তা ছিলেন, যা পৃথিবীতে আর কখনো দেখা যায়নি"।
৯। আমেরিকার প্রখ্যাত মনসমীক্ষক জুলে মাসারম্যান তাঁর ‘হয়্যার আর দ্য লিডারস’ (Where are the leaders) নিবন্ধে বিভিন্ন মহৎ ব্যক্তির জীবনী বিশ্লেষণ করে নিবন্ধের উপসংহারে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন , " Perhaps the greatest leader of all times was Muhammad" বা " সম্ভবত, সর্বকালের জন্য সবচেয়ে মহান নেতা হচ্ছেন মুহাম্মদ" ।
এ নিবন্ধটি টাইমস ম্যাগাজিনে ১৯৭৪ সালের ১৫ জুলাই প্রকাশিত হয়। এখানে উল্লেখ্য, জুলে মাসারম্যান একজন ইহুদি হওয়া সত্ত্বেও প্রথম স্থান দিয়েছেন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে। তবে তিনি তাঁর ধর্মের নবী হজরত মুসা (আঃ) কে দ্বিতীয় স্থান দিয়েছেন।
মহানবী (সাঃ) মহামানব, যিনি শত্রু-মিত্র সবার কাছে প্রশংসার যোগ্য।আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, " একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, হে বৎস! তোমার অন্তরে কারো সম্পর্কে হিংসা-বিদ্বেষবিহীন অবস্থায় যদি তুমি সকাল-সন্ধ্যা কাটাতে পারো, তবে তুমি তা করো। অতঃপর রাসুল (সাঃ) বললেন, হে বৎস! এটা আমার সুন্নাত। আর যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসল নিঃসন্দেহে সে আমাকে ভালোবাসল। আর যে আমাকে ভালোবাসল, সে বেহেশতে আমার সঙ্গেই থাকবে"। (মিশকাত শরীফ, হাদিস নং - ৩০)।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দুনিয়ার বিখ্যাত জ্ঞানী-গুণী মানুষ / মনীষীদের মনেও তার শ্রেষ্ঠত্ম সম্পর্কে সন্দেহ না থাকলেও পরিতাপের বিষয় হল মুসলমান নামধারী কিছু মানুষও মক্কার কাফেরদের মতই অভিযোগ করে নবীজী (সাঃ ) মূর্খ-অশিক্ষিত (নাউজুবিল্লাহ ) একজন মানুষ যিনি কোন শ্রেষ্ঠ মানুষ নন বা আমাদের মতই একজন সাধারন মানুষ। যদি আল্লাহতে বিশ্বাস থাকে তাহলে কোরআনের আয়াত অনুযায়ী বিশ্বাস করতে হবে নবীজী (সাঃ) শ্রেষ্ঠ মানুষ। আল্লাহ তাআলার পরই নবী (সাঃ ) শ্রেষ্ঠ। তার মত আর কেউ নেই। তিনি সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তিনি হেদায়াতের নূর বা আলো ও মহামানব, এবং তিনিই মহৎ চরিত্র মর্যাদা সর্বোচ্চস্তরে অধিষ্টিত এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
তথ্যসূত্র ও সহযোগীতায় - আল কোরআন,হাদীস ও উইকিপিডিয়া।
======================================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
মহানবী (সাঃ) এর জীবনচরিত - ২ Click This Link
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মহামানব রাসূল (সাঃ) এর জ্ঞান (শিক্ষা) ও প্রজ্ঞা ।
মহানবী (সাঃ) এর জীবনচরিত - ১ Click This Link
" পবিত্র মাস রবিউল আউয়াল " সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মহামানব রাসূল (সাঃ) যিনি জন্মগ্রহণ করেন পবিত্র এ মাসে । ১২ ই রবিউল আউয়ালের তাৎপর্য ও করণীয় ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৪৩