ছবি - গুগল।
পর্দা ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান । কারন আল্লাহপাক মুমীন নর-নারী উভয়ের জন্য পর্দা ফরজ করেছেন।পবিত্র কোরআনের কয়েকটি সুরায় মহান আল্লাহপাক পর্দার বিধান সম্পর্কিত আয়াত নাজিল করার মাধ্যমে নর-নারী উভয়কে পর্দার আদেশ দিয়েছেন।তাই পর্দার বিধান মানা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ঈমানেরও দাবী।
পর্দা কি বা পর্দা বলতে কি বুঝায় - পর্দা শব্দটি মূলত ফার্সী। যার আরবী প্রতিশব্দ হিজাব । পর্দা বা হিজাবের বাংলা অর্থ- আবৃত করা, ঢেকে রাখা, আবরণ, আড়াল, অন্তরায়, আচ্ছাদান, বস্ত্রাদি দ্বারা সৌন্দর্য ঢেকে নেয়া, আবৃত করা বা গোপন করা ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনের নিমিত্তে উভয়ের মাঝে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত যে আড়াল বা আবরণ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে তাকে পর্দা বলা হয়।আবার কেউ কেউ বলেন, নারী তার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রূপলাবণ্য ও সৌর্ন্দয পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখার যে বিশেষ ব্যবস্থা ইসলাম প্রণয়ন করেছে তাকে পর্দা বলা হয়। মূলত হিজাব বা পর্দা অর্থ শুধু পোশাকের আবরণই নয়, বরং সামগ্রিক একটি সমাজ ব্যবস্থা, যাতে নারী-পুরুষের মধ্যে অপবিত্র ও অবৈধ সম্পর্ক এবং নারীর প্রতি পুরুষের অত্যাচারী আচরণ রোধের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে পর্দা কেন বা ইসলামে পর্দার বিধান কি -
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়েও ইসলামের মৌলিক দিক নির্দেশনা রয়েছে।পোশাক মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। লজ্জাস্থান আবৃত রাখা এবং সুন্দর ও পরিপাটি থাকার চাহিদা মানুষের স্বভাবজাত। তদ্রূপ শীত-গ্রীষ্মের প্রকোপ ও বাইরের ধুলোবালি থেকে শরীরকে রক্ষার জন্য তা একটি প্রয়োজনীয় আবরণ। তাই পোশাক আল্লাহ তাআলার নেয়ামত।পোশাক ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য, সভ্যতা ও লজ্জাশীলতার পরিচায়ক। মানুষ পোশাক পরিধানের তাগিদ অনুভব করেছিল সেই আদিম আমলেই। আদিম কাল থেকে আধুনিক কাল - সব যুগেই ছিল এবং আছে পোশাকের কদর। হোক না তা গাছের পাতা কিংবা সুতায় বোনা কাপড়। তাই লাজুকতায় বশীভূত হয়ে মানুষের লজ্জাস্থান ঢাকার প্রবণতা প্রাকৃতিক।ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় লেবাস বা পোশাক বলতে বুঝানো হয়, যা মানুষের সতর ঢেকে দেয়, লজ্জাস্থানকে আবৃত করে ফেলে। ফিকাহশাস্ত্রের সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘রদ্দুল মুহতারে’ বলা হয়েছে, ‘পোশাক তাকেই বলা হয়, যা লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখে।’ ন্যূনতম এতটুকু পরিমাণ পোশাক পরিধান করা ফরজ। কোরআনের ভাষ্য থেকেও পোশাকের এ সংজ্ঞা বোঝা যায়। কোরআন বলছে, "হে বনী আদম! অবশ্যই আমরা তোমাদের জন্য পোষাক নাযিল করেছি, তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকা ও বেশ-ভূষার জন্য। আর তাকওয়ার পোষাক , এটাই সর্বোত্তম। এটা আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের অন্যতম, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে"।(সুরা আরাফ, আয়াত- ২৬)।
ইসলাম মানুষের জন্য যে পোশাক মনোনীত করেছে, তার বিশেষ গুণ-বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, ইসলামসম্মত পোশাক বলতে সেই পোশাককে বোঝায়, যা লজ্জাস্থান আবৃতকারী, মানানসই, সাদৃশ্যবর্জিত, ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, বিলাসিতা বিবর্জিত, অহংকারমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন ।
ইসলামসম্মত পোশাকের জন্য কিছু রূপরেখা রয়েছে।
১। পোশাকটি সতর আবৃতকারী হতে হবে। সতর আবৃতকারী পোশাক বলতে বোঝায়, যে পোশাক সতরের অঙ্গগুলো পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। কাপড় এমন মসৃণ ও পাতলা হতে পারবে না, যাতে পোশাকের অভ্যন্তরের অঙ্গ দেখা যায়। কাপড় ঢিলাঢালা হওয়া উচিত। শর্টকাট, আঁটসাঁট পোশাক বিবস্ত্রতার নামান্তর।
২। পোশাক শালীন, সৌজন্যের পরিচায়ক ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়া চাই। জুতসই, মানানসই পোশাক পরিধানই ইসলামের দাবি। হাদিস শরিফে এসেছে ,"আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন"। (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং- ৯১) ।
৩। রেশমি কাপড় পরিধান করা যাবে না। এ বিধান পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য। নারীদের জন্য রেশমি কাপড় পরিধান করা বৈধ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন,"আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য রেশমি কাপড় এবং স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম; কিন্তু নারীদের জন্য তা হালাল"। (তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং - ১৭২০)।
৪। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি ইসলাম সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন ইসলামের শিক্ষা। বিশেষত, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধানের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন।
পর্দা ইসলামের সার্বক্ষণিক পালনীয় অপরিহার্য একটি বিধান। কোরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল প্রমাণাদির ভিত্তিতে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি বিধানাবলীর মতো সুস্পষ্ট এক ফরয বিধান। আল্লাহ তায়ালাই এ বিধানের প্রবর্তক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, "হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা নবীর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ"। (সূরা আহযাব,আয়াত - ৫৩) । এ আয়াতে বর্ণিত পর্দার হুকুমটি শুধু নবী-স্ত্রীদের সাথে নির্দিষ্ট নয়। বরং প্রতিটি ঈমানদার নর-নারীই পর্দার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত।
পর্দার বিধানের প্রতি পূর্ণ সমর্পিত থাকাই ঈমানের দাবি। এ বিধানকে হালকা মনে করা কিংবা এ বিধানকে অমান্য করার কোনো অবকাশ নেই। কেননা ইসলামী শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধানের বিরোধিতা করার অধিকার কারো নেই।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আল্লাহ এবং তার রাসূল কোনো বিষয়ের নির্দেশ দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ কিংবা কোনো মু’মিন নারীর জন্য সে বিষয় অমান্য করার কোনো অধিকার থাকে না। আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে অবশ্যই পথভ্রষ্ট।’ (সূরা আহযাব,আয়াত - ৩৬)।আর এ আয়াতের মাধ্যমে এ অকাট্যভাবে প্রমাণীত যে,পর্দা নর-নারী উভয়ের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
ইসলামে পুরুষের পর্দার বিধান -
আমাদের সমাজে নারীর পর্দার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে।অথচ মহান আল্লাহপাক নারীর পাশাপাশী পুরুষদেরকেও পর্দার নির্দেশ দিয়েছেন।তবে নারী-পুরুষের পর্দার জন্য আল্লাহপাক প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা সীমানা নির্ধারন করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহতায়ালা নারীদের পর্দার আগে পুরুষের পর্দার কথা বলেছেন, এর বিশেষ তাৎপর্য অবশ্যই রয়েছে। সমাজের বেশিরভাগ ধর্ষণ, পরকীয়ায় পুরুষকেই অগ্রগামী দেখা যায়। তাই পুরুষ তার দৃষ্টি সংযত রাখলে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করলে সমাজ থেকে এ জাতীয় অশ্লীলতা ও পাপাচার অনেকাংশে কমে যাবে।
চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ ।পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহপাক বলেছেন,"চরিত্রহীনা নারী চরিত্রহীন পুরুষদের জন্য, আর চরিত্রহীন পুরুষ চরিত্রহীনা নারীদের জন্য, চরিত্রবতী নারী চরিত্রবান পুরুষের জন্য, আর চরিত্রবান পুরুষ চরিত্রবতী নারীর জন্য। লোকেরা যা বলে তাত্থেকে তারা পবিত্র। তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা"।( সূরা আন নূর,আয়াত - ২৬)।
এ প্রসংগে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আরো বলেন,"নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, সওম পালনকারী পুরুষ সওম পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী নারী, আল্লাহ্কে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহ্কে অধিক স্মরণকারী নারী—তাদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান"।(সূরা আল আহযাব - আয়াত - ৩৫) ।
এ আয়াতে মুমিন নর-নারীর জন্য মূলনীতি বলে দেয়া হয়েছে যে - আল্লাহ তাআলা মানবচরিত্রে স্বাভাবিকভাবে পরস্পরের মাঝে যোগসূত্র রেখেছেন। পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের প্রতি হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে পবিত্র ও চরিত্রবান পুরুষদের আগ্রহ পবিত্র ও চরিত্রবান নারীদের প্রতি হয়ে থাকে।স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক চরিত্রবান নারী-পুরুষ নিজ নিজ আগ্রহ অনুযায়ী জীবনসঙ্গী খোঁজ করে নেয় এবং প্রাকৃতিক বিধান অনুযায়ী সেটাই বাস্তবরূপ লাভ করে। এ জন্য জীবনসঙ্গী ও সঙ্গিনী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম পবিত্র ও সৎচরিত্রকে প্রাধান্য দিতে জোর তাকিদ দিয়েছে।
"সুন্দর চরিত্র ফুলের চেয়েও পবিত্র আর খারপ চরিত্র ময়লার চেয়েও অপবিত্র" সুন্দর চেহারা থাকলেই চরিত্র সুন্দর হয় না, কিন্তু সুন্দর চরিত্রের মানুষ সত্যিকারের সুন্দর মানুষ হয়।চরিত্র হলো এমন উত্তম স্বভাব যা মানুষকে মহৎ কর্মে উদ্বুদ্ধ করে। অনেকে বলেন, উন্নত চরিত্র এমন প্রশংসনীয়, যা মানুষকে পশুত্ব থেকে টেনে এনে সৃষ্টিকুলের সেরা আসন তথা আশরাফুল মাখলুকাতের মঞ্চে অধিষ্ঠিত করে। যে চরিত্রে মনুষত্বের যাবতীয় উত্তম গুণাবলীর সমাহার ঘটে, তাকেই প্রশংসনীয় চরিত্র বলে।
ছবি - bd-journal.com
চরিত্রবান পুরুষ বা চরিত্রবতী নারী তথা স্বামী-স্ত্রী এ দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ একে অপরের জন্য।একজন নারীর সংশ্রব ব্যতীত পুরুষের জীবনের পরিপূর্ণতা আসে না। সুখে-দুঃখে নারীই পুরুষের জীবনসঙ্গিনী। সুতরাং দাম্পত্য জীবনে এ নারী যদি পূত-পবিত্র সচ্চরিত্রবান হয়, তাহলে সংসার তথা মানব জীবন স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। সমস্যাসঙ্কুল জীবনেও শান্তির ফল্গুধারা বয়ে যায়। যে শান্তি নারী-পুরুষের বৈবাহিক জীবনের মাধ্যমে শুরু হয়। বিবাহিত জীবনে নেককার স্ত্রীর গুরুত্ব অত্যধিক। তাই ইসলাম স্ত্রীকে দিয়েছে সর্বোত্তম মর্যাদা।
একজন পূত-পবিত্র সচ্চরিত্রবান স্ত্রীর ওপর নির্ভর করে ব্যক্তি (পুরুষের) ,পরিবার ,সমাজ, রাষ্ট্রীয় ও পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও সফলতা। আবার একজন নারীর জন্য স্বামী নির্বাচনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে মানুষের (পুরুষের) সেরা সম্পদ নেককার স্ত্রী। আবার নেককার স্ত্রীর জন্য সেরা সম্পদ হল আদর্শবান স্বামী। তাই একজন নারী ,স্ত্রী হিসেবে যে সব গুণ সম্পন্ন পুরুষকে বিয়ে করলে ব্যক্তি ,পরিবার তথা সমাজের জন্য মংগলজনক তার মাঝে নেককার স্বামীর যেসব চারিত্রিক গুন অন্যতম তাদের মধ্যে পর্দা একটি অন্যতম অনুসংগ ।
ছবি - গুগল।
আল্লাহপাক সুরা নূরে মুমিন পুরুষদেরকে দৃষ্টি অবনত রাখার মাধ্যমে পরনারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করতে নিষেধ করেছেন।মহান আল্লাহপাক বলেন ," হে নবী,মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং পবিত্রতা রক্ষা করে চলে।এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা।নিশ্চিয়ই তারা যা কিছু করেন আল্লাহ এ সম্পর্কে অবগত"। (সুরা নূর,আয়াত - ৩০)।এ প্রসংগে হযরত বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একবার হজরত আলী (রাঃ)-কে বললেন, " হে আলী! পরনারীর দিকে চোখ পড়ে গেলে দ্বিতীয়বার আর তাকিয়ো না। প্রথমবার অনিচ্ছায় চোখ পড়ে যাওয়ার কারণে তুমি ক্ষমা পাবে, কিন্তু দ্বিতীয়বার তাকানো তোমার জন্য জায়েজ নয়"। (মুসনাদে আহমাদ ও তিরমিজি শরীফ)।
এ প্রসংগে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আরো বলেন," হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।যদি তোমরা গৃহে কাউকেও না পাও, তাহলে তোমাদেরকে যতক্ষণ না অনুমতি দেওয়া হয়, ততক্ষণ ওতে প্রবেশ করবে না। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তবে তোমরা ফিরে যাবে; এটিই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা কর, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত"।(সুরা নূর,আয়াত - ২৭-২৮)।
রসুল (সঃ) একাধিক হাদিসে পুরুষদেরকে পর্দার নির্দেশ দিয়েছেন।মুসলিম শরিফে বলা হয়েছে,"কোন পুরুষ কোন পুরুষকে এবং কোন নারী কোন নারীকে যেন বিবস্ত্র অবস্থায় না দেখে"।আলোচ্য হাদিসে একজন পুরুষকে অপর পুরুষ এবং একজন নারীকে অপর নারী থেকেও পর্দা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এছাড়াও একাধিক হাদিসে একজন পরপুরুষ এবং পরনারীর দেখা সাক্ষাত করাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। রসুল (সঃ) বলেন,"সাবধান!কোন পরপুরুষ যেন কোন পরনারীর সাথে নির্জনে দেখা ও অবস্থান না কর।(বুখারী শরীফ - ৩০০৬)। তারপর এর কুফল বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,"কেননা,যখনই তারা নিরিবিলিতে মিলিত হয় তখন শয়তান তাদের মাঝে তৃতীয়জন হয় এবং উভয়কে কুকর্মে মিলিত করার প্রচেষ্টায় তাদের পিছু লেগে যায়" ( তিরমিযি)।
রসুল (সঃ) আরও বলেন,"মহরামের অনুপস্থিতিতে কোন পুরুষ কোন নারীর সংগে নির্জনে দেখা করবেনা"( বুখারী শরিফ -১৮৬২)।অন্য একটি হাদিসে শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকে হেফাজত থাকার জন্য পুরুষদেরকে সতর্ক করে বলেছেন,"স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোন নারীর নিকট যেওনা।কারন শয়তান তোমাদের যে কোন একজনের মধ্যে রক্তের ন্যায় প্রবাহিত হবে"(তিরমিযি শরীফ)।
তারপরও স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোন নারীর ঘরে যদি একান্তই প্রবেশের প্রয়োজন হয় এ ব্যাপারে আল্লাহপাক সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেছেন,"হে ঈমানদারগন - স্বামীর অনুমতি ছাড়া কারওর গৃহে প্রবেশ করবেনা "(সুরা নূর - ২৮) আলোচ্য আয়াত থেকে বুঝা যায়,স্বামীর অনুপস্থিতিতে কোন নারীর ঘরে একান্তই প্রবেশের প্রয়োজন হলেও স্বামীর অনুমতি নেওয়া আবশ্যক হবে।কারন রসুল(সঃ) অনুমতি না নিয়ে কারও ঘরে উকি দিয়ে দেখলেও কঠিন শাস্তির ঘোষনা দিয়েছেন।
মোট কথা,ইসলামে নারীদের পাশাপাশী পুরুষদের জন্য ও পর্দা আবশ্যক করেছে যা উপরের আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয়।পুরুষদের সহযোগীতা নারীদের জন্য পর্দা করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।তাই আল্লাহপাকের বিধান পর্দা পালনে পুরুষদেরকেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
একজন পুরুষের জন্য নির্ধারিত কিছু সংখ্যক নারীকে দেখা ইসলামে জায়েজ বা বৈধতা রয়েছে। তারা হলেন -
১।মা (আপন ও সৎ মা উভয়) । ২।দাদী-পরদাদী। ৩।নানী-পরনানী । ৪।মেয়ে (বৈপাত্রেয়া ও বৈমামাত্রিয়া মেয়ে ও দুধ মেয়ে) ৫।নাতনী (দুধ মেয়ে ও বৈপাত্রেয়া মেয়ের মেয়ে )। ৬।বোন (আপন,বৈপাত্রেয়া ,বৈমামাত্রিয়া ও দুধ ফুফু )। ৭।ফুফু (আপন,বৈপাত্রেয়া ও বৈমামাত্রিয়া ) । ৮।খালা (আপন,বৈপাত্রেয়া, বৈমামাত্রিয়া ও দুধ খালা) । ৯।ভাতিজী। ১০। ভাগ্নী ।১১।দুধ মা (আড়াই বছরের মধ্যে যার দুধ পান করা হয়েছে) ১২। দুধ বোন ১৩।শাশুড়ি (শুধু আপন শাশুড়ি ) ১৪।ঔরসজাত ও দুধ পুত্রের বধু ১৫।অতি বয়সী মহিলা (যাদের প্রতি তাকালে আকর্ষন অনুভব হয়না )।
ছবি - jugantor.com
ইসলামে নারীর পর্দার বিধান -
ইসলাম বিশ্বজনীন এক চিরন্তন ও শাশ্বত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামে রয়েছে নারীর সম্মান, মর্যাদা ও সকল অধিকারের স্বীকৃতি, রয়েছে তাদের সতীত্ব সুরক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক কর্মসূচী। তাদের সম্মান, মর্যাদা ও সতীত্ব অক্ষুন্ন রাখতেই ইসলাম তাদের উপর আরোপ করেছে হিজাব বা পর্দা পালনের বিধান। মূলত ‘হিজাব বা পর্দা’ নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক। নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচ।পর্দা নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায়।
ইসলাম পর্দা পালনের যে বিধান আরোপ করেছে তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার নিমিত্তেই করেছে। নারীদের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার কিংবা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করেনি।বরং তাদের পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার্থেই তাদের উপর এ বিধানের পূর্ণ অনুসরণ অপরিহার্য করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন," আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন জাহেলী যুগের প্রদর্শনীর মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুগত থাক। হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে"। (সূরা আহযাব,আয়াত - ৩৩)
এ বিধান অনুসরণের মাধ্যমে হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, "এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ"।(সূরা আহযাব,আয়াত - ৫৩)
ছবি - janomot.com
পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন," হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"। (সূরা আহযাব,আয়াত - ৫৯) ।এ আয়াতে নারীদের পর্দার সঙ্গে চলাফেরা করার গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে যে, পর্দার সহিত চলাফেরা করলে সবাই বুঝতে পারবে তারা শরীফ ও চরিত্রবতী নারী। ফলে পর্দানশীন নারীদেরকে কেউ উত্যক্ত করার সাহস করবে না।
এ জন্য পর্দা-বিধান ইসলামী শরীয়তের পক্ষ থেকে সাধারণভাবে সমাজ-ব্যবস্থার এবং বিশেষভাবে নবীর উম্মতের নারীদের জন্য অনেক বড় ইহসান। এ বিধানটি মূলত ইসলামী শরীয়তের যথার্থতা, পূর্ণাঙ্গতা ও সর্বকালের জন্য অমোঘ বিধান হওয়ার এক প্রচ্ছন্ন দলিল। মানব সমাজকে পবিত্র ও পঙ্কিলতামুক্ত রাখতে পর্দা বিধানের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে বর্তমান সমাজের যুবক ও তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা ও নারীজাতির নিরাপত্তার জন্য পর্দা-বিধানের পূর্ণ অনুসরণ এখন সময়ের দাবি।হাদীস শরীফেও পর্দার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন," নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়"। (তিরমিযী শরীফ - হাদীস নং - ১১৭৩) ।
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আলী (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদা তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশ্যে) বললেন, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি? তারা চুপ হয়ে গেলেন। (কেউ বলতে পারলেন না) ।অতপর আমি ফিরে এসে ফাতেমা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি ? তিনি বললেন, কোনো পরপুরুষ তাকে দেখবে না (অর্থাৎ নারী পর্দাবৃত থাকবে)। তারপর আমি ঐ বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, নিশ্চয় ফাতেমা আমার অংশ, সে সত্য বলেছে)। (মুসনাদুল বাযযার,হাদীস নং - ৫২৬) ।
ছবি - swadeshpratidin.com
হযরত ফাতেমা (রাঃ) এর কথায় পর্দার গুরুত্ব পরিস্ফূটিত হয়। আর পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় বিবেকের দাবীও তাই। এছাড়াও পর্দা পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় ও সম্মানিত হতে পারে।কেননা হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা পর্দানশীনদের ভালোবাসেন। আর কোরআনে বলা হয়েছে,"হে মানুষ! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে , আর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই বেশী মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশী তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।"। (সূরা হুজুরাত,আয়াত - ১৩)
প্রকৃত অর্থে তাকওয়া সম্পন্ন বা মুত্তাকী হলো ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর নির্দেশসমূহ মেনে চলে। আর সর্বসম্মতিক্রমে পর্দা আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশ। যেহেতু পর্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য অবশ্য পালনীয় নির্দেশ সেহেতু পর্দা পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন হতে পারে।
এছাড়াও পর্দা-বিধান সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, এ বিধানের পূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের নৈতিক চরিত্রের হিফাযত হয়। পারিবারিক ব্যবস্থা সুরক্ষিত ও সুদৃঢ় হয়। কারণ, পর্দা পালনের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পরকিয়াবিহীন পবিত্র জীবন গঠিত হয় এবং চরিত্রহীনতা ও অবিশ্বাস তাদের থেকে বিদায় নেয়। তাই মুসলিম উম্মাহ অকপটে স্বীকার করতে বাধ্য যে, দুনিয়া ও আখিরাতে পর্দার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
একজন নারীর জন্য নির্ধারিত কিছু সংখ্যকপুরুষকে দেখা ইসলামে জায়েজ বা বৈধতা রয়েছে বা মুসলিম নারীরা যাদের সামনে পর্দা না করলেও চলবে বা নিজেকে প্রকাশ করতে পারবে -
মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর পর্দা না করা জায়েয।নারীর জন্য মাহরাম হচ্ছে ঐসব পুরুষ যাদের সাথে উক্ত নারীর বৈবাহিক সম্পর্ক চিরতরে হারাম,সেটা ঘনিষ্ট আত্মীয়তার কারণে। যেমন ১। পিতা (যত উপরের স্তরে হোক না কেন) ২। সন্তান (যত নীচের স্তরের হোক না কেন) ৩। চাচাগণ ৪। মামাগণ ৫। ভাই ৬। ভাইয়ের ছেলে ,বোনের ছেলে কিংবা দুধ পানের কারণে (যেমন- নারীর দুধ ভাই) ৭।দুধ-মা এর স্বামী কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে (যেমন- মায়ের স্বামী) ৮। স্বামীর পিতা (যত উপরের স্তরের হোক না কেন) ৯। স্বামীর সন্তান (যত নীচের স্তরের হোক না কেন)।
পর্দা প্রসংগে মহান আল্লাহতায়ালা আল কুরআনে বলেন," আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে, আর তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তবে যা সাধারণত প্রকাশ হয়ে থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা , তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে আস , যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।(সুরা আন নুর,আয়াত - ৩১)।
ছবি - swadeshpratidin.com
বাইরে গমনকালীন নারীদের জন্য পর্দার বিধান -
নারীদের জন্য গৃহের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী বা নানা দরকারে তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। এজন্য ইসলাম প্রয়োজনে নারীকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার স্ত্রী হযরত সাওদা (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, প্রয়োজনে তোমাদেরকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। (বুখারী শরীফ,হাদীস নং- ৪৭৯৫) ।
মূলত ইসলাম একটি সর্বাঙ্গীন ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। তাই মানব প্রয়োজনের সকল দিকই ইসলামে বিবেচিত হয়েছে। তাই নারীকে এক্ষেত্রে পর্দাবৃত হয়েই বাইরে বের হতে হবে। কিছুতেই পর্দাহীনভাবে বের হওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে বিশ্বনবী (সাঃ) বলেন," নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু, যখনই সে পর্দাহীনভাবে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি মেরে তাকায়"। (তিরমিযী শরীফ,হাদীস নং - ১১৭৩) ।
আবার পবিত্র কোরআনে নারীদেরকে বাইরে গমনকালীন মুহুর্তে পূর্ণ পর্দা পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালার সুস্পষ্ট নির্দেশ, "হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা এবং মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন (প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার সময়) তাদের (পরিহিত) জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"। (সূরা আহযাব,আয়াত - ৫৯)।এ আয়াতে নারীদেরকে বাইরে গমনের সময় তাদের পরিহিত জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ছবি - dhakapost.com
এ বিধানের ব্যাপারে সারকথা হলো, কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সর্বসম্মতিক্রমে হিজাব বা পর্দা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নর-নারী তথা মানব জাতির জন্য এক ফরয বিধান। সর্বাবস্থায় এ বিধানের প্রতি পূর্ণ সমর্পিত থাকা নর-নারী উভয়ের জন্য অপরিহার্য।পরিশেষে একথা বলা যায় যে,পর্দার বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।সমাজ থেকে খারাপ আচরণ,পাপাচার-অনাচার, ধর্ষন,অবাধ যৌনতা ইত্যাদি রোধ করার ক্ষেত্রে পর্দা প্রথা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।পর্দা প্রথা অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজ,রাষ্ট্র থেকে এ জাতীয় অপরাধ নির্মুল করা সম্ভব ।মহান আল্লাহপাক নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে পর্দা প্রথার গুরুত্ব অনুধাবন করার ও পর্দা প্রথা অনুসরন করার তওফিক দিন।তওফিক দিন সকল ফেতনা ফ্যাসাদ থেকে নিজেকে হেফাজত করার এবং উন্নত ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তথা দেশ ও সমাজ থেকে সকল যেনা-ধর্ষন,ব্যাভিচার রোধ করার।
তথ্যসূত্র - আল কোরআন,হাদীস ও উইকিপিডিয়া
উৎসর্গ - " সে সকল মুসলিম নর-নারীকে " - যারা শতপ্রতিকূলতার মাঝেও ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলি পালনের চেষ্টা করেন।
=========================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
মানব জীবন - ১৩ - "ধর্ম " Click This Link
মানব জীবন - ১২ " সহ শিক্ষা " Click This Link
মানব জীবন - ১১ " শিক্ষা " - Click This Link
মানব জীবন - ১০ "পরিবার " - Click This Link
মানব জীবন - ৯ "বিবাহের পরে" - Click This Link
মানব জীবন - ৮ " মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য " - Click This Link
মানব জীবন - ৭ " তালাক " - Click This Link
মানব জীবন - ৬ "দেনমোহর - স্ত্রীর হক" - Click This Link
মানব জীবন - ৫ "বিবাহ" - Click This Link
মানব জীবন - ৪ " মাতৃত্ব " - Click This Link
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)"- Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link