ছবি - muslimmarrige.com
সন্তানের আকাংখা নর-নারী নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের জীবনে থাকে।সন্তানের মাধ্যমে একটি সংসার পূর্ণতা পায় এবং মানব জীবনের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয় ।পরিণত বয়সে এবং বিবাহের পরে এই আকাংখা বাস্তবে রুপলাভ করার সুযোগ আসে।একজন নারী এবং একজন পুরুষ যখন বিবাহের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন থেকে তাদের বিবাহীত জীবন শুরু হয়। বিবাহীত জীবনে তাদের উভয়ের যত ধরনের আশা আকাংখা থেকে থাকে তার মধ্যে একটি সন্তানের আকাংখাই সবচেয়ে বেশী এবং তীব্র থাকে।আর প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী এবং স্রষ্টার দয়ায় বিবাহের কিছুদিন পর একজন নারী গর্ভবতী হয়।
ছবি -pinterest.com
* সন্তান (ছেলে-মেয়ে) সৃষ্টি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ পাক বলেন - "নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদের পুত্র-কন্যা উভয় দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।"। (সুরা আশ শুরা - আয়াত -৪৯ - ৫০)। আর সৃষ্টিকর্তা না চাইলে করো পক্ষেই সন্তানের বাবা- মা হওয়া যায় না বা সম্ভব নয়।
একজন পুরুষ এবং একজন নারী যখন বিবাহের মাধ্যমে সংসার জীবনে প্রবেশ করে, তার কিছুদিন পর থেকেই স্বামী - স্ত্রী উভয়েই এবং সাথে সাথে পরিবারের বাকী সদস্যরাও একটি সন্তানের জন্য প্রত্যাশা করে । যখন একজন নারী গর্ভবতী হয় তখন পুরো পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় এবং সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে নতুন অথিতিকে সাদরে বরন করার জন্য ।তারপরেও এত আশা-আকাংখা এবং আনন্দ- ভালবাসার মাঝেও কেউ কেউ একটি সন্তানের বাবা-মা হতে পারেনা।এক্ষেত্রে কিছুদিনের মাঝেও হয়ত শুরু হয়ে যায় স্বামী - স্ত্রীর মাঝে মানষিক টানাপোড়ন এবং পারিবারিক অশান্তি ।এই সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর যে কেউ কিন্তু ভূক্তভোগী হয় উভয়েই বিশেষ করে নারীরা।
আমাদের সমাজে নারীর জীবন স্বামী ও সন্তান ছাড়া অসম্পূর্ণ মনে করা হয়। মনে করা হয় সন্তান ছাড়া নারীর জীবন বৃথা । মাতৃত্বের স্বাদ না পেলে নারী হয়ে জন্মানোর সার্থকতা কোথায়! আমাদের উপমহাদেশের সমাজ এভাবেই নারীকে নিয়ে ভাবে বা মূল্যায়ন করা হয়।
সংসার জীবনে / বিবাহিত নারীর সামাজিক অবস্থানে তার নিজ পরিচয় যাই হোক না কেন, সেই নারী যদি সন্তান জন্ম দিতে না পারে, তবে হোক সে গ্রামের একজন সাধারণ বধূ বা হোক সে একজন উচ্চ পদের সফল নারী, তার পরিচয় তখন বন্ধ্যা নারী হিসেবেই হয়ে থাকে আমাদের সমাজে। তার অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় পরিচয় গৌণ হয়ে যায় সন্তানহীন হওয়ার কারণে।
আমাদের সমাজে উত্তরাধিকার রক্ষায় একমাত্র প্রক্রিয়া মনে করা হয় নারীর গর্ভধারণ অর্থাৎ সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে। অথচ এটা একটা জৈবিক প্রক্রিয়া যেটাকে উত্তরাধিকার রক্ষার দোহাই দিয়ে মা হওয়াকে এত গুরুত্বপূর্ণ ভাবে দেখানো হয়।মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত বা নিম্নবিত্ত সব শ্রেণীতেই এই ধ্যান-ধারনা রয়েছে। শুধু আমাদের সমাজ নয়, নারী নিজেও তার জীবনের সার্থকতা মা হওয়াকেই মনে করে।সে তার পরিবার থেকে, সমাজ থেকে এই মানসিকতা নিয়েই বড় হতে হতে এটাকেই জীবনের স্লোগান ভেবে নেয়।
প্রতিষ্ঠিত স্বামী পাওয়া,সন্তানের মা হওয়াকেই বিবাহিত নারীর জীবন সফল, সুখের ও সার্থক মনে করা হয়। অবশ্যই মাতৃত্ব খুব সুন্দর ও আনন্দদায়ক একটি অনুভূতি। সন্তান হওয়ার পর একজন নারী নারী থেকে একজন মা হয়ে ওঠে। তখন তার জীবনটাই পাল্টে যায়। কিন্তু মা হওয়াটাই কি সবকিছু?
ইচ্ছে করে কোন নারী সন্তানহীন থাকে না। নানা শারীরিক জটিলতা, হরমোনাল ইমব্যালেন্স, ইকটোপিক প্রেগন্যান্সি প্রভৃতি কারণে একজন নারী সন্তান জন্মদানে অক্ষম হতে পারেন। কিন্তু সমাজ কখনো সন্তান জন্মদানে অক্ষম নারীকে মেনে নিতে পারে না। আর সব জায়গায় দেখা যায় ,যদি স্বামীও সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়, তবুও নারীটিকেই সমস্ত অত্যাচার সহ্য করে যেতে হয়।যে নারী মা হতে পারে না তার এই সমাজে কোনই মূল্য নেই।গর্ভে সন্তানধারণ না করেও কি মা হওয়া যায় না ? এভাবে কি ভাবা যায়না বা হতে পারেনা - সন্তানহীন নারীর অক্ষমতাকে মেনে নিয়ে দত্তক সন্তান গ্রহণ করা বা আপনজনদের কারো নিকট থেকে একজন নিয়ে তাকে সন্তানরূপে লালন-পালন করা (যদিও এ ব্যাপারগুলো বলা যত সহজ তা করা/মেনে নেয়া অনেক কঠিন) ? কারন, মাতৃত্বই নারী জীবনের সফলতার একমাত্র মাপকাঠি নয় । কিন্তু এতসব কিছু আমাদের জানা থাকার পরেও কেন এমন মানসিকতা আমাদের সমাজের মানুষের ?
একজন নারী একজন মা হওয়ার আগে একজন মানুষ। মাতৃত্বই নারী জীবনের কেন্দ্রবিন্দু নয় এবং হওয়া উচিতও নয়।স্বামী, পরিবারের, সমাজের ভুলে গেলে হবে না যে, মা হওয়াই তার জীবনের একমাত্র সত্য নয়।সন্তান জন্ম বা লালন-পালন ছাড়াও নারী তার জীবনে আরও অনেক কাজ করে থাকে এবং তাকে সামগ্রিকভাবে সব মিলিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত।শুধু একজন মা হিসাবে নয়।তবে খুবই হতাশার কথা- এই কথা পরিবার, সমাজ তো ভুলে যায়, নারী নিজেও ভুলে যায়।
আমাদের সমাজে মা না হতে পারাকে একমাত্র নারীরই দোষ মনে করা হয়। সন্তান হওয়া বা না হওয়ার জন্য নারীর একার কোনো ভূমিকা নেই আমরা খুব ভালো করে জানি। তা সত্বেও আমাদের সমাজে পুরুষের অক্ষমতাকে একদমই এড়িয়ে যাওয়া হয়। আর একারণেই নিঃসন্তান নারীকে আজীবন বন্ধ্যা শব্দটি শুনতে হয়। আমরা ভুলে যাই, সৃষ্টিকর্তা না চাইলে সন্তানের মা বাবা হওয়া যায় না। মানুষ চাইলেই সন্তানের মা বাবা হয়ে যেতে পারে না।
আমরা বই-পুস্তকে বা সাহিত্যে দেখি বিভিন্নভাবে নারীর জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়। কিন্তু ওসব শুধু বই-পুস্তকের মাঝেই সীমাবদ্ধ । বাস্তব জীবনে এর সম্পূর্ণ বিপরীত ধ্যান-ধারনা ও চিত্র দেখা যায় । আমরা যা দেখি - নারী জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে বিয়ে করে স্বামী-সংসার ও সন্তান জন্মদান। নিঃসন্তান নারীর মেধা আর পরিশ্রমকে কখনো কখনো মূল্যায়ন করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবমূল্যায়ন করা হয়। তাদের মেধা আর পরিশ্রমকে ধর্তব্যের মধ্যেই ফেলা হয় না। অথচ তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দোষ ত্রুটিকে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে বড় করে দেখতে খুব পারদর্শী আমরা।
নারীর তুলনায় পুরুষের পিতৃত্বে বন্ধ্যা শব্দটি খুব একটা প্রভাব ফেলে না। পান থেকে চুন খসলেই যেখানে আমরা নারীরাই আরেকজন নারীকে সব দোষ দেই, আর যদি হয় নিঃসন্তান তবে তা যেন হয়ে যায় আগুনে ঘি ঢালার মতো। সন্তানহীন নারীকে মানুষ বলেই মনে করা হয় না। খুবই দুঃখজনক। নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছেন এমন অনেক নিঃসন্তান নারী আছেন যাদেরকে বন্ধ্যা পরিচয়টি তাদের অবস্থান থেকে টলাতে পারেনি।
বলা হয়ে থাকে, নারী মায়ের জাত। মায়ের জাত বলে তাকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়- তার কাজ মা হওয়া। মা হওয়া ছাড়া তার কোনো অস্তিত্ব নেই। কোনো পরিচয় নেই।আর তাই সন্তান না হলে বা হতে দেরি হলে তাকে নিয়ে আড়ালে ও প্রকাশ্যে চলে আলোচনা-সমালোচনা।তাকে নানান লোকের নানান কথা শুনতে হয় এবং জবাব দিতে হয় নানান অদ্ভুত প্রশ্নের।
খুবই দুঃখ ও হতাশার কথা যে, সন্তান না হওয়ায় অনেক দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদও ঘটে। সন্তান জন্ম দিয়ে নারীকে প্রমাণ দিতে হয় যে তার মন ও শরীর ঠিক আছে। এমন ঘুণ ধরা সমাজ আমাদের! সন্তানহীন বিবাহিত নারীর দিকে সমাজের অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টিতে মিশে থাকে সহানুভূতি, করুণা এবং থাকে পরিতৃপ্তি ও অহংকার। তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে, তুমি যা পাচ্ছ না, আমি তা পাচ্ছি।আমরা এতটাই সংকীর্ণ মানসিকতার যে, নিঃসন্তান নারীর কাছে অনেক মায়েরা তাদের বাচ্চাকে ঘেষতে দেয় না, বাচ্চার মুখ দেখাতে চায় না এমনকি ছবিও দেখাতে চায় না। কী অদ্ভুত মানসিকতা!
আমাদের উপমহাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় এরকম সংকীর্ণ মানসিকতা বেশী দেখা যায়। সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে নারীর প্রবেশের অনুমতি থাকলেও অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় না সন্তানহীন হওয়ার কারণে। তাদেরকে বিড়ম্বনা হিসেবে দেখা হয়। অথচ এই বিড়ম্বনা দিচ্ছেন কারা? সমাজের তথাকথিত সব আছে সুখি টাইপ মানুষরাই নিঃসন্তান নারীদের বিড়ম্বনার কারণ হচ্ছেন। বাঁজা, অপয়া শব্দগুলো তাদের জন্য নির্দিষ্ট করে তাদেরকে আলাদা করে ফেলা হয়। যেন তাদেরকে দেখা নিষেধ, ছোঁয়া নিষেধ।
ছবি - rdwhc.com
সমাজের এমনতর আচরণ ও মানসিকতার কারণেই বিবাহিত নারী মা হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।সন্তান ছাড়া সংসার টিকবে তো! স্বামী তোমায় ভালোবাসবে তো আজীবন এমনি করে! আরেকটি বিয়ে করে ফেললে কী হবে তোমার! স্বামীর সম্পত্তি পাবে তো তুমি! ইত্যাদি নানান হতাশার কথা নিঃসন্তান নারীকে শুনতে হয়।ফলে সে নিজের জীবনকে অনিরাপদ মনে করে পরিবারে ও সমাজে। সর্বোচ্চ দিয়ে সে চেষ্টা চালিয়ে যায় মা হওয়ার জন্য, তা বয়স যতই হোক আর তার শারীরিক সুস্থতা থাকুক বা না থাকুক। সমাজের এই চাপিয়ে দেয়া মা হওয়াতে নারীর মনে আনন্দের চেয়ে বেশি কাজ করে ভয়।
আমরা সমাজ পরিবর্তন নিয়ে এত কথা বলি অথচ মাতৃত্ব বা মা হতেই হবে, এই পুরনো ধ্যান-ধারনা নিয়ে কিছুই বলি না, ভাবি না। এ থেকে বের হতে পারি না। নারী কেন শুধু কোনো জাত হবে? জীবনে নারীকে বিভিন্ন সম্পর্কের নারী হতে হয়। কিন্তু আলাদা করে সে শুধুই মায়ের জাত নয়। একজন মানুষ। একজন নারী।
আমাদের দায়িত্ব বিবাহিত নিঃসন্তান নারীকে মানসিক সাপোর্ট দেয়া। তাকে এমন সাপোর্ট দেয়া যেন সে নিজেকে ছোট বা বঞ্চিত মনে না করেন। হতাশা বা দুঃখবোধ যেন তাকে স্পর্শ করতে না পারে। এই মহান দায়িত্ব স্বামীর পাশাপাশি পরিবারের সব সদস্যদের, সাথে অবশ্যই সমাজের মানুষেরও। সন্তানহীন নারীর প্রতি সকল প্রকার মানষিক ও শারিরীক নির্যাতন রোধের জন্য আমাদের প্রয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই সন্তানহীন নারীর প্রতি আমাদের মানবিক করতে পারবে।গড়ে উঠবে একটি সুন্দর সমাজ।আর তাই সন্তানহীন নারীদের প্রতি আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে পরিবার ও সমাজ তথা আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
ছবি-babycentre.co.uk
যদিও এখন সময় পাল্টেছে।তাই বিয়ের পাঁচ-সাত বছর পরও সন্তান হয়নি যে নারীর, তাঁকে গালমন্দ করা হয় না বটে, তবে সদুপদেশ দিতে ছাড়েন না কেউ। বর্তমানে বন্ধ্যাত্বের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা আছে, সেসব চিকিৎসায় ফলও হয়। আমাদের দেশেও সফলভাবে শুরু হয়ে গেছে টেস্টটিউব শিশু বা আইভিএফ, আইইউআই ধরনের অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। আর এসব চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল ও বটে যা সবার পক্ষে বহন করা সম্ভব না ।এত সব কিছুর চেষ্টা ও তদবিরের পরেও সমাজে অনেক নারীর পক্ষেই মা হওয়া সম্ভব হয়না।কোলজুড়ে একটা শিশু না আসার বেদনা ও দীর্ঘশ্বাসটুকু তারা কাউকেই বলে বোঝাতে পারেন না।এই দীর্ঘশ্বাসটুকু সন্তানহীন স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপন ও পরম বেদনার। কিন্তু পরিবারে, সমাজে এবং নানা অনুষ্ঠানে এ নিয়ে যেকোনো ধরনের আলোচনা বা পরামর্শ যে তাদের জীবনে আরও বড় বেদনা বয়ে নিয়ে আসে তা আমরা অনেকেই বুঝতে চাইনা।
ছবি - paddyjimbaggot.com
সমাজের নানা জন উপযাজক হয়ে যখন তাদের যন্ত্রণাদায়ক এবং কষ্টকর এ বিষয়ে আলোচনা করে বা তাঁরা কোথায়, কার কাছে চিকিৎসা করছেন বা করিয়েছেন, কী কী চেষ্টা ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন, সমস্যাটা কোথায় ইত্যাদি বিষয় যে তাঁদের দুজনের গোপন ও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে তাদের প্রশ্ন করেন বা উপদেশ দেন, এগুলো যে তাদের জন্য কষ্টকর এবং অযাচিত আলোচনার বাইরের বিষয়—তা অনেকেই বুঝতে চান না।অন্যের ব্যক্তিগত গোপন বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা বা চর্চা করা, এমনকি নির্দোষ আলোচনা করাও কখনো কখনো ভদ্রতা বা সৌজন্যের সীমা পেরিয়ে যেতে পারে, কখনো হয়ে উঠতে পারে অন্যের জন্য বিব্রতকর বা কষ্টকর—এটা আমাদের বিবেচনা করা উচিত। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে অন্যের নাজুক বিষয়গুলোর প্রসঙ্গ টেনে না আনাটাই উচিত। তাই সন্তানহীন নারী-পুরুষ যেই হোক তাদের এ বিষয়ে প্রশ্ন বা সন্তানহীন / বন্ধ্যা হিসাবে তাদের মূল্যায়ন না করে একজন মানুষ হিসাবে মানবিক দৃষ্টিতে
তাদের মূল্যায়ন জরুরী।
ছবি - thenaturaldoctor.org
সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়া মানুষের হাতে নেই। তা সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তার হাতে। গর্ভধারণ করে সন্তানের মা হওয়া আনন্দের বিষয়, কিন্তু কোনো গর্বের বিষয় নয়। আর সন্তান জন্মদান করতে না পারাটাও দুঃখ বা হতাশার বিষয় নয় বলেই আমি বিশ্বাস করি। অনেক নেয়ামতের মধ্যে আল্লাহর তরফ থেকে সন্তান একটি নেয়ামত। যেই নেয়ামত দ্বারা আমরা জীবনে সুখি হতে পারি কিংবা দুখি।কিন্তু যে নারীর ভাগ্যে এই নেয়ামত লাভ হয়না তার মানে এই না যে সেই নারীর জীবন বৃথা বা সেই নারী অপয়া।
সুতরাং মাতৃত্বই সমস্ত সাফল্যের মূল এমন ভাবা বন্ধ করা না হলে নারী নিজেকে মানুষ বলে ভাবতে পারবে না। নারীর জীবনের এক এবং শেষ কথা যেন মাতৃত্ব না হয়। মা হতে হবেই এই ভারে নারী যেন তার জীবনের স্বপ্নগুলো হারিয়ে না ফেলে এবং মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু থেকে যেন বঞ্চিত না হয়। শরীরের ভার, যন্ত্রণা, কষ্ট সহ্য করে সন্তান আনার স্বপ্ন ও ইচ্ছে নারীর নিজের বুকেও স্বাভাবিক ভাবেই জেগে উঠে,আর এর বাস্তবায়ন না হলে বা কোন কারনে মা হতে না পারলে সেই নারীই সবচেয়ে বেশী কষ্টলাভ করে।আর সেই কষ্টের আগুনে ঘি ঢেলে সন্তানহীন নারীকে মানষিক ভাবে আরও কষ্ট দেয়া কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না এবং তা মানবিক ও নয়।
তাই সন্তান না হলে নারীর জীবনকে ব্যর্থ ভাবা মোটেই মানবিক বৈশিষ্ট্য নয়।
চলবে -
=================================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)"- Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link
তথ্যসূত্র -* আল কোরআন।
উৎসর্গ : এই পর্বটি উৎসর্গিত সেই সব নর-নারীদের জন্য ,যারা শত চেষ্টার মাঝেও একটি সন্তানের মা-বাবা হতে না পেরে দারুন মনোঃকষ্টে এবং যন্ত্রণাদায়ক জীবন অতিবাহীত করছেন। দয়াময় আল্লাহ চাইলে এ পৃথিবীতে সকল সমস্যার সমাধান সম্ভব ।মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, এ দুনিয়ার সকল স্বামী - স্ত্রীকে সন্তান দান করুন এবং একটি নারীও যেন নিঃসন্তান না থাকে।