somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কমনওয়েলথ (ময়নামতি) যুদ্ধ সমাধি - যেখানে প্রকৃতির নির্মল ছায়ায় ঘুমিয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৭৩৭ যোদ্ধা

০৩ রা জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সবুজ পাহাড়ের প্রকৃতির কোলে দাড়িয়ে আছে কমনওয়েলথ (ময়নামতি) ওয়্যার সিমেট্রি বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সমাধি ।প্রথমেই চোখে পড়বে সবুজ ঘাসের গালিচায় হরেক রংগের ফুল।গাছ-গাছালি ঘিরে সুনসান নিরবতা।এখানে শায়িত আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকরা।কুমিল্লা জেলায় কমনওয়েলথ (ময়নামতি) যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র অবস্থিত।১৯৪১-৪৫ সালে বার্মায় ( বর্তমানে মিয়ানমার ) সংঘটিত যুদ্ধে যে ৪৫ হাজার সৈনিক নিহত হন তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে বার্মা,আসাম এবং বাংলাদেশে মোট ৯ টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরী করা হয়।বাংলাদেশে মোট ২ টি রণ সমাধিক্ষেত্র আছে।যার অন্যটি চিটাগাং শহরে অবস্থিত।

জানা যায় ,ময়ানামতি যুদ্ধ সমাধিক্ষেত্র মূলত: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ভারতীয় ও বৃটিশ সৈন্যদের কবরস্থান।সমাধিক্ষেত্রটি প্রতিষ্ঠা করেছেন কমনওয়েলথ ওয়্যার গ্রেভস কমিটি।সেসময় ময়নামতি একটি ছোট গ্রাম হলেও পরে সেনাবাহিনীর বড় ঘাটিতে পরিণত হয় এবং একটি হাসপাতাল ও তৈরী করা হয়।এ ছাড়া কুমিল্লা ছিল যুদ্ধ সরঞ্জাম এর সরবরাহের ক্ষেত্র।বিমান ঘাটি এবং ১৯৪৪ সালে ইম্ফলে স্থানান্তুর হওয়ার আগে বৃটিশ সেনাবাহিনীর চর্তুদশ সদর দফতর ছিল এখানে।



কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের উত্তরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বুড়িচং উপজেলায় এর অবস্থান।স্থানীয়দের কাছে এটি ইংরেজ কবরস্থান নামেই সমধিক পরিচিত।এ সমাধিক্ষেত্রটি দুটি স্তরে বিভক্ত ।মূল ফটক পেরিয়ে প্রবেশ করলে দেখা যায় দু'পাশে সাজানো সমাধি।সামনে সিড়ি বেয়ে কিছুটা উঠলে প্রার্থনা কক্ষ আর মাঝে শ্বেতপাথরের যিশুখৃষ্টের ক্রুসের চিহ্ন।তার উপরে অর্থ্যাৎ সমাধির পিছনের অংশে নিহত মুসলিম সৈনিকদের কবর।কুমিল্লার শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে সাড়ে চার একর উচু-নীচু টিলাভূমিতে এ সমাধিসৌধে ৭৩৮ জনকে সমাহিত করা হয়েছিল ।তবে ১৯৬২ সালে এক সমাহিত সৈনিকের দেহাবশেষ আত্মীয়-স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়।ফলে বর্তমানে এখানে ৭৩৭ টি সমাধিক্ষেত্র রয়েছে।

এখানে সবাই এটাকে ইংরেজ কবরস্থান বললেও প্রকৃতপক্ষে এখানে শায়িত আছেন মুসলিম,বৌদ্ধ,হিন্দু,ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের সৈনিকরা।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কুমিল্লার ময়নামতিতে ছিল মিত্র বাহিনীর চিকিৎসা কেন্দ্র।যুদ্ধে আহত সৈনিকদের চিকিৎসা দিতে এখানে নিয়ে আসা হত।চিকিৎসাধীন অনেক সৈনিক মারা যাওয়া ছাড়াও ঢাকা,ফরিদপুর,সিরাজগঞ্জ,সৈয়দপুর প্রভৃতি স্থানে নিহত সৈনিকদের লাশও এখানে সমাহিত করা হয়।এখানে সমাহিত হওয়া ৭৩৭ জনের মধ্যে ১৪ জন সৈনিকের কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি।সমাধিতে সাধারন সৈনিক থেকে ব্রিগ্রেডিয়ার পদমর্যাদার অফিসারকেও সমাহিত করা হয়।



বছরে ২ ঈদের দিন ছাড়া সাপ্তাহিক ছয়দিন সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ১২ টা এবং দুপুর ১ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সর্ব সাধারনের জন্য খোলা থাকে।১২ টা থেকে ১ টা বিরতি।

এখানে সমাহিত হওয়া ৭৩৭ জনে সৈনিকের মধ্যে বাহিনী অনুযায়ী - ৩ জন নাবিক,৫৬৭ জন সৈনিক এবং ১৬৬ জন বৈমানিক সমাহিত আছেন। ১৪ জন সৈনিকের পরিচয় জানা সম্ভব হ্য়নি।

সমাধিক্ষেত্রের ৭৩৭ জনে সৈনিকের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন ,কানাডার ১২ জন,অস্ট্রেলিয়ার ১২ জন ,নিউজিল্যান্ডের ৪ জন,দক্ষিন আফ্রিকার ১ জন ,বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের ১৭৮ জন,জিম্বাবুয়ের ৩ জন,পূর্ব আফ্রিকার ৫৬ জন ,পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন,বার্মার ১ জন এবং জাপানের ২৪ জন যুদ্ধ বন্দীর কবর রয়েছে।তাছাড়া ১ জন বেসামরিক ব্যক্তিকেও এখানে সমাহিত করা হয়।
প্রতিটি সমাধিতে নিহত সৈনিকের নাম,বয়স,পদবীসহ মৃত্যুর তারিখ ও জাতীয়তা লেখা রয়েছে।সমাধিক্ষেত্রটির চারদিকে প্রতিরক্ষা বেড়া রয়েছে।প্রতিটি সমাধির পাশে নানরকম ফুল ও পাতাহার গাছের দ্বারা সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে।ময়নামতি যুদ্ধ সমাধিতে শুধু মিত্রবাহিনীর সৈনিকদের সমাহিত করা হয়েছে এমনটি নয় এখানে জাপানী সৈন্যদেরও কবর রয়েছে।





সমাধিক্ষেত্রটির প্রবেশমুখে একটি তোরনণ রয়েছে।যার ভিতরের দেয়ালে সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাস ও বিবরন ইংরেজী ও বাংলায় লেখা রয়েছে।তোরন ঘর থেকে সামনে প্রশস্ত পথ।যার দুই পাশে সারি সারি এপিটাফ।তাতে নিহতের নাম ,পরিচয়,মৃত্যু তারিখ লেখা রয়েছে।এপিটাফে প্রত্যেকের ধর্ম অনুযায়ী ধর্মীয় প্রতিক লক্ষ্য করা যায়। খ্রিস্টানদের এপিটাফে ক্রুশ আর মুসলমানদের এপিটাফে আরবী লেখা।এই প্রশস্ত পথ ধরে সামনে রয়েছে সিড়ি দেওয়া বেদি।বেদির উপর খ্রিস্ট ধর্মের ক্রুশ ।বেদির দুই পাশে আরও দুইটি তোরণ ঘর।এ দুটি তোরন ঘর দিয়ে সমাধির পেছনের অংশে যাওয়া যায়।



সমাধিক্ষেত্রের সামনের অংশের প্রশস্ত পথের পাশেই ব্যতিক্রমি একটি কবর রয়েছে যেখানে একসাথে ২৩ টি এপিটাফ দিয়ে একটি স্থানকে ঘিরে রাখা হয়েছে। স্থানটি মুলত: ২৩ জন বিমান সেনার একটি গণকবর।

প্রতি বছর নভেম্বর মাসের ১১ তারিখে কমনওয়েলথ দেশসমুহের বাংলাদেশে নিয়োজিত হাইকমিশনার / কূটনীতিকগণ ছুটে আসেন ওয়ার সিমেট্রিতে । তারা সবাই সৈনিকদের প্রতি জানান ফুলেল শ্রদ্ধা আর সব ধর্মের ধর্ম গুরুদের সমন্বয়ে হয় বার্ষিক প্রার্থনা সভা ।

তথ্যসূত্র - সংগহীত ,ছবি - গুগল ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৩৭
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিচারের জায়গা না পেলে মানুষ প্রেত হয়ে ওঠে

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১২ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩৯


(সামাজিক অবিচার, রাষ্ট্রীয় অনুপস্থিতি এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঠামোর মধ্যে সাধারণ মানুষ কীভাবে হারিয়ে যায়।)

মানুষ যখন বারবার অবিচারের শিকার হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একদিন এসো সন্ধ্যে ফুরোলেই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৫



ভালোবাসা ছড়ানো পাতায় পাতায়, সবুজাভ স্নিগ্ধ প্রহর আমার
এখানে উঁকি দিলেই মুগ্ধতারা চুয়ে পড়ে টুপটাপ;
ধূসর রঙ প্রজাপতিরাও এখানে রঙিন ডানায় উড়ে,
কেবল অনুভূতির দোর দিতে হয় খুলে, চোখগুলো রাখতে হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান কোনো চকচকে ল্যাব বা বিলাসবহুল ফ্যাক্টরিতে জন্মায়নি

লিখেছেন নাঈম আহমেদ, ১২ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬

চীনের জে-১০ এর পেছনেও রয়েছে সেই ত্যাগ আর সংকল্পের গল্প—
১: গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) দলের অক্লান্ত পরিশ্রম।
২: বাইসাইকেলে চেপে কাজে যাচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী সু চিশৌ।
৩: প্রথম উড্ডয়নের পর কেঁদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Bangladesh bans ousted PM's Awami League under terrorism law

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১২ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬





হায়রে এরেই বলে কর্মফল। ১৭ টা বছর গুম , খুনের মাধ্যমে এক ভয়ের রাজ্য তৈরী করে কেড়ে নেয়া হয়েছিল মানুষের বাকশক্তি। চোখ, কান, মুখ থাকতেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিন গেলে আর দিন আসে না ভাটা যদি লয় যৌবন

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১২ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:২৬


এমন কোনো ইস্যু আছে, যা নিয়ে জাতি পুরোপুরি একমত? ৫০%ও একমত এমন কোনো বিষয় চোখে পড়ে না। একপক্ষ রবীন্দ্রনাথের গান জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মনেপ্রাণে ধারণ করে, আরেক পক্ষ বদলাতে চায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×