১
তুমি এ পর্যন্ত কতজন নারীকে স্পর্শ করেছো? মাস চারেক আগে প্রথম দেখাতেই এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিল মেয়েটি। শত জনকে হতে পারে অথবা একজনকেও নয়। দূর থেকে ভালোবেসে যাবো একথা এখন আবেদন হারিয়েছে, বর্ষা ।
একজনকে ভালোবাসলে বা স্পর্শ করলে অন্যজনকে করা যাবে না এ কথাও এখন সেকেলে। ভালোবাসার মানুষকে স্পর্শ করা মানে নারীকে শরীরী দৃষ্টিতে দেখা নয়। স্পর্শ আর ভোগ দখল একই অর্থ বহন করে না।
জানো, আমি একটি ছেলেকে ভালবাসি। কিন্তু রিলেশন পেনডিং। মনে হয় টিকবে না। আন্ডারস্টান্ডিং হয় না।আমার সাথে ডিকটেটরের মত আচরণ করে।মেয়ে বলে আমার কি ব্যক্তি স্বাধীনতা নাই?? আমি ওর সাথে ব্রেক আপ করতে চাই । কিন্তু ছেলেটি আমাকে ইমোশনালি ব্লাকমেইল করে। হাত পা কাটে। নিজের ক্ষতি করে।এরকম একটা সাইকো নিয়ে চলা যায় না।
২.
সপ্তাহখানেক পর ধানমন্ডি লেকের পাশে আমরা । সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত আসে।মাত্র কয়েকদিন আগে একটি সর্ম্পকের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া মেয়েটির মুখায়বে কেবলই কষ্টের কালো মেঘ ভাসমান। তবুও নিজেকে হ্যাপি রাখার নিরন্তন চেষ্টা তার। নানা বিষয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের। প্রেম, ভালবাসা , ক্যারিয়ার, স্বপ্ন আরও কত কি।
এই শোন, তোমাকে একটা প্রশ্ন করবো। মাইন্ড করবানা। ছেলেদের মাইন্ড করতে নেই।
বলো, আমি মাইন্ড করি না। জাস্ট ফিল ফ্রি.......
আচ্ছা তুমি কি কোন মেয়ের সঙ্গে কখনো সেক্স করেছো? নাকি এখনও ভার্জিন?
কি আজিব প্রশ্ন করে মেয়েটি। শোন মেয়ে, এ যুগে খাদ্যের পরেই বহুল বিক্রিত পণ্য সেক্স।চাইলেই হাতের নাগালে পাওয়া যায়।প্রযুক্তির এ যুগে ভার্জিন শব্দটি ক্রমশই তার গুঢ় অর্থ হারাচ্ছে।
জানো,,আমি বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সেক্স করতে চাই। শুনেছি বিয়ের পরেও স্ত্রীর প্রতি স্বামীরা লয়েল থাকেনা ।তাহলে আমার থেকে কি লাভ বলো?
সেক্স!!! বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে?বলে কি মেয়েটা !!!!একটি বিষয় মনে পড়ে গেল আমার। ছেলেবেলায় স্কুললাইফে মেয়েদের মধ্যে একটা ধারণা লক্ষ্য করতাম আর তা হলো, শরীর একজনকেই দিতে হয়। বৈধ সম্পর্ককেই কেবল মাত্র শরীর দিয়ে ভালবাসতে হয়। শরীর দেওয়াটা ছিল তখন শর্ত সাপেক্ষ । বিবাহ করার শর্তে একটি ছেলে একটা মেয়ের শরীরে অবগাহনের সুযোগ পেত।এখন আর বিবাহের শর্ত লাগে না। ভালবাসার আবেগে স্বেচ্ছায় শরীরী প্রেমে হাবুডুবু খায়। আবার একটু কনজারভেটিভ মেয়ে হলে ছেলেটি নানা উপায়ে শরীর নিয়ে নেয় ধীরে ধীরে। তারপর মেয়েটাকে অন্ধকারে রেখে একদিন বিয়ে করে অন্য মেয়েকে। সতীত্বের ধারণাটা খুব অদ্ভুত। একটা ভার্জিন মেয়ে যদি ভার্জিনিটি তার প্রেমিককে বা অন্য কাউকে দেয়, যে পুরুষ সেটা পেল তার কাছেও মেয়েটা আর ফ্রেশ থাকে না। তখন ছেলেটা বিয়ের জন্য আর একটা ফ্রেশ মেয়েকে খোঁজে যে মেয়েটারও ভার্জিনিটি হয়ত নিয়ে চলে গেছে অন্য একটা ছেলে।
৫.
বর্ষার উন্মুক্ত বর্ষণ মাত্র শেষ হলো। ঘুমোট ভাব প্রকৃতির মাঝে।ইট পাথরের চারদেয়ালে থেকে বন্দী মনটাকে একটু সময়ের জন্য খোলা হাওয়ায় ছেড়ে দিয়ে, প্রকৃতির কোমলতাকে স্পর্শ করতে দুজন বের হলাম কাশবনের উদ্দেশ্যে।বর্ষার শেষ সময়ে বুড়িগঙ্গার ওপারে কাশফুলে ছেয়ে গেছে।যেখানে ঢাকা শহরের দালানগুলোকে কেবলই কাশফুলের উপর ভাসমান মনে হয়। এভাবে চলতে থাকে আমাদের প্রেম-অপ্রেম। রাতভর ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হয়। সপ্তাহান্তে কখনো কখনো দেখা হয়।
৬.
তুমি আমাকে একটুও ভালোবাস না। সারাদিন শুধু ব্যস্তই থাকো। অভিমানী সুর মেয়েটির কণ্ঠে।বাস্তবতা এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি সে।
শোনো মেয়ে, জীবনের দৌড়ে আমি অনেকটা ক্লান্ত, অনেকটা বিধ্বস্ত।অনেক কিছু মনে না নিতে পারলেও মেনে নিতে হয়।তবে শরীরী টানের চেয়ে মনের টান অনেক শক্তিশালী।মন যেদিকে যেতে চায়, কেউ তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না।শরীরের আবেদন কেবলই ক্ষণিকের।একজন প্রতিবন্ধী পুরুষও সুযোগ পেলে নারীর শরীর খুবলে খাবার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু নারীকে ভালোবাসতে পারে কজন বলো? একজন কলগার্ল শরীর দেয় সবাইকে, কিন্তু ভালোবাসে একজনকে।শরীরী অত্যাচারের মধ্যেও মন কাঁদে ভালোবাসার মানুষটির জন্য, যে প্রেমিক হয়তো তাকে কখনো স্পর্শ করেনি, অথবা জানে না তার প্রেমিকা টাকার বিনিময়ে শরীর উচ্চমূল্যে বিক্রি করে।
১০.
খুব অবাক লাগে, পরিচয়ের পর থেকে শত রাগ- অভিমানের পরও দুজন বিচ্ছিন্ন হয়নি। অথচ সামান্য কিছু কারণে ক্রমশ দুরে সরে গিয়েছি আমরা। একটা সময় ছিলো একজন অন্যজনকে না দেখে থাকতে পারতাম না। কথা না বললে রাতে ঘুম আসতোনা।আজ দুজন কেবলই পরিচত আগুন্তক।একই শহরের একই গলিতে মাত্র ২০ গজ দুরত্বে থাকি। তবুও কারো সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়না, কথা হয় না। হয়ত কোনদিন হবেও না। পাশ দিয়ে হেটে গেলেও কেউ কাউকে ডাকবোনা।এই শহরেই হয়ত দুজন বাস করবো, কিন্তু কারো সঙ্গে কথা হবেনা ।সময়ের ব্যবধানে হয়ত আমাদের ফেলে আসা স্মৃতিগুলোও ধূসর হয়ে যাবে। কিন্তু যতটুকু ভালবেসেছিলাম সে ভালবাসা তো আর ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না।
আসলে যে চলে যাবার সে একদিন না একদিন চলে যাবেই। হাজার চেষ্টা করেও তাকে কোনভাবে ধরে রাখা যায় না। গতিশীল জীবন কারো জন্যই থেকে থাকে না। একজন চলে গেলে অন্য একজন হয়ত সে শূণ্যস্থান পুরণ করে। তবে কেউ কারো বিকল্প হতে পারে না।
মানুষের জীবনে সম্পর্ক হয়তো তৈরি হয় সময়ের চাহিদা অনুযায়ী।আবার কিছু সর্ম্পক রক্ষা হয় শুধু দায়বদ্ধতা থেকেই। মাঝে মাঝে ভুলে যাই, যে মানুষটা আজ অনেক কষ্ট দিচ্ছে, হয়ত সেই মানুষটা কোন একদিন ভাল কোন সময়, সুন্দর কোন স্মৃতি দিয়েছে। যে মানুষটা আজ বলছে, আমি তোমাকে ভালবাসি না।সেই মানুষটা হয়ত কোনদিন আমাকে ছাড়া একটি মুহূর্তও চিন্তা করেনি।
১১.
ঢাকা শহরের নিত্য দিনের বদলাতে থাকা আবহাওয়ার মতোই এখন বদল যাচ্ছে সম্পর্কের ধাঁচ। গেল কয়েক বছর ধরে এই শহরে আগের মত মানসিকতা, লংটার্ম রিলেশনশিপ,প্রেম-ভালবাসা সবই এখন ব্যাকডেটেড হয়ে যাচ্ছে। যা ঘটছে তা হলো ক্ষনিকের পরিচয়, তারপর চেনা আলাপ কিংবা হয় প্রেম নয় বন্ধুত্বের সুতো ধরে অনেকটা গভীরে চলে যাওয়া একে অপরের মনের। এমনকি শরীরেরও । তারপর একদিন বিনা নোটিশে হাওয়া হয়ে যাওয়া। এটাই এই শহরের প্রেম কিংবা বহুগামিতা ।কেউ কেউ এক সম্পর্ক বেশিদিন টেনে নিয়ে বোঝা বাড়াতে চাইছে না, আবার কেউ এমনিই বোর হয়ে গেছেন যে, পেতে চাইছেন ভিন্ন স্বাদের মানুষের সান্নিধ্য।কেউ কেউ স্বপ্ন পুরণের নেশায় একেক জনের কাধে ভর করে কাংখিত গন্তব্যে পৌঁছতে চায়। কেউ আবার ভুল পথে পা বাড়ায়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কাশফী নামে বান্ধবী ছিল। একহালি ছেলের সঙ্গে প্রেম করে বেড়াতো। একদিন জিজ্ঞেস করলাম, এত মানুষকে কীভাবে ভালোবাস? মেয়েটির সোজা সাপটা জবাব,আমি কাউকে কখনও বলিনা যে,আমি তোমাকে ভালোবাসি, শুধু তাদের সঙ্গে একটু হাসিমুখে কথা বলি। এটাকে যদি তারা ভালোবাসা মনে করে, আমার তো করার কিছু নেই।একদিন সেই মেয়েটির করুণ পরিণতিও দেখতে হয়েছে আমাকে।
সবশেষে এটাই বলার, উড়ো সম্পর্কের নকশি কাঁথার ভীড়ে কোন বিশেষ একজনকে নিয়ে এই শহর এই সময় এখন আর ভাবছে না, বরং ব্ল্যাক বোর্ডে চক দিয়ে যখন যে নাম লেখা কিংবা যখন তখন মোছাটাই এখন বেশি পছন্দ। তাই প্রেমগুলো ঠিক যেন শীতকালে দূর্বা ঘাসের ডগায় ভোরের আলোয় চিক চিক করা শিশির বিন্দুর মতো……..
উৎসর্গ: আমার ভালবাসার ময়নাপাখিকে।অনেক কাছে থেকেও যে অনেক দুরে।